মায়া খুব জটিল একটা জিনিস। একবার কারও মায়ায় পড়েছেন মানেই মরমে মরেছেন। মায়া অনেকটা চোরাবালির ফাঁদের মতন…একবার পড়লে উঠে আসতে যতই নড়াচড়া করবেন, ততই আরও গভীরে গেড়ে যাবেন। যতই সরে দাঁড়াতে চাইবেন, ততই ডুবতে থাকবেন। সবই ঠিক ছিল, কিন্তু হিসেবের গরমিলটা কোথায় শুরু হয় জানেন? আপনি যার মায়ায় পড়ে আটকে আছেন, সে হয়তো অন্য কারও মায়ায় আটকে আছে। যে আপনার মায়ায় পড়ে বুঁদ হয়ে আছে, তার মায়ায় পড়ে বুঁদ হয়ে আছে অন্য কেউ। এই যে অঙ্কের এই অমিল, হিসেবের গরমিল, এর কি কোনও সমাধান আছে? নেই বোধ হয়; আমরা সবাই তো তাকেই চাই, যার মায়ায় আমরা বুঁদ হয়ে আছি; কিন্তু আমাদের মায়ায় যারা বুঁদ হয়ে থাকে, তাদের খোঁজ কি কখনও নিই? কখনও কি জানতে চাই, আমাকে ছাড়া প্রতি মুহূর্তেই কতটুক পুড়ে ছারখার হয় কারও কলিজা? আমাকে ছাড়া কতটুক ভেঙে চুরমার হয় কারও ঘরের চারদেয়াল? যে আমাদের মূল্যায়ন করে, আমরা তাকে ছুড়ে ফেলে দিই। আমরা যাকে মূল্যায়ন করি, সে আমাদের ছুড়ে ফেলে দেয়। প্রকৃতি হয়তো প্রতিশোধই নেয়। আমি কারও খোঁজ রাখিনি বলে, আমার খোঁজও সে রাখে না। দিনশেষে জীবন থেকে যায় একটা অসমাপ্ত ট্রাজিক উপন্যাস, একটা পূর্ণতা না-পাওয়া গল্প। গল্পের শেষে, আমাকে যে চায়, সে যেমনি পায় না, ঠিক তেমনি আমি যাকে চাই, তাকেও পাই না। এঁকেবেঁকে চলা নদীর মতন জীবন তবু ছুটে চলে, ছোটো ছোটো কিছু গল্প-উনগল্প-অগল্প নিয়ে মানুষের জীবননদী একটা গল্পের সমুদ্রে মিশে যায়। সেখান থেকে কেউ কখনও আর ফিরে আসে না। সেখানে ভাসতে ভাসতে কেউ কখনও হিসেব কষে না...কতটুক পেলাম আর কতটুক হারালাম!