মানুষ আদতে যা চায়

 নারীরা চায় টাকাওয়ালা পুরুষ, পুরুষেরা চায় রূপবতী নারী।
 ...এই কথাটা জনপ্রিয়, কিন্তু ভুল।
  
 একটা মেয়ের কাছে মানিব্যাগ-ভর্তি টাকার চেয়ে অনেক বেশি খুশির কারণ হলো সেটি, যখন কেউ কোনও এক ঝুমবৃষ্টির সন্ধেয় ভিজতে ভিজতে, হুট করে, নিতান্ত অকারণেই, বেলিফুলের একটা মালা হাতে নিয়ে ঘরে ফেরে।
  
 ভরি ভরি সোনারূপা হাতে ধরিয়ে দিয়ে ওপাশ ফিরে ঘুমিয়ে-পড়া বেখেয়ালি পুরুষের চেয়ে সে পুরুষটিই তার বেশি প্রিয়, যে পুরুষ শক্ত করে তার হাতটা ধরে সাবধানে রাস্তা পার করিয়ে দেয়।
  
 পুরুষের কাছে রূপসীর মেহেদি-রাঙা সুন্দর হাতের চেয়ে বেশি পছন্দের হাত হলো সেই হাতটিই, যে হাত তার পছন্দের খাবার রাঁধতে গিয়ে সৃষ্ট পোড়াদাগের সাক্ষ্য দিচ্ছে।
  
 কাজলে-ঠাসা সুন্দর দু-চোখের চেয়ে সেই চোখ দুটোই একজন পুরুষের বেশি প্রিয়, যে চোখদুটো অপেক্ষায় থেকে কাঁদতে কাঁদতে কালি পড়ে কালচে হয়ে গেছে।
  
 বিশ্বাস করুন, নারী চায় টাকা, আর পুরুষ চায় রূপ---এই কথাটা খুবই অবমাননাকর ফালতু একটা কথা। এতটা স্টেরিয়োটাইপের মধ্যে সবাইকে বাঁধা যায় না।
  
 আদতে পুরুষ চায় মায়ের মতো স্নেহ, বোনের মতো মমতা। নারী চায় বাবার মতো ছায়া, ভাইয়ের মতো ভরসা। এর বাইরে আসলেই কেউ কিছু চায় না সাধারণত।
  
 এমনই যদি হতো, তবে আমাদের বাবারা তাঁদের স্ত্রীর কুঁচকে-যাওয়া চর্মসার হাতটা ধরে হাসপাতালের বেডে অসমর্থ শরীরেও সারারাত জেগে বসে থাকতেন না।
  
 এমনই যদি হতো, তবে আমাদের মায়েরা চালচুলোহীন গরিব স্বামীর দারিদ্র্যের ভার নিজকাঁধে নিয়ে তাঁর সঙ্গে থেকে যেতেন না এমন যুগের পর যুগ।
  
 তবে একটা জিনিস নারী ও পুরুষ উভয়েই খুব করে চায়। ওটা না পেলে সম্পর্কের প্রতি কারও কোনও টানই আর থাকে না। কী সেটা? ভালোবাসা? প্রেম? বিশ্বাস? সম্মান? নাহ্‌! সেটা হচ্ছে...শান্তি। শান্তি এবং কেবল শান্তিই আমাদের আয়ুর প্রথম- ও শেষকথা। এ পৃথিবীতে ভালোবাসার অভাবে কেউই আত্মহত্যা করে না, শান্তির অভাবেই করে।