ভাবনাদেয়ালের পলেস্তারা: ১২৫



ভাবনা: আটশো উনসত্তর
………………………………………………………
এক। A woman can never forget the man whom she first lay with.


A man can never forget the woman whom he couldn't lie with.


দুই। এ জগতে কারও উপর কখনওই ডিপেনডেন্ট হবেন না। কোন‌ও কাজেই না, এমনকী ইমোশনালিও না।


হলে, যদি কখনও তিনি ছেড়ে যান, কিংবা আপনাকেই ছেড়ে যেতে হয়, কিংবা সময় দূরত্বের সৃষ্টি করে কোনও-না-কোনও কারণে, কিংবা দু-জন একসঙ্গে থাকলেও ডিপেনডেন্সিটা আর রাখা যায় না, তখন দেখবেন, বাঁচতে খুব কষ্ট হচ্ছে।


বলতে পারেন, এইসব বলা সোজা, করা কঠিন। হ্যাঁ, ঠিক বলেছেন। সঙ্গে এ-ও ঠিক, কাজটা করতে এখন যতটা কষ্ট হবে, তখন করতে এর শত গুণ বেশি কষ্ট হবে। আগের কষ্ট পরের কষ্টের চাইতে সবসময়ই কম কষ্ট দেয়।
তিন। ভালোবাসা ও সময়, এই দুইটি জিনিস কখনও কারও কাছ থেকে জোর করে আদায় করা ঠিক নয়।
চার। The person who tries to control you, is not the person with whom you need to keep a relationship.
পাঁচ। ক্রাশের সঙ্গে ডেট করতে চাও?


খুব সহজ! কথাটা তাকে সরাসরি বলো।
মানুষ অনেক কিছুই সহজভাবে নিয়ে ফেলে। বলেই দেখো না! জীবন ছোটো তো!


আর যদি সরাসরি বলতে না পারো, তবে আর‌ও সহজ একটা বুদ্ধি শিখিয়ে দিই।


খুব আরামদায়ক একটা বালিশ নাও। (শিমুল-তুলার হলে ভালো হয়।)


ওখানে মাথা রেখে শুয়ে পড়ো। (উপুড় হয়ে নয়, চিৎ হয়ে বা কাৎ হয়ে।)


ক্রাশের কথা ভাবতে ভাবতে ধীরে ধীরে ঘুমিয়ে পড়ো। (চাইলে তার ছবিটাও চোখের সামনে রাখতে পারো।)


এরপর স্বপ্নে ইচ্ছেমতো ক্রাশের সঙ্গে ডেট করো। (বেশি গরিব না হলে ডেটিংয়ের খরচটা নিজের পকেট থেকেই দিয়ো।)


দ্বিতীয় পদ্ধতিতে আমি বহু বার বহু ক্রাশের সঙ্গে ডেটে গিয়েছি। ছোট্ট এ জীবনে এত প্রিয় ইচ্ছেটি অপূর্ণ রেখে দেবার মতন বোকা আমি অন্তত ন‌ই!
ছয়। তোমার যে ভুলের মাশুলস্বরূপ অসীম যন্ত্রণা নিজের হৃদয়ে পুষে রেখেছ অনেক দিন ধরে, তার জন্য নিজেকে ক্ষমা করে দাও। সেই মানুষটিকেও ক্ষমা করে দাও, যে তোমাকে অকারণেই দুঃখ দিয়েছে, যে তোমার অস্তিত্বের অবিচ্ছেদ্য কিছু অংশ সঙ্গে নিয়ে চলে গেছে।


যে মানুষটি তোমাকে দিনের পর দিন ছোটো করেছে, তোমার সমস্ত আত্মবিশ্বাস নষ্ট করে দিয়েছে, তাকে আজ ক্ষমা করে দাও, যদিও তুমি জানো, তোমার মধ্য থেকে যা হারিয়ে গেছে, তা অর্জন করতে তোমাকে দীর্ঘসময় সাধনা করতে হয়েছে।


তুমি জানতেই না, মানুষ কথা রাখে না, শপথ করে থাকবে বলেও ছেড়ে চলে যায়। তুমি বুঝতেই পারোনি, কিছু মানুষকে ধরতে হয় ক্ষণিকের জন্য, সারাজীবনের হিসেব করে নয়। এ পৃথিবীতে 'চিরকালের জন্য' বলে কিছু নেই, পরিস্থিতি এবং মানসিকতা অনেক প্রিয় কিছুও বদলে দেয়।
যেখান থেকে ভালোবাসা কিংবা সুখ, কিছুই পাবার কথা ছিল না, সেখানেও থেকে যাবার মতো বোকামি তুমি করেছিলে। কেন করেছিলে? এর উত্তর তুমি নিজেও জানো না। আর কত কষ্ট পাবে এসব ভেবে ভেবে? নিজেকে আজ ক্ষমা করে দাও।


কারও জন্য নিজের হৃদয়ে যত ঘৃণা পুষে রাখবে, ততই নিজেকে ভারী মনে হবে, পৃথিবীর জন্য বেমানান মনে হবে। ক্ষতটা চোখের সামনে রেখে দিলে ক্ষতিটা তোমারই হবে, কারও কিছু এসে যাবে না। পুরনো ভুলগুলি এবং অতীতের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাগুলি মনের মধ্যে রেখে যদি দাও, তবে তুমি নিজেকে সেইসব সৌভাগ্য থেকে দূরে রেখে দেবে, যা যা তোমার জীবনে আসার কথা ছিল।
হৃদয় যত ভারী করে রাখবে, বাঁচতে তত কষ্ট হবে। মন যত অস্থির করে রাখবে, জীবন থেকে শান্তি তত দূরে সরে যাবে। মনে যদি ভুল কাউকে রেখে দিয়ে বাঁচো, তবে ঠিক মানুষটি আসার সুযোগটা কীভাবে পাবে? তুমি নিজেও আর কাউকে ভালোবাসতে পারবে না, তোমাকেও আর কাউকে ভালোবাসতে দেবে না। যে তোমাকে ভালোবাসতে পারেনি, তার কথা ভেবে ভেবে নিজেকে এমন ভালোবাসাবঞ্চিত রেখে দিয়ে কী হবে?


হিসেবটা খুব সহজ। তুমি যা বয়ে বেড়াবে, তা-ই তোমার হৃদয়টাকে দখল করে রাখবে। দুঃখ বয়ে বেড়ালে, দুঃখই ফেরত পাবে। ঘৃণা বয়ে বেড়ালে, ঘৃণাই ফেরত পাবে। ক্রোধ বয়ে বেড়ালে, ক্রোধই ফেরত পাবে।


ক্ষমা করে দাও---নিজেকেও, তাকেও। ক্ষমা করে দিতে পারার চাইতে শান্তি আর কমই আছে। মানুষ ভাবে, ক্ষমাটা সে অন্যকে করে; আসলে সে ক্ষমা করে নিজেকেই। অন্যকে ক্ষমা করার মাধ্যমে নিজেকেই সে ক্রমাগত কষ্ট পাবার অপ্রাপ্য শাস্তি থেকে মুক্তি দেয়। মানুষই তো ভুল করে, তাই না? আর তুমিও তো অমানুষ নও, তাই না?


ভাবনা: আটশো সত্তর
………………………………………………………
এক। দুই রকমের অফিসার:


টাইপ-১: অফিসার হলে এমন‌ই হ‌ওয়া উচিত!
টাইপ-২: এ-ও আবার অফিসার হ‌য় ক্যামনে!?
দুই। Life looks meaningful when you're living alone if you have got a wrong partner.
তিন। Sometimes you're fucked up hugely, only because you didn't do a wrong thing.
It's really disgusting!!
চার। He cannot earn money.
But he can enjoy money.
Life is beautiful.
পাঁচ। হ্যাঁ, নিজেকে আমি তৈরি করে নিয়েছি---তুমি জীবন থেকে চলে যাবে। তোমাকে ছাড়া বাঁচতে হবে, এটা মেনে নিতে আমি আজ প্রস্তুত। তোমাকে হারিয়ে ফেলতে আজ আমার আর কোনও কুণ্ঠা নেই।


জানি, এই হৃদয়টা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে। আমি এর জন্যও তৈরি। তুমি আমাকে দিনের পর দিন টেক্সট পাঠাবে না, ফোন করবে না, আমাদের আর দেখা হবে না, তোমাকে আর কখনও দেখতে পাবো না, এইসব সত্য আমি মেনে নিয়েছি।


তুমি আমার চোখের সামনে দিয়েই কিংবা দৃষ্টির অগোচরে অন্য কাউকে নিয়ে ভালো থাকবে, তাকে ভালো রাখবে, তাকে ভালোবাসবে, তার চোখের দিকে তাকিয়ে 'ভালোবাসি' বলবে, তাকে ছোঁবে, এসব মেনে নিয়েও বাঁচতে...আজ আমি পারব।


যদি কখনও জিজ্ঞেস করো, আমি কেমন আছি, সেদিন চোখে-মুখে মিথ্যে হাসি ছড়িয়ে রেখে বলতে হবে, আমি খুব ভালো আছি! হ্যাঁ হ্যাঁ...বিশ্বাস করো, এর জন্যও পুরোপুরি প্রস্তুত আমি!


হাঁটু গেড়ে বসে হৃদয়ের ভাঙা টুকরোগুলি কুড়িয়ে নিয়ে আবার বাঁচার চেষ্টাটা আমি আজ তোমার সাহায্য ছাড়াই করতে পারব। আমি জানি, আমাকে বাঁচতে বলার আর কেউ নেই আজ।
আমি সত্যিই আজ সব কিছুর জন্যই তৈরি! তবু কেন জানি না...


আমি আমার রুমটার অন্ধকার মেঝের এককোণে কীরকম দলা পাকিয়ে শুয়ে শুয়ে কাঁদছি আর ভেবেই চলেছি...এত কিছুর পরও...আজ...এমন একটাও কি রাস্তা নেই...দু-জন একসঙ্গে থেকে যাবার? আমার কি সত্যিই কিছু করার নেই, যা করলে তোমাকে ধরে রাখতে পারব? আজ আমি এ জীবনের সব কিছুই ছেড়ে দিতে রাজি, যদি তুমি আমার জীবনে থেকে যাও। তোমাকে পাবার জন্য আমার কি সত্যিই আর কিছু করার নেই?
ছয়। ভালোবাসা সবসময় নিখুঁত কিছু নয়।
ভালোবাসা রূপকথা কিংবা চমৎকার কোনও গল্পের বইও নয়।
এবং সবসময় এটা খুব সহজে আসেও না।


ভালোবাসা হচ্ছে, বাধাকে অতিক্রম করা, চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়া, একসঙ্গে থেকে যাবার জন্য যুদ্ধ করা, ধরে রাখা এবং নিতান্ত বাধ্য না হলে যেতে না দেওয়া।


খুব ছোট্ট একটা শব্দ এই ভালোবাসা। সহজে বলে ফেলা যায়, তবে সহজে সংজ্ঞায়িত করা যায় না। ভালোবাসা ছাড়া বেঁচে থাকা অনেকটাই অসম্ভব। যে মুখে মুখে বলে, ভালোবাসা আমার লাগেই না, সে-ও বাবা-মায়ের ভালোবাসায় বড়ো হয়েছে।


বিভিন্ন কাজের মধ্য দিয়ে লোকে ভালোবাসা প্রকাশ করে। প্রতিটি ঘণ্টায়, প্রতিটি মিনিটে, প্রতিটি সেকেন্ডে মানুষ তার ভালোবাসার মানুষের কথা ভেবে বাঁচে। ভালোবাসলে বাঁচতে ভালো লাগে। আর ভালোবাসা পেলে, কখনও কখনও, মরে যেতেও দ্বিধা থাকে না।
সাত। তোমার মধ্যে যা আছে, তা দিয়েই তুমি করে খেতে পারবে।
এর অন্যথায় বলে যে, তার সঙ্গ ত্যাগ করো।


তুমি যা অনুভব করো, তার মধ্যে কোনও খাদ নেই।
কেউ যদি এটা না ভাবে, তবে তার সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করো।


তোমার মনের মধ্যে শক্তি আছে। সেই শক্তিকে কাজে লাগিয়ে তুমি তার প্রত্যেকটিই করে দেখাতে পারো, যা তুমি পারবে না বলেই সবাই ভাবে।
দিনশেষে, তোমার জীবনে এক তুমি নিজে বাদে আর কারও কথারই কোনও দাম নেই।


তোমার অনুভব কিংবা পরিকল্পনা নিয়ে কারও সঙ্গে কথা বলতে গেলে যদি সে তা শুনতে না চায়, তবে মন খারাপ না করে বরং তাকে তা দেখতে বাধ্য করো, নিজের কাজের মধ্য দিয়েই।
তোমার পরিবার, বন্ধুবান্ধব, কাছের মানুষজন সবাই তোমার ভাবনাগুলির চাইতে বরং তোমার কাজগুলিকেই বেশি মূল্যায়ন করে।


তুমি ব্যর্থ মানুষ নও, তুমি বরং অন্যদের চেয়ে বেশি অভিজ্ঞতা রাখো। তোমার জীবনে যা যা অসুবিধে কিংবা সীমাবদ্ধতা, সেসব কখনও তোমার ব্যাপারে চূড়ান্ত রায় দিয়ে দেবার জন্য যথেষ্ট নয়।
ব্যর্থতা থেকে শক্তি গ্রহণ করো; ভুল থেকে সেই শিক্ষাটা নাও, যা তোমাকে স্বপ্ন দেখতে ও বেড়ে উঠতে সাহায্য করবে।


নিজের সম্পর্কে বেশি না বলে এমন কিছু করো, যাতে লোকেই তোমার সম্পর্কে সারাক্ষণই বলতে থাকে। তুমি বলবে, কিন্তু কেউ শুনবে না; এর চাইতে সুন্দর অনুভূতি হচ্ছে, সবাই বলবে, কিন্তু তুমি শুনবে না।


তোমার সামর্থ্য ও ক্ষমতা সম্পর্কে লোকে জানবে তোমার চলার ধরনটা দেখে। তুমি যা চাইবে, তার সবই পাবে, তবে পা ফেলতে হবে ধীরে ধীরে এবং ঢাকঢোল না পিটিয়ে। মনে রেখো, করতে না পারার আগে বলতে পারার অধিকার তৈরি হয় না।


বেশি ভেবে কোনও লাভ নেই। অতিভাবনায় ডুবে থাকার চাইতে বরং অল্পশ্রমেও নিযুক্ত থাকা অনেক কাজের। তোমার ভাবনা ও কথার দাম কেবল তোমার কাছেই, আর তোমার প্রচেষ্টা ও অর্জনের দাম পুরো পৃথিবীর কাছে!


ভাবনা: আটশো একাত্তর
………………………………………………………
এক। কখন বুঝবে, তোমার মনটা খুব ভালো?


তুমি সবাইকে খুব সাহায্য করো।
তুমি সবাইকে খুব বিশ্বাস করো।
তুমি সবাইকে খুব দান করো।
তুমি সবাইকে খুব ভালোবাসো।


অথচ তোমার শুধুই মনে হতে থাকে,
তুমি সবাইকে খুব কষ্ট দিচ্ছ,
তুমি কারও জন্যই কিছু করতে পারছ না!


দুই। জীবনে চলার পথে যে-কোন‌ও পরিস্থিতি মেনে নেওয়া এবং নিজেকে সেই পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নেবার ক্ষমতা যার যত বেশি, সে তত বেশি সুখী এবং ঐশ্বর্যশালী। সবসময় আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী সব কিছু না-ও হতে পারে, কিন্তু জীবনের উদ্দেশ্য কখন‌ও বিফল হয় না।


হয়তো আমাদের চোখে সব কিছু শেষ হয়ে যায়, কিন্তু শেষাবধি দেখা যায়, আমরা যা-কিছু জীবনের কাছে চেয়েছিলাম, সেইসব কিছুই আমরা পেয়েছি, অর্থাৎ যা-কিছু আমাদের প্রয়োজন ছিল, সেইসব কিছুই পেয়েছি; তবে একটু অন্য পথে, যে পথ দিয়ে হাঁটার আকাঙ্ক্ষাই হয়তো আমাদের ছিল না।


সেইসঙ্গে জানা হয়ে যায়, আমাদের বাড়তি কিছু চাহিদা ছিল, যা হয়তো সময়ের সাথে সাথে অপ্রয়োজনীয় হিসেবে ধরা দিয়েছে। এই যে জীবন নিয়ে আমাদের এত তাড়াহুড়ো, অথচ শেষে তো সব‌ই ফেলে নিস্তব্ধ হয়ে যেতে হবে। যদি কিছু থেকে যায়, তা কেবলই আমাদের করে-যাওয়া কিছু ভালো এবং মন্দ কাজ। তাই বলে আজ যে কাজকে আমরা ভালো বলে গ্রহণ করেছি, সেইসময় সেই পরিস্থিতিতে সেই কাজগুলো কি আদৌ একইরকমভাবে মানুষের গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিল? হয়তো হ্যাঁ, কিংবা না, সেকথা মহাকাল‌ই ভালো জানে।


আজকের যেই কাজটি আমাদের চোখে ঘৃণার উদ্রেক ঘটায়, ঠিক একই কাজ কালের স্রোতে কখনও বাহবা পাবে না, এমন কোনও কথা নেই। অথচ আমরা প্রতি মুহূর্তে কতটাই-না বেপরোয়াভাবে জীবন সম্পর্কে একটা গৎবাঁধা ধারণা এবং নিয়ম আঁকড়ে বেঁচে আছি!


তিন। শুনে রাখো, যা-কিছু তোমাকে জাগিয়ে তোলে, যা-কিছু তোমাকে শান্তি এনে দেয় কিংবা আশার আলো দেখায়, তা-কিছুকে নিজের কাছাকাছি রেখে দাও। তার জন্যই বাঁচো, তার সঙ্গেই বাঁচো। তোমার সমস্ত মনোযোগ ওটাকে ঘিরেই থাকুক। তুমি নিজ থেকেই ওটার জন্য সময় বের করে নাও। ওটা যা-ই হোক না, যদি তুমি এতে শান্তিতে থাকো কারও কোনও ক্ষতি না করেই, তবে তা নিয়ে কারও মতামতের তোয়াক্কা করার দরকার নেই।


মাথায় রেখো, সুখের জন্য অনেক কিছু লাগে না। সুখী হবার মানে অনেক বেশি কিছু পেয়ে সুখী হওয়া নয়, অল্প কিছু নিয়েও সুখী থাকা। মাঝে মাঝে সকালবেলায় কফির মগটাও তোমাকে সুখী করে দিতে পারে। বৃষ্টির ঠিক পর পর রাস্তার যে মাতাল-করা ঘ্রাণটা, তা-ও তোমার সারামনে সুখ ছড়িয়ে দিতে পারে। কিছু প্রিয় গান টানা দুই-তিন ঘণ্টা বার বার শুনলে মনটা কেমন বেশ ফুরফুরে হয়ে ওঠে না? বন্ধুকে হাসিখুশি দেখলেও মনের মধ্যে একধরনের সুখ সুখ অনুভূতির সৃষ্টি হয়। তোমার পরিচিত পার্কে বসে বসে গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে আকাশ দেখা, রৌদ্র ছোঁয়া...এইসব মুহূর্তগুলিও সত্যিই অমূল্য...সুখ পাবার জন্য।


মনে সুখ থাকলে এগিয়ে যাওয়াটা সহজ হয়। যদি এমন কিছু থাকে, যা তোমার ভেতরের আগুনটা জ্বালিয়ে দেয়, তবে তা যতই ক্ষুদ্র হোক না কেন, তোমার জন্য তা-ই অনেক অনেক বড়ো কিছু। ওটাকে আঁকড়ে ধরো আর ধরেই রাখো। দিনশেষে, ওটাই তোমাকে বাঁচিয়ে রাখবে।


চার। তোমার চারপাশে যারা আছে, ওদের উপরে তোমার প্রভাব যে কতটা, তা তুমি সত্যি কখনও বুঝতেই পারো না।
কারও দিকে তাকিয়ে তুমি একদিন যে হেসেছিলে, ব্যাপারটা তাকে কতটা খুশি করেছে, তা তুমি জানোই না।
যার প্রতি একসময় দয়া দেখিয়েছিলে, তার পুরো জীবনটা তোমার কারণে কতটা বদলে গেছে, তুমি সত্যিই তা জানো না।
যার পাশে বসে দীর্ঘসময় ধরে ধৈর্য নিয়ে তার দুঃখগুলি শুনেছিলে, দুটো দয়ার্দ্র কথা বলেছিলে, তার জীবনে তুমি যে কী, তা তুমি নিজেও জানো না।


তাই জীবনে কখনও দয়ালু হবার সুযোগটা পেলে ভুলেও মিস কোরো না।
এজন্য অপেক্ষা করে থেকো না যে, আগে অন্য কেউ দয়াটা দেখাবে আর তুমি তার পথটা অনুসরণ করবে।
পরিস্থিতি কখন ভালো হবে, কিংবা কখন কারও মনটা তোমার খুশি অনুযায়ী বদলাবে, তখন বুঝে-শুনে তুমি দয়াটা দেখাবে, এরকম ভাবনা মাথায় নিয়ে বসে থেকো না।


মাথায় অন্য কিছু রেখো না। কে তোমার সঙ্গে কী করেছে, তুমি নিজে কতটা দয়াবঞ্চিত হয়ে ছিলে দীর্ঘদিন, এইসব ভাবনা থেকে সরে এসে...দয়ালু হও। তুমি সত্যিই জানো না, তোমার এইটুকু ভূমিকা একটা মানুষকে কতটা সাহায্য করতে পারে।


মানুষের উপকার করার সুযোগ ও সামর্থ্য খুব কম মানুষেরই হয়। যদি তোমার তা থাকে, কাজে লাগাও; আর কিছু হোক না হোক, মানসিক শান্তিতে থাকবে।


পাঁচ। ভালোবাসার কখনও স্বাভাবিক মৃত্যু হয় না।
এর মৃত্যু হয়, কেননা আমরা জানিই না, এর উৎসটা শূন্য হয়ে গেলে কী করে তা আবার পূর্ণ করতে হয়।
ভালোবাসার মৃত্যু হয় অন্ধত্বের কারণে, ভুলের কারণে, বিশ্বাসঘাতকতার কারণে।
দুঃখ থেকে কিংবা আঘাত পেয়েও ভালোবাসা মরে যায়।
বিরক্তি চলে এলেও ভালোবাসা মরে যায়।
ভালোবাসার রংটা ফ্যাকাসে হয়ে গেলে কিংবা ভালোবাসায় কোনও গভীর দাগ পড়লেও এর মৃত্যু হয়।


ছয়। হারিয়ে ফেলার আগ অবধি কিছু মানুষ বুঝতেই পারে না, তাদের কাছে যে কী ঐশ্বর্য আছে!


তবে যারা দামটা বুঝতে পারে আগে থেকে, তারাও কেন হারিয়ে ফেলে?
যারা যত্ন নিতে জানে, হারিয়ে ফেলার ভয় করে, তারাও কেন হারিয়ে ফেলে?
যারা নিজেদের সবটুকু দিয়ে ধরে রাখার চেষ্টা করে, তাদেরও কেন ঠিক সেই জিনিসটাই হারিয়ে ফেলতে হয়, যা তারা সবচাইতে বেশি ভালোবাসত?
এতটা কষ্ট কি তাদের সত্যিই প্রাপ্য?


সাত। সেই মানুষটি হও, যে যত্ন নিতে জানে।
সেই মানুষটি হও, যে চেষ্টা করে ভালো রাখতে, মনে কোনও দ্বিধা না রেখেই যে ভালোবাসে।
সেই মানুষটি হও, যে নিজেকে সময়ের দাবিতে মেলে ধরতে জানে, যে কখনও নিজের অনুভূতির কাছ থেকে পালিয়ে বেড়ায় না, কিংবা তার আশার তীব্রতাকে লুকিয়েও রাখে না।
সেই মানুষটি হও, যে বিশ্বাস করে---এ পৃথিবীর সৌন্দর্যে, মানুষের ভালোত্বে, আত্মার বিশুদ্ধতায় ও অকৃত্রিমতায়।
সেই মানুষটি হও, যে সুযোগ কাজে লাগাতে জানে, যে লুকোচুরিতে বিশ্বাস করে না, যে নিজেকে প্রকাশ করার সাহস রাখে।
সেই মানুষটি হও, যার কাছে এসে মানুষ নিজেই নিজেকে দেখতে পায়, যে নিজেকে ঠিক সময়ে ঠিক জায়গায় ঠিকভাবে রাখতে জানে।


আমি যখন বলি, যত্ন নিতে শেখো, তখন ধরে নিয়ো, ওই যত্নটা আমার খুব দরকার।
এই পৃথিবীতে বেশিরভাগ মানুষই যত্ন নিতে জানে না; নিজের যত্ন নিতেও জানে না, অন্যের যত্ন নিতেও জানে না। এমন মানুষই ভূরি ভূরি। তোমার ওরকম না হলেও চলবে।


এ পৃথিবী তোমার প্রতি কেমন ছিল বা ছিল না, তা মাথায় রেখে দিয়ে মানুষকে অমন উপেক্ষার চোখে দেখো না। অবহেলিত ও উপেক্ষিত হয়েও দয়ালু হয়ে বাঁচতে পারার চাইতে বড়ো যোগ্যতা আর একটিও নেই।


ভাবনা: আটশো বাহাত্তর
………………………………………………………
এক। মধ্যবয়স এমন একটা সময়, যখন পৃথিবীটা তোমার কাঁধে খুব ধীরে হাতটা রেখে তোমাকে কাছে ডেকে কানে কানে বলে:


না, আজ আর তোমাকে খোঁচাচ্ছি না! এটাই সময়। নিজেকে আহত ও অবহেলিত হবার হাত থেকে বাঁচাতে এবং অন্যদের ও নিজের চোখে কেউ একজন হয়ে উঠতে গিয়ে তুমি এতদিন ধরে যে অভিনয়টা করে এসেছ নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে, আজ তার শেষ হোক। যথেষ্ট হয়েছে!


তোমার চারিদিকে যে আবরণটা তুমি নিজেই তৈরি করে রেখেছ, তা তোমাকে এতদিন তোমার মনের মতো করে ঠিক বেড়ে উঠতে দেয়নি। আমি জানি, তুমি যখন ছোটো ছিলে, সবার কাছে অপরিচিত ছিলে, তখন তুমি বাধ্য হয়েই এইসব বাহ্যিক বলয় তৈরি করেছিলে। ওটাই ছিল সময়ের দাবি। আমি বুঝতে পারছি, তুমি ভেবেছিলে, এমন না করলে তুমি কখনওই বিশেষ কেউ হয়ে উঠতে পারবে না। আর হয়ে উঠতে না পারলে তখন তোমাকে কেউই সম্মানের সাথে গ্রহণ করবে না।


তখন নাহয় ওসবের দরকার ছিল, কিন্তু জীবনের অর্ধেকের বেশি সময় কাটিয়ে ফেলার পরও তুমি এখনও ওসব আঁকড়ে ধরে বসে আছ কেন? এমনকী তুমি আজ আগের চেয়েও বেশি উদ্‌বিগ্ন হয়ে থাকো বড়ো হবার নেশায়! কেন এমন পাগলামি করছ?


সময় দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। জীবনের অনেক রংই তুমি আজও দেখোনি, পরে দেখবে ভেবে ফেলে রেখেছ। সময় কি সত্যিই পাবে? আমরা কি ভবিষ্যৎ দেখতে পাই? জীবনের অর্ধেকটাই কাটিয়ে দিলে লোকে কী ভাববে ভেবে ভেবে, বাকি অর্ধেকটাও কি এভাবেই কাটাবে? যতটা ভালোবাসা ও সম্মান পাবে ভেবেছিলে, পেয়েছ কি ততটা? মনে রেখো, আরও কিছু ভালোলাগা তুমি চাইলেই তোমার হতে পারত, যদি জীবনটা এমন নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে কাটিয়ে না দিতে!


সাহস ও শক্তির অভাব তোমার আজও নেই। হৃদয়ের সবটুকুই ভালোবাসা ও ভালোলাগায় পূর্ণ করে বাঁচার অধিকার তোমারও আছে। এখনও সময় আছে, দেরি হয়ে যাবার আগেই নিজের মনের মতো করে বেঁচে নাও!


দুই। আজ তুমি তার পুরো পৃথিবীটা শেষ করে দিয়েছ।


দূরে কোথাও ঘুরতে যেতে তার আর ইচ্ছে করে না। বৃষ্টি নামলে সে এখন জানালার পাশে এসে আর দাঁড়ায় না। পৃথিবীটার দিকে তাকিয়ে সে আর অবাক হয় না। জীবনটাকে সে আজ আর সুন্দর দেখে না।


রাত সে আজও জেগে থাকে, কিন্তু কারও সঙ্গেই কথা বলে না। সে কেন জেগে আছে, তা সে নিজেই জানে না। সে আজ আর কাউকেই বিশ্বাস করে না। কেউ দুটো ভালো কথা বললেও সে তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে।


অনেক দিন হলো, সে আর আকাশ দেখে না---গোধূলির সময়েও না, তারা-ভরা রাতেও না। প্রতি বারই, সে যখন আকাশের দিকে তাকায়, তখনই তার মনে পড়ে যায়, একদিন এমন অপূর্ব অসংখ্য রাতে তুমি তার হাত ধরে বলেছিলে, সারাজীবনই পাশে থাকবে, কখনওই ছেড়ে যাবে না। সে আজও 'সারাজীবন' শব্দটার মানে খুঁজে চলে।


সে ঠিক করে রেখেছিল, চাকরিটা পেলে টাকা জমিয়ে জমিয়ে তোমরা দু-জন মিলে পৃথিবী ঘুরবে। সে এ জীবনে তোমাকেও পেল না, চাকরিটাও হয়তো আর পাবে না। আজ যেন সে কিছু পাবারই অধিকার হারিয়ে ফেলেছে!


একদিন তুমি তাকে ফোন করে কফিশপে আসতে বলেছিলে। কফিতে চুমুক দিতে দিতেই খুব ঠান্ডামাথায় তার চোখে চোখ রেখে তুমি বলেছ, 'তোমার সঙ্গে থাকা আমার পক্ষে আর সম্ভব নয়। তুমি ভালো থেকো।' সেদিনের পর থেকে সে আজও কফি খায় না।


তার শুধুই মনে পড়ে যায়, একদিন সে তোমার জন্যই সাজত, তোমার মনের মতো করেই নিজেকে গুছিয়ে রাখত। আজ সে আর আয়নার সামনেই দাঁড়াতে পারে না! নিজের চোখের দিকেই আজ সে কেমন যেন সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকায়। তুমি তার কাছ থেকে আয়না দেখার অধিকারটুকুও আজ কেড়ে নিয়েছ।


সে আজ আর কাউকেই ভালোবাসতে পারে না।
সে আজ আর কাউকেই বন্ধু ভাবতে পারে না।
সে আজ আর কাউকেই বিশ্বাস করতে পারে না।
সে আজ আর কাউকেই সহ্য করতে পারে না।


তাকে এরকম বাজে অবস্থার মধ্যে ছুড়ে দিয়েই ভালো থাকার রাস্তাটা তোমাকে খুঁজতে হলো! এতটাই দুর্বল তুমি! ছিঃ!


তিন। আমরা প্রায়ই চাই, এখন যেমন আছি, ঠিক তেমনই থেকে যাব। চাই বটে, তবে এটা হয় না। আমাদের অনুভূতি বদলে যায়, চারপাশটা বদলে যায়, আশেপাশের মানুষও বদলে যায়।


যা-কিছু টিকিয়ে রাখতে আমরা খুব করে চাই, তা ধীরে ধীরে ফ্যাকাসে হয়ে যায়। আমাদের জীবনে এমন অনেকেই আসে, যাদের আমরা ধরে রাখতে চাই, যাদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখতে চাই, অথচ তাদের প্রায় সকলেই স্মৃতি হয়ে যায় খুব তাড়াতাড়িই।


তাই এমন অস্থির হয়ে, তাড়াহুড়ো করে আসলে কোনও লাভ নেই। অনুভূতির বদল হয়, অনুভূতি অদৃশ্যও হয়ে যায়। মানুষ আসবে, চলেও যাবে; তবু বাঁচতে হবে বাঁচার মতো করে। এর নামই জীবন।


তুমি যদি ব্যক্তি হিসেবে বেড়ে ওঠো, জীবনে সমৃদ্ধি আনো, বড়ো মানুষ হ‌ও, তবে তুমি ক্রমেই একা হয়ে যাবে। মাথায় রেখো, তোমার সঙ্গে যারা আছে, ওরাও তোমার মতো ঠিক এমনি করেই বাড়বে না, বড়ো কিংবা সমৃদ্ধ হবে না।


অতীতকে ভুলে যাবার সত্যিই কোনও দরকার নেই। অতীতের প্রয়োজন আছে। অতীত না থাকলে আমরা শিখব কোথা থেকে?


হ্যাঁ, জীবনে অতীতকে ঠিক ততটুকুই রাখতে হয়, যতটুকু রাখলে বাঁচতে শেখা যায়। বাঁচতে চাইলে ভুলগুলিকে এড়িয়ে চলতে শিখতে হয়। শুধু অতীত থেকেই নয়, জীবনে যে-সকল জ্ঞানী মানুষের সঙ্গে দেখা হবে, তাঁদের কাছ থেকেও শিখতে হবে।


যা হবার, তা-ই হবে। তবে তা হবার পথটাকে আমরা নিজের সিদ্ধান্ত ও কাজের মাধ্যমে সুন্দর করতে পারি।


চার। ভীষণ মন-খারাপে কাঁদতে কাঁদতে যখন কোনও কিছুই আর ভালো লাগে না, তখন যে মানুষটিকে আনমনেই টেক্সট পাঠিয়ে বসেন, সে মানুষটির উপর আপনি সত্যিই ভরসা রাখেন।


নিদারুণ বিষণ্ণতায় ডুবতে ডুবতে যখন ভেতরটা তোলপাড় হয়ে যায়, তখন বলতে না পারার মতন কথাগুলিও যদি কেউ একজনকে গড়গড় করে বলে দেন, সে মানুষটিকে আপনি খুব বিশ্বাস করেন।


ঝুমবৃষ্টিরাতে, ঘুটঘুটে আঁধার-সন্ধেতে অথবা নিস্তব্ধ সাগরপাড়ে দাঁড়িয়ে যখন কেউ একজনকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেন কিংবা কাঁদতে ভীষণ ইচ্ছে করে, সে মানুষটিকে আপনি বড়ো ভালোবাসেন।


ঠিক একইভাবে, অসীম বিষণ্ণতায়, যে আপনার হাত ধরে চুপচাপ বসে থাকতে চায়, সে আপনাকে ভরসা করে। দুঃসহ অন্তর্দ‌হনে, যে আপনার বুকের জমিনে অঝোরে কাঁদবার একটুখানি অধিকার চায়, সে মানুষটি আপনাকে ভালোবাসে।


জীবনের বিষাদমাখা অন্ধকার সময়গুলোতে মানুষ সূর্যের নিরন্তর দীপ্তির মতন স্থায়ী একটা রশ্মি চায়, হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলে হাত ধরে টেনে তুলে ধরার মতন দৃপ্ত একটা হাত চায়।


চায়, কেউ তার বিষণ্ণতায় ডোবা বিষাদী রাত্রিগুলির হিসেব জানুক; প্রদীপশিখার মতন একটুকরো ছায়া হয়ে পাশে থেকে যাক এমন কেউ, যাকে সে ভরসা করে, বিশ্বাস করে এবং খুব অকারণে হলেও খুব ভালোবাসে।


ভাবনা: আটশো তিয়াত্তর
………………………………………………………
এক। মানুষ যার জন্য প্রচণ্ড ভালোবাসা পুষে রাখে, সময়ের ব্যবধানে তারই জন্য তীব্র ঘৃণাও পুষতে পারে।


মানুষ যার জন্য তীব্র ভালোবাসায় জীবন দিতেও রাজি থাকে, সম্পর্কের ব্যবচ্ছেদে প্রচণ্ড ঘৃণায় মানুষ সেই একই মানুষের জীবনও নিতে পারে।


ভালোবাসা ব্যাপারটাই ভীষণ জটিল। যে ভালোবাসা যত গভীর হয়, সে ভালোবাসা তত ভয়ানক ঘৃণায়ও পরিণত হয়।


যে ভালোবাসা যত তীব্র, সে ভালোবাসা তত তীক্ষ্ণ।


একদিন যে মানুষটির জন্য কেঁদে কেঁদে রাত কাটাতাম, সময়ের আবর্তনে, একই মানুষের কথা মনে এলেও ঘৃণায় থুঃ করে উঠি।


আসলে, ভালোবাসা জিনিসটা নিরেট হিরের মতন। সবচেয়ে দামি বস্তু, অথচ সেই একই হিরে আবার ভয়ংকর ধারালো, নিপুণভাবে নীরবে কেটে ছারখার করতে পারে সব কিছুই।


তবুও মানুষ ভালোবাসে, আগুনে পোড়া কয়লার মতন তবুও মানুষ পুড়তে এবং পোড়াতে চায়। তবুও কী এক অদ্ভুত অকারণে মানুষ ভালোবাসা নামের বিষটা খেয়ে নিজেকে বার বার হত্যা করতে কীরকম যেন ভীষণ উদ্‌গ্রিব হয়ে থাকে...


দুই। আত্মহত্যার ব্যাপারটা নিয়ে মানুষের মধ্যে অত দ্বিধা-কুণ্ঠা কাজ না করলে পৃথিবীর অর্ধেক মানুষ চোখ বুজে আত্মহত্যা করত।


মৃত্যুর সময় মৃত্যুযন্ত্রণা না থাকলে পৃথিবীর চার ভাগের তিন ভাগ মানুষই স্বেচ্ছায়, হুটহাট, যখন-তখন মরে যেত।


বর্তমান দুনিয়ার একটা কঠিন সত্য হলো, বেঁচে-থাকা এই পৃথিবীভর্তি সাড়ে সাত-শো কোটি মানুষের ভিড়ে অর্ধেকের বেশি মানুষই আদতে মৃত; ওরা কেবলই জীবিতদের মতো জ্যান্ত হয়ে আছে।


আমাদের বিশ্বাসগুলোকে যখন কেউ গলা টিপে হত্যা করে, আমরা প্রথম বার মৃত্যুবরণ করি; আমাদের ভালোবাসার মানুষটিকে যখন অন্য কারও হাত ধরে হাঁটতে দেখি, আমরা দ্বিতীয় বার মৃত্যুবরণ করি; আমাদের স্বপ্নগুলোর ঘাড় ধরে কেউ যখন জ্যান্ত কবর দিয়ে দেয়, আমরা শেষ বারের মতো মৃত্যুবরণ করি।


বিশ্বাস, ভালোবাসা এবং স্বপ্নগুলোর মৃত্যুর পর আমাদের আর কিছুই বাকি থাকে না। আর কোনও ভাঙনই আরও ভাঙতে পারে না, আর কোনও আগুনই আমাদের পোড়াতে পারে না।


একটা সময় পর গিয়ে, আমরা হয়ে যাই রক্তে-মাংসে গড়া এক-একটা রোবট; তখন আমরা হাঁটি, চলি, ফিরি, সব কাজই করি; শুধু বেঁচে থাকি না।


একসময় আসলেই আমরা নিজেরাও ভুলে যাই যে, এই আমরা একদিন জীবিত ছিলাম, একদিন প্রাণ খুলে হাসতাম, মন ভরে গাইতাম; একদিন সত্যি সত্যি বেঁচে ছিলাম।


তবুও, হুট করে কোনও এক মধ্যরাতে নিজের‌ই মৃত্যুশোকে আমরা হাউমাউ করে কেঁদে উঠি। নিজেরই জন্য বড্ড মায়ায় বুকটা ফেটে চৌচির হয়ে যায় যেন! আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আয়নার মানুষটির দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে প্রশ্ন ছুড়ি, 'তুমি মারা গেলে কীভাবে!?'


তিন। যার মধ্যে আপনাকে হারিয়ে ফেলার ভয় নেই, তার মধ্যে আপনাকে পাবার আনন্দ কিংবা অনুভূতিও নেই।


যার ভেতরে আপনাকে ধরে রাখার প্রবণতা নেই, তার ভেতরে আপনাকে যত্নে রাখার কোনও তাড়াও নেই।


যার মনে আপনার একচিলতে হাসির কোনও মূল্য নেই, তার মনে আপনার অস্তিত্বের কোনও দামও নেই।


প্রতিটি মানুষই মহামূল্যবান। প্রতিটি মানুষই অসাধারণ। আপনার অসাধারণত্ব, আপনার উচ্চতা যথার্থ মূল্যটা পাবে তখনই, যদি আপনি সঠিক মানুষটির দেখা পান।


কিন্তু এখানে সমস্যাটা হলো, এই সঠিক মানুষের সন্ধান পাওয়াটাই এ জগতের কঠিনতম একটা অধ্যায়, যে অধ্যায়ের পাতাগুলো হাজারো উলটে-পালটেও সঠিক পাতাটি সহজে খুঁজে পাওয়া যায় না।


আর খুঁজে পাই না বলেই বার বার ভুল পাতায় শুদ্ধ শব্দ লিখি, ভুল জায়গায় শুদ্ধ আবেগ খরচ করি।


'আমার কাউকেই দরকার নেই, আমি কাউকেই চাই না।' বলে বলে রোজ রোজ গলা ফাটিয়েও একদিন কোনও এক রৌদ্রঝরা বিষাদমাখা দুপুরে আমরা হঠাৎ খেয়াল করি, 'আমি কাউকে চাই না, এটা ঠিক। তবু আমার মনটা এমন কাকে যেন ভীষণভাবে চায়, যার বুকে মাথা চেপে ধরে টুপ্‌ করে কেঁদে ফেলা যায়, যার চোখে চোখ রেখে টুক্‌ করে মরেও যাওয়া যায়!'


চার। তার কথা ভুলে যাও। মনে একদমই রেখো না।


যে মানুষটা তার হৃদয়ে আরেকটা মেয়ের অবয়বকে যত্নে রেখে আরামে ঘুমোচ্ছে, তার জন্যই কিনা তুমি তোমার ঘুমটা নষ্ট করছ?


যে মানুষটা অন্য একটা মেয়ের সঙ্গে গভীর কথোপকথনে ডুবে আছে দীর্ঘসময় ধরে, তারই কাছ থেকে একটা ছোট্ট মেসেজ পাবার অপেক্ষায় তুমি মোবাইল-স্ক্রিনের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছ এমন ঘণ্টার পর ঘণ্টা?


তুমি কার জন্য এমন দীর্ঘ দীর্ঘ আবেগি স্ট্যাটাস দিচ্ছ তোমার ওয়ালে? সেই মানুষটার জন্য, যে কিনা অন্য একটা মেয়ের ওয়ালে পড়ে থাকে সারাদিনই? তোমার পোস্ট দেখার সময়ই যার নেই?
এই মুহূর্তে তুমি এমন কারও জন্য অঝোরে কাঁদছ, যে কিনা তার সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করে যাচ্ছে অন্য একটা মেয়েকে হাসিখুশি রাখার জন্য!


যে তোমাকে তার সবটুকু দিতে পারে না, তার জন্য নিজের সবটুকু বিলিয়ে দিয়ে অতটা চাপ নেবার সত্যিই কি কিছু আছে?


যে যেমন, তার সঙ্গে তেমন আচরণ করতে হয়। না করলে সে তোমাকে দুর্বল ভাববে। লোকে দুর্বলকে সাহায্য করে না, উলটো সুযোগ পেয়ে আঘাত করে।


পাঁচ। Stop arguing.
Stop responding.
Stop winning.
Stop trying.
Stop caring.
Stop overthinking.
Stop resenting.
Stop explaining.
Stop asking.
Stop spying.


Remember, silence is the best revenge.


Do whatever you want to do.
Let them think whatever they want to think.
Simply put on a silent smile on your face. Gradually, all their smiles will vanish away. Wait to see.


Silence wins when words fail.


ছয়। ছোটোবেলায় আমরা বড়ো হতে চাইতাম, বড়ো হয়ে যাবার পর সেই আমরাই আবার ছোটো হয়ে যেতে চাই।


ছোটোবেলায় আমরা অভিনয় করে করে ভালোবাসতাম, বড়ো হয়ে সেই আমরাই আবার ভালোবাসার অভিনয় করতে শুরু করি।


ছোটোবেলায় নিখুঁতভাবে সত্য বলতে পারতাম, বড়ো হতে হতে সেই আমরাই আবার জঘন্যভাবে মিথ্যা বলতে শিখে যাই।


ছোটোবেলায় আফসোস করে বলতাম, ‘কবে বড়ো হব!’ বড়ো হয়ে যাবার পর আক্ষেপ করে বলি, ‘ইসস্‌! আবার যদি ছোটো হতে পারতাম!’


জীবনটা একটা নদীর মতন। বয়ে যেতে যেতে দু-পাড়ের কত কী যে ছেড়ে আসতে হয়! কত কী-ই তো ভেঙে দিয়ে সামনের দিকে চলতে হয়! চলতে চলতে নির্দিষ্ট কোথাও নয়, বরং গিয়ে পড়ি একদমই মহাসমুদ্রে, যেখানে কোনও ঠাঁই নেই, কোনও সীমানা নেই!


ছেড়ে-আসা পাড়ে ফেলে রেখে আসতে হয় কত মায়া, কত স্মৃতি, কত স্নেহ…!


মানুষের জীবনটা ঘড়ির কাঁটার মতন বার বার ঘুরিয়ে ঠিক আগের জায়গায় ফিরিয়ে নেওয়া গেলে প্রতিটি মানুষই, বরাবরই, তার শৈশবে ফিরে যেত। কেউই কখনও দ্বিতীয় বার বড়ো আর হতে চাইত না। কক্ষনো না! বড়ো হবার যন্ত্রণা কম নয়।


মানুষ যতই বড়ো হয়, ততই নিঃসঙ্গ হয়। যতই বয়স বাড়ে, ততই দুঃসহ স্মৃতির খাতায় নতুন নতুন লাইন যুক্ত হয়। যতই বড়ো হয়, ততই ধবধবে সাদা অন্তরটায় ছোপ ছোপ কালো দাগে পুরো জমিনই ক্ষতবিক্ষত হতে থাকে।


বড়ো হবার সবচাইতে বড়ো ঝামেলাটা হলো, আর ছোটো হয়ে যাওয়া যায় না। ছোটোবেলায় আমরা যতটা আন্তরিকভাবে মাত্র দুই টাকার নোট হাতে পেয়েই চরম আনন্দে আনন্দিত হতাম, বড়ো হবার পর দুই কোটি টাকার বস্তা হাতে নিয়েও তার ছিটেফোঁটাও আনন্দিত হতে আর পারি না। আমরা যত বড়ো হই, আনন্দিত হবার ক্ষমতা ততই হারাই।


আসলে মানুষের জীবনটাই একটা ধাঁধা। এ-পাড়ে দাঁড়িয়ে নদীর যে পাড় দেখতে ভীষণ মনোরম লাগে, ওই পাড়ে গিয়ে দেখি, আসলে এই পাড়টাই সুন্দর বেশি ছিল।


যে পৃথিবীর ছাদে দাঁড়িয়ে তারাগুলোকে দেখতে মুক্তোদানার মতন লাগে, সেই তারাগুলোর উঠোন থেকে পৃথিবীটাকে দেখতে পুঁতির মতন লাগে।


আমরা প্রতিদিনই, আগামীকাল বাঁচব ভেবে বেঁচে থাকি। অথচ জীবনের কোনও এক কঠিন নিঃসঙ্গ ভোরে, কিংবা কী ভীষণ এক ঘুটঘুটে অন্ধকার রাতে আবিষ্কার করি, আমরা আসলে আগামীকাল বাঁচব বাঁচব করে এক দিনও বাঁচিনি, শুধু জ্যান্তই ছিলাম।


একদিন বুঝতে পারি, বড়ো হবার তালে তাল মেলাতে গিয়ে আমরা নিজেরাই নিজেদের এত জটিলভাবে হারিয়ে ফেলি যে, কখনও-সখনও আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেই নিজের দিকে তাকিয়ে বিস্ময়ে বলি, ‘এই মানুষটাই আমি তো?’


ভাবনা: আটশো চুয়াত্তর
………………………………………………………
এক। কেন এখন পর্যন্ত কাউকেই সে তার জীবনে আসতে দেয়নি?


কেননা ইদানীং ছেলেদের ভাবনাগুলি কীরকম জানি একই রকমের। শ্যালো, টিপিক্যাল, ন্যারো! খাও-দাও, ফুর্তি করো। ব্যস্‌! এর বেশি কেউ যেন ভাবতেই পারে না! চিন্তার এ এক অসীম সীমাবদ্ধতা!


কেননা ইদানীং ছেলেদের মাথায় তেমন কিছু নেই। জায়গা ও সুযোগ পেলেই যখন-তখন শোও, বাকি সময়টা ডমিনেট করো, একেক দিন একেকটা মেয়ের সঙ্গে ঘুরে বেড়াও! এই চক্রেই জীবন ঘোরে! ব্যস্‌! ওদের সঙ্গে বসে গল্প করারই কিছু নেই। কারও মাথাতেই গ্রে-ম্যাটার বলতে কিচ্ছু নেই। কোনও সেন্স অব হিউমার নেই, কোনও কমনসেন্স নেই, কোনও সেলফ-রেসপেক্ট নেই। এদের সঙ্গে মেশারই কিছু নেই!


কেননা ইদানীং ছেলেরা কেউ প্রতিশ্রুতি দিতে ও নিতে চায় না, বরং এমন একটা রিলেশনশিপে থাকতে চায়, যেখান থেকে যখন খুশি বেরিয়ে যাওয়া যায়। ওদের কোনও আবেগই নেই, শুধুই কাম আছে। রুম থেকে বেরোনোমাত্রই যেন সব আবেগ পালায়!


কেননা ইদানীং ছেলেরা প্রেম মানেই বোঝে রুমে বসে ড্রিংক করা, সিগারেট ফোঁকা, নেটফ্লিক্সে মুভি দেখতে দেখতে রোমান্স করা। ওইটুকুতেই জীবন! ব্যস্‌! বাইরে ঘুরতে যাওয়া, সময় নিয়ে পরস্পরকে বোঝা, এসব নিয়ে এখন আর কে ভাবে! ওদের কাছে ডেটিং-এর মানেই হয়ে গেছে ইচ্ছেমতো স্পর্শের অবাধ স্বাধীনতা।


কেননা ইদানীং ছেলেরা টেক্সটেই সুন্দর, বাস্তবে না। মেসেঞ্জারেই কেয়ারিং, বাস্তবে না। ফেইসবুক-পোস্টেই বীরপুরুষ, বাস্তবে না। মুখে মুখে বাঘ-হাতি মারে, বাস্তবে একটা মশাও মারতে পারে না। ওদের সমস্ত ঘিলুই আজ মুখে আর ঠোঁটের ডগায়, মাথায় কিচ্ছু নেই---একদমই ফাঁকা!


কেননা ইদানীং ছেলেরা দায়িত্ব নিতে জানে না, মেরুদণ্ডটা সোজা করে দাঁড়াতেই জানে না, মানসিক পরিপক্বতাও ওদের তেমন নেই। ওদের সঙ্গে জীবন বাঁধা আর ভাঙা-খেয়ানৌকা নিয়ে সাগর পাড়ি দেবার স্বপ্নদেখা, দুটোই একই কথা। ওরা প্রেমিকার কাছে শুধুই আরও একটু সময় চায়, আর নিজেকে তৈরি না করে বরং আলতুফালতু কাজে সময় নষ্ট করে।


কেননা ইদানীং ছেলেদের লোভ অনেক বেশি। বেটার কাউকে পেলে আগের জনকে সহজেই ভুলে যায়। প্রলোভনে সাড়া দেবার জন্য রীতিমতো অপেক্ষা করে থাকে যেন! কমিটমেন্টের মানেটাই ওরা আজ বেমালুম ভুলে গেছে!


কেননা ইদানীং ছেলেরা যেখানে নিজের জীবনটাকেই সিরিয়াসলি নিতে জানে না, সেখানে আরেকজনের জীবনকে সিরিয়াসলি নেবে কী করে? নিজের দায়িত্বই নিতে জানে না, আরেকজনের দায়িত্ব কীভাবে নেবে? নিজেকেই ভালো রাখতে জানে না, আরেকজনকে ভালো কোন জাদুমন্ত্রে রাখবে?
কেননা ইদানীং ছেলেরা চায়, তোমার সামনে তোমার বয়ফ্রেন্ড হয়ে থাকবে, আর বাইরে বলে বেড়াবে, সে সিঙ্গেল; আবার একইসঙ্গে চায়, তুমি তার সামনে তার গার্লফ্রেন্ড হয়ে থাকো, এবং সবসময়ই তার প্রতি লয়াল হয়ে জীবন কাটাও। সে নিজে থাকবে পলিগ্যামাস, আর তোমাকে রেখে দিতে চাইবে মনোগ্যামাস! মানে...কী আর বলব, সীমারও তো একটা ফাইজলামি থাকে!


কেননা ইদানীং ছেলেরা মাথাতে আনতেও পারবে না, সে কতটা ইমোশনাল, সে কতটা প্যাশনেট, সে কতটা ক্রেইজি, সে কতটা লয়াল, সে কতটা কেয়ারিং, সে কতটা সফিসটিকেটেড! সে যতটা গভীরভাবে ভালোবাসতে জানে, অতটা ভালোবাসা গ্রহণ করার মতো সামর্থ্যই তো এখনকার ছেলেদের নেই! তার রুচি এবং ভাবনাবলয়ের ধারেকাছেও পৌঁছোনোর মতো যোগ্যতা ওদের কারও নেই। তার সঙ্গে বসে গল্প করার মতো মানসিক উচ্চতাসম্পন্ন ছেলেই তো সে আজকাল দেখে না! তার হিউমারগুলি ধরতে পারার মতো সেন্সই তো তার চারপাশের ছেলেদের কারও নেই!


ঠিক তার মনের মতন ছেলে, যে তাকে সত্যিই ডিজার্ভ করে, কোথাও-না-কোথাও হয়তো আছে। কিন্তু খুঁজতে যাবে কে! ওই রিস্ক নিতে যাবে কে! যার-তার সঙ্গে জীবনকে বেঁধে ফেলে যে-সে হয়ে জীবন কাটানোর চাইতে অনেক অনেক ভালো একা একাই নিজের সঙ্গে নিজেকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দেওয়া। এতে সে আর কিছু না পেলেও, যোগ্য একজন মানুষের সঙ্গে শান্তিতে, স্বাচ্ছন্দ্যে ও স্বস্তিতে থাকতে অন্তত পারবে!


দুই। যে মানুষটি আমাকে তুফানের মতো করে ভেঙেচুরে ভালোবাসে, সে রোজই, আমাকে রীতিমতো রচনার আকারে বিশাল বিশাল টেক্সট পাঠিয়ে অপেক্ষায় থাকে...কবে আমি ফিরতিটেক্সটে একটি লাইনের হলেও কিছু-একটা লিখব।


আর এদিকে আমি কিনা নিতান্ত অবহেলায় উত্তর দিই...আচ্ছা।


আমি যে মানুষটিকে ঝরনার মতো সবটা উজাড় করে দিয়ে ভালোবাসি, রোজ রোজই বড়ো বড়ো টেক্সট লিখে তাকে পাঠাই; আর অপেক্ষায় থাকি, সে অন্তত এক লাইনের হলেও কিছু-একটা লিখুক...


কয়েক ঘণ্টা আমাকে অপেক্ষায় রেখে হঠাৎ খুব অনিচ্ছায় সে একটা দায়সারা উত্তর পাঠায়...আচ্ছা।
শুনেছি, সে যাকে ঝড়ের মতন উথালপাথাল করে ভালোবাসে, তাকে নাকি রোজই গদ্য-আকারের টেক্সট লিখে পাঠায়, অধীর অপেক্ষায় থাকে, মানুষটা এক লাইনের হলেও কিছু-একটা লিখুক।


কয়েক ঘণ্টা পর নাকি সে একটা দায়সারা উত্তর পায়...আচ্ছা।


আচ্ছা, যে মানুষটা আমাকে রোজই টেক্সট পাঠিয়ে তার জবাবে অবহেলা পায়, সে-ও কি রোজই মধ্যরাতে ঠোঁট বাঁকিয়ে কেঁদে ফেলে আমাকে না পাবার আক্ষেপে, ঠিক যেমনি আমিও রোজই মধ্যরাতে কেঁদে বুক ভাসাই অন্য কাউকে না পাবার তীব্র যন্ত্রণায়?


যে যাকে চায়, সে তাকে পায় না।
যে যাকে পায়, সে তাকে চায় না।


তিন। যার জীবন, তার সামর্থ্য, সুযোগ ও পছন্দ অনুযায়ী চালাবে। ওরা কেউ আমার খায়‌ও না, পরেও না। আমি ওদের বিপদে-আপদে পাশে দাঁড়াইও না। ওরা না খেয়ে কিংবা বিনা চিকিৎসায় মরে পড়ে থাকলেও আমার কিচ্ছু এসে যাবে না।


এক্ষেত্রে ওদের ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে রায় দেওয়া চরম বেআক্কেলের কাজ। এই ধরনের বেআক্কেলদের দেখলেই জুতাপেটা করতে মন চায়। কিন্তু করি না, কেননা জুতার দামটাই বরং বেশি।


চার। যে ফরসা লোকটি কালো মেয়েটিকে বিয়ে করে সুখে আছে, তার রুচি নিয়ে কেউ প্রশ্ন না তুলুক।
যে চালচুলোহীন গরিব ছেলেটির সঙ্গে ধনী বাপের আদরের দুলালিটি প্রেমে জড়িয়ে আছে বছরের পর বছর, তাদের নিয়ে কেউ কটুকথা না বলুক।


ভিন্ন ধর্মের দু-জন মানুষ যখন পরস্পরকে ভালোবেসে বিয়ে করে নেয়, তখন তাদের কেউ অসামাজিক না বলুক।


যে যাকে নিয়ে সুখী হবে বলে তাদের চারহাত দুই করে নেয়, সমাজের শৃঙ্খলে তাদের ভালোবাসা বাঁধা না পড়ুক।


সমাজের উঁচু-নিচু, ধনী-গরিব, কালো-সাদা'র তথাকথিত মাপকাঠিতে কেউ কারও সুখ না মাপুক। এই সমাজের জাজমেন্টাল মানুষগুলো ধ্বংস হয়ে যাক।


অর্থের পরিমাপ, চামড়ার রং, ধর্মের সীমানা ইত্যাদি কারও ভালোবাসায় ব্যারিকেড না হোক। প্রেম হোক সর্বজনীন, ভালোবাসা হোক পূজনীয়, সুখের সমীকরণ হোক একান্তই ব্যক্তিগত।


হেরে যাক হিংসা-দ্বেষ-ঘৃণা, জিতে যাক প্রতিটি ভালোবাসা। ভালোবাসার মূলমন্ত্র হোক শুধুই শান্তি।


ভাবনা: আটশো পঁচাত্তর
………………………………………………………
এক। মানুষ ধীরে ধীরে ক্ষয় হতে হতে একসময় ক্লান্ত ও অসুস্থ হয়ে পড়ে, যদি ভুল মানুষের সঙ্গে থাকে এবং প্রতিনিয়ত মানসিকভাবে নির্যাতিত হয়। তখন আর কোনও শক্তি অবশিষ্ট থাকে না---না থাকে দেহে, না থাকে মনে। সব কিছুতেই বিষণ্ণতা ও অবসাদ এসে ভর করে। একধরনের পলায়নপরতা সমস্ত ভাবনায় সারাক্ষণই জুড়ে থাকে। যা দেখে এবং যা ভাবে, তার সবই বিরক্তিকর লাগে। বাঁচার ইচ্ছেও ক্রমেই নিঃশেষিত হয়ে যায়।


এত কিছুর পরও, সব কিছুর দায়টা কীভাবে যেন তার কাঁধেই এসে পড়ে। তখন বিভিন্ন আক্রমণাত্মক প্রশ্নের উত্তর দিতেও তার খুব ক্লান্ত লাগে, তীব্র অনীহা কাজ করে। তার শুধুই মনে হয়, যার যেভাবে ইচ্ছা জিতে যাক। জিততেও তার আর ভালো লাগে না। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এইসব দুঃসহ যন্ত্রণা তাকে বয়ে বেড়াতে হয়। শান্তি খুঁজতে খুঁজতে একদিন সে মরে যায়। সবাই ভাবে, রোগাক্রান্ত হয়ে সে মরেছে। আসল ঘটনা এক বিধাতাই জানেন।


দুই। আপনি যখন মুখের উপর সত্য বলে বলে দোষ ধরিয়ে দেবেন, লোকে ধরে নেবে, আপনি ম্যানারলেস। আপনি যখন এরকম দোষ ধরিয়ে দেওয়া বন্ধ করে দেবেন, তখন লোকে ধরে নেবে, আপনি ভীতু ও সুবিধাবাদী, আপনার মধ্যে সত্য বলার সৎসাহস নেই।


আপনি যখন কাউকে সরাসরি ভালোবাসার কথা জানিয়ে দেবেন, লোকে বুঝে নেবে, আপনি বেহায়া ও নির্লজ্জ; আবার যখন কিছুতেই মুখ ফুটে কিছুই বলতে পারবেন না, তখন ধরে নেবে, আপনি গোঁয়ার ও অহংকারী।


আপনি যখন খুব চটপটে স্বভাবের এবং চঞ্চল হয়ে থাকবেন, লোকে বুঝে নেবে, আপনি উচ্ছৃঙ্খল; যখন খুব ধীর ও কোমল থাকবেন, তখন লোকে বুঝবে, আপনি দুর্বল।


যখন খুব ভ্রমণপ্রিয়, চারিদিকে ঘোরাফেরা, বন্ধুবান্ধব নিয়ে আড্ডা, হইহুল্লোড় করবেন, তখন সবার চোখে আপনি উড়নচণ্ডী। আবার যখন ঘর থেকেই বের হন না, কোনও আড্ডা কিংবা বন্ধুবান্ধব নেই, তখন লোকের রায়ে আপনি নিতান্তই অসামাজিক।


যখন সুন্দর জামাকাপড়, ব্রান্ডের পণ্য আর ফ্যাশনসচেতন থাকেন, তখন আপনি শোঅফ করেন। যখন আপনার ড্রেসআপ অগোছালো, ব্যবহার করেন সস্তা জিনিসপত্র, আর ফ্যাশন নিয়ে উদাসীন থাকেন, তখন আপনি খ্যাত্‌, আনস্মার্ট।


আপনি যা-ই করুন, যা-ই বলুন, যেভাবেই চলুন, যত যা-ই নিখুঁত হন না কেন, লোকে ফাঁকফোকর খুঁজে বের করে অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে হলেও আপনার কোনও-না-কোনও খুঁত ঠিকই খুঁজে বের করে নেবেই নেবে।


এই তথাকথিত সমালোচকগুলি আদতে নিন্দুক। আমাদের জীবনে ওরা মূলত অযত্নে বেড়ে-ওঠা আগাছার মতন। যত অযত্নই করুন না কেন, যতই তাচ্ছিল্য কিংবা বিরক্তি দেখান না কেন, ওরা গজাবেই। ওদের লাথি মারলেও কোনও এক বিচিত্র কারণে আপনার পায়ের কাছে এসে আবারও ঘুরঘুর করবে।


যদি ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়িয়ে আপনি সুখে থাকেন, তবে মোষই তাড়ান। আপনি বনের মোষ না তাড়িয়ে ঘরের গরু পাললেও লোকে আপনাকে ওই চাঁড়াল রাখালই বলবে। ইতিবাচক কথা সবাই বলতে জানে না। ইতিবাচকতা অনেক বড়ো একটা গুণ, যা সবার থাকে না।


অন্যের চোখে নিজেকে ত্রুটিমুক্ত হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করে করে নিরানন্দে বাঁচার চেয়ে, অন্যের চোখে ত্রুটিযুক্ত হয়েও নিজের মতো করে আনন্দে বাঁচাটা ঢের বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক।


তিন। Mobile network unites,
Mobile phone divides.


চার। (যেহেতু অনভ্যাসে বিদ্যা হ্রাস পায়...)
Tome rag koru na babo.amar kastu hoe.aman korta hoe na babo.tome atu pasan kanu?tumar ke mona pam nae?tome ke patar?hu?boka kostu nae tumar?aman korta hoe na.tome tu lukke cala,lukke calara aman kara na,tara hat dora,pasay pasay taka.r tome kale dora dora taku.kaman laga amar?tome bojo na kan?babo,ato man karap kuro na tome.man karap takla amar ae masajta poru,man balu hoe jaba,bogla?tome ke akon r agar moto amaka balubaso na?pasay sao na?kanu?oe morgena asaca tumar gibona,tae na?ameo bola decce,amar nam gorena orafa garen,ameo kento morgena k carbo na.tumar balubasa sodo amar,sodo ame e tumar mata kabu,aka akae kabu.bogla?