ভেতরের বাহির, বাহিরের ভেতর

তুমি অনিদ্র, চিরজাগ্রত, সর্বজ্ঞ, সর্বাধার, সর্বময়, সর্বরূপী, এক, অখণ্ড। এই তুমি অন্তরে বাইরে, অন্তর বাহির এক করে আছ। এই এক অখণ্ড ভাবের মধ্যে আবার মাতা-পুত্রের সম্বন্ধ, প্রেমিক-প্রেমপাত্রের সম্বন্ধ। এই তো তুমি আমার জন্যে ব্যস্ত রয়েছ, আমার সুখের জন্যে, আমার শ্রেয়র জন্যে আগাগোড়া তোমাকে দেখি, আগাগোড়াই তুমি, অথচ এই ভালোবাসা, এই ব্যস্ততা। রহস্যভেদ হচ্ছে না।




যা হোক, যতটুকু দেখালে, আপাতত তা-ই দেখে তৃপ্ত থাকি। তুমি আমাতে, আমি তোমাতে, আমি তোমার, তুমি আমার। তুমি আমাকে অনন্ত প্রেমের সাথে ভালোবাসো, আমায় যত্ন করার চেয়ে তোমার শ্রেষ্ঠতর কাজ আর নেই, এই মেনে তৃপ্ত থাকি। এর চেয়ে পরমজ্ঞান, এর চেয়ে মূল্যবান জানবার বিষয়, আর কী আছে? আমি চিরদিনের তোমার, তুমি চিরদিনের আমার, আমার ধ্বংস নেই, মরণ নেই, আমার উন্নতির শেষ নেই, আমার উপর তোমার ভালোবাসার শেষ নেই, আমার সম্বন্ধে তোমার যত্নের শেষ নেই, এর চেয়ে ভালো কথা আর কী জানব, কী শুনব? এই ভালোবাসা সর্বদা দেখাও, চোখের সামনে রাখো, চোখ এতে স্থির হোক, হৃদয় এতে মজুক, জীবন এতে ঘিরে থাক, ভরে যাক।




আমার ভয় তুমি দেখছ, আমার অস্থিরতা তুমি দেখছ। কবে এসব যাবে বলো। 'কবে' আর না, এখনই যাক। আমার পরিত্রাণ, তোমার সঙ্গে আমার অভঙ্গ যোগ... নাকি ওসব তোমাতে সিদ্ধ হয়ে আছে? সেটাই কেবল? না কি প্রকাশ হওয়া চাই? প্রকাশের আর দেরি কেন? দেরিই-বা ক‌ই? যখন তোমার কাছে আসি, তখনই তো সেই যোগ দেখি। আর আমি দেখতে চাইলেই তো দেখতে পারি। আমার প্রেমচক্ষু ফোটাও, যাতে সেই নিত্যযোগ বার বার দেখতে ইচ্ছে হয়, সেই নিত্যযোগে থাকতে ইচ্ছা হয়।




যোগ ভাঙাও কেন বলতে পারো? ভাঙানোটা বুঝি তোমার বিধানের অঙ্গ? কিন্তু সে কেবল আমি বালক বলে। তোমার বড়ো ছেলেদের যোগ তো নাকি ভাঙে না? আমি সেই অভাঙা যোগের একটু একটু আভাস পাই, আর সেই আভাস থেকে বুঝতে পারি, আমার পক্ষেও সে যোগ কোনও একদিন সম্ভব হবে। সম্ভব করো, শিগ্‌গিরই সম্ভব করো। চোখ তোমার কাছ থেকে মাঝে মাঝে ফিরতে পারে, কিন্তু প্রাণটা যেন কখনও না ফেরে। প্রাণটা তোমাতেই বাঁধা থাক। প্রাণের বাঁধন যেন কখনও না ছেঁড়ে।