ভালোবাসা-সমাচার

রাজা অষ্টম এডওয়ার্ডকে শর্ত দেওয়া হলো, ভালোবাসার মানুষটিকে পেতে চাইলে ছাড়তে হবে রাজসিংহাসন। এডওয়ার্ড দ্বিতীয় বার না ভেবেই নির্দ্বিধায় ভালোবাসার জন্য রাজসিংহাসন ছেড়ে স্বেচ্ছায় গ্রহণ করেছিলেন একেবারে সাদামাটা একটা জীবন।


ভালোবাসা জগতের সমস্ত প্রলোভনের ঊর্ধ্বে।


রাজপুত্র মেনেলাসকে ছেড়ে ভালোবাসার মানুষ প্যারিসের হাত ধরে হেলেন পালিয়ে গিয়েছিলেন ট্রয় নগরীতে। হেলেনকে প্যারিসের হাত থেকে ফেরত নিতে মেনেলাস ঘোষণা করলেন কঠিন এক যুদ্ধ! হেলেনের ভালোবাসাকে কেন্দ্র করে সংঘটিত বিখ্যাত ট্রয়যুদ্ধ চলমান ছিল দীর্ঘ বারো বছর। জ্বলেপুড়ে ছারখার-হয়ে-যাওয়া ট্রয় নগরীতে পড়ে ছিল লাশের স্তূপ।


ভালোবাসার শক্তি আগুনের তীব্রতার চেয়েও বিধ্বংসী।


মমতাজকে ভালোবাসার স্বাক্ষরস্বরূপ সম্রাট শাহজাহান একুশ বছর ধরে গড়ে তুলেছিলেন আগ্রার তাজমহল। শাহজাহান তাঁর বন্দিজীবনের শেষ সময়টুকু তাজমহলের দিকে নিঃসঙ্গ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে থেকে কাটিয়ে দিয়েছেন।


ভালোবাসা ভাঙতে যেমনি পারে, তেমনি পারে অমরত্ব গড়তেও।


বাংলাসাহিত্যের জাদুকর হুমায়ূনের হাত ধরে তাঁর প্রায় অর্ধেক বয়সি শাওন গাঁটছড়া বেঁধেছিলেন ভালোবাসার টানে। নিজের চেয়ে দশ বছরের ছোটো নিকের কাছে ভালোবাসার প্রকৃত ঠিকানা খুঁজে পেয়েছিলেন প্রিয়াঙ্কা চোপড়া।


ভালোবাসা বয়সের দেয়ালকে তোয়াক্কা করেনি কোনও যুগেই।


কাকে যেন ভালোবেসে না পেয়ে জীবনে আর বিয়েই করেননি লাস্যময়ী সুন্দরী অভিনেত্রী টাবু। এখনও কার নামে যেন সিঁথিতে বড়ো ভালোবেসে সিঁদুর পরেন বলিউড-লিজেন্ড রেখা।


অন্তরের গভীরে যে ভালোবাসার নিত্য বসবাস, তার জন্য আলাদা ঘরসংসারের দরকার পড়ে না।


সুবর্ণা মুস্তাফাকে ভালোবাসার পর আর কাউকেই ভালোবাসতে পারেননি হুমায়ূন ফরিদী। সুবর্ণা তাঁকে ছেড়ে যাবার পরও নিজের জীবনটা ভয়ংকর রকমের নিঃসঙ্গতায় অনায়াসেই পার করে দিয়েছেন তিনি।


জীবন পালটে যায়, ভালোবাসা পালটে যায় না কখনও।


ধোপার মেয়ে রজকিনীকে একটি বার মাত্র দেখবেন, এই আশায় ব্রাহ্মণ জমিদারপুত্র চণ্ডীদাস নদীর পাড়ে বড়শি বেয়েছেন দীর্ঘ বারো বছর। ভালোবাসা বাঁচাতে দুজনে বৃন্দাবনে পালিয়ে গিয়েছিলেন, তারপর আর ফিরে আসেননি। তাঁদের খোঁজ কেউ আর পায়নি কখনও।


ভালোবাসা কোনও জাতকুলের ধার ধারে না কখনওই।


যুগে যুগে পৃথিবী হার মেনেছে ভালোবাসার শক্তির কাছে। সময়ে অসময়ে ভালোবাসাই বাঁচিয়েছে মানুষকে। মানুষ, আর কিছু নয়, কেবল একটু ভালোবাসাকে আশ্রয় করে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখে। ঐশ্বর্য হারিয়েছে যে, তাকেও বাঁচানো যায়; তবে ভালোবাসা হারিয়েছে যে, তাকে বাঁচানো বড়ো শক্ত! জনম জনম ধরে ভালোবাসার জন্য মানুষ বিনা কুণ্ঠায় উৎসর্গ করেছে এমনকি নিজের প্রাণটাও। যুগে যুগে মানুষ সত্যিকারের ‘মানুষ’ হয়ে উঠেছে কেবলই ভালোবাসার আশ্চর্য জাদুকরি ছোঁয়ায়।


ভালোবাসা জাতকুল মানে না, ধর্ম-বিধর্ম বোঝে না, ঠিক-বেঠিকের ধার ধারে না। এই পৃথিবীর শুদ্ধতম সুখানুভূতির নাম ভালোবাসা।


ভালোবাসার কাছে পুরো পৃথিবীও নিমিষেই নত হয়ে যায়, ভালোবাসার টানে স্বয়ং ঈশ্বরও ধরা দিয়ে দেন। ভালোবাসার আলাদা কোনও রং হয় না, ভালোবাসা পরোয়া করে না জাতকুল, ধর্ম কিংবা বয়সের দূরত্বের। ভালোবাসা আজীবনই ঐশ্বরিক মহাশক্তির মতোই মহাপরাক্রমশীল।