বিশ্বাসের শাস্তি

ভালো না বেসে কাউকে 'ভালোবাসি' বলাটা পৃথিবীর সব থেকে বড়ো অপরাধ। আমি এই কয়েক দিন খেয়াল করে দেখলাম, তোমার জীবনে আমার অবস্থানটা আসলে ঠিক কোথায়!




তোমার জীবনে আমার কোনও জায়গাই নেই! তবে হ্যাঁ, তোমার পুরো প্রসেসিংটা খুব ভালো ছিল! প্রথমেই ফোন করা কমিয়ে দিলে, তারপর মেসেজ পাঠানোটাও কমালে। একসময় বললে, তুমি এতটাই বিজি হয়ে গেছ যে আমাকে একটা সামান্য 'গুড মর্নিং' লিখে পাঠানোর সময়টাও তোমার আর হয় না!




অথচ আগে এই মানুষটারই অন্য একটা রূপ দেখেছি আর বিশ্বাস করেছি। আমার একটাই কষ্ট, আমার বিশ্বাসের কাছে আমি হেরে গেলাম। নিজের বিশ্বাসের কাছে হেরে যাবার চাইতে বড়ো পরাজয় আর নেই। আমি আজ আমার ভালোবাসার কাছে পরাজিত হয়ে গেলাম!




শোনো, একটা অনুরোধ করি তোমাকে। কাউকে কখনও মিথ্যে আশ্বাস দিয়ো না। সব মেয়ে সমান না। এই পৃথিবীর কিছু মেয়ের ভেতরে পাহাড়সমান কষ্ট থাকে। তার মাঝে যদি সে ভালোবাসার কষ্টটাও পায়, তখন তার জীবনটা কী হয় এক বারও ভেবে দেখেছ?




আমি শুধুই তোমার দিকটা ভেবেছি আর তোমাকে বিরক্ত করা বন্ধ করে দিয়েছি। সবসময়ই মনে হয়েছে, এই বুঝি তুমি আমাকে নক দেবে! কিন্তু না, তোমার তো আমাকে নক দিয়ে কিংবা আমার কথা ভেবে নষ্ট করার মতো সময় এক সেকেন্ডও নেই!




আমার জীবনের কিছুই তুমি জানো না। কতটা কষ্ট এই বুকের ভেতরে চেপে রেখে আমাকে বাঁচতে হয়, তা আমি কখনও তোমাকে বলিনি। অবশ্য, তুমি শুনতেও চাওনি! এত এত মানুষকে খুশি করতে ব্যস্ত হয়ে থাকো, অথচ একটা বারের জন্যও এটা মাথায় এল না, তোমার কাছের এই মানুষটা কত যন্ত্রণা বয়ে চলেছে প্রতিনিয়ত!




আমি প্রতিটি কথাতেই হাসি বলে আমাকে ঠিক বোঝা যায় না, তাই না? তোমাকে কখনও বলা হয়নি, আমার এমন একটাও দিন নেই, যে দিনটা আমার কান্না না করে পার হয়। প্রতিটি দিন আমি কাঁদি। তবু তোমাকে কোনোদিনই বুঝতে দিই না যে আমার খারাপ লাগছে, এই মুহূর্তে তোমার কাছ থেকে একটু সময় আমার খুব দরকার...




এই কয়দিন আমাকে একটাও নক তুমি দাওনি। আমার চোখের জলের খবর তুমি রাখবেই-বা কেন! আমি তো কেউ হই না তোমার! অথচ দেখো, তুমি আমার সবকিছু হয়ে বসে আছ! আমার সঙ্গে এমন না করলেও পারতে তুমি...!




আমি তোমাকে কোনও দোষ দিচ্ছি না। কাকে কী বলব! আমি নিজেই অপরাধী! নিজেকে নিজে কোনোদিন ক্ষমা করতে পারব না। সারাজীবনই আমাকে যন্ত্রণা বয়ে বেড়াতে হবে। মনে হচ্ছে, এই পৃথিবীর সমস্ত যন্ত্রণা এক আমারই হোক! আমিই সবকিছুর জন্য দায়ী! আমি যা কষ্ট পাচ্ছি, এর চাইতে হাজার বেশি গুণ কষ্ট পেলেও আমার অন্যায়ের কোনও ক্ষমা নেই। নিজেকে ইচ্ছেমতো শাস্তি দিতে ইচ্ছে করছে। অসীম পরিমাণ শাস্তি পেতে ইচ্ছে করছে। সবাই মিলে আমাকে কষ্ট দিলেও আমার পাপের মোচন হবে না।




আমি আজ বুঝেছি, বাস্তবে আবেগ, ভালো মানুষ হওয়া, ভালোবাসতে পারা, এসবের ন্যূনতমও মর্যাদাও কেউ দিতে পারে না। মানুষগুলো কীরকম জানি হতদরিদ্র হয়ে গেছে! ভালোবাসা গ্রহণ করার ক্ষমতাটাই ঈশ্বর মানুষের কাছ থেকে তুলে নিয়েছেন যেন!




পৃথিবীটা এত যে কঠিন, কাউকে বিশ্বাস করাটা এত বড়ো অন্যায়, এসব আমি আগে বুঝিনি। আমি আজ আমার সমস্ত বিশ্বাসের কাছে, সমস্ত ভালোবাসার কাছে হেরে গেলাম। সবার কাছে ছোটো হয়ে গেলাম। কাউকেই আর কোনোদিনই বিশ্বাসে কিংবা ভালোবাসায় এর কোনোটাতেই আমি বাঁধতে পারব না। আমার এই ক্ষুদ্র জীবনে যা হয়েছে, তা আমি কোনোদিনই ভুলব না!




একটা বারও আমার কষ্ট আমি তোমাকে বুঝতে দিই না। সবসময়ই তোমার ভালোলাগাটাই বুঝতে চেয়েছি। আফসোস, তুমি এটার দামটাই কখনও দিলে না! তোমাকে ভালো রাখতে গিয়ে নিজেই প্রতিদিন কষ্টে মরে যাচ্ছি!




পৃথিবীটা শুধু কল্পনাতেই সুন্দর। কল্পনাতে তোমাকে যেভাবে ইচ্ছে সেভাবেই ভালোবাসা যায়। কল্পনাতে কেউ কাউকে কষ্ট দেয় না। কল্পনায় তোমাকে নিয়ে রাস্তা দিয়ে হাত ধরে হেঁটে যাওয়া যায়। সেখানে সমাজের কোনও বাধা নেই, আমাদের দেখে কেউ নেগেটিভলি নেয় না। কল্পনাতে তুমি আমাকে অ্যাভয়েড করো না, ছলে বলে কৌশলে পালিয়েও বেড়াও না। কল্পনাতে তুমি ঠিক তেমনভাবেই সবকিছু করো, যেমনভাবে আমার ভালো লাগে। কল্পনায় তোমার সঙ্গে আমার প্রতিদিন দেখা হয়, অনেক অনেক গল্প হয়। সেখানে তুমি আমাকে অনেক ভালোবাসো, তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরো, আমার পাশে পাশে থাকো, আমাকে একটুও অবহেলা করো না।




তখন একেক বার একেক দিকে নিয়ে যাওয়া যায় আমার ভালোবাসার গল্পটাকে। কল্পনায় তুমি আমাকে সত্যিই অনেক ভালোবাসো, জানো! আর আমিও অনেক অনেক হাসিখুশি থাকি সারাক্ষণই! কল্পনার সেই জগতে আমাকে কক্ষনো কাঁদতে হয় না, আমার আশাগুলি ভেঙে যায় না; সেখানে আমি অনেক সুখী একটা মানুষ হয়ে বাঁচি, জানো! আর থাকব না-ইবা কেন, বলো তো? কল্পনার জগতটা তো আর বাস্তব জগতের মতো নিষ্ঠুর নয়!