বিধি

মালতি পিসি আজ রাতে রেঁধেছিল ফুলকপি দিয়ে টাকি মাছের ঝোল, পোড়া বেগুনভর্তা আর ডাল। শীতকালের আগুন আগুন গরম ভাতের মজা বোধ হয় মানুষ স্বর্গে গেলেও আর পাবে না। কাজরি পড়াশোনার পাট চুকিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে খেতে বসল; চোখ তার ঘুমের দেশে চলে গেল প্রায়, সামনের মাস থেকেই মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হবে ওর।




“ও কাজরি, আরে, করছিস কী! মাছের বাটিটা আমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাক তো বাপু! এ বয়সে এসে পাপ করব নাকি?” ঠাকুমার এই কথা শুনে হেসে ফেলল কাজরি। “ঠাকুমা, আজকের টাকি মাছটা না খেলে তোমার স্বর্গে যাওয়াও বৃথা। এ ঘরে তো কেউ আসবে না এখন, একটু খেয়েই দেখো না... আমি কাউকে বলব না, মা-কালীর দিব্যি!”




নাতনির এ ধরনের কথা বিধবা পরমাদেবীর কাছে আজ নতুন নয়। ও প্রায়-প্রায়ই এমন মজার আর উদ্ভট কথাবার্তা বলে। “হুঁ, খাব রে, খুব খাব। তুই আর আমি যকন একসাতে সাদা থান পরব, তকন দু-জোনে মিলে কবজি ডুবিয়ে আমিষ খাব, কেমন?”




কথাটা বলামাত্রই পরমাদেবী জিভে কামড় দিলেন। ঠাট্টা করতে গিয়ে নাতনিকে এ কী সর্বনাশের কথা বললেন? ও কেন সাদা থান পরতে যাবে? সাথে সাথে কথা পালটে বললেন, “আমার আলুসেদ্ধটা আজ একটু খেয়ে দেকবি নাকি রে, দিভাই? দি একটু?”




কাজরি কথা ঘোরাতে দিল না, ঠাণ্ডা গলায় বলল, “উঁহু, আজ আমিষটুকুই খেয়ে নি, ঠাকুমা। আর ক’টা দিন পর থেকে তো আমাকেও ওই সেদ্ধই খেতে হবে তোমার সাথে বসে!”