বাংলায় লেখা: ছয়

৭৫। * তাছাড়া ওরা আর এখানে আসে না। * যা দরকার, তা ছাড়া কাজটা হবে কি?
* এছাড়া করার আর কী আছে? * এ ছাড়া আর কে হবে!
* এজন্যই তো আমি এখানে আসি।
* প্রথমে সবার প্রতি জানাই কৃতজ্ঞতা। (সাধারণ অর্থে) * প্রথমেই সবার প্রতি জানাই কৃতজ্ঞতা। (জোরালো অর্থে)
* আসলে সে একটা বদমাশ! (সাধারণ অর্থে) * আসলেই সে একটা বদমাশ! (জোরালো অর্থে)
* সে নিজ থেকে বললে খুব ভালো হয়। (সাধারণ অর্থে) * সে নিজ থেকে বললে খুবই ভালো হয়। (জোরালো অর্থে)
* তাহলে তো তুমি বলেওছিলে! * তিনি আমাকে সাহায্য করবেন শুনেছি। তা হলে তো আমার উপকার হয়। (এই বাক্যে চাইলে 'তা'-কে 'এটা', 'সেটা' ইত্যাদি দিয়ে replace করা যায়, যে-কাজটি প্রথম বাক্যে করা যায় না।)
* সে কবে গেল, তা তো জানি না! ('তাতো' নয়।)




তাহাই-এর অর্থে আমরা তা-ই ব্যবহার করি। যেমন, আমি তো তা-ই জেনে এসেছি। (‘তাই’ নয়।...আমি এসেছি, তাই সে ওখানে গেছে।...এখানে আবার ‘তা-ই’ নয়।) তা-ই যদি হয়, তবে আমরা যাচ্ছেতাই-কে যাচ্ছেতা-ই, তাইরে নাইরে নাইরে না-কে তা-ইরে না-ইরে না-ইরে না লিখব না কেন?
* তাহা-এর সংক্ষিপ্ত বা চলিত রূপ তা।
সাধুরূপ তাহা ও ছাড়া-কে সমাসবদ্ধ করার মাধ্যমে সংক্ষিপ্ত করে চলিতরূপ দেওয়া হয়েছে --- তাছাড়া।
সুতরাং, তাহা ছাড়া, এই জন্য, এই ছাড়া শব্দগুলোর সমাসবদ্ধ ও চলিতরূপ তা ছাড়া, এ জন্য, এ ছাড়া নয়; হবে তাছাড়া, এজন্য, এছাড়া।
তবে তা ছাড়া, এ ছাড়া, তা হলে রূপগুলোও ক্ষেত্রবিশেষে শুদ্ধ এবং ব্যবহার্য। (উপরের উদাহরণ দেখা যেতে পারে। পরে এ নিয়ে আরও লিখেছি।)
একটি শব্দরূপে ব্যবহৃত না হলে (অন্য শব্দের সাথে যুক্ত হয়ে গেলে) তাহাই-এর সংক্ষিপ্ত রূপ ‘তাই’ লিখতে গিয়ে হাইফেন ব্যবহার করে ‘তা-ই’ লেখার প্রয়োজন নেই। যেমন: যাচ্ছেতাই। তাইরে নাইরে নাই।




৭৬। • ওখানে, এখানে কিন্তু এ দেশ বা এ-দেশ, ও দেশ বা ও-দেশ। • সেসময়, সেদিন • Another day = আরেকদিন • A day more = আর এক দিন • Again = আরেকবার • Once more = আর এক বার • অনেক কিছু, সব কিছু (মাঝখানে স্পেস হবে।) • বেশিরভাগ (সমাসবদ্ধ ধরে) • ক্ষেত্রবিশেষে, একসময়, একটাসময় ও একটা সময় • সারাদিন, সারাটা দিন • পরমুহূর্তেই • যে-সকল, যে-কোনো। তাই, ‘যা-কিছু’ লেখা শ্রেয়। • “সে কী বলেছে, তা বুঝতে পারিনি।” “সে কী বলেছে বুঝতে পারিনি।” দুটোই শুদ্ধ। • বেঁচে থাকার অর্থ কী? বেঁচে থাকার কীই-বা অর্থ! বেঁচে থাকার কি কোনো অর্থ আদৌ আছে? • ‘ভাববার’ প্রমিত নয়, তাই ‘ভাবার’ হবে। • ‘কখনো’ ‘কখনো’ আপনি হুট করে কোনো একটা বইয়ের দোকানে ঢুকে পড়েন। আর ‘কখনও’ এখানে এসো না। (নেগেটিভ অর্থে ‘কখনও’, অন্য সব জায়গায় কখনো।) • “সব পোশাকই দেখতে একরকম।” বা, “সব পোশাক দেখতে একইরকম।” (ভুল করেও ‘সব পোশাকগুলি’ লিখবেন না।) • “দুই ভাই দেখতে একইরকম।” “দুই ভাইকে দেখতে একইরকম লাগে।” “দুই ভাইকে দেখতে একরকমই লাগে।” • আমি/আমরা ‘এগুই’। অন্যরা ‘এগোয়’। (তবে “আমি/আমরা এগোই।”-ও প্রচলিত।) • “একটা খবরের কাগজ প্রতিটি লাইন ধরে-ধরে পড়ি; গভীর মনোযোগের সাথে।” আমি এ ধরনের বাক্যের আসত্তি পরিবর্তন করে বলতাম, “গভীর মনোযোগের সাথে প্রতিটি লাইন ধরে-ধরে খবরের কাগজ পড়ি আমি।” তবে আগেরটিও শুদ্ধ। • বলেছিও, করেছিও। • প্রতিদিন, প্রতিক্ষণ তিনি ওকে ভাবেন। • সে এসেছিল। অবশ্য, চলেও গিয়েছে! • আপনি থাকতে বলেছেন, সে থেকেও গেল। • অন্য কেউ ওকে দেখেনি। • এ উদাসীনতা • ‘ওই’ (‘ঐ’ নয়) লেখাটাই শ্রেয়। (ওইখানে যেয়ো না। ওই দেখা যায়…) • “সে ওটা বলল, আর অমনি তুমি তা বিশ্বাস করে ফেললে!” “সে ওটা বলল, অমনিই তুমি তা বিশ্বাস করে ফেললে?” (আর অমনি=অমনিই) • “সে কী বলেছে, তা বুঝতে পারিনি।”, না কি “সে কী বলেছে, সেটি বুঝতে পারিনি।”, না কি “সে কী বলেছে বুঝতে পারিনি।”? …সবকটাই শুদ্ধ। • "যে কোনও মানুষই তা বুঝতে পারে। না কি “যেকোনও মানুষই তা বুঝতে পারে।”? —আমি লিখব: যে-কোনো মানুষই তা বুঝতে পারে। • “বেঁচে থাকার অর্থ কী?”, না কি “বেঁচেথাকার অর্থ কী?”, না কি “বেঁচে-থাকার অর্থ কী?”? — আমি লিখব: বেঁচে থাকার অর্থ কী? অথবা, বেঁচে থাকা-র অর্থ কী? • “আবারও ভাববার চেষ্টা করে ব্যর্থ হই।”, না কি “আবারও ভাবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হই।”? লিখুন: আবারও ভাবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হই। • “কখনও, আমি হুট করেই কোনও একটা বইয়ের দোকানে ঢুকে পড়ি।”, না কি “কখনও আমি হুট করেই কোনও একটা বইয়ের দোকানে ঢুকে পড়ি।”? লিখুন: কখনো আমি হুট করেই কোনো একটা বইয়ের দোকানে ঢুকে পড়ি। (কোনও এবং কোনো দুই-ই শুদ্ধ, তবে কোনো বেশি প্রচলিত। তবে আরও, কারও শুদ্ধ, আরো, কারো নয়।) • “সব পোশাকই দেখতে একই রকম।”, না কি “সব পোশাকই দেখতে একই রকমের।”? লিখুন: সব পোশাকই দেখতে একই রকম। একইভাবে, দুই ভাইকে দেখতে একইরকমই/ একই রকমই লাগে।…কোনটা হবে? লিখুন: দুই ভাইকে দেখতে একই রকম লাগে। অথবা, দুই ভাইকে দেখতে এক রকমই লাগে। • খুব হিসেব করে জয়ের দিকে এগোতে/ এগতে/ এগুতে থাকি।…কোনটা হবে? লিখুন: খুব হিসেব করে জয়ের দিকে এগোতে থাকি। এর কারণ: এ, ও একই উচ্চতার স্বর। একইভাবে, এমনি করেই তো এগোনো/ এগনো/ এগুনো যায়!...কোনটা হবে? লিখুন: এমনি করেই তো এগোনো যায়! • একটা খবরের কাগজ প্রতিটি লাইন ধরেধরে পড়ি, গভীর মনোযোগের সাথে।/ একটা খবরের কাগজ প্রতিটি লাইন ধরেধরে পড়ি গভীর মনোযোগের সাথে।…কোনটা হবে? (ধরেধরে? না কি ধরে-ধরে/ধরে ধরে?) লিখুন: [একটা] খবরের কাগজ পড়ি, লাইন ধরে ধরে, গভীর মনোযোগের সঙ্গে। • থাকবে না তো কী করবে?/থাকবে নাতো কী করবে?/থাকবে না, তো কী করবে?...কোনটা? লিখুন: থাকবে না, তো কী করবে? (“জানতাম না তো!” হবে, “জানতাম নাতো!” হবে না। ‘তো’ পদাণুটি আলাদা বসবে।) • বলেওছি, করেওছি। না কি বলেছিও, করেছিও।? —দুটো প্রকাশই সঠিক। • প্রতিদিন, প্রতিক্ষণ ওকে ভাবি।/প্রতিদিন প্রতিক্ষণ ওকে ভাবি।…কোনটি? লিখুন: ও আমার ভাবনায়, প্রতিদিন, প্রতিক্ষণ। কিংবা প্রথমটা। • সে এসেছিল। অবশ্য, চলেও গেছে!/সে এসেছিল। অবশ্য চলেও গেছে! — লিখুন: সে এসেছিল। এবং চলেও গেছে! • আমি থাকতে বললাম, সে থেকেও গেল।/আমি থাকতে বললাম, সে থেকে গেলও। —দুটো প্রকাশই সম্ভব ও বৈধ। • অন্য কেউ ওকে দেখেনি।/অন্যকেউ ওকে দেখেনি। — লিখুন: অন্য কেউ ওকে দেখেনি। (একইভাবে, অন্য কোনো, অন্য দিন, অন্য কিছু, অন্য কোনোদিন ইত্যাদি।) • আমি পৃথিবীর প্রতি উদাসীন, এ উদাসীনতার অর্থ মূর্খতা নয়।/আমি পৃথিবীর প্রতি উদাসীন, এই উদাসীনতার অর্থ মূর্খতা নয়। — লিখুন: আমি পৃথিবীর প্রতি উদাসীন; এ-উদাসীনতার অর্থ মূর্খতা নয়। • ওই যে পুকুরটা দেখছ…/ ঐ যে পুকুরটা দেখছ…কোনটা হবে? লিখুন: ওই যে পুকুরটা দেখছ... আবার এমনও সম্ভব: ওই যে-পুকুরটা দেখছ... (তবে বাক্য দুইটির অর্থ একটু ভিন্ন। কীরকম? “ওই যে কথায় আছে না, পাছে লোকে কিছু বলে!” “ওই যে-কথাটা বললে, তা নিয়ে একটু আলাপ হওয়া দরকার।” এই দুই বাক্যের অর্থ নিয়ে ভাবলে বুঝতে সহজ হবে।) • সে ওটা বলল আর অমনিই তুমি তা বিশ্বাস করে ফেললে!/সে ওটা বলল, আর অমনিই তুমি তা বিশ্বাস করে ফেললে! — লিখুন: সে ওটা বলল, আর অমনি তুমি তা বিশ্বাস করে ফেললে! (আর-এর পর অমনি লিখলেই যথেষ্ট। ‘আর’ এবং ‘-ই’ একই অর্থ প্রকাশ করে। চাইলে এভাবেও লেখা যেত: সে ওটা বলল, অমনিই তুমি তা বিশ্বাস করে ফেললে!)




৭৭। ‘নাকি’ বনাম ‘না কি’
নাকি। ‘কি’-র বদলে ‘নাকি’ ব্যবহারে অর্থের মাত্রা একটু পরিবর্তিত হয়, প্রশ্নকারীর অনিচ্ছা বা বিস্ময় যেন এসে যুক্ত হয় — তুমি ওদের সঙ্গে কলকাতা চললে নাকি? ও লুকিয়ে সিগারেট খায় নাকি? ওর এ চশমাটা নতুন নাকি?
চাইলে উপরের বাক্যগুলিকে এভাবেও বলা যেত: তুমি ওদের সঙ্গে কলকাতা চললে কি? ও লুকিয়ে সিগারেট খায় কি? ওর এ চশমাটা নতুন কি? (এভাবে লিখলে সরাসরি প্রশ্ন করা বোঝায়।)
এবং
না কি। নির্বাচনের বা সম্ভাবনার বিকল্প, অর্থাৎ যে বাক্যের উত্তর হ্যাঁ/না দিয়ে দেওয়া যায় —
আবাহনী এবার চ্যাম্পিয়ান হবে, না কি মহামেডান? যাবে, না কি থাকবে?




৭৮। কোনটা হবে?
ওখানে/ ওইখানে/ ওই খানে যেয়ো না। এখানে/ এইখানে/ এই খানে বাসবী বসে ছিল অনেক সময় ধরে। এদেশ/ এ দেশ/ এইদেশ/ এই দেশ যেন সোনার খনি! ওটা/ ওইটা সরিয়ে রাখো। সেসময়/ সে সময়/ সেইসময়/ সেই সময় সময়টাই তো বড়ো উত্তাল হয়ে ছিল! সেদিন/ সে দিন/ সেইদিন/ সেই দিন এলেও পারতে! আরেকদিন/ আরেক দিন এসো। আরেকবার/ আরেক বার ভেবে দেখো। অনেককিছুই/ অনেক কিছুই তো বলতে ইচ্ছে করে। সবকিছু/ সব কিছু এখনও শেষ হয়ে যায়নি। বেশিরভাগ/ বেশির ভাগ লোকই মেলায় গিয়েছিল। অনেকক্ষণ/ অনেক ক্ষণ ধরেই অপেক্ষায় আছি, মশাই! একসময়/ এক সময় আমাদের‌ও সব ছিল। একটাসময়/ একটা সময় ওদের‌ও ধৈর্যচ্যুতি ঘটেছিল। সারাদিন/ সারা দিন ঘুরেফিরেই তো খাও, দেখি! সারাটাদিন/ সারাটা দিন এভাবে নষ্ট করলে! সারাদুপুরের/ সারা দুপুরের ঘুমটা, কেড়ে নিল মনটা! ঠিক পরমুহূর্তেই/ পর মুহূর্তেই সম্বিত ফিরে পেলাম! যা কিছু/ যা-কিছু/ যাকিছু পেলাম, সব‌ই তো তোমার দান!




দেখা যাক।
ওখানে/ওইখানে যেয়ো না। গদ্যে বা পদ্যে ‘ওখানে’ ও ‘ওইখানে’ দুটো রূপই গ্রহণযোগ্য। এখানে/এইখানে বাসবী বসে ছিল অনেক সময় ধরে। এ-দেশ/এই দেশ যেন সোনার খনি! ওটা সরিয়ে রাখো। সে-সময়টাই/সেই সময়টাই তো বড়ো উত্তাল [হয়ে] ছিল! সেদিন এলেও পারতে! আরেকবার ভেবে দেখো। (এখানে ‘আরেকবার’ ক্রিয়াবিশেষণ।) অনেক কিছুই তো বলতে ইচ্ছে করে। (এখানে ‘অনেক’ বিশেষণ, ‘কিছু’ সর্বনাম।)  অনেকক্ষণ ধরেই অপেক্ষায় আছি, মশাই! (‘অনেকক্ষণ’ সমাসবদ্ধ; ‘অনেকক্ষণ ধরে’ ক্রিয়াবিশেষণবন্ধ। সারাদিন ঘুরেফিরেই তো খাও, দেখি! সারা দুপুরের ঘুমটা, কেড়ে নিল মনটা! (‘সারা’ বিশেষণ; ‘দুপুর’ বিশেষ্য; ‘সারা দুপুরের’ সম্বন্ধ পদ; ‘সারা দুপুরের ঘুমটা’ বিশেষ্যবন্ধ, কর্মকারক। ঠিক পরমুহূর্তেই সম্বিত ফিরে পেলাম! (‘পরমুহূর্তেই’ ক্রিয়াবিশেষণ।) যা-কিছু পেলাম, সব‌ই তো তোমার দান!




৭৯। তা ছাড়া / তাছাড়া
‘তা ছাড়া’ লিখবেন, না ‘তাছাড়া’ লিখবেন? ‘এবার’ বা ‘প্রতিদিন’-এর জন্য কী নির্দেশ, কেননা এগুলোও একই ধরনের শব্দ? ‘তা ছাড়া / তাছাড়া’ সূত্রে কিছু কথা মাথায় এল।
‘তা ছাড়া’ বা ‘তাছাড়া’ যাই লিখি না কেন, দুটোই ক্রিয়াবিশেষণ, অর্থ ‘তা ছেড়ে দিয়ে’ বা ‘তা বাদে’, কদাচ ‘তদুপরি’। ‘তা ছাড়া’ দুটো পদ মিলিয়ে একটি ক্রিয়াবিশেষণ, adverbial phrase বা ক্রিয়াবিশেষণীয় পদবন্ধ। ‘তা’ সর্বনাম এবং ‘ছাড়া’ তার অনুসর্গ, গঠনগতভাবে ‘ছাড়া’ একটি কৃদন্ত (কৃৎপ্রত্যয়ান্ত) পদ, ছাড়্ (ধাতু) - আ (বাংলা কৃৎ প্রত্যয়)। অন্যদিকে, ‘তাছাড়া’ একটি সমাসবদ্ধ পদ, প্রথমে নামপদ পরে কৃদন্ত পদ থাকার দরুন একে উপপদ তৎপুরুষ সমাস বলা চলে।




এগুলো যে সত্যিই ক্রিয়াবিশেষণের কাজ করছে, এবারে সেটা প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। ধরা যাক এই বাক্য, ‘তুমি খেলনাটা নিতে পারো, তা ছাড়া/তাছাড়া পেনসিলটাও নিতে পারো।’ প্রশ্ন হলো --- ‘তা ছাড়া/তাছাড়া’ ‘পেনসিল’-এর বিশেষণ, না ক্রিয়া ‘পারো’-র বিশেষণ।




‘তুমি খেলনাটা নিতে পারো, নীল পেনসিলটাও নিতে পারো।’ শব্দক্রম উলটেপালটে আমরা কি বলতে পারি, ‘তুমি খেলনাটা নিতে পারো, পেনসিলটাও নীল নিতে পারো’? তা যদি করি, দেখতে পাচ্ছি বিশেষণ ‘নীল’-কে ক্রিয়ার পাশে নিয়ে এসে কোনো অর্থই হলো না। অর্থাৎ, ‘নীল’ পেনসিলের পাশেই অর্থবহ ছিল --- সে বিশেষ্যের বিশেষণ, এবং ‘নীল পেনসিলটাও’ একটি বিশেষ্য পদবন্ধ বা অবিচ্ছেদ্য noun phrase. কিন্তু যদি বলি, ‘তুমি খেলনাটা নিতে পারো, তা ছাড়া/তাছাড়া নিতে পারো পেনসিলটাও’, অথবা ‘তুমি খেলনাটা নিতে পারো, পেনসিলটাও তাছাড়া নিতে পারো’, তাহলে দু-ক্ষেত্রেই অর্থবোধ অবিঘ্নিত রইল। ‘তা ছাড়া/তাছাড়া’ ক্রিয়ার পাশে এসেও অর্থ বজায় রাখল, অর্থাৎ সে ক্রিয়ার বিশেষণ।




এভাবে ‘তা ছাড়া/তাছাড়া’ যে বাক্যে ক্রিয়াবিশেষণের কাজ করছে, সে ব্যাপারে নিঃসংশয় হওয়া গেল। আগেই বলেছি, আলাদাভাবে ‘তা ছাড়া’ একটি ক্রিয়াবিশেষণীয় পদবন্ধ (adverbial phrase), ‘তাছাড়া’ একটি ক্রিয়াবিশেষণ এবং সমাসবদ্ধ পদ (সর্বনাম + কৃদন্ত পদ)।




এভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ‘তা ছাড়া’ ও ‘তাছাড়া’-য় মূলগত কোনো তফাত নেই। একই উদ্দেশ্যে এক ক্ষেত্রে আমরা ব্যবহার করছি দুটো পদ নিয়ে গঠিত একটি পদবন্ধ (phrase), অন্য ক্ষেত্রে দুটো পদ নিয়ে একটা সমাসবদ্ধ পদ। বাংলা সমাসপ্রবণ ভাষা বলে ‘তাছাড়া’-তে কোনো দোষ দেখি না। (কিন্তু যদি বলি ‘এ জিনিসটা ছাড়া আমার চলবে না’ সেখানে অবশ্যই আলাদা করে লিখব। যেমন: তুমি ওটা রাখতে পারতে, কিন্তু তা ছাড়া আমার যে চলে না!) সেখানে কোনো অভিধান যদি ‘পৃথক দুটি শব্দ, তাছাড়া নয়’ বলে নির্দেশ দেয়, তা হলে তাকে বলতে হবে, সমাস বনাম অসমাসের ব্যাপারে সাধারণ নীতিটি কী হওয়া উচিত --- ‘সেভাবে’, না ‘সে ভাবে’; ‘এবার’, না ‘এ বার’, যে-সকল দৃষ্টান্ত অসংখ্য ও যাদের বেশিরভাগই ক্রিয়াবিশেষণ। বলাই বাহুল্য, এর কোনো সর্বগ্রাহী সমাধান কারও হাতে নেই।




৮০। তা-ও, এ-ও, যা-ও, না-ও, গা-ও ইত্যাদির ব্যবহার কয়েকটি উদাহরণ দেখলেই মনে থাকবে।
তাও দর্শনের উদ্‌ভব হয়েছিল চীনে। আমি এলাম, তা-ও এমন অমনোযোগী হয়ে আছ!
এ-ও বলে দিতে হলো তোমাকে!
ওখানে এখুনিই যাও। যা-ও একটু রাজি হয়েছিল, এখন তো বোধ হয় আবার বেঁকে বসবে।
যা খুশি নাও এখান থেকে। সে পেশায় মাঝি, নাও চালিয়ে খায়। সে কিন্তু আজ না-ও আসতে পারে।
এবার একটা গান গাও? এখন কি তোমার গা-ও ধুয়ে দিতে হবে?




(চলবে…)
Content Protection by DMCA.com