বয়েসি স্বপ্ন


এই যে বহুকাল ধরে ঘরবন্দি হয়ে আছে স্বপ্নরা, তাই তো
ইচ্ছের বয়ামে ছটফট করছে ধুলোয়-জমা আটপৌরে জীবন!
আমি ছুটছি স্বপ্নের পিছে, আর স্বপ্নরা দৌড়চ্ছে এক অনিশ্চয়তার রেলপথ ধরে।


মা, আমার জীবনে ইদ আসেনি এবারও।
এবারও তোমার কোলে মাথা রেখে বলা হয়নি
রাজ্যের যত স্বপ্নের কথা---
একটা তিনরুমের ছাদ-লাগোয়া নিরিবিলি ঘরের কথা,
তোমায় নিয়ে শহর-দাপানো লাল রঙের গাড়ির কথা।


প্রতি বারই কথা দিয়েছি, সামনের বছর সব ঠিক হয়ে যাবে, মা।
কিন্তু দ্যাখো না, প্রতি বারই একসমুদ্র দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে
তোমার মুখোমুখি হতে গিয়েও কেমন পালিয়ে বেড়াই!


আমার কিছুতেই যেন কিছুই ঠিক হয় না!
আমার স্বপ্নরা ধরা দেয় না, মা!
তোমাকে দেওয়া কথাগুলোর সাথে বাস্তবতার যোগসূত্র
কিছুতেই ঠিক মেলাতে পারছি না!
সাধ আছে, অথচ সাধ্যই যেন নেই!
এমন সাধ্যশূন্য সাধবোঝাই জীবন দিয়ে কী হয়!


এবারও বলা হয়নি, ‘শাড়ি পরো, তোমায় নিয়ে দার্জিলিং যাব!’
কিংবা বলা হয়নি, ‘এই ধরো, প্রথম বেতনের টাকা!’
স্বপ্নের বয়স বাড়ছে, বাস্তবের বয়স কমছে।


মা, আমার কবে এক অখণ্ড অবসর মিলবে?
ইচ্ছের কাঁধে জীবন সঁপে আমি কবে বাড়ি ফিরব?
কবে আনন্দে চিৎকার করে তোমাকে জড়িয়ে ধরে বলব…
‘ও মা! শুনছ? আমি একটা চাকরি পেয়েছি!’


স্বামীকে হারিয়েছ স্বপ্ন দেখতে শেখার আগেই!
আর এখন, তোমার একমাত্র মেয়ের অক্ষমতায় স্বপ্নকেও হারাচ্ছ ক্রমশ…!
মা, তোমার কি তবে কেবলই দুঃখ পেতে জন্ম হয়েছিল?