প্রার্থনায় মুহূর্তযাপন

তুমি আমাকে এত দয়া করেছ যে আমি তোমাকে চাওয়ামাত্রই পাই। চাওয়ামাত্রই পাই, অথচ তোমাকে হারিয়ে ফেলি। দিনের অধিকাংশ সময় তোমাকে বিস্মৃত হয়ে শুষ্ক কাজে বা আমোদে কাটাই। দোষ দিই তোমাকে, "তুমি আমাকে মুক্তি দিলে না।"




মুক্তির মন্ত্র তুমি আমাকে কবে শিখিয়েছ, আমি ক্রমাগতই তা ভুলে যাই। প্রার্থনা করলেই তোমাকে পাই, আর তুমি তো বলেইছ, “অনবরত প্রার্থনা করো।” তোমাকে পাবার এমন সহজ উপায় পেয়েও আমি বলি "তোমাকে পেলাম না।" আমি তো তোমায় পেয়েছি। তুমি যখন ডাকলেই আসো, তখন আর তোমার দিক থেকে কী করবার আছে? আমি তোমায় ডাকিনে, তাই পাইনে। এ বিষয়ে তোমার আর কিছু করবার নেই।




আমি যদি নিয়ত প্রার্থনাশীল হতে পারি, তবেই তোমাকে আমার পাওয়া হলো। আর আমি তোমায় দোষ দেবো না। এখন থেকে প্রার্থনা আমার নিত্যসম্বল হলো। এই প্ৰাৰ্থনাই দেখছি তোমার কৃপার স্রোত। আমি এই কৃপার স্রোতে না পড়ে আর যত‌ই চেষ্টা করি না কেন, তোমাকে পাবো না।




এই প্রার্থনার মধ্যেই তুমি সমুদয় ভেদাভেদতত্ত্ব লুকিয়ে রেখেছ। আমি যে তোমার নিকট প্রার্থনা করিনে, তোমাকে চাইনে, তোমাকে পাইনে, এ-ই আমার তোমা থেকে ভেদ। আর ভেদ তো যেমন-তেমন নয়। এই অবস্থাই সমুদয় পাপের, সমুদয় দুঃখের কারণ। আর আমি যে তোমার কাছে প্রার্থনা করি, তোমাকে চাই, এতে আমার তোমার সঙ্গে অভেদ; আমার স্বাধীনতা, আমার স্বাধীন ইচ্ছে আমি তোমাতে বিলীন করতে চাই।




এই প্রার্থনায় তোমার কৃপা অবতীর্ণ হয়ে তোমার সঙ্গে আমার মৌলিক অভেদ দেখিয়ে দেয়, তুমি আমার প্রাণ, আমার আত্মা, আমার বিশ্ব, আমার সর্বস্ব রূপে প্রকাশিত হও। আমি যে তত্ত্ব বুঝবার জন্যে এত চেষ্টা করি, সেই তত্ত্ব এই অবস্থায় তুমি যেমন করে বোঝাও, তেমন করে আর কোনও অবস্থায়ই বুঝিনে। আমি তবে এই প্রার্থনা নিয়েই থাকব। প্রার্থনা আমার নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস হোক, আমার অন্ন হোক, আমার জল হোক, আমার বিশ্রাম হোক, আমার আমোদ হোক।




প্রার্থনা যে আমার এসব হয়নি, আমি যে প্রার্থনা ছেড়ে প্রায় সবক্ষণই থাকি, তাতে বুঝতে পারছি, আমি কত পাপী, আমি তোমার ধর্মজগৎ থেকে কত দূরে। আমার জ্ঞানালোচনায়, আমার বক্তৃতায়, উপদেশে, আমার কাজকর্মে কী লাভ যদি আমি তোমার এই নিয়ত-প্রবাহিত কৃপাস্রোতে না পড়লাম? আর দেরি করব না, এই আমি পড়লাম তোমার কৃপাস্রোতে, আমাকে তুমি এতে ভাসিয়ে নাও।