‘তুমি’তেই ‘আমি’র প্রকাশ

আমি আমাকে তুমি ছাড়া ভাবতে চাই, তাই আমার ভয় হয়, দুঃখ হয়। আমি তো কখনও তুমি ছাড়া নই। আমি তো আমাকেই, আমার জীবনের অসংখ্য কথা... ক্রমাগতই ভুলছি, ভুলে থাকছি। যখন আমি তা ভুলে থাকি, তখন তো আর তা নষ্ট হয় না, তোমাতে থাকে। আবার তুমি তা প্রকাশ করো।




তোমার নিত্য প্রবাহশূন্য ভাব থেকে এ সকল তত্ত্ব ক্রমাগতই আমার প্রবাহময় জীবনে আছে। আছে, আবার চলে যাচ্ছে। আমি যখন ঘুমিয়ে যাই, 'আমি'-ভাবনা পর্যন্ত আমার থাকে না, তখনও আমার জীবন, আমার ব্যক্তিত্ব, তোমাতে অক্ষুণ্ণভাবে থাকে। থাকে, আবার জাগ্রত জীবনে প্রকাশিত হয়। আমি কখনও তোমাকে ছেড়ে নই, তোমার নিত্যস্বরূপের অঙ্গীভূত হয়ে আমি সর্বদা রয়েছি।




জন্ম, মৃত্যু, জীবনের অসংখ্য ঘটনাপ্রবাহ, এ সকল তো কিছুই নতুন নয়, সকলই তোমার প্রবাহাতীত নিত্যস্বরূপের অঙ্গীভূত। আমি যখন এই রূপে আমাকে তোমার সঙ্গে নিত্যযুক্ত বলে দেখি, তখন আমার কোনও দুঃখ থাকে না, কোনও ভয় থাকে না। কিন্তু এই দিব্যদৃষ্টি আমার বেশিক্ষণ থাকে না। আমি ক্রমাগতই এই দৃষ্টি হারিয়ে সাংসারিক ধারণায় গিয়ে পড়ছি।




আর কত দিন এইভাবে যাবে? আমাকে তোমার সত্যলোকে, ধ্রুবলোকে নিয়ে যাও। জীবনের সাধ পূর্ণ করো। তুমি ছাড়া আমি, আর আমি ছাড়া তুমি, এই ভ্রম আমার মন থেকে একেবারে দূর করে দাও। আমি তোমাতে নিত্য বাস করি, জীবনে তোমার দিব্য অভিপ্রায় দেখি, নিত্যলীলা দেখি।




ছোটো ছোটো ঘটনার মধ্যে তোমাকে সহজে দেখতে পাওয়া যায় না। কিন্তু ছোটো-বড়ো ভেদই-বা কেন করি? তুমি যাতে আছ, তুমি যা করছ, তা ছোটোই-বা ভাবছি কেন? তোমার আবির্ভাবে তো সবই বড়ো, সবই মহিমান্বিত হচ্ছে।




আর আমার জীবনে বড়ো ঘটনাই-বা কম ঘটালে কি? কী সব কাজ করাচ্ছ ভাবলে অবাক হয়ে যাই। এসব কাজের উপর এখনই কত লোকের জীবন-মরণ, সুখ-দুঃখ নির্ভর করছে! পরে আরও কত লোক এ সকল কাজের প্রভাবের ভেতর আসবে! আমাকে আর সংসারে ফেলে রাখলে হবে না। আমাকে সত্যলোকের, ধ্রুবলোকের বাসিন্দা করতে হবে । আমার চিন্তা, ভাব, কথা, কাজ, সব তোমাকে দিয়ে ঢাকতে হবে, তুমিময় করতে হবে।