প্রাণ যখন জীবন হয়ে ওঠে/ তৃতীয় অংশ


১০১। মাঝে মাঝে সময়ের কাছ থেকে সময় চেয়ে নিতে হয়, নিজেকে সময় দিয়ে নিজেকেই খুঁজে নেবার জন্য। কখনও কখনও শূন্যতাও খুব ভালো লাগে, নির্জনতা ভালো লাগে, নিস্তব্ধতা ভালো লাগে, নীরবতা ভালো লাগে, এমনকী প্রিয় মানুষের দূরত্বও ভালো লাগে, ক্লান্তি আর বিষণ্ণতাকেও ভালো লাগে---সেইসব সময়ে নিজেকে অনেক বেশি ভালো লাগে। বিশেষ করে, যখন মন খারাপ হয়ে থাকে, তখন ‘তোমার কি মন খারাপ?’ ও ‘তোমার কেন মন খারাপ?’ এই দুটো প্রশ্ন শুনলে মন আরও খারাপ হয়ে যায়, তার চাইতে বরং চুপ থেকে নিজের মনটাকে ভালো হবার জন্য সময় দিতে ভালো লাগে। একাকিত্বে নিজেকে ভালোবাসার চেয়ে উত্তম সময় আর হয় বলে মনে হয় না। নিজেকে ভালোবাসার মতো সুন্দর কাজ আর কী হতে পারে? আমি তো নিজেই নিজেকে ভীষণ ভালোবাসি, তাই আর কে ভালোবাসল, কে বাসল না ওসবে আমার সত্যিই কিছু এসে যায় না।
১০২। প্রতিদিনই সহস্র উপেক্ষা সহ্যের ক্ষমতা অর্জন করার চেষ্টা করি---কোনও একদিন কোনও এক ভালোবাসার মানুষের যোগ্য হয়ে উঠব বলে।
১০৩। দেশি কুকুর ও বিদেশি কুকুর, এই দুইয়ের মধ্যে প্রধান তফাতটা কোথায় জানেন? দেশি কুকুরের মনটা দেশি, আর বিদেশি কুকুরের মনটাও বিদেশি। এই অর্থে, সব কুকুরই একই রকমের নয়। কিছু কুকুর গু খায়---খাবারের অভাবে নয়, অভ্যাসের কারণে।
১০৪। কার সমালোচনা নেওয়া যাবে, আর কারটা যাবে না, এইটুকু বুঝতে না পারলে জীবনে কিছু ফালতু মানুষের অনুপ্রবেশ ঘটে যায়। দুই ধরনের লোকের সমালোচনা নেবার কিছু নেই। যে না বুঝে বা অর্ধেক বুঝে সমালোচনা করে। যে সমালোচনা করার নামে নিন্দা করে। সমালোচনা হয় কাজ নিয়ে, নিন্দা হয় ব্যক্তি নিয়ে।
১০৫। অহেতুক তর্কে জড়াই না, নিজেকে সে তর্কের বা যে তর্ক করছে, তার অনেক ঊর্ধ্বে নিয়ে যাই। যার-তার সঙ্গে তর্কে জড়ানোর মানেই হচ্ছে, যার-তার লেভেলে নিজেকে নামিয়ে ফেলা। যে ব্যাপারে আমি নিজে কনফিডেন্ট, সে ব্যাপারে নিজেকে প্রমাণ করার কিছুই নেই। সবচাইতে বড়ো কথা, যার কাছে নিজেকে প্রমাণ করা না করায় কিছুই এসে যায় না, তার কোনও মন্তব্যকেই আমি পাত্তা দিই না।
১০৬। আমি কোনও সফল মানুষ নই, সফলতা অর্জনের লক্ষ্যে আমি কিছুই করি না এবং কিছু করিওনি, আমি শুধু নিজের কাজটা সবচেয়ে ভালোভাবে করার চেষ্টা করি বার বার, বাকিটা এমনিতেই হয়ে যায়।
১০৭। দুই উপায়ে মানুষ ব্যর্থ হয়। পরিশ্রম করে ও পরিশ্রম না করে। মুখে যদিও প্রায় লোকই বলে, এত চেষ্টা করেও সফল হতে পারলাম না, আসল ঘটনা ভিন্ন। তাই কোনও কাজে সফল হতে না পারলে কোনও কৈফিয়ত না দিয়ে চুপ থেকে অন্য কোনও কাজে হাত দেওয়া ভালো। কিংবা এ-ও করা যায়, সেই কাজটাই অন্যভাবে করার চেষ্টা করা। পালিয়ে যাওয়া যাবে না, ব্যর্থতার প্রধান কারণটাই হচ্ছে, পালিয়ে যাওয়া। এক কাজে ব্যর্থ হবার মানেই, অন্য কাজে সফল হবার রাস্তা খুলে গেল!
১০৮। অনেকেই টাকা জমায় আর নতুন নতুন ঝামেলা মাথায় নেয়। যদি এমন হয়, ঝামেলার মধ্যে বাঁচতে কারও ভালো লাগে, তাহলে এটা ঠিক আছে। কিন্তু আরও টাকা জমানোর উদ্দেশ্যে ঝামেলায় জড়ানোর সত্যিই কি কোনও মানে আছে?
১০৯। মানুষ তার জীবনের প্রায় অর্ধেক সময়ই ঘুমের মধ্যে কাটিয়ে খরচ করে ফেলে। ভাবা যায়! ঘুম আর মৃত্যু, এই দুইয়ের মধ্যে কোনও তফাত তো নেই! বেঁচে থাকার সময়ে মৃত্যুকে যতই কমিয়ে আনা যায়, জীবন ততই সুন্দর হয়ে ওঠে। ঘুমের দৈর্ঘ্য অনুযায়ী মানুষের এগোনো কম বেশি হয়ে থাকে। তারাই আরামে ঘুমোতে পারে, যাদের জন্য আরেকজন তার নিজের ঘুমটা নষ্ট করছে!
১১০। দায়িত্বহীনতাই চরিত্রহীনতা, বিবেকহীনতাই মূর্খতা। যতদিন আমরা প্রজননযন্ত্রের দিকে তাকিয়ে চরিত্র মাপব, আর সার্টিফিকেটের দিকে তাকিয়ে জ্ঞান মাপব, ততদিন আমরা এরকমই নির্বোধই থেকে যাব!
১১১। পৃথিবীর সবচেয়ে নির্ভেজাল সুখ হলো সেক্স, একমাত্র নির্ভেজাল হাসি শিশুদের, পুরোপুরিই নিঃস্বার্থ মানুষ হচ্ছে নবজাতক।
১১২। বিনয়ী ও ভদ্রদের সবাই পছন্দ ও বিশ্বাস করে। এজন্যই বেশিরভাগ ভণ্ডই বিনয়ী, মিষ্টভাষী ও নিখুঁত অভিনেতা হবার পথ অবলম্বন করে। দুইনম্বরি করার জন্য বিনয়ের চাইতে মোক্ষম অস্ত্র আর নেই।
১১৩। ‘ভালোবাসি’ শব্দটার চেয়ে ‘বিশ্বাস করি’ কথাটা ঢের শক্তিশালী। লোকে ভালোবাসা খুঁজতে খুঁজতে একসময় বিশ্বাস হারিয়ে ভালোবাসা ও নিজেকে, দুই-ই হারিয়ে ফেলে!
১১৪। মুভি আর বই, এই দুইয়ের মধ্যে একটা বিশাল ফারাক হলো, মুভিতে চরিত্রগুলো অন্যের পছন্দের রংঢং আর চরিত্রে তৈরি। বইয়ের সব কিছুই, সব চরিত্রই নিজের রংতুলিতে যেমন পছন্দ আঁকা যায়। এ কারণেই ফরমায়েশি বই পড়াটা খুব ঝুঁকির ব্যাপার!
১১৫। পরমসৌভাগ্যক্রমে এ জন্মে মানুষ হয়ে জন্মেছি, পরের বার আদৌ মানুষ হয়ে জন্মাব কি না, আদৌ জন্ম নেব কি না তারই তো কোনও গ্যারান্টি নেই। একটাই জীবন, কারও ক্ষতি না করে নিজের খুশিতে বরবাদ করে দেওয়াই উত্তম। জীবনে অন্তত ততটুকু বড়ো হতেই হয়, যতটুকু হলে নিজের খুশিতে অর্থ ও সময় ওড়ানো যায়!
১১৬। পৃথিবীর আশি ভাগ সমস্যাই টাকায় সমাধানযোগ্য, বাকিগুলো প্রেমঘটিত জটিলতা আর মানবিক দ্বন্দ্ব। খাওয়াদাওয়া নিয়ন্ত্রণে রাখলে যেমনি ভুঁড়ি কমে যায়, ঠিক তেমনি আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখলে খরচ অনেক কমে যায়।
১১৭। বৃদ্ধকালেই মানুষের সঙ্গীর প্রয়োজন হয় সবচেয়ে বেশি, অথচ সে সময়েই মানুষ সবচেয়ে বেশি একা হয়ে পড়ে। বৃদ্ধদের দেখাশোনা করে না যে লোক, তাকেও মানবিক বলার কোনও কারণই দেখি না!
১১৮। আমার কাছে হাস্যকর লাগে যখন দেখি, কোনও জীবপ্রেমী মানুষ এক জীবের প্রাণ বাঁচাতে আরেক জীবকে মাছ, হাঁস, মুরগি, গরু-ছাগলের মাংস খাওয়ায়। অথচ এরাও যে প্রাণ, তারা এটা বেমালুম ভুলে যায়। এই অর্থে, নিরপেক্ষ জীবপ্রেমী হওয়া একরকম অসম্ভবই।
১১৯। কথা যত কম বলা যায়, ভুল ততই কম হয়। যত বেশি কথা, তত বেশি ভুল। কেউ কেউ কথা বলে ভুল করে, কেউ কেউ ভুল করে কথা বলে। কেউ চুপ থেকে বিপদে পড়েছে, এমন ঘটনা কম।
১২০। জীবন থেকে একজন চলে যাবার মানে জীবনে আরেকজন আসার সম্ভাবনা তৈরি হওয়া। কাছের মানুষের কাছ থেকে আমরা যা যা আশা করি, সেগুলি কেবল একজনের কাছেই পাওয়া যায়, এরকম বিশ্বাস নিতান্তই ভুল। মনের মতো মন কেবল একটাই নয়, ভাগ্যে থাকলে খুঁজলে আরও পাওয়া যায়।
১২১। ঈশ্বর মানেই বিশ্বাস। বিশ্বাস করলে ঈশ্বর আছে, বিশ্বাস না করলে ঈশ্বর নেই। সুনীলের লেখায় এরকম কিছু একটা পড়েছিলাম: ভূত ও ভগবান কেবল বিশ্বাসীদেরই বিরক্ত করেন।
১২২। পৃথিবীতে সাড়ে চার হাজারের মতো ধর্ম বিদ্যমান। প্রতিটি ধর্মের বিশ্বাসীরাই বিশ্বাস করে, কেবল তাদের নিজেদের ধর্মই সত্য, বাকি সবই মিথ্যা। তাই এটা নিয়ে তর্কে যাবার মানেই বৃথা সময়নষ্ট। যে যা ভেবে আত্মতুষ্ট থাকতে চায়, তাকে তা-ই ভাবতে দেওয়া উচিত। ধর্ম নিয়ে তর্কবিতর্কের চাইতে ঘুমানোও ভালো। বিশ্বাসের সঙ্গে তর্কের কোনোদিনই বন্ধুত্ব হয় না। প্রতিটি ধর্মই সত্য, কেননা প্রতিটি ধর্মই মানুষকে বাঁচিয়ে রাখছে কোনও না কোনওভাবে। ভিন্ন কথা বলে যারা, ওদের কাছ থেকে দূরে থাকাই নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
১২৩। ধর্মগ্রন্থের কালো অক্ষরে অক্ষরে কোনও বিবাদ নেই, দূরত্ব নেই। ওরা সবাই-ই পবিত্র ও সুন্দর। কেবল মানুষের চোখেই একেক অক্ষরের রং একেক রকমের হয়ে যায়। সুন্দর অসুন্দর নিয়ে গণ্ডগোলটাও বাধে তখনই। ধর্মে ধর্মে কখনও বিবাদ হয় না, বিবাদটা হয় মূলত অন্ধে অন্ধে।
১২৪। ধর্ম এবং নিজের নাম, এই দুটোই মানুষকে জ্ঞান হবার পূর্বেই নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। দুটোর একটিতেও নিজের কোনও কৃতিত্ব বা অকৃতিত্ব নেই। অন্যের নির্ধারিত এই দুইটি পছন্দ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বয়ে বেড়ানোর নামই ‘পরিচয়’। বলতে পারেন, পরিচয় তো চাইলেই বদলানো যায়। বদলে ফেলছেন না কেন? তখন আমিও বলব, আমার পরিচয় আমি বদলাব কি ঠিক রাখব, সেটা নিয়ে বলার আপনি কে? কই, আমার তো আপনার পরিচয় নিয়ে কোনও মাথাব্যথা নেই! অত সময় আপনার হাতে আসে কোত্থেকে?...স্বর্গ-নরকের এজেন্টদের কাছ থেকে খুব সাবধান!
১২৫। আজ থেকে এক-শো বছর পর, বর্তমানে বেঁচে-থাকা আমাদের কেউই আর বেঁচে নেই, যদিও সেদিন আমাদের কারও কারও সম্পর্কে মানুষ কথা বলবে! আশ্চর্য না!
১২৬। কোনও একদিন পরীক্ষায় কম্পিউটারে টাইপ করতে করতে পরীক্ষার্থীরা লিখবে, ‘অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, আমাদের পূর্বপুরুষেরা একসময় কলম দিয়ে কাগজে লিখে লিখে পরীক্ষা দিত!’ আধুনিকতা আপেক্ষিক একটা ব্যাপার!
১২৭। জীবন থেকে একটা দিন চলে যাবার মানে মৃত্যুর দিকে এক দিন এগিয়ে যাওয়া। সেই হিসেবে, এ পৃথিবীতে পিছিয়ে-পড়া মানুষ এক জনও নেই!
১২৮। না-পাওয়া ততটা কষ্টের অনুভূতির জন্ম দেয় না, যতটা জন্ম দেয় পেয়ে হারিয়ে ফেলা। যা ছাড়তেই হবে, তা খুব প্রিয় হলেও না ধরাই ভালো!
১২৯। যা শেষপর্যন্ত আর হবে না, তা শুরুতেই শেষ করে দেওয়া ভালো। পরের তিতার চাইতে আগের তিতা অধিক উপাদেয়।
১৩০। মরে যাবার চেয়ে বেঁচে থাকাই কঠিন। চাইলেই অনায়াসে মরে যাওয়া যায়, কিন্তু আফসোস, চাইলেই ওরকম অনায়াসে বেঁচে থাকা যায় না!
১৩১। যে ভুলগুলো নিজের মেয়ে করলে মায়ের কাছে ছেলেমানুষি মনে হয়, একই ভুল পুত্রবধূ করলে তা শাশুড়ির চোখে হয়ে ওঠে অসহ্য অপরাধ, ন্যাকামো! শাশুড়ি খুব কমই মা হয়ে উঠতে পারেন।
১৩২। যে শাসনগুলো নিজের মা করলে মেয়ের কাছে শাসনই মনে হয়, ঠিক একই শাসন শাশুড়ি করলে পুত্রবধূর কাছে তা শোষণ মনে হয়। এজন্যই পুত্রবধূ সাধারণত কখনও মেয়ে হতে পারে না।
১৩৩। জীবন মানেই একগুচ্ছ সময়ের খণ্ড, সময় শেষ তো জীবনও শেষ! তাই সময়ের প্রতিটি খণ্ডই জরুরি!
১৩৪। দু-জন মানুষ একটা সম্পর্কে জড়িয়ে থাকার পরও যদি সেই দু-জনের কারও একা একা লাগে, তবে বুঝতে হবে, সম্পর্কটা শেষ করে দেবার সময় এসে গেছে! এরপরও আর কোনও প্রশ্নই চলে না। প্রশ্ন যদি চলে, তবে জীবন চলে না!
১৩৫। খাদ্যাভ্যাসের মতোই যৌনচাহিদাও স্বাভাবিক একটি ব্যাপার, অথচ খিদে পেলে খাদ্যগ্রহণ অপরাধ না হলেও যৌনক্ষুধা নিবারণকে নানান মাপে ফেলে অপরাধ বলে গণ্য করা হয়। ক্ষুধা নিবৃত্তির এমন অসর্বজনীনতা সুস্থ-স্বাস্থ্যকর কোনও রীতি হতে পারে না।
১৩৬। পৃথিবীর সবচেয়ে পবিত্র অনুভূতিটি হচ্ছে, সন্তান ও মা-বাবা’র মুখে হাসি দেখা। এর জন্যই বাঁচা যায়, এর জন্য মরাও যায়! সন্তানের মুখের দিকে ও বাবা-মা'য়ের চোখের দিকে তাকিয়ে অনেক পরিবার কষ্টেসৃষ্টে হলেও টিকে আছে।
১৩৭। নিজের কাছে কারও বিশ্বাসের ভিত্তিতে গচ্ছিত তার গোপন কথাকে গোপন রাখা অনেক বড়ো একটা ইবাদত। যে কথা ছড়ায়, সে কখনও চেহারা দেখে কথা ছড়ায় না, অভ্যাসের বশেই কথা ছড়ায়।
১৩৮। বিয়েবাড়ির খরচ, মৃত্যুর পরের খরচ, দুইটিই খুবই অহেতুক খরচ। অন্যদের একবেলা খাওয়াতে নিজের কষ্টে সঞ্চিত অর্থ এমন একদিনেই শেষ করে ফেলার ফলাফল শূন্য, এমনকী ঋণাত্মকও! লোকে না খেয়ে যতটা বদনাম করে, তার চাইতে অনেক বেশি বদনাম করে খেয়েই!
১৩৯। জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও বুদ্ধিমত্তা, এই তিন দিয়েই মানুষ ও অমানুষের মধ্যকার পার্থক্য ফুটে ওঠে। যারা এই তিনের তোয়াক্কা করে না, তাদের সঙ্গ অবশ্যই পরিত্যাজ্য।
১৪০। লোভী ব্যক্তি কখনওই দয়ালু হয় না, দয়ালু ব্যক্তি কখনওই লোভী হয় না।
১৪১। সেক্সই একমাত্র শ্রমসাধ্য কাজ, যে কাজে মানুষ সুস্থ থাকলে কখনওই আলস্য করে না। বাড়ির বা অফিসের চাকরকে দিয়ে মানুষ এক সেক্স বাদে বাকি আর সব পরিশ্রমের কাজই করিয়ে নেয়। কেউই অলস নয়; কাজটা কী, তা নিয়েই কথা!
১৪২। আজকাল ক্ষুধার অভাবে মানুষ মরে না, মানুষ মরে সুখের অভাবে। আত্মহত্যাকারীদের প্রত্যেকেই কোনও-না-কোনও সুখের অভাবেই নিজেকে মেরে ফেলে। আমরা সবাই কাউকে ট্রিট দেবার মানে বুঝি খাওয়ানো, অথচ তার চাইতে অনেক বড়ো ট্রিটটা হতে পারত তার দুঃখ শোনা ও বোঝার জন্য তাকে সময় দেওয়া। উপযুক্ত সামর্থ্য ও ইচ্ছে থাকলে পৃথিবীতে সে কাজটি করাই সবচাইতে সহজ, যা করতে কেবলই পয়সা লাগে।
১৪৩। বিয়ের চিহ্নস্বরূপ মেয়েদের জন্য শাঁখা-সিঁদুর, চুড়ি, নাকফুলের প্রচলন থাকলেও বিবাহিত পুরুষ চেনার কোনও চিহ্নই নেই। অথচ বিবাহবন্ধনে দু-জনেই আবদ্ধ! এসব নিয়ম যে পুরুষের সুবিধামতো বানানো জিনিস, এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
১৪৪। আমার অসৌন্দর্য দেখার সুন্দর দৃষ্টি যার নেই, আমার সৌন্দর্য উপভোগের কোনও অধিকারই তার নেই! যে আমাকে আমার মতো করে সহ্য করতে পারে না, সে আমাকে তার মতো করে ভোগ করবে কোন যুক্তিতে?
১৪৫। যে একটা অক্ষতিকর প্রাণ বাঁচিয়েছে, সে এক জন মানুষ বাঁচানোর সমান পুণ্যলাভ করেছে। হোক তা পিঁপড়া বা মানুষ, স্রষ্টার কাছে সব প্রাণই সমান প্রিয়।
১৪৬। ব্যক্তির খাদ্যাভ্যাসই ব্যক্তির স্বাস্থ্যের ও রুচির পরিচায়ক।
১৪৭। বন্ধুবান্ধব ও পাড়াপ্রতিবেশী নিজেরা মরার আগের দিনও চাইবে, আপনাকে যেন তাদের চাইতে একসুতো হলেও পিছিয়ে থাকতে দেখে তারা শান্তিতে মরতে পারে!
১৪৮। পৃথিবীর কোনও ঘটনাই কারণ ছাড়া ঘটে না। যে সাতটা খুন করেছে, খুন করার পেছনে তারও কিছু ‘যৌক্তিক’ কারণ থাকে। যে মানুষ প্রতি মুহূর্তেই মরে, তার কাছে মৃত্যুদণ্ড খুবই সামান্য শাস্তি---এরকম কেউ কেউও আর উপায় না পেয়ে খুন করে কিন্তু!
১৪৯। পৃথিবীতে এমন অনেক অদৃশ্য সৌন্দর্য আছে, যা চোখ খুলে দেখা যায় না, চোখ বন্ধ করে দেখতে হয়। যেমন স্বপ্ন, সুখ, প্রেমানুভূতি, ভালোবাসা। মানুষ তখনই বেশি দেখে, যখন সে দেখে না!
১৫০। ব্যক্তিত্বহীন মানুষ আর পচাআলু, এই দুইয়ের মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই---দুটোই সমানে গন্ধ ছড়ায়!