পেন্ডুলামের বিধিলিপি/ চার

 
(আগের পর্বের পর…)


আমার মন: দ্যাখ অনিলা, যারা তোকে ভালোবাসে, তাদের সহ্য করতে শিখ!
আমি: হ্যাঁ হ্যাঁ, তা তো বটেই তা তো বটেই! তাই তো আমি কেবলই তিনটা মানুষকে সহ্য করি---আমি, আমি এবং আমি!
(কথোপকথনটি সমাপ্ত হলো।)


নিজের মধ্যে শক্তি আরও বাড়াও। জোর করে হোক, আর যে করেই হোক, পরীক্ষার খাতায় তোমাকে সব প্রশ্নের সম্পূর্ণ উত্তরই ভালো করে লিখে আসতে হবে। নিজের মস্তিস্ককে কাজে লাগাও। একটা কিছু করো। ভাবো, দ্রুত ভাবো, কী করা যায়! ভেবে যা বের হয়, সেটাই করো! দেরি করলে সবই যাবে! এমন কিছু করো যেন একই পরীক্ষা দুইবার দিতে না হয়। একই পরীক্ষা বারবার দেওয়ার আশায় বসে যে আছ, তোমার কেন মনে হচ্ছে, পরের বার পড়াশোনা করার সময় তোমার ধৈর্য আর মেধা হুট্‌ করে বেড়ে যাবে? এবার পড়তে ভালো লাগছে না, সেবার ভালো লাগবে? কী ভাবছ এসব? ভাবতে ভালো লাগছে বলেই তো ভাবছ, বুঝলাম। তবে একই সাথে বাস্তব দৃশ্যটাকেও মাথায় এনো। লোকে যে তোমায় নিয়ে হাসাহাসি করবে, সেটা নাহয় বাদই দিলাম! তোমার নিজের মধ্যে লজ্জা, ভয় কিছুই কি নেই? ওগুলি কি তোমার বুকপকেটে ভরে রেখে ঘুমানোর জিনিস? দুশ্চিন্তা করো! হ্যাঁ, ভয় পাও। এখনই! পরে ভয় আরও বাড়বে, কমবে না। ভয় পেতে চাইলে আগেই পেয়ে নাও!


যাকে দেখে তুমি ক্রাশ খাবে, তার দিকে ঠিকঠাকভাবে ভালো করে তাকিয়ে দেখো, সে একটা ক্যাবলা ছাড়া আর কিছুই না! ক্রাশ খাবে ভালো কথা, একজন ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ দেখে ক্রাশ খাও। ওরকম ছাগল-ক্যাবলা দিয়ে কী করবে তুমি? ওকে নিয়ে পরে ভাবলেও তো নিজেরই হাসি পাবে। তুমি যদি একটা ছাগলকে দেখে ক্রাশ খাও, তবে তুমি নিশ্চয়ই একটা রামছাগল! কাকে দেখে ক্রাশ খাও, সেটা দেখে তোমার ব্যক্তিত্ব প্রকাশ পায়। বুঝলে মেয়ে? আচ্ছা, আমি যে এসব ভাবছি মনে মনে, তো ভাববার সময়ও কি পারিপাট্য ও শুদ্ধতা বজায় রেখে ভাবতে হবে? মানে ওই ক্যাবলা, ছাগল ওসব শব্দ কি অবশ্যবর্জনীয়?


ডাইরি লিখব না তো কী করব? সামান্য একটু হাতব্যথা বলে কালকে পরীক্ষায় বেশি লিখতেই পারব না। ভালো করে উত্তরগুলি লিখতে না পেরে পরীক্ষার হলে বসে বসে মনের দুঃখে আঙুল চুষব। পৃথিবীতে যাঁরা বড় কিছু হয়েছেন, তাঁরা সব সময়ই পাগলের মতো তাঁদের স্বপ্নের পেছনে খেটেখুটে কাজ করে গেছেন ধৈর্য ধরে। কই, তাঁদের তো বলতে শুনিনি, কবে বিশ্রাম নিতে পারব, আরামআয়েশ করতে পারব? তা হলে সামান্য লেখাটাও কেন আমি লিখব না? হাত গুটিয়ে বসে থাকব কেন? অনিলা, শোনো। তুমি ভবিষ্যতে কী হবে বা আদৌ কিছু হতে পারবে কি না, সেটা হয়তো তুমি জানো না, কিন্তু তুমি নির্দ্বিধায় সেসব দিনের স্বপ্ন তো দেখতেই পারো! স্বপ্ন দেখতে কোনও পয়সা লাগে না, শুধু দেখতে জানতে হয়। ভাবো তো, সেদিনটা কেমন হবে, যেদিন তুমি তোমার যোগ্যতা দিয়েই সব জায়গায় পরিচিত হবে? আহা, পেছনের এই দিনগুলো মনে করতে পারবে এবং এই দুঃখের দিনগুলোর কথা মনে পড়বে তখন খুবই, তাই না? মনে পড়বে আর হাসবে আনন্দে, খুশিতে, সুখে। শুধু তুমিই জানো, কতটা একা ছিলে তুমি! তুমিই বোঝ, সময় তখন কতটা স্বার্থপর ছিল! তোমাকে দেখে, তোমার গল্প শুনে অনেক মানুষ নিজেদের জীবনের সঠিক পথটা খুঁজে পাবে। তখন তোমার কতটা যে আনন্দ হবে, তা তুমি ভাবতেই পারছ না!


দেখো, তোমার প্রতি আমার রাগ - ক্ষোভ - দুঃখ - কষ্ট - অভিমান যা-ই বলো না কেন, কোনওটাই নেই। আমি এমনিতেই খুব ঝামেলায় আছি, দয়া করে আমাকে আজেবাজে মেসেজ পাঠিয়ে আমার ঝামেলার পরিমাণ বাড়িয়ে আরও দিয়ো না। আর হ্যাঁ, আমার ডায়রিতে তোমাকে জায়গা দিয়েছি বলেই অত লাফানোর কোনও দরকার নেই, আমার স্বার্থেই আমি এটা করেছি। আমি নিজের মনের অস্থিরতা কমানোর জন্যে এবং নিজের ভাবনাগুলি লিখে ফেলার তাগিদকে আস্কারা দেওয়ার জন্যেই লিখছি। এখানে তোমার ভূমিকা খুবই গৌণ।


যা লিখতে চাই, সেটা লিখতে গেলে এত ভাবতে হবে কেন? যা লিখতে গেলে বসে বসে ভাবতে হয়, সেগুলো লিখতেই-বা হবে কেন? বানিয়ে বানিয়ে সাজিয়ে-গুছিয়ে লেখার চাইতে মন থেকে যখন যা আসে, সেটা পরিষ্কার করে বলে, কিছু একটা লিখে ফেলাই আমার কাছে আসল। অত ভালো লেখক আমি হতে চাই না। আমি শুধু নিজেকে নিশ্চিত করতে চাই যে আমি ঠিক যা ভাবছি, তা-ই লিখতে পেরেছি। আমি কেবলই আমার ভাবনার ও তার প্রকাশের সততা চাই। এটা করতে পারলেই আমি অনেক খুশি। আমার খুব ঘুম পাচ্ছে, আবার লেখার লোভটাও সামলাতে পারছি না। ঘুম-আসার ওষুধ আছে, ঘুম-যাওয়ার ওষুধ নেই কেন? আমি বিজ্ঞানী হলে অবশ্যই ঘুম-তাড়ানোর ওষুধ আবিষ্কার করতাম। বাই দ্য ওয়ে, তেলাপোকা মারার ওষুধ তো ‘ইঁদুর মারেন, তেলাপোকা মারেন, ছারপোকা মারেন’ বলে চিৎকার করে করে বিক্রি করে। কিন্তু ‘ইঁদুর বাঁচান, তেলাপোকা বাঁচান, ছারপোকা বাঁচান’ টাইপের ক্যানভাসিং নেই কেন? তেলাপোকা বলে কি সে মানুষ নয়? ফাজলামো করতে ভালো লাগছে। আমার ডায়রি, আমি ফাজলামো করব, যত খুশি তত করব!


আমি জানি, আমি অত সহজে ক্ষণে ক্ষণে টুপটাপ চুপচাপ টুপুরটাপুর টুকুসটাকুস প্রেমে পড়ে যাই না। নিজেকে সব ক্ষেত্রেই নিয়ন্ত্রণ-করা এখন আমার কাছে সবচেয়ে সহজ। সেজন্যই হয়তো আজ আমার চারপাশের পরিবেশ-পরিস্থিতি পাল্টে যাচ্ছে। আমি যা আশা করি না, যা আমার এই ছোট মস্তিষ্কে ধরে না, তা-ই হয়ে যাচ্ছে। আজকে আবার অন্য কেউ এসে এমনভাবে আমাকে ঠিকঠাক পর্যবেক্ষণ করছিল যে আমি আর অবশেষে আমার পরীক্ষায় মনই বসাতে পারছিলাম না। গেল তো সবই! আমার পরীক্ষাটাও সে দিয়েছে ভেস্তে! কিন্তু এমন হলে চলবে না। আমাকে এসব নিয়ন্ত্রণ করে সহজভাবেই গ্রহণ করতে হবে, কেননা এখন আমার সাথে এসবই হবে, মানে উল্টাপাল্টা কিছুই হবে আমার সাথে। সফল হতে হলে আমাকে এসব সহ্য করতে শিখতে হবে, মানিয়ে নিতে হবে এসবের সাথে। সবাই এখন আমার কাছে আসতে চায়, আমার পাশে ঘুরঘুর করতে চায়। আমার সাথে অনেকেই বন্ধুত্ব করতেও চাইবে, কিন্তু এসব ব্যাপার আমাকে কৌশলে সামলাতে হবে, নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, সবার সাথে দূরত্ব বজায় রেখে চলতে হবে, যতদিন পর্যন্ত আমার ভিত্তি শক্ত না হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত আমাকে বোকা হয়েই চুপচাপ থাকতে হবে।


যে রাঁধে, সে চুলও বাঁধে। এখন এটা নিয়ে কোনও চিৎকার-চেঁচামেচি করা যাবে না। আমাকে প্রমাণ করতে হবে যে, আমি আমার যা কাজ, তা ছাড়াও অনেক কিছুই করতে পারি। পারি পারি বলে চিৎকার করে গলা ফাটিয়ে ফেললেও কেউ আমার কথা বিশ্বাস করবে না, করে দেখাতে হবে। কোটিবারও ‘পারি’ বলার চাইতে একবার পেরে দেখানোটা অনেক অনেক অনেক ভালো। কোনও অজুহাত দেখিয়ে লাভ নেই। দিনের শেষে সবাই আমাকেই দোষারোপ করবে।


তুমি যা করেছ, যা-ই করেছ, তা ভালো করোনি। জানি না, সামনে তোমার উপর কত বড় ঝড় আসবে! কিন্তু আমি ভয় পাই, তুমি সামলে উঠতে পারবে কি না, এটা ভেবে। এখন যখন আমার মনে হয়, যা হয়েছে আমার সাথে, তা এক হিসেবে ভালোই হয়েছে, কিন্তু এটা হয়তো কোথাও না কোথাও আমার মনের প্রকৃত কথাটি নয়। হয়তোবা আমার মেনে নিতে হচ্ছে বলেই এখন বাধ্য হয়েই নিজেকে সান্ত্বনা দিতে এসব বলি। আর হ্যাঁ, এটাও ভাবি, তোমাকে পেলে অন্য সবই হয়তো হারিয়ে ফেলতাম! নিজের সত্তাই তো হারিয়ে ফেলেছিলাম, অন্যকিছুর কথা বাদই দিলাম! যা-ই এখন পেয়েছি, তার জন্য আমি খুশি। সামনে হয়তো আরও অনেক কিছুই পাব, যা হয়তো এখন পর্যন্ত আমার কল্পনাতেও ধরা দেয়নি! সবই আমার কষ্টের পুরস্কার, কিন্তু এটাও তো ঠিক, এসব কিছু আমি পেতে চাইনি, তবে মনে মনে খুশি আর স্বস্তি ঠিকই পাই, যখন শুধু এতটুকু নিশ্চিত হতে পারি যে আমার ভেতর এখন আর কোনও আবেগ কাজ করে না, এখন আমি আমার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে-থাকা একজন মানুষ। নিজেকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারার চাইতে বড় পুরস্কার আর হয় না। আজকের অর্জন আমি একদিনে করিনি। সেই কবে থেকে একটু একটু করে হেরে আর হারিয়ে আজকের দিনটাকে পেয়েছি। আমি জানি, এটা শুধুই আমার একার অর্জন, কেউ আমার সাথে আমার কষ্টগুলো বহন করেনি। কেউই না! শুধু ঈশ্বর উপর থেকে কী করে যেন অদ্ভুত এক শক্তি দিয়ে যাচ্ছিল সব সহ্য করার জন্যে। সহ্য করতে জানতে হয়। সবকিছুতেই রিঅ্যাক্ট তো বেকুবও করতে পারে।


এখন আমি উপলব্ধি করতে পারি, কোনও কিছু জোর করে ভুলতে চেষ্টা করে কোনও লাভ নেই। কোনও কিছু জোর করে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করলে বরং আরও বেশি করে তা মনে পড়ে যায়। আমার মনে হয়, একদিন হঠাৎ করেই সব এমনি এমনি ভুলে যাব, অথবা মনে থাকলেও হাসি পাবে তখন এসব ভেবে। তা-ই তো হয়! এখনই তো হাসি পায় কত কী যে মনে এলে! ছোটবেলার কত স্মৃতি হঠাৎ মনে পড়ে গেলে কত হাসি পায় এখন! আমার বেদনার বিনিময়ে পাওয়া সুখগুলোই এখন আমার কাছে সুখ, কেননা ওগুলো থেকেই তো শক্তি পাই আমি! তুমি দেখে নিয়ো, একদিন আমার সামনে এসে দাঁড়ানোর যোগ্যতা আর সাহসটুকুও তোমার থাকবে না! যা তুমি কোনও এক সময় এমনিতেই পেয়েছিলে পাওনা ভেবে, তা তুমি আর পাবে না। সাধনা করলেও না! সেদিন তুমি শুধু আফসোস করবে। বুঝবে, তোমার অবহেলার ফল কতটা কাঁদিয়ে ছাড়ে তোমাকে। সময় একদিন খুব করে বিপরীত হতে জানে! এই কথা আর কেউ জানুক না জানুক, আমি জানি! আমি জানি, সবার জন্যই সময়টা একদিন না একদিন ঠিক আসেই!


সব খারাপ সঙ্গ ত্যাগ করে একেবারেই নিজের মতো করে, নতুন করে নিজেকে সাজাতে হলে নিজেকে নিয়ে একদম নিরিবিলি, শান্ত আর আলাদা হয়ে থাকতে হবে, কিন্তু তা সত্ত্বেও তো কিছু না কিছু নিয়ে থাকতে হয়ই। একেবারে সমাজবিচ্ছিন্ন হয়ে সবকিছুর বাইরে গিয়ে তো আর থাকা যায় না। এজন্য চাই অসংখ্য ভালো বই এবং তথ্যপ্রযুক্তির জগত, যা কিনা আমাকে বাইরে সব পরিস্থিতির খবর প্রতিনিয়ত দিতেই থাকবে। এদিকে এসব নিয়ে একটু একটু করে গড়ে তুলতে হবে নিজেকে…একেবারে সাবধানে, একান্তই নিজের মতো করে, কিন্তু কী করে পারব তা করতে? বইকেনা তো বর্তমানে কিছুটা আমার সামর্থ্যের মধ্যে, কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তির বিপুল ব্যবহার করতে হলে তো থাকা চাই একটা কম্পিউটার, অথচ এত টাকা খরচ করা! টাকা কই? কে দেবে আমাকে? তাহলে কি কেনা হবে না? সবকিছুকে এভাবে মেনে নিয়ে চুপচাপ মন খারাপ করে পড়ে থাকব? আজ ইনকোর্স শেষ হলো। সামনে ইয়ার ফাইনাল। সেই পড়াও করতে হবে, আবার তার পর যে চাকরির পড়া, সেগুলোর বইও আস্তে আস্তে কিনতে হবে। এখনই না হলে বইকেনার খরচ তখন আমাকে কে দেবে? এদিকে রানিং ইয়ারে মোটামুটি ভালোভাবে পাস করতে হলে আরও কিছু বই লাগবে। কলেজ ফিল্ডওয়ার্ক, ভর্তির ফরমফিলাপ ইত্যাদির পেছনে আনুষঙ্গিক যা-কিছু খরচ আছে, তা-ও লাগবে। আবার টাকা জমানোর সুযোগও খুব কম। ভাইভার জন্য খুব সাধারণ মানের হলেও একটা ড্রেস কিনে বানাতে হবে। এত কিছুর উপরে কম্পিউটার কেনার খরচটা আমি কোথায় পাই? কে আমাকে দিবে ওটা? সব বোঝা এক হয়ে হয়ে অনেক বড় একটা বোঝা চেপে বসে আছে একেবারে ঘাড়ের উপর! আর এসবের ভেতরে পড়াশোনা শেষ করে নিজেকে দাঁড় করাতে হবে! এত চিন্তা করে আর কূল পাই না যেন!


আমি খুব অভিমানী। হ্যাঁ, জীবনের কাছে সবকিছু হারিয়ে ওই অভিমানটুকুই আমার কাছে একমাত্র বাকি আছে। আমার মনে জমে আছে কেবলই ভাঙা কিছু স্মৃতি! হ্যাঁ, জীবনের কাছে সব দিক থেকে, সব জায়গা থেকে হেরে একদম ভাঙাকাচের টুকরোর মতো করে সব দিক থেকে কুঁকড়ে সব কূল হারিয়েছি! একদম শেষ হয়ে গেছি আমি! বলো, এবার খুশি তুমি? খুশি তো? একেবারে সব কোনা থেকে তোমাদের সবার কাছ থেকে এক কাঁটায় কাঁটায় পরিপূর্ণ গর্তের মাঝে নিজেকে একদম খুব করে ক্ষতবিক্ষত আর কাঁটাছেঁড়া করে সবচাইতে বেশিই বিধ্বস্ত হয়ে একদম শেষ হয়ে সম্পূর্ণ হেরে গেছি আমি! খুশি লাগছে না শুনতে? তুমি, সে এবং আরও অনেকেই যারা যেভাবে পেরেছে, অর্থাৎ যাদের যেভাবে পারতে দিয়েছি, সেভাবেই তারা টর্চার করেছে, আমার সাথে অন্যায় করেছে। বলো, এইসব জানতে পেরে তুমি খুশি হয়েছ? তোমরা জিতে গেছ, আমি একদম ভেঙেচুরে হেরে শেষ হয়ে গেছি। খুশি এবার?


আমার তোমাদের প্রতি ঘৃণাটুকুও হয় না। ঘৃণা হয় নিজের প্রতি। এর পর, এতকিছু আমার জীবনের সাথে হয়ে যাবার পর আমি আবার কাউকে বিশ্বাস করেছি, আবারও কাউকে ভালোবেসেছি, এতটা বেহায়া হয়েছি আমি! ছিঃ! ঠিকই আছে, ঈশ্বর আমাকে একদম উচিতশিক্ষা দিয়েছেন! একদম ঠিক হয়েছে আমার সাথে! আমার মতো বেহায়া মেয়ের সাথে এরকমই হবার কথা ছিল! আমার সৎথাকার ফল এমনই হবার কথা ছিল, আর হ্যাঁ, আমি তো তোমাদের কাউকে দোষ দিই না। সব দোষ আমার একার। আমি জানতে চাইব না অথবা অবাক হব না এটা ভেবে যে তুমি পারলে কী করে! তুমি তো পারবে অবশ্যই! তোমাকে পারতে হবে! এমন না হলে হয়? প্রতিটা দানের একটা প্রতিদান তো আছে! অবাক হবার তো কিছুই নাই! তুমি তা-ই করেছ, যা আমার প্রাপ্য ছিল। যেখানে আমার স্থান ছিল, সেখানে রেখেছ আমাকে। তোমাকে নিয়ে নিজের ভেতর এত গর্ব ছিল আমার, এইজন্যই এসব কিছু পাবার ছিল, আর পেয়েছিও বটে! সবার কাছে তোমাকে নিয়ে কত বড়মুখ করে কথা বলতাম, সে মুখ এখন আর নেই। জীবন থেকে আমি পেয়েছি অনেক কিছুই! তোমাকে হারিয়ে তোমার কাছ থেকেই শিখেছি অনেক কিছু। তুমি আমায় শিখিয়েছ, দিয়েছ অনেক শিক্ষাই! একটুও কার্পণ্য করোনি তুমি!


একদম কেঁদেকেটে শেষ হয়ে ভেতরে থেকে কলিজা বের করে তোমার থেকে আলাদা হয়েছি এবং শেষ করে দিয়েছি সেই অনিলাকে! আর পরের অনিলা ভিন্ন এক অনিলা। দুইজন এক কোনওভাবেই নয়। আমরা ভিন্ন মানুষ। আর হ্যাঁ, তুমি আগেরজনকে হারিয়েছ, পরের জন যে আছে, সে তোমার হবে না কখনওই! এটা ভেবে একসময় তুমি দুঃখ করবে। অবশ্যই দুঃখ করবে! আমি আমার সব ভালোবাসা দিয়েও তোমাকে রাখতে পারলাম না। কোনওভাবেই রাখতে পারলাম না আমি। কোনও কিছু দিয়েই তোমাকে রাখতে পারলাম না। ভালোই হয়েছে। যা পরে এমনিতেই হতো, তা আগেই হয়ে গেছে। পরে হলে আমার কষ্ট আরও বেশি হতো। আগের তিতাই অনেক ভালো পরের তিতার চেয়ে।


তোমার ক্ষতির জন্য কেঁদো না। তুমি যদি সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করো, তবে তিনি তোমার কাছ থেকে কিছু নিয়ে যাবার সময় সেটার চাইতে আরও অনেক ভালো কিছু তোমার জন্য রেখেছেন বিধায়ই সেটা নিয়ে যাচ্ছেন, এটা মাথায় রাখবে। হয়তো এখন তোমার যা আছে, তা তোমার জন্য ভালো কিছু নিয়ে আসবে না। তা তোমার কাছ থেকে নিয়ে না গেলে তোমার ক্ষতিই বেশি হবে। একমাত্র উনিই জানেন, কোনটা তোমার জন্য ভালো, কোনটা তোমার জন্য খারাপ। তুমি যা চাইবে, তা পাবে না। যা তোমার দরকার, তা তুমি নিশ্চয়ই পাবে। তাই, তোমাকে যা দেওয়া হয় বা যা তোমার কাছ থেকে নিয়ে যাওয়া হয়, দুটোই তোমার ভালোর জন্যই করা হয়। এটা এখন বুঝতে না পারলেও পরে ঠিকই বুঝতে পারবে। তবে সেই সময়টার জন্য অপেক্ষা করে থাকতে হবে। ঈশ্বর যা তোমার কাছ থেকে নিয়ে নিচ্ছেন, সেটার জন্য তাঁকে ধন্যবাদ দাও। যদি এখন না দাও, তবে পরে তোমাকে ধন্যবাদটা দিতেই হবে। তুমি যদি তোমার নিয়তে ঠিক থাকো, তবে তিনি তোমার সমস্যাগুলিকে তোমার জন্য শক্তিতে পরিণত করে দেবেন।


আমি কতবার কতভাবে নিজেকে কষ্ট দিয়েছি, আমি এখন তার সবকিছু মনে করতে পারি না! চাইও না! তার পরও কিছু কিছু মনে পড়ে যায়, আর আমি হাসতে থাকি। আমি হাসি, হ্যাঁ, এখন এত কিছুর পর না চাইলেও বাধ্য হয়েই অনেকখানি স্বার্থপর হয়ে গেছি আমি! আর অনেক পরিবর্তিত হয়ে গেছি। কীভাবে যেন আসলে বাধ্য হয়েছি। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে তো, না হয়ে উপায়ই-বা কী? আমার সব না-বলা কথা আর ব্যথা এক কাগজই তো সইতে পারে, বইতে পারে! কাগজ ছাড়া আর কে সহ্য করে আমাকে? কাগজ ছাড়া আর কে বোঝে আমাকে? সত্যিই কাগজ ছাড়া আর কেউ পারে না আমাকে একটু শান্তিতে রাখতে। কেউ পাশে থাকে না, কেউ আমার মন বোঝে না, আমাকে শুধু আমি ছাড়া আর কেউ বোঝে না। আমার যত অভিমান, সবকিছুর খোঁজ শুধু এই কাগজ জানে। ও আমাকে খুব সঙ্গ দেয়, পাশে থাকে।


একটা নতুন বিসিএস কোচিং-এ গিয়ে এক ভাইয়ের সাথে পরিচয়। প্রথম পরিচয়ের পর থেকে যখনই ভাইয়ার সঙ্গে কথা হয়েছে, তখনই আমার সব হতাশা শেষ হয়ে গেছে। উনি সব সময়ই বলেন, তোমাকে তো ভাইভাবোর্ডে স্যাররা দেখলে এমনিতেই চাকরি দিয়ে দিবেন। জানি, বিসিএস ক্যাডার হওয়া অত সহজ নয়, নিজ যোগ্যতায় চাকরি পাওয়াটা অনেক কঠিন, তার পরও ভাইয়ের সাথে কথা বললে, ভাইয়ার কথা শুনলে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয় যেন আমারও নিজ যোগ্যতায় চাকরি হবে! এইটুকু কথাও তো আমাকে কেউ কোনও দিনই বলেনি। মনে মনে আমারও কেন জানি মনে হয়, ভাইভাবোর্ডে গেলে স্যাররা আমাকে চাকরি না দিয়ে ফিরিয়ে দেবেন না। তার পর ভাইয়াও যখন এটা বলেন, তখন আরও বিশ্বাস করতে মন চায়। থ্যাংক ইউ, ভাইয়া। আপনি শুধু আপনার কথা দিয়েই আমাকে অনেক সাহস যোগান, অনেক আস্থা পাই নিজের প্রতি তখন। কখনও আমি চাকরি পেলে আপনার প্রতি সারাজীবনই কৃতজ্ঞ থাকব। মানুষ কেন যে অন্যকে ভালো কিছু বলার না থাকলে নিজের মুখটা বন্ধ করে রাখে না? কী হয় অন্যকে একটু সাহস দিলে, উৎসাহ দিলে? কেন মানুষ মন ভেঙে দিতেই বেশি পছন্দ করে?


ঈশ্বর, তুমি আমাকে পথ দেখাও। কীভাবে শুরু করব, কোন পথে যাব, কীভাবে আমার যা দরকার তা খুঁজে পাব, আমার স্বপ্নপূরণের পথ কোথায়, এসব নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তার মধ্যে আছি। আচ্ছা, আমাকে কি সবার ভালো লাগতেই হবে? অনেক মানুষ থাকবে, যারা আমাকে ভালোবাসবে না। যাদের কোনও কাজেই আমি লাগি না, তাদের তো আমাকে দেখলেই বিরক্ত লাগবে। কে কাকে পছন্দ করে, তা নির্ভর করে সে তার কতটুকু কাজে লাগতে পারল বা পারল না, তার উপর। আমাকে দিয়ে যার কাজ হয় না, সে আমাকে বলবে, এই মানুষটা কোনও কাজের না। আমাকে দিয়ে যার স্বার্থ হাসিল হয় না, তার চোখে আমি গাধা, অনুপকারী, গুড-ফর-নাথিং। আমি আসলেই কি তা-ই? আমার যে কাজটা করার ক্ষমতা আছে, সে কাজটা করার ক্ষমতা হয়তো ওঁর কোনও কাজে লাগবে না, এ কারণে উনি আমাকে এরকম করে বলছেন। মানুষ সাধারণত তাকেই ভালো বলে, যাকে তার কাজে লাগে। মানুষ সাধারণত তাকেই খুব কাজের বলে প্রচার করে, যাকে দিয়ে সে অনেক কাজ করিয়ে নিতে পারে। বাকিদের অবহেলায় ছুড়ে ফেলে দেয়। তার মানে এমন না যে, বাকিরা সবাই অযোগ্য, বাকিরা সবাই গাধা। যাকে দিয়ে নিজের স্বার্থ হাসিল হয়, মানুষ তাকেই সেরা বানায়। রিয়্যালিটি-শোগুলির দিকে তাকান না! ওখানে কী হয়, কেন হয়, আমরা সবাই বুঝি ও জানি। তবে এটা কোনও ব্যাপারই না। যার স্বীকৃতি আমার লাগবেই, তার কাছে নিজেকে তার মনের মতো করে তুলে ধরতে সমস্যাটা কোথায়? তার জায়গায় আমি, আমার জায়গায় সে থাকলেও কি একই ব্যাপারটা ঘটত না?


আজ অনেকদিন পর, ঠিক কতদিন পর, তা জানি না। তারিখ সময় কিছুই মনে নেই আমার, শুধু ঘটনাগুলো মনে আছে। বাকি সব আবছা, অস্পষ্ট। হ্যাঁ, অনেকদিন পর, তাদের দুজনের কথাই লিখতে বসেছি আমি আজ, যাদের দুজনকেই না চাইতেই হারাতে হয়েছে আমাকে। ওদের আমি নিজের এবং নিজের মনের বিরুদ্ধে গিয়ে হারিয়ে ফেলেছি। আর আমিও তার সাথে সাথে হেরে গেছি। খুব সম্ভবত ২০১১ সালের ডিসেম্বর মাসে পিয়াসের সাথে আমার বিয়ে হয়। এখন আর এগুলো লুকানোর কিছু নেই। যা আমার সাথে ঘটে গিয়েছে, অনেক অনিচ্ছা সত্ত্বেও যা-কিছু আমি হতে দিয়েছি নিজের সাথে, তা অনায়াসেই আমি বলতে পারি। বলে ফেললে অনেক সহজ হয়ে যাওয়া যায়। তা ছাড়া এগুলো যেহেতু আমি মন থেকে মুছে ফেলতে পারিনি বা কিছু কিছু ভুলে গেলেও সবকিছু ভুলিনি বা চাইলেও ভুলতে পারিনি, সেসব কথা জোর করে আর বলার চেষ্টা করব না। এর কারণ হলো, ঈশ্বর যদি আমাকে ভুলতে দিতেই না চান, তা হলে আমার পক্ষে ভুলেথাকা বা পুরোটা ভুলেযাওয়া কিছুতেই সম্ভব না। আর অন্য কারণ হলো, আমার জীবনে যা ঘটে গেছে, তাকে অস্বীকার করতে পারব না অথবা আমার মস্তিষ্ক থেকে তা কোনও দিনই মুছে যাবে না। তাকে মুছতে চেষ্টা করেও আমি কিছুতেই সামনের দিকে এগোতে পারব না। যতই তাকে ভুলতে চাইব, ততই আরও বেশি করে মনে পড়ে যাবে। যেহেতু এসব আমার জীবনেরই একটা অংশ, সেহেতু এগুলোকে মেনে নিয়ে আমাকে সামনে এগোতে হবে। আর হ্যাঁ, এসবের মধ্যেই হয়তো আমি বেঁচে আছি। তবে সে ঘটনাগুলোর পেছনের কোনও একটা কারণ ভেবে মনের জোর আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে, সে প্রসঙ্গে অন্য কোনও দিন লিখব। এই মুহূর্তে সেটা নিয়ে লেখার মতো সাহসটাই আমার নেই।


ইদানীং আমি ফেসবুকে এলোমেলো স্ট্যাটাস দিই। সবাই ভাবে, মেয়েটা কেমন জানি পাগল পাগল। কী সব স্ট্যাটাস দেয়, অথচ মুখে কেউ কথাগুলি বলে না, আমার সাথে দেখা হলেও না। আমি যা লিখি, তা অনেকেই ভাবে, কিন্তু ফেসবুকে লিখে দেয় ভিন্ন কথা। সবাই ফেসবুকে লিখে জনপ্রিয় কিছু কথা কিংবা গা-বাঁচানো বিভিন্ন কথা। আমি সাধারণত তা করি না। আমি ভাবতে পারি, আমি বলতে পারি, আমি লিখতে পারি। সবাই ভেতরে ভেতরে অনেক কিছুই বলে, আর মনে মনে ভাবে, কী দরকার! আমার মনের কথা লিখতে গিয়ে যদি কোনও বিপদে পড়ে যাই, তখন কী হবে? ওদের দেখে আমি হাসি। যা ভাবে না, তা-ই বেশি বেশি বলে। যা বলে, তা করে না। যা করে, তা দেখায় না। ওরা কী যে বুঝে আর কী যে করে, তা বোঝার চেষ্টা বাদ দিয়েছি অনেক দিন আগেই।


পুরো পৃথিবীর উপর একরাশ ঘৃণা নিয়ে বেঁচে আছি। এ-ও হয়, এমনও হয়! এই যে শুধু বেঁচে আছি, এটাই আমার সারাজীবনের সবচাইতে বড় পাওয়া। মরে-যাওয়া কিন্তু সহজ, কাপুরুষরাও সেটা করতে পারে। জীবনের সাথে লড়াই করে বেঁচে-থাকাটাই সবচেয়ে কঠিন। আমি সে কঠিন কাজটিই করে যাচ্ছি। এমন নয় যে, বেঁচে থাকতে আমার অন্যদের চাইতে কম কষ্ট হচ্ছে। কিংবা এমন না যে, যারা জীবন থেকে হারিয়ে গেছে, তাদের চাইতে আমার জীবনটা সহজ। পার্থক্য হলো, তারা সহ্য করতে না পেরে জীবন থেকে পালিয়ে গেছে, আর আমি দাঁত-মুখ চেপে সব সহ্য করে যাচ্ছি। দেখি না কী হয়, জীবন আমাকে কোথায় নিয়ে ছেড়ে দেয়।


আজকে আম্মাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছিলাম। রেগুলার চেকআপ করানোর জন্য। আমার আম্মা দীর্ঘদিনের মানসিক রোগী। অনেক বছর ধরেই ওঁকে আমি ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই। আজ ডাক্তারের চেম্বারে একজন পেশেন্ট ছিল। এইচএসসির স্টুডেন্ট। পড়তে পড়তে মাথাই শেষ! এখন সে বই ছাড়া আর কিছুই বোঝে না। সামনে তার প্রিটেস্ট, এই টেনশনে সে মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে। ওর নাম রফিকা। অনেক সময় নিয়ে ওর সঙ্গে কথা বললাম। ও আসলেই অনেক পড়াশোনা করে এবং সে হিসেবে বলা যায়, ওর পড়াশোনার প্রতি মনোযোগ আছে, সে একজন আন্তরিক স্টুডেন্ট। কিন্তু সে যত ভালোই হোক, ওর যে ব্যাপারটা হয়েছে, তেমনটা আশা করিনি। সে কিছু অদ্ভুত কথা বলল। সে বলল, সে বই খুললে বই নাকি কাঁদে। ও নাকি স্পষ্ট দেখতে পায়, ওর সামনে রাখা বইগুলোর মন খারাপ, ওরা কাঁদছে। ওর সামনেই পরীক্ষা, আর ও এসময় অসুস্থ হয়ে গেছে। ও পড়তে চায়, কিন্তু পড়তে পারে না। বই ওর কাছে বন্ধুর মতো। অথচ বই খুললেই নাকি বই কাঁদে। ওর সামনে ওর বন্ধু কাঁদছে, এটা ভাবলে ও আর পড়তে পারে না। ও এত সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে কথা বলে, আর এতটাই ভালো, ভদ্র, মার্জিত যে, ওর অবস্থা দেখে আমার খুবই মন খারাপ হলো।


এই পৃথিবীতে কত ধরনের যে মানুষ আছে। কেউ পড়াশোনা হয় না বলে কাঁদে, আবার কেউ কেউ আছে, যারা পড়াশোনা বেশি করছে বলেই কাঁদে। আমরা যখন কাউকে কাঁদতে দেখি, তখন ভাবি, ও বোধহয় পাগল। আমরা কখনও ওর দুঃখের খোঁজ নিই না। উল্টো ওকে আমাদের নিজেদের মতো করে জাজ করে ফেলি। আমরা ভেবে নিই, আমরা যা জানি, তা-ই সত্য। যে অভিজ্ঞতা আমাদের আছে, সে অভিজ্ঞতার বাইরে কোন কিছু ঘটলে আমরা সহজে তা গ্রহণ করতে পারি না। যা-ই হোক, আমি রফিকার ব্যাপারটা দেখে খুবই কষ্ট পেয়েছি। আমি ওর জন্য ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করব, ও যেন তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠে।


মাঝে মাঝে অনেক ইচ্ছে করে তোমাকে দেখতে, কিন্তু ইচ্ছে করেই দেখি না। আজ খুব মিস করছি তোমাকে। মনে অনেক প্রশ্ন আসে, তোমার কি একটুও ইচ্ছে করে না আমাকে দেখতে? আমার সাথে কথা বলতে তোমার ইচ্ছে করে না? আমি কি তোমাকে একটুও মন থেকে ভালোবাসিনি? অথবা তুমি যদি ভালো না-ই বাসো, তাও এত কিছু কী করে অভিনয় করে ফেললে? মানুষ এতটা নিপুণ হতে পারে অভিনয়ের ক্ষেত্রে? এইসব ভাবলে আমার আজও বিশ্বাস হয় না যা হয়েছে তা। কী করে তুমি এত জলদি এত অভিনয় করলে আর ভুলেই গেলে? তোমার কি একটুও আমার কথা মনে হয় না? আমি কি এমনই একজন ব্যর্থ মানুষ হয়ে গেলাম কেবল ভালোবেসেই? সে কি তোমাকে এতটাই সামলে নিল যে আমাকে ভুলে যেতে একটা দিনও সময় নিলে না তুমি? কী জানি হয়তো আমার ভালোবাসায় ভুল ছিল, অথবা খাদ ছিল, যার জন্য আমি পারিনি তোমাকে ধরে রাখতে। অনেক আশ্চর্য হই, যখন মনে আসে, তুমিও এমন করলে! অথবা তুমিও পারো! হয়তো আমি তোমাকে আগে চিনতে পারিনি। হয়তো তুমি নিজেকে এতটাই লুকিয়ে রেখেছিলে যে, তুমি যে রূপটা দেখিয়ে ছিলে, তার বাইরেও যে তোমার একটা রূপ আছে, সেটা আমি ভাবতেও পারিনি। কীভাবে যে নিজেকে আটকে রেখেছি তোমায় আমার দুঃখ একটুও দেখাব না বা তোমায় দেখব না সংকল্প করে, সে কেবল আমিই জানি।


কোনও রাগ বা কোনও অভিমান করে বলছি না, সত্যিই আমি তোমাকে আমার অপারগতার কারণেই ধরে রাখতে পারিনি। আমার সে যোগ্যতা ছিল না। তুমি আমার মধ্যে এমন কিছু দেখোনি যা দেখে তোমার ভালো লাগতে পারে। আমি আমাকে তোমার মনের মতো করে উপস্থাপন করতে পারিনি কারও সামনেই। সব আমার দোষ। এটাই সত্য। এটাই আমি মেনে নিয়েছি। আমি তোমার উপর কোনও রাগ কিংবা অভিমান কখনওই করব না, কেননা হয়তো ঈশ্বরই জানেন, আমি তোমাকে কীভাবে আর কতটা চেয়েছি, আর তা জানা সত্ত্বেও তিনি আমায় তোমাকে দেননি। তিনি হয়তো চাননি আমাদের মিলনটা হোক, আমরা একসাথে থাকি। ঈশ্বর ইদানীং কেন জানি আমার কোনও ডাকেই সাড়া দেন না। হয়তো আমার অনেক বড় কোনও পাপ আছে, আর সেই পাপের এই শাস্তি পাচ্ছি আমি। তুমি ভালোভাবেই পেরেছ আমার অধিকারটা অন্য কাউকে দিয়ে দিতে। তুমি একটুও ভুল করোনি, একবিন্দুও না। তুমি যা করেছ, ঠিকই করেছ। হিসেবে তো তুমি বরাবরই পাকা। কোনও অবিচার কিংবা অন্যায় করোনি তুমি। তুমি কি আর ভুল করতে পারো, বলো?


অনেক কথা বলতে ইচ্ছে করে, বেঁচে থেকে দেখতে ইচ্ছে করে আরও অনেক কিছুই। কিন্তু তা হতে দেখার জন্য আমি কিছুই করি না। যেটুক আমার হাতে, যেটুক আমি পারি করতে, তা-ও করি না। কারণ তুমি অন্য কারও। আর আমি অতটা বেহায়া নই যে অন্যের জিনিসের প্রতি লোভ করব। আজ পর্যন্ত কখনওই এ কাজটা করিনি, আজও করব না। আমার জিনিসেই সবার লোভ আছে, আমার জিনিসগুলি সবাই কেড়ে নেয়, আমি কারওটা নিই না। কেননা আমি নিজের জিনিস নিজের হাতে গড়তে জানি। আমি সৃষ্টি করতে জানি। পৃথিবীতে চলার জন্য আমার অন্য কারও জিনিস লাগে না। আমি অন্যের জিনিসে চলতে অভ্যস্ত নই। তুমিও, যত দূরে পারো, তার থেকেও অনেক দূরে চলে যাও, যাতে আর কোনও দিনই দেখা না হয়, কথা না হয়। যদি তুমি সত্যিই আমার হতে বা হও, তা হলে তো তুমি আমারই জিনিস, আর আমি বিশ্বাস করি, আমার জিনিস সারাপৃথিবীঘুরে হলেও আমার কাছে আসবেই, সেটাকে কেউ আটকে রাখতে পারবে না। তুমি যদি আমার হও, তবে তুমি আমার কাছে ফিরে আসতে বাধ্য।


সফল হওয়া কোনও সহজ বিষয় নয়। ঈশ্বর আমার কাছ থেকে অসংখ্য ছোট ছোট সুখ, বস্তু, মূল্যবান জিনিস নিয়ে নিয়েছেন হয়তো আমাকে কোনও বড় কিছু দিয়ে আমার গন্তব্যে পাঠাবেন বলেই। যে সমস্ত জিনিস সামনে থেকে দেখলে অনেক বড় মনে হয়, কিন্তু আসলে তারা ছোট, সে সমস্ত জিনিস আমাদের হাতের কাছে থাকলে ঈশ্বর কৌশলে কিংবা কোনও একটা উছিলায় তা কেড়ে নিয়ে যান। সাফল্য অত সহজ না! আমি আমার ভালোবাসার, আমার পছন্দের সব হারিয়েছি সাফল্য পাওয়ার নেশায়। আবারও বলছি, সাফল্য অত সহজ নয়। এখন আর আমি আগের মতো কাউকেই সহজে ছেড়ে দিয়ে কথা বলি না। আমার অপমানের উপযুক্ত মূল্য আমি তার কাছ থেকে তুলবই। অবশ্যই তুলব। সঠিক সময় এবং সঠিক সুযোগের অপেক্ষায় আছি কেবল।


কিছু কিছু মানুষ আর কিছু পারুক বা না-ই পারুক, জ্ঞান ভালো দিতে পারে। আমার বড় ফুপুর ছেলে, বয়সে আমার বড়, সেই সুবাদে আমাকে ক্রমাগত জ্ঞান দিতেই থাকেন জ্ঞান দিতেই থাকেন। তিনি আজ পর্যন্ত কোনও চাকরি খুব বেশিদিন করতে পারেননি। কেন পারেননি, সেই যুক্তি তিনি ভালো জানেন। তার পরেও আমি তাকে শ্রদ্ধা করি এবং বড় ভাই হিসেবে যথেষ্ট সম্মান করে কথা বলি। আজ তিনি আমাকে ফেসবুকে মধ্যবিত্ত পরিবারে বাবার ভূমিকা সম্পর্কিত এক বিশাল বড় টেক্সট পাঠালেন। সেই টেক্সটের উদ্দেশ্য ছিল আমাকে জ্ঞান বিতরণ করা এবং তাঁর বিচারে, আমার বাবা যে আমাদের পরিবারে যথাযথ ভূমিকা পালনে ব্যর্থ একজন মানুষ, তার বয়ান দেওয়া। আমি আমার বাবাকে কতটা ভালোবাসি এবং তাঁর কতটা যত্ন নিই, তিনি কখনও তা দেখেননি। তিনি আমাকে কাছ থেকেও চেনেন না। ওই দূর থেকেই তাঁর মস্তিষ্কে আমাকে নিয়ে যা যা ধারণ করে আছেন, তা-ই হয়তো তিনি আমায় নিয়ে ভাবেন। তাঁকে সে জায়গা থেকে সরানো সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে আমাকে নিয়ে তাঁর নেগেটিভ ধারণাই হয়তো বেশি। প্রায় লোকই এরকম।


যা-ই হোক, আমি আমার মা-বাবাকে কতটা ভালোবাসি, তা শুধু আমিই জানি, আর আমার ঈশ্বর জানেন। বাইরের কেউ যদি জেনে থাকে, তবে সে হবে পিয়াস, কারণ ওর এ বিষয়ে একটু ক্ষোভ ছিল। ওর কথা একটাই, বিয়ের পরেও আমি আমার বাবা-মাকে এতটা ভালোবাসতে পারব না। যখন বাইরের কেউও এসে এ বিষয়ে আমাকে জ্ঞান দেয়, তখন আমি কিছু বলি না, কেননা আমি আমার বাবা-মার কাছে থাকি, যারা জ্ঞান দেয়, তারা কেউ থাকে না। সেই সুবাদে আমার বাবা-মায়ের যা কিছু দরকার হয়, আমাকে এখন তা দেখতে হয়, আর ভবিষ্যতে কী হবে, যদিও আমি জানি না, তবু আমি ঈশ্বরের কাছে সব সময় প্রার্থনা করি, আমি যেন আমার সমস্ত সামর্থ্য দিয়ে তাঁদের বেঁচে-থাকা অবধি চালাতে পারি। আমি তাঁদের কত ভালোবাসি, এখন তা পুরোপুরি বোঝাতে পারি না, কারণ আমি কোনও চাকরি করি না বিধায় তাঁদের কিছু দিতে পারছি না। আর এজন্যই আমার ভালোবাসা ঠিকমতো প্রকাশ পায় না, আর ভালোবাসা প্রকাশ করার মতো অন্য কোনও পথই আমার জানা নেই। আমি জানতেও চাই না, কেননা এ নিয়ে আমার অতীত আমাকে যথেষ্ট শাস্তি দিয়েছে।


যা-ই হোক, ভাইয়াকে আজ আমি কোনও রিপ্লাই করিনি এবং আর করবও না। যদি বেঁচে থাকি, আর যদি ঈশ্বর সহায় হোন, তবে উনি নিজের চোখেই দেখতে পাবেন, আমি আমার বাবা-মাকে নিজের খরচে চালাচ্ছি, তাঁদের চিকিৎসায় কণামাত্রও ত্রুটি হচ্ছে না। যেহেতু উনি আমাকে এই বিষয়ে জোর করেই জ্ঞান দিয়েছেন, তাই আমি চাই, এমন একটা দিন আসুক, যেদিন হয়তো ওঁর মুখ বন্ধ করতে আমাকে আমার মুখের আশ্রয় নিতে হবে না। আমার কাজ ও অবস্থানই সব জবাব দিয়ে দেবে। যত্ত সব ফালতু মানুষ! তিনি হয়তো নিজেই জানেন না যে তিনি কী পরিমাণ ফালতু আর বিরক্তিকর একটা মানুষ! অবশ্য, এ ধরনের মানুষরা এরকমই হয়। ওরা ফালতু হয়েই বাঁচে, ফালতু হয়েই মরে। গায়ে পড়ে কথা বলতে আসে, জ্ঞান দিতে আসে। বেআক্কেলের দল! বেহায়াগুলিকে দেখলেই ধরে লাথি মারতে ইচ্ছে করে!


আত্মবিশ্বাস অর্জনের সাতটা ধাপ আছে। এক, সব পরিস্থিতিতেই ইতিবাচক চিন্তাভাবনা করতে হবে। দুই, নিজেকে জানতে হবে এবং নিজের শক্তির জায়গাগুলিকে চিনতে হবে। তিন, নিজের উপর পূর্ণ বিশ্বাস রাখতে হবে। চার, কথায় নয়, কাজে বিশ্বাসী হতে হবে। পাঁচ, যথাযথ প্রস্তুতি নিয়ে নিজের ভয়গুলির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। ছয়, নিজের দুর্বলতাগুলি বিনয়ের সাথে মেনে নিতে হবে এবং সেগুলি দূর করার জন্য চেষ্টা করতে হবে। সাত, শরীরের ভাষা (body language) হতে হবে শতভাগ ইতিবাচক, এবং নিয়মিতই এটার চর্চা করতে হবে।


ছিঃ অনিলা! সেই মানুষটাকেই তুমি এখনও ভাবো, তার জন্য তোমার জীবন এখনও মাঝেমধ্যে থমকে যায়! এখনও তাকে না পাওয়ার কষ্ট তোমায় কাঁদায়। সে মানুষটারই জন্য, যে কিনা তোমার ভালোবাসা, তোমার কষ্ট, তোমার দুর্বলতা বুঝেই তোমাকে ব্যবহার করে চলে গেছে! যার জন্য তুমি রাত দুইটা তিনটা পর্যন্ত, মাঝে মাঝে সারারাতই, তার ডিউটি শেষ করে ঘুমোতে যাওয়া অবধি জেগে জেগে কথা বলেছ! তোমার শরীর ক্লান্ত ছিল, তোমার দুচোখে রাজ্যের ঘুম ছিল, তুমি অসুস্থ ছিলে…এরকম অনেক রাতেই শুধু তাকে খুশি রাখার জন্য সে যেমন করে চায়, নিজেকে তেমন করে উপস্থাপন করে তুমি রাত দুইটা তিনটা পর্যন্ত কথা বলেছ কোনও ক্লান্তি বা বিরক্তি না দেখিয়ে। যাকে কখনও একলা অনুভব করতে দাওনি, সে-ই সবকিছু ভুলে কেমন করে চলে গেছে! সে মানুষটার জন্য তুমি কষ্ট পাও, যে চলে যাওয়ার সময় খুব ভালো করেই জানত তুমি তার প্রতি তীব্রভাবে অনুরক্ত! তাকে তুমি অন্ধভাবে ভালোবাসতে, আর বিশ্বাস করতে যে, সে কখনওই তোমাকে ছেড়ে যাবে না! তুমি সবকিছুর পরও এটাই মনে করতে, অথচ দিনের শেষে সে-ই সব সম্পর্ক, সব পরিচয়কে অস্বীকার করে তোমাকে একা করে চলে গেছে। সে মানুষটা, যার জন্য তুমি তোমার পড়ালেখা, শখআহ্লাদ, বন্ধুবান্ধব সব ছেড়ে শুধু তাকেই সময় দিতে, সে মানুষটা তোমাকে ছেড়ে চলে গেছে।


ছিঃ! তার জন্যই তোমার কষ্ট হয়, যে তার দরকারের সময় তার আবেগের খেয়ালখুশিমতো তোমাকে ব্যবহার করেছে? তার জন্যই তুমি কাঁদছ, যে জেনেছে তার ভালোবাসা না পেলে তুমি পাগল হয়ে যাও? তবুও দিনের পর দিন তোমার কাছ থেকে শুধু ভালোবাসাই নিয়েছে, কখনও একটুও ভালোবাসেনি। যা ভালোবাসা দেখতে পেয়েছ, তার পুরোটাই ছিল তার অভিনয়। তার জন্য তুমি পড়াশোনা ছেড়ে, ভালোথাকার বিভিন্ন বুদ্ধিগুলি ভুলে, জীবনের সব মূল্যবান সময় তাকেই দিয়ে দিয়েছ। তুমি এখনও তাকে ভেবে তাকে না পাওয়ার বেদনায় কষ্ট পেতেই থাকো। যাকে দিনের পর দিন একটু একটু করে মানসিকভাবে শান্তি দিয়েছ, সামনে এগোতে শক্তি দিয়েছ, তার প্রত্যাশার চাইতেও বেশি ভালোবাসা দিয়েছ, যার জন্য সেইসব কাজও করেছ, যা তোমার সাধ্যের মধ্যে ছিল না কখনও কখনও, সেই লোকটাই শুধু তার নিজের প্রয়োজন ছাড়া তোমার সঙ্গে কখনও দেখাই করত না। তুমি কি ভুলে গেছ সবই, অনিলা? তোমার চোখে পানি ঝরছে জেনেও যে কখনও আসেনি একটু সান্ত্বনা দিতে, কখনও জানতে চায়নি কী হয়েছে তোমার, কখনও বলেনি, তোমার মন ভালো না, চলো দুজন মিলে নদীর পাড় থেকে একটু ঘুরে আসি। তোমার ভালো লাগবে।…তার কথা ভেবেই এত অশ্রু ঝরাচ্ছ তুমি!


ছিঃ! তুমি এমন একটা মানুষকেই ভেবে এত কষ্ট পাও, নিজেকে এত কষ্ট দাও! তোমার জন্য তোমার মনে একটুও কি ভালোবাসা নেই যে অন্য একজন ভালো না বাসলেও আর নিজেকে ভালোবাসতে পারো না? নিজেকে পুরনো মানুষটির কথা ভেবে কষ্ট দেওয়ার মতো ফালতু শখ তোমার! কেন তার জন্যই, যে দিনের পর দিন শুধু নিয়েই গেছে, কখনও দেয়নি কিছুই? একটুও খোঁজ নেয়নি সে তোমার! এতকিছুর পরও তুমি আসলে ভালো আছ নিজেরই চেষ্টায়! সে তো কখনও তোমার কান্না বুঝেও কাছে এসে অথবা শুধু একটা ফোন করেও তোমাকে সান্ত্বনা দেবার প্রয়োজন মনে করেনি! সে এমন কেউ নয় যে তার জন্য তোমার নিজের জীবনটা নষ্ট করে দেবে! তারই জন্য তোমার ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাবে যে কিনা তার নিজের ক্যারিয়ার গড়তে তোমাকেই একমাত্র হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে? তারই জন্য তোমার এত কষ্ট, যে এখনও তার ভুল বুঝতেই পারে না? সে শুধু এইটুকু ধারণা করে, তুমি হয়তো রেগে আছ! আহা, কোথায় তুচ্ছ রাগ, আর কোথায় এমন যন্ত্রণা! এমন মানুষকে তুমি ভালোবেসে শেষ করছ নিজেকে, যার তোমাকে ভাববার মতো সময় পর্যন্ত নেই? সে তোমাকে আর তোমার ভালোবাসাকে খেলা ভেবে এখনও খেলে। সে তোমায় খেলনা ভাবে এতদিন পরেও! ওরকম তথাকথিত ভালোবাসাকে তো হাত বাড়ালেই পাওয়া যাবে! দিনের পর দিন, রাতের পর রাত তোমার উপরে অত্যাচার বয়ে-যাওয়া, তোমার জীবনে সবচাইতে বেশি নানান ছোট-বড় ঝড় আসা সত্ত্বেও যে ভুল মানুষটাকে তুমি ভালোবাসা দিয়ে ঘিরে রেখেছ, বুঝতে দাওনি নিজের কষ্ট, আর সে থেকেছে নিজের মতো করেই নির্বিকার, তোমার কষ্টের দিকে ফিরেও তাকায়নি কোনও দিনই, তাকে নিয়েই ভয় পাচ্ছ! হিসেবে যে কুটিল ও পাক্কা, সে মানুষটাকে ভেবে এতে কষ্ট পাও?


আমি আমার নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছি যে আর কোনও কিছুতেই এলোমেলো ভাবব না, শুধু মৃত্যু ছাড়া আর কোনও কষ্টকেই কষ্ট ভাবব না। সামান্য সামান্য বিষয় নিয়ে চিন্তা করলে বা করতে থাকলে আমি পাগল হয়ে যাব। রুমের দরজা লক করে বাইরে গেলে, সব ঠিক থাকে। না করে গেলে খুঁটিনাটি জিনিস কিছু দিন পর পরই হারিয়ে যায়। এমন সব জিনিস হারিয়ে যায়, যেগুলো কেউ নিবে বলে আমার মনে হয় না। এই তো সেদিনই একটা ডায়রি হারিয়ে গেল। সেখানে একেবারেই ব্যক্তিগত কিছু কথাবার্তা লেখা ছিল। নিজে কিছু কবিতা লিখেছিলাম ও আমার প্রিয় কিছু গানের লিরিক লিখে রেখেছিলাম। ডায়রিটা যে নিয়েছে, তার কী কাজে সেটা আসবে, তা ভাবতে ভাবতে অসুস্থ হয়ে গেছি। কোনও মানে হয়? আচ্ছা, আমি এমন কেন?


(চলবে…)