পঞ্চবায়ুর কথকতা

শক্তিকে ছান্দোগ্য, কঠ, প্রশ্ন, মুণ্ডক, ঐতরেয় উপনিষদে বলা হয়েছে—প্রাণ; তবে এ দ্বারা বহুবচনে দেহস্থ পঞ্চবৃত্তিক প্রাণাপানাদি বায়ু বা জীবন বোঝায়। “প্রাণা যথাত্মনোহভীষ্টা ভূতানামপি তে তথা।” (হিতোপদেশ: ১.১১, ১.১৮); “কোষঃ কোষবতঃ প্রাণাঃ প্রাণাঃ প্রাণা ন ভূপতেঃ” (২.৯১)। দেহের ভেতরে ভিন্ন স্থান ও ক্রিয়া হেতু—(১) হৃদয়স্থ বায়ু 'প্রাণ', (২) গুহ্যস্থ বায়ু 'অপান', (৩) নাভিস্থ বায়ু 'সমান', (৪) কণ্ঠস্থ বায়ু 'উদান', (৫) সর্বশরীরস্থ বায়ু 'ব্যান' নামে অভিহিত। এদের কাজ যথাক্রমে 'অন্নপ্রবেশন', 'মুত্রাদিত্যাগ', 'অন্নবিপাচন', 'ভাষণাদি', 'নিমেষাদি (নিদ্রা, শ্বাস, প্রশ্বাস, বিসর্জন, গ্রহণ, উন্মেষ ও নিমেষ (চোখের পলক মেলা ও ফেলা))' (অমরকোষ টীকা)। কেউ কেউ বলেন, দেহে নাগ, কূর্ম, কৃকর, দেবদত্ত, ধনঞ্জয়—এই পঞ্চ বায়ু আছে; যথাক্রমে উদিগরণ, নিমীলনাদি, ক্ষুধা, জৃম্ভণ, পোষণ—এদের কাজ, কিন্তু মতভেদে এরা প্রাণাদিরই অন্তর্ভূত (বেদান্তসার)। 'প্রাণ' শব্দটি প্রাণাদিবায়ুর ব্যাপার-সমবায় হেতু সবসময়ই বহুবচনরূপে ব্যবহৃত হয়।




পঞ্চ চ তে প্রাণাশ্চ—দেহস্থিত পাঁচটি বায়ু। শরীরের মধ্যে যে-বায়ু অবস্থান করে, তাকে প্রাণ বলে। প্রাণ, অপান, সমান, উদান ও ব্যান—এই পাঁচ মিলে পঞ্চপ্রাণ। অমরকোষে পাচ্ছি: “প্রাণোহপানঃ সমানশ্চোদানব্যানৌ চ বায়বঃ।” (অমরকোষ) এই পঞ্চপ্রাণ সমস্ত দেহজুড়ে অবস্থান করে; তার মধ্যে হৃদয়দেশে প্রাণ নামক বায়ু, গুহ্যদেশে বা গুদদেশে বা মলদ্বারে অপানবায়ু, নাভিদেশে সমানবায়ু, কণ্ঠদেশে উদান নামে বায়ু এবং সকল শরীর ব্যাপ্ত করে ব্যানবায়ু অবস্থান করে।




"হৃদি প্রাণো গুদেহপানঃ সমানো নাভিসংস্থিতঃ।
উদানঃ কণ্ঠদেশে চ ব্যানঃ সর্বশরীরগঃ।।”
(তর্কামৃত, জগদীশ তর্কালঙ্কার)




বেদান্ত মতে, এই পঞ্চপ্রাণের মধ্যে ঊর্দ্ধগমনশীল নাসাগ্রে স্থায়ী বায়ুর নাম প্রাণ, অধোগমনশীল বায়ুর আদিস্থানে (গুদদেশে) স্থায়ী বায়ুর নাম অপান, সকল নাড়ীতে গমনশীল সমস্ত শরীরে স্থিত বায়ুর নাম ব্যান। ঊর্দ্ধগমনশীল কণ্ঠস্থিত উৎক্রমণ বায়ু উদান এবং যে-বায়ু ভুক্ত অনুপানাদির (ওষুধের সঙ্গে বা তার পর পরই সেবন করা হয় যে-খাদ্যবস্তু) সমীকরণ অর্থাৎ রস-রুধির-শুক্র-পুরীষাদি করে, তাকে সমান বায়ু বলে।  সাংখ্যমতাবলম্বীরা বলে থাকেন যে, নাগ, কূর্ম, কৃকর, দেবদত্ত ও ধনঞ্জয় নামে আরও পঞ্চবায়ু আছে। এদের মধ্যে উদিগরণকারী বায়ু নাগ, উন্মীলনকারী বায়ু কূর্ম, ক্ষুধাজনক বায়ু কৃকর, জৃম্ভনকারী (হাই তোলার কাজটি করে যে) বায়ুর নাম দেবদত্ত এবং পোষণকর বায়ুকে ধনঞ্জয় বায়ু বলে। কিন্তু বৈদান্তিক আচার্যেরা প্রাণাদি পঞ্চবায়ুতে এই নাগাদি পঞ্চবায়ুর অন্তর্ভাব বা অন্তর্ভুক্ত করে প্রাণাদি পঞ্চবায়ুই বলে থাকেন। এই মিলিত পঞ্চবায়ু আকাশাদি (পৃথিবী, জল, বায়ু, অগ্নি, আকাশ) পঞ্চভূতের রজঃ বা রজস্ অংশ থেকে উৎপন্ন হয়। রজঃ হলো কোনো পদার্থ (প্রকৃতি) বা ব্যক্তির মধ্যে গুণ, যা প্রকৃতির অন্যান্য দিকের ক্রিয়াকলাপ, যেমন কর্ম; পরিবর্তন, পরিব্যক্তি; আবেগ, উত্তেজনা; জন্ম, সৃষ্টি, প্রজন্ম ইত্যাদিকে উদ্দীপ্ত বা পরিচালিত করে। অর্থাৎ, প্রাণকে দশটি প্রধান কাজে বিভক্ত করা হয়েছে: যথা পঞ্চপ্রাণ (প্রাণ, আপন, উদান, ব্যান ও সমান) এবং পঞ্চ-উপপ্রাণ (নাগ, কূর্ম, দেবদত্ত, কৃকর ও ধনঞ্জয়)।




এই পঞ্চপ্রাণ পঞ্চকর্মেন্দ্রিয়ের সাথে মিলিত হয়ে প্রাণময় কোশ (বা কোষ) নামে অভিহিত হয়। (বেদান্তসার) বেদান্তদর্শনের মতে, প্রাণের পাঁচটা বৃত্তি আছে—প্রাণ, অপান, সমান, উদান ও ব্যান। প্রাগ্‌বৃত্তির নাম প্রাণ, এর কাজ উচ্ছ্বাসাদি প্রকাশ। অবাগ্‌বৃত্তির নাম অপান, এর কাজ মলমূত্র ত্যাগ প্রভৃতি। যা উক্ত দুইয়ের সন্ধিস্থলে বৃত্তিমান, তার নাম ব্যান; এর কাজ বীর্যাবৎ বা প্রাণশক্তিচালিত বিবিধ কাজ পরিচালনা। ঊর্দ্ধবৃত্তির নাম উদান, এটা উৎক্রান্ত্যাদি তথা কণ্ঠনিঃসৃত সকল ক্রিয়ার কারণ। যা সারাশরীরের সকল অঙ্গে সমভাবে বৃত্তিমান, তা সমান। এই সমান বায়ু দ্বারা ভুক্ত-অন্ন-রস-রক্তাদি ভাবপ্রাপ্ত হয়ে সব অঙ্গে নীত বা হাজির হয়।




এই পঞ্চবায়ুর স্বরূপ হচ্ছে চিন্ময়ী-মহতী শক্তির প্রবাহ—এককথায় এই প্রাণেরই পঞ্চবিধ প্রবাহ। জ্ঞান ও কর্মেন্দ্রিয়সমূহের বাহ্য-বিষয়ের সাথে সম্বন্ধ। এরা আমাদের স্থূল শরীরের গঠন, বর্ধন ও বিনাশরূপ কাজে লিপ্ত; বাইরে থেকে যে সমস্ত বোধ অন্তরে আসে, তার অধিষ্ঠান ও ধারণশক্তি এই প্রাণ।




হৃদয়দেশে (মাথা, ফুসফুস, হৃদয়) প্রাণ (অভ্যন্তরীণ গতিশীল শক্তি) বায়ুর অবস্থান, এর সঞ্চালন অভ্যন্তরীণ এবং ঊর্ধ্বমুখী। প্রাণকে মৌলিক বায়ু হিসাবে বিবেচনা করা হয়, যেখান থেকে অন্যান্য বায়ু উৎপন্ন হয়।




সর্বশরীরে ব্যান (শক্তির সঞ্চালন)—প্রাণধারণ-সাধন, “ব্যানঃ সর্ব্বশরীরগঃ” (অমরকোষ টীকা)। “বায়বঃ প্রাণাপানব্যানোদানসমানাঃ” (বেদান্তসার)। এটি সংবহনতন্ত্র, স্নায়ুতন্ত্র এবং কার্ডিয়াক সিস্টেমের সাথে সম্পর্কিত। ভারসাম্যপূর্ণ ব্যান সুস্থ হৃদয় ও তার সঞ্চালন এবং সুষম স্নায়ুর বিষয়াদি পরিচালনা করে।




কণ্ঠদেশে উদান (মাথা ও গলার শক্তি)—কথনাদিতে সামর্থ্য-জননের হেতু, যা দ্বারা ঊর্দ্ধভাগে লোক বাঁচে (অমরকোষ‌ টীকা); কণ্ঠ-দেশস্থ ঊর্দ্ধগামী প্রাণবৃত্তিবিশেষ বায়ু; “উদানঃ কণ্ঠস্থানীয় ঊর্দ্ধগমনবানুংক্রমণবায়ুঃ” (বেদান্তসার)। উদানো নাম যস্তৃর্দ্ধমূপৈতি পবনোত্তমঃ (সুশ্রুত সংহিতা)।‌ উদান সমান ব্যান ঐক্য হবে সংযমনে (শ্যামাসংগীত)। ঊর্দ্ধাভিমুখ শ্বাস (A Sanskrit-English Dictionary by Monier-Williams)। এর সঞ্চালন ঊর্ধ্বমুখী, এটি শ্বাসযন্ত্রের কাজ, বক্তৃতা এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতার সাথে সম্পর্কিত। ভারসাম্যপূর্ণ উদান একটি সুস্থ শ্বাসযন্ত্র, কথা বলার স্বচ্ছতা, সুস্থ মন, ভালো স্মৃতিশক্তি, সৃজনশীলতা ইত্যাদি বিষয় নিশ্চিত করে।




নাভির নিম্নে ও মলদ্বারে অপান (বাহ্যিক গতিশীল শক্তি)—যা অধোদেশে যায়; গুদস্থিত বায়ু; গুহ্যবায়ু। ’গুদেহপানঃ (সংস্থিতঃ)। (অমরকোষ টীকা)। অপানো নাম অবাগ্‌গমনবান্ পায্বাদিস্থানবর্তী (বেদান্তসার)। "প্রাণাপানৌ সমৌ কৃত্বা নাসাভ্যন্তরচারিণৌ" অর্থাৎ “নাসিকার মধ্যে বিচরণশীল প্রাণ ও অপান বায়ুর ঊর্ধ্ব ও অধোগতি (মুক্ত সাধক) রোধ করেন” (গীতা, ৫.২৭)। যা দ্বারা মলাদি অধোগত হয়; বিষ্ঠানির্গমমার্গ (অমরকোষ টীকা); গুদ, পায়ু, মার্গ। এর সঞ্চালন বাহ্যিক ও নিম্নমুখী, এটি নিষ্কাশন, প্রজনন এবং কঙ্কালের স্বাস্থ্য (পুষ্টির শোষণ) প্রক্রিয়ার সাথে সম্পর্কিত। ভারসাম্যপূর্ণ অপান সুস্থ পরিপাক এবং প্রজনন ব্যবস্থার জন্য কাজ করে।




নাভিদেশে সমান (হজম ও আত্তীকরণ) নামক বায়ুর অবস্থান অনুভূত হয়ে থাকে, এটি পাচক অগ্ন্যাশয় বা অগ্নির সামনে আমাশয় ও ক্ষুদ্রান্ত্রে থাকে। সমান বায়ুর কাজ হলো খাদ্য হজম করানো, অগ্নিকে আরও সক্রিয় করে তোলা এবং রস, মল ও মূত্রকে পৃথক করা। এর নড়াচড়া সর্পিল, নাভির চারপাশে কেন্দ্রীভূত, (দুগ্ধ) মন্থনের গতির মতো; এটি সমস্ত স্তরে হজমের সাথে সম্পর্কিত। সুষম সমান সুস্থ বিপাকের প্রক্রিয়া নিশ্চিত করে।




অল্পকথায় বলি। প্রাণের কাজ হৃদয়দেশে থেকে সকলকে পরিচালনা করা। শক্তি-সঞ্চালনের কাজটি করে ব্যান, সার-অংশ থেকে শরীরের মল পৃথক করার নাম অপান। শরীরের রস-রক্তাদি ধাতুগত বোধের অধিষ্ঠান ও ধারণ-শক্তির নাম উদান, অন্নপানাদির সমনয়ন অর্থাৎ অন্নপানাদিকে রস-রক্তাদিরূপে পরিণত করার নাম সমান। নিঃশ্বাসতত্ত্ব সংহিতার নয়াসূত্রে পাঁচটি ক্ষুদ্র বায়ুর বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, এর মধ্যে তিনটির নাম দেওয়া হয়েছে নাগ, ধনঞ্জয় এবং কূর্ম; বাকি দুটির নাম স্কন্দপুরাণে (১৮১.৪৬) এবং শিবপুরাণ বায়বীয়সংহিতায় (৩৭.৩৬) দেবদত্ত ও কৃকর নামে উল্লেখ করা হয়েছে। ৬ষ্ঠ-১০ম শতাব্দীতে রচিত নিঃশ্বাসতত্ত্ব সংহিতার নয়াসূত্রে পঞ্চবায়ুর উৎস ও কর্মপ্রকৃতি বর্ণনা করা হয়েছে।




যাঁরা প্রকৃত সাধক, তাঁরা এই প্রাণকে চিন্ময়ী শক্তি বা গুরুরূপেই বুঝে বা জেনে থাকেন। চিন্ময়ী প্রাণের এই পঞ্চবিধ বায়ুপ্রবাহ চিৎশক্তিরূপেই এই স্থূল শরীরকে সবসময় সমতা রক্ষা করে ধারণ করে রেখেছে।




খাদ্যদ্রব্য গুরুকে, দেবদেবীকে উৎসর্গ করার সময় যখন প্রথম আহুতি প্রদান করা হয়, তখন সাধক ‘প্রাণায়ঃ স্বাহা’ বলে থাকেন। এতেই প্রাণের পরিতৃপ্তি হয়ে থাকে; আর এই প্রাণের অন্তর্গত চোখ‌ তথা পঞ্চেন্দ্রিয়‌ও তাতে তৃপ্ত হয়ে থাকে। চোখ তৃপ্ত হলে আদিত্য (দ্বাদশ আদিত্য—অর্যমা, পূষা, ত্বষ্টা, সবিত্র, ভগ, ধাত্রী, মিত্র, বিষ্ণু, বরুণ, মিত্র, অংশ, বিবস্বান বা সূর্য) তৃপ্ত হয়। ফলে স্বর্গাধিষ্ঠিত ও আদিত্যাধিষ্ঠিত (‘সূর্য’ অর্থে) দেবতাগণের তৃপ্তি হয়ে থাকে। আর তার ফলে হবনকর্তা (যজ্ঞের হোতা বা ঋত্বিক)—প্রজা, পশু, অন্ন, বিত্ত, ব্রহ্মতেজ লাভ করে থাকেন। দ্বিতীয় আহুতি ‘ব্যানায়ঃ স্বাহা’; এই আহুতির ফলে ব্যান-স্তোত্র, চন্দ্রমা, দিকসমূহ ও সেখানে অধিষ্ঠিত দেবতাবর্গের তৃপ্তি হয়ে থাকে এবং হবন-কর্তাও পূর্বোক্তরূপ ভোগ ও অপবর্গ (মোক্ষ বা মুক্তি) লাভ করে পরম তৃপ্ত হয়ে থাকেন। তৃতীয় ‘অপানায়ঃ স্বাহা’; অপান তৃপ্ত হলে বাক্, অগ্নি, পৃথিবী এবং তত্রত্য (তা সংশ্লিষ্ট বা সেখানে অবস্থানকারী) জীবগণের তৃপ্তিবিধান হয়; হবনকর্তাও পূর্বোক্তরূপ তৃপ্তি লাভ করে থাকেন। চতুর্থ আহুতি ‘সমানায়ঃ স্বাহা’, সমানবৃত্তিতে মন পর্যন্ত বিদ্যুৎ এবং তত্রত্য জীবগনের তৃপ্তি হয়; হবনকর্তাও পূর্বোক্তরূপ তৃপ্ত হন। পঞ্চম ‘উদানায়ঃ স্বাহা’, উদানের তৃপ্তিতে ত্বক, বায়ু, আকাশ ও তত্রত্য জীবগণের তৃপ্তি হয়; তার ফলে হবনকর্তাও পশু প্রভৃতি ভোগ এবং ব্রহ্মা-বচস্ (ব্রহ্মজ্ঞান) অপবর্গের যোগ্যতালাভে তৃপ্ত হন।




এগুলিই প্রাণের পঞ্চবিধ আহুতি নামে খ্যাত। এই আহুতির ফলস্বরূপ মানুষ দুঃখ-দারিদ্র্য, অভাব-অভিযোগ, রোগ-শোক-যাতনা প্রভৃতির হাত থেকে পরিত্রাণ পেয়ে থাকে। আর পারমার্থিক ফলস্বরূপ অপবর্গের বা মুক্তির পথপ্রাপ্তি যে সুগম হয়, এতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।




প্রাণ থেকেই ইন্দ্রিয়ের উৎপত্তি, অর্থাৎ প্রাণই ইন্দ্রিয়ের মূল। এখন প্রাণ কী কী নাম ও রূপ নিয়ে পঞ্চ-কর্মেন্দ্রিয় ও পঞ্চ-জ্ঞানেন্দ্রিয়, এই দশেন্দ্রিয়ের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করছে এবং সেগুলির কাজ কী, তা-ই নিয়ে বলছি:




পঞ্চ-জ্ঞানেন্দ্রিয় যথা, চোখের কাজ দর্শন, কানের কাজ শ্রবণ, নাকের ঘ্রাণ, জিহ্বার আস্বাদন ও ত্বকের কাজ স্পর্শানুভূতিগ্রহণ। পঞ্চ-কর্মেন্দ্রিয়, যথা হাত, পা, পায়ু, উপাস্থ ও লিঙ্গ। বাহ্যিক কোনো বস্তু গ্রহণ করতে হলে হাতই তা করে থাকে; যেমন খাদ্যগ্রহণ বা কোনো স্থূল জিনিসকে গ্রহণ, বিদ্যাচর্চা প্রভৃতি। ভ্রমণ ও দেহভার বহন করা পায়ের কাজ। অভ্যন্তরস্থ মল ও অপানবায়ু নিষ্কাশন পায়ুর কাজ। বীর্য বা বায়ুর ভারসাম্য রক্ষা করে উপাস্থ। দেহাভ্যন্তরস্থ তরলবর্জ্য নিষ্কাশন, জনন প্রভৃতি কাজ করে লিঙ্গ।




এ সকল বিষয়কে অবলম্বন করে দশেন্দ্রিয় সহযোগে মনের যে-প্রকাশ, তা-ই ষড়রিপু। ষড়রিপুসমূহ, যথা কাম (ইন্দ্রিয়সুখ, কামেচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষা), ক্রোধ (রাগ, এবং এটি কামনার হতাশা থেকে উদ্ভূত), লোভ (চরিত্রের ক্লেশের ধারণা যা কামুকতা-লালসা-বাসনা বা সংবেদনশীল বস্তুর সাথে সংযুক্তি—এর যে-কোনো রূপকে নির্দেশ করে), মোহ (বিভ্রান্তকারী শত্রু), মদ (মানসিক অস্থিরতা, অহংকার বা অহংকারের নেশা) এবং মাৎসর্য (হিংসা বা ঈর্ষা—নিজের সম্পত্তি ও অন্যান্য বস্তুগত দ্রব্য উপভোগ করতে অক্ষম হ‌ওয়া সত্ত্বেও সেগুলিকে আঁকড়ে থাকা এবং অন্যদের সাথে ভাগ করতে অনিচ্ছুক হওয়া)।