নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা

: এখন তো অনেক মানুষ ভীষণ ডিপ্রেসড অবস্থায় আছে। চাকরি-বাকরি, নিজস্ব জীবনযাপন, টাকা-পয়সা, সম্পদ, পড়ালেখা থেকে শুরু করে হাজারো সমস্যায় ডুবে মানুষ ডিপ্রেশনে ভুগছে। এটা কি অবধারিত? এর কোন‌ও সমাধান নেই? এটা তো হবার কথা না, তাই না? প্রত্যেকটা জিনিসই তো আলোর মুখ দেখে। তাহলে তাদের কী করণীয়? তারা কী করতে পারে নিজেকে অন্তত এই সময়ে ভালোরাখার জন্য? নিজেকে কিছুটা সময়ের জন্য হলেও মনে যেন না করায়, আমি এখন ডিপ্রেশনে আছি, আমি একজন ডিপ্রেসড পার্সন। তাদের জন্য কিছু যদি বলতেন!




: খুব সহজ। কীরকম? তুমি যে মুহূর্তে ডিপ্রেসড আছ, তুমি যে মুহূর্তে ফ্রাস্ট্রেটেড, সেই মুহূর্তে তোমার কাছে পুরো পৃথিবীর চাইতেও তোমার কষ্টটাকে বড়ো মনে হবে; তখন পুরো একপৃথিবীসমান অর্জনের চাইতে তোমার কষ্টটাকেই বড়ো মনে হয় এবং মানুষ সাধারণত ওই সময়ে ক্ষণিকের উত্তেজনায়, ক্ষণিকের কষ্টে কোনও একটা বড়ো সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে; আত্মহত্যার মতো কিংবা নিজেকে শেষ করে দেবার মতো কোন‌ও একটা বড়ো সিদ্ধান্ত সে নিয়ে ফেলে!




তো আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় আমি দেখেছি, এই পৃথিবীর সবচাইতে বড়ো অর্জনের চাইতেও বেঁচে থাকাটা জরুরি, নিজেকে ভালো রাখাটা জরুরি। নিজেকে জোর করে হলেও বাঁচিয়ে রাখলে বাকিটা ক্রমেই হয়ে যায়। তাই আমি বলব, তোমার যা-ই করতে ইচ্ছে করে, তোমার যে কাজটাই করতে ইচ্ছে করে, সে কাজটা যদি পৃথিবীর কার‌ও কোন‌ও ক্ষতি না করে, তবে তা তুমি করতে পারো। সে কাজটা যা-ই হোক না কেন, যে রকমই হোক না কেন, যত বাজেই হোক না কেন, যদি তুমি কার‌ও কোন‌ও ক্ষতি না করে তা করতে পারো, তোমার কাজের ফলে যদি পৃথিবীর কার‌ও বিন্দুমাত্রও ক্ষতি না হয়, তুমি নিজেকে ভালো রাখার জন্য সে কাজটা ওই মুহূর্তে করো।




সেটা করতে গিয়ে যদি মা-বাবা'র অবাধ্য হতে হয়, তা-ও করো। কেননা মা-বাবা কিন্তু সবসময় তোমার মনের খোঁজ রাখে না, তোমার মনের সুস্থতার খবর রাখে না। তাঁরা কিছু আইডিয়াল চিন্তাভাবনায় চলেন--- এমন হওয়া উচিত, এমন হওয়া উচিত নয়। মনে রেখো, পৃথিবীতে কখনোই কোন‌ও শুড এবং শুড-নট নেই। পৃথিবীতে শুড বলতে সত্যিই কিছু নেই! শুড-নট বলেও কোন‌ও কিছু নেই! এটা করা উচিত, এটা করা উচিত নয়, এগুলো শুধু বইপত্রে থাকে, পৃথিবীতে থাকে না।




পৃথিবীতে কী আছে তবে? পৃথিবীতে শুধু দুটো কথা আছে: What happens and what does not happen! কী ঘটে এবং কী ঘটে না! উচিত-অনুচিতের ধার পৃথিবী কখনও ধারে না। উচিত-অনুচিতের তোয়াক্কা পৃথিবী কখনও করে না। পৃথিবী শুধু তোয়াক্কা করে কী ঘটছে এবং কী ঘটছে না, তার। তুমি যত যা-ই কিছু ভাবো না কেন, এর বাইরে পৃথিবীতে কিছু নেই। আর আমাদের মা-বাবা'রা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে উচিত-অনুচিত নিয়েই জীবনটা কাটিয়ে দিচ্ছেন। তাঁরা আমাকে সেই বাজে অবস্থা থেকে বাঁচাতে পারবেন না। বাবা-মা কাছের মানুষ, তাঁরা আমার ভালো চান, তাঁরা আমার মঙ্গল চান। তাঁরা চান, আমি ভালো থাকি; তাঁরা চান, আমি জীবনে ভালো কিছু করি। কিন্তু তাঁরা জানেন না, জীবনে ভালো কিছু করতে হলে ওই মুহূর্তে বেঁচে থাকতে হবে!




ওই মুহূর্তে বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয়তাটা তাঁরা ঠিক বুঝতে পারেন না। যে মানুষটা ওই মুহূর্তে বাঁচতেই পারল না, সে মানুষটা জীবনে ভালো কিছু করবে কী করে?! মা-বাবা আমার পুরো জীবনটাকে দেখে, মা-বাবা আমার ওই মুহূর্তটাকে দেখে না! একটি মুহূর্তের কষ্টে, সেই মুহূর্তে নিজেকে ভালো রাখতে না পারার ব্যর্থতায় মানুষের জীবনে অনেককিছুই ঘটে যেতে পারে। তাই আমি বলছি, ওই মুহূর্তে ভালো থাকার জন্য তোমার যা যা করার দরকার, তুমি তা তা করো। নিজেকে ভালো রাখার জন্য কার‌ও কোনও ক্ষতি না করে...আমি বার বার বলছি, কার‌ও কোন‌ও ক্ষতি না করে তোমার যা যা করা দরকার, তুমি তা তা করো।




এর জন্য যদি অবাধ্য হতে হয়, অবাধ্য হও। পৃথিবীতে বাধ্য হবার চাইতে বেঁচে থাকাটা জরুরি। এটা আমি আমার জীবন থেকে শিখেছি, আমি আমার জীবনের কষ্ট থেকে শিখেছি। তোমাদের শিখিয়ে যাচ্ছি, তোমরা আমার মতো ভুলটা কোরো না। পৃথিবীতে বাধ্য ছেলে হবার চাইতে একজন জ্যান্ত মানুষ হয়ে বেঁচে থাকাটা জরুরি। এটা মনে রেখো। তাই যখন তুমি বিষণ্ণ আছ, যখন তুমি কষ্টে আছ, যখন তুমি দুঃখে আছ, সেই দুঃখটাকে দূর করতে তোমার যত দিন সময় লাগে, তত দিন নাও; তোমার যা যা করতে হয়, তুমি তা তা করো! সেখান থেকে বেরিয়ে আসো। এই কয়েক দিনের কাণ্ড-কারখানায়, তোমার এই কয়েক দিনের কাজে যদি তোমার কাছের মানুষেরা দুঃখ পায়, যখন তুমি ভালো কিছু করে দেখাবে জীবনে, তখন তারা তোমাকে দেখে সুখী হবে।




এ পৃথিবীতে যারা অনেক ভালো কিছু করেছে, তারা কেউই বাধ্য মানুষ নয়। তারা বেশিরভাগই অবাধ্য মানুষ! তারা অবাধ্য হয়েছিল; এবং যখন ভালো কিছু করতে পেরেছে, যখন বড়ো কিছু করতে পেরেছে, তখন যারা তাদেরকে অবাধ্য বলেছিল, তাদের‌ই মুখে হাসি ফুটেছে। এটাই হচ্ছে পৃথিবীর বড়ো মানুষদের জীবনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস! সেই মানুষটা হবার সমস্ত সুযোগ তোমার নিজের হাতেই আছে। সেই সুযোগটা গ্রহণ করার জন্য নিজেকে বাঁচিয়ে রাখো যে-কোন‌ও মূল্যে। নিজেকে ভালো রাখো। নিজেকে মুহূর্তের বিষণ্ণতা থেকে দূরে সরিয়ে আনো। এবং, এর জন্য যা যা করতে হয়, আমি আবারও বলছি, করো!