দৃষ্টির অধিক দেখতে চেয়ে

এই তুমি আমার আত্মা, এই তুমি আমার বিশ্ব, তুমি সব, তুমি এক, অখণ্ড। তুমি নিত্য, অপরিবর্তনীয়, তোমার ক্ষয় নেই, তোমার কিছুই কোনও দিন নষ্ট হতে পারে না। আমি তোমার লীলা। এই আমার দেখা না দেখা, শোনা না শোনা, স্পর্শ করা না করা, বোঝা না বোঝা, এ সবই তোমার লীলা, নিত্যের অনিত্য লীলা। এই যে আমার অজ্ঞানতা, বিস্মৃতি, নিদ্রা, এতে কোন‌ও প্রকৃত বস্তু ক্ষয় হয় না, নষ্ট হয় না। আমি যাকে মৃত্যু বলে ভয় করছি, তাতেও কিছু যাবে না, নষ্ট হবে না।




এখন যা যেমন তোমাতে আছে, তা তেমনিই তোমাতে থাকবে। ভয়ের তো কোনও কারণ দেখি না, তবে ভয় পাই কেন? মনে করি, জিনিসগুলি আমার, কেবলই আমার; তোমার অর্থে আমার নয়, আর যাবে যে আমারই যাবে, তোমার যাবে না, এই ভেবেই ভয় পাই। এই যে তোমাতে সব দেখাচ্ছ, এতে তো আর কোনও ভয়ের কারণ দেখি না। তোমার জিনিসগুলি এখনও তুমি কত সময় লুকিয়ে রাখছ, তোমার নিত্য ভাবের মধ্যে রাখছ, লীলার আকারে প্রকাশ করছ না। নিদ্রার সময় একেবারেই লুকিয়ে ফেলছ, তাতে তো ভয় করি না। তবে আর শরীরটা যাবে, তাতে ভয় করি কেন?




তোমার জিনিস তোমাতে থাকবে, তুমি যেমন করে হোক, যখন ইচ্ছে হোক, প্রকাশ করবে, লীলাপ্রবাহে প্রবাহিত করবে, তাতে আমার কী আসে যায়? মূল্যবান জিনিস যা, যা নিয়ে কারবার করা আবশ্যক বোধ করো, তা নিয়ে তো বরাবর কারবার করবেই, সে বিষয়ে তোমাকে আর কে শেখাবে? যা কারবারের অবান্তর উপকরণ মাত্র, তা বরাবর দেখাবার দরকার কী? যদি আর না থাকে, না দেখি, তাতে ক্ষতি কী? আমার মধ্যে সেরকম কত জিনিস আছে, তা তো আমি জানিনে, তুমি জানো। তুমি যা রাখার রাখবে, যা রাখবার নয়, বরাবর দেখাবার নয়, তা তোমার নিত্য স্বরূপের মধ্যে একেবারে লুকিয়ে ফেলবে। তাতে কারও কোন ক্ষতি নেই।




এই যে তোমার আমার ভালোবাসা, বলা-ক‌ওয়া, লেনা-দেনা, এর চেয়ে মূল্যবান জিনিস তো আর দেখিনে। এর জন্যেই তো তুমি সব করছ। তোমার জগৎলীলার সব আয়োজন তো এরই জন্যে। তোমার সৃষ্টির সার্থকতা তো এখানেই। এ গেলে যে তোমার সবই যায়, সবই নিরর্থক হয়, তাই মনে হচ্ছে, এ কখনও যাবে না। কেবল মনে হচ্ছে বলে তো তৃপ্ত হতে পারছিনে। এ-ই যে তোমার দৃষ্টি, এ-ই যে তোমার জীবন্ত স্পর্শ। এ সবই বলছে, তোমার এই লীলা নিত্য, অবিনাশী, অফুরন্ত। আমি ভালো করে তোমার দিকে তাকাই, ভালো করে এই স্পর্শ অনুভব করি, যাতে এ সমুদয়ের মানেটা, মর্মটা, একেবারে আমার মনে এমন করে মুদ্রিত হয়ে যায় যে তা আর কখনও মুছবে না।