দূরত্ব বাড়ে যেভাবে

 
 দূরত্ব এক দিনে বাড়ে না। সম্পর্কও এক দিনে ভাঙে না।
 দুটোই হয় ধীরে ধীরে।
  
 বিন্দু বিন্দু জল জমতে জমতে একদিন সমুদ্র হয়ে যায়। ইঞ্চি ইঞ্চি দূরত্ব বাড়তে বাড়তে দু-জনের মাঝে একদিন মরুপ্রান্তর গড়ে ওঠে।
 শুরুতে অতটা বোঝা যায় না, পরে তীব্র ধাক্কাটা একদম বুকে এসে লাগে!
  
 নদী ভাঙতে দেখেছেন তো? নদীর পাড় এক দিনে ভাঙে না। আগে ভিত্তিটা ভাঙে, তারপর ক্রমেই ফাটল ধরে। সবশেষে, পাড় ভেঙে ভেঙে বিলীন হয়ে যায় নদীগর্ভে।
 ভাঙতে সময় লাগে না, তবে ভাঙনের সুরটা তৈরি হতে সময় লাগে।
  
 ভালোবাসায় যখন বিশ্বাস নষ্ট হয়ে যায়, তখন স্বাভাবিকভাবেই সম্পর্কটা দুর্বল হতে থাকে। একসময় পরস্পরের প্রতি আস্থার জায়গাগুলি এক এক করে হারায়। ক্রমশ দু-জনের মধ্যে তিক্ততার সৃষ্টি হয়। হঠাৎ একদিন নদীর ফাটল-ধরা পাড়ের মতন টুক করে ভেঙে কোথায় জানি তলিয়ে যায় সেই সম্পর্ক! নদীর মতোই এভাবে কালগর্ভে বিলীন হয় ভালোবাসা।
  
 যে সম্পর্কে কোনও ভালোবাসাই থাকে না, কিন্তু সম্মান থাকে, সে সম্পর্কও দিব্যি টিকে থাকে।
 যে সম্পর্কে তীব্র ভালোবাসা থাকে, কিন্তু সম্মান থাকে না, সে সম্পর্ক বড্ড ঠুনকো, নাজুক।
 দু-জন মানুষ ভালোবাসাহীন হয়েও একে অন্যের সঙ্গে বাঁচে, কিন্তু সম্মানহীন হয়ে বাঁচতে পারে না।
 ভালোবাসা আপেক্ষিক বিষয়, একেক মানুষের কাছে একেক রকমের। কিন্তু সম্মান ব্যাপারটা সবার কাছেই কম-বেশি একই রকমের। ওটা নষ্ট হয়ে গেলে তীব্রভাবে অনুভব করা যায়, এমনকী খালিচোখেই স্পষ্ট দেখা যায়!
  
 আমার ভালোবাসার মানুষটা আমাকে ভালোবাসে না, এটাও মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু সেই মানুষটা আমাকে অসম্মান করেই যাচ্ছে দিনের পর দিন, এটা মেনে নেওয়া খুব কঠিন!
 মানুষের আয়ুর জন্য সম্মানের দরকার হয়। যে শত্রু আপনাকে সম্মান করে, তার অস্তিত্ব মেনে নিয়েও আপনি স্বস্তিতে বাঁচতে পারবেন। অন্য দিকে, যে ভালোবাসার মানুষ আপনাকে অসম্মান করে, তার কথা মাথায় এলেও দেখবেন, সমস্ত ভাবনাজুড়ে হঠাৎই খুন চেপে যাচ্ছে! ভালোবাসায় সম্মান জিনিসটা অক্সিজেনের মতো, ভালোবাসাকে বাঁচিয়ে রাখতে ওটা লাগেই লাগে!
 ছোট্ট একটা জীবন! কখন যে ফুরিয়ে যাবে, টেরই তো পাবেন না! কীসের অমন দায় অত অসম্মান সহ্য করে করে বাঁচবার?
  
 যে মানুষ আপনাকে ভালোবাসে, একইসঙ্গে কথায় কথায় অসম্মান করে রীতিমতো অধিকার নিয়ে, সে মানুষটার ওরকম ভালোবাসায় একদিন ঠিকই আপনি দম আটকে মারা যাবেন। সেদিন কে আসবে বাঁচাতে? পরিবার? সমাজ? তথাকথিত পরামর্শদাতা কিংবা কোনও শুভাকাঙ্ক্ষী?
 বুঝেই বলছি, কেউই আসবে না! কথাটা একটা কাগজে লিখে রাখুন, পরে মিলিয়ে নেবেন। মানুষজন অন্যের পায়ে কেবল শেকল পরাতেই জানে, শেকলের ঘায়ে ঘায়ে ক্ষতবিক্ষত সেই পায়ের ব্যথা একটুখানিও কমাতে ওরা কেউ জানে না। জানে যারা, ওরা সময় দেবে না। যারা সময় দেবে, ওরা কেউ জানে না। অথচ এই দু-দলেরই চোখের দিকে তাকিয়ে থেকে থেকে দীর্ঘদিন আপনি শেকলের ঘা নীরবে সহ্য করে গেছেন!
  
 খাবার টেবিলে ও সুখের চেয়ারে, এই দুই জায়গায় অহেতুক চক্ষুলজ্জা করলেই ঠকবেন!
 ময়লার প্যাকেটে ভরে কেবল ময়লাই নয়, কিছু মানুষকেও ছুড়ে ফেলে দিতে জানতে হয়।
 কিছু মানুষ দেখতেই শুধু মানুষের মতন, আদতে ওরা একেকটা আবর্জনা মাত্র। ওদের প্রকৃত জায়গাটি ডাস্টবিনে। দেরি হয়ে যাবার আগেই ওদের ছুড়ে ফেলে দিতে হয়, নইলে একদিন গোলাপের ঘ্রাণটাও নাকে এলে মনে হবে, এ ঘ্রাণের উৎস নিশ্চয়ই পূতিগন্ধময় কিছু-একটা!
  
 রেস্টুরেন্টে গিয়ে পিৎজা খেতে কারও কারও সঙ্গে কাউকে লাগে, আবার কারওবা স্রেফ মনের ইচ্ছে ও পকেটের পয়সা লাগে। প্রথম দলের মানুষ যারা, ওদের কপালে একদিন পিৎজা আর জোটে না। কেননা মানুষ আসবে, মানুষ যাবে; কিন্তু পিৎজা ঠিকই থেকে যাবে, পয়সা থাকলেই তা খাওয়াও যাবে---ইচ্ছে ও পয়সা হলেই খাওয়াটা দিব্যি চলে যাদের, পিৎজার উপর আজীবনের অধিকার কেবল তাদেরই!
  
 খোলাখুলিই বলছি, সম্মান করতে জানে না যে, সে কখনওই, ভালোবাসা পাবারও যোগ্য নয়, সম্মান পাবারও যোগ্য নয়। সময় থাকতেই সরে আসুন, তার ছায়াও আর মাড়াবেন না! সময় গেলে কিন্তু সবই হারাবেন!