দুর্গে দুর্গে অভয়-দুর্গে

সাঙ্গ হলো বাদলাভিসার, স্বচ্ছ নীলাকাশ।
চায় অপূর্ব পৃথিবীপানে—বিনাশে সংশয়;
শোনায় বার্তা মহতী, জাগিয়ে সুখ-উল্লাস
দিগ্‌বধূ-মনে, কেদার-কৃপাধারা বুঝি বয়
আগমনী-গীত মরমে মরমে। নব আলিম্পন
পেয়েছে কি সুন্দর নগ্ন শিশু এ অন্তরে মম?
মাতৃমমতাসুধাক্ষরা শক্তিপীঠে মগন যে-মন,
তারই শীর্ষে শোভে সূর্যশ্রেণি রতনদ্বীপসম।




আশ্বিন-উৎসব-রসে প্রকৃতিপাত্র পূর্ণ করে আবার—
কে তুমি এলে জাগাতে, নিয়ে ভূমাব্যঞ্জনা, বিশ্বমূলাধার?




চিরকামনার মায়ামৃগমদ-গন্ধপরশে
জীবনাশ্রমে আমার চিত্তশিখা উঠছে উজলি।
মানস-যাত্রীদল কোথা চলেছে হরষে,
কোন তীর্থপথে যাবে দিতে প্রাণের অঞ্জলি?
প্রশান্তি-আবেষ্টনে চায় নিঃসঙ্গতা দিতে এনে
অমৃত-পারাবারে অন্তহীন রহস্যের 'পরে,
আজ মহাপ্রকৃতি এ দু-চোখে রূপরেখা টেনে
অরূপের গায় গান, ধ্যানে পরব্রহ্ম স্মরে।




প্রমা-প্রেম-পরশ দিতে সংসারে ওই মায়া-আলোছায়া হতে,
কে তুমি বোধনশঙ্খ বাজিয়ে আমার এসেছ সাধনাস্রোতে?




স্বপনে ফুটেছে অভ্রপুষ্প, ঝরে গেছে কত তারা,
বেজেছে বরষারাতে সপ্তস্বরায় সংগীত-সুর শত,
শুনেছি ছেদবিরহবাণী, ঝরেছে মৌনী অশ্রুধারা,
বয়ে চলে গেছে দূরে…আঁখিদিন নিমেষনিহত।
বিষাদস্রোতে, ঘাতে-প্রতিঘাতে প্রাণসিন্ধু-মাঝে
সুবিচ্ছিন্ন দ্বীপ যেন—যে-জীবন অরণ্য-শোভায়
যাপন আমার, সেখানে মায়ের বন্দনায় বাজে
শাঁখ-উলু-ঢাক; ব্যথাবাণী কবে সঁপব তোমায়!




সংসারের সান্ত স্তরে…এল প্রাণে কতবার অনন্তের সে ডাক?
এনেছ এ কী বার্তা বয়ে…বলো বলো বলো, ওসব কথা থাক!




ধরে দশভুজা রূপ, মহাসাধকের হে লীলাময়ী!
মাগো এসেছ তুমি, আদ্যাশক্তি কৈবল্যদায়িনী
ভবতারিণীর দেহে, করো করুণারসে মরণজয়ী
সেই সাধকে, গায় সুরধুনী যার কথা ও কাহিনি!
চরণে তোমার শান্তি খুঁজে এ অন্তর-শিশু ডাকে,
বুঝি খোঁজে আশ্রয় সীমাহীন ওই মহাসিন্ধু-বুকে;
বিন্দু মেশে অন্তহীনে, যাই তবুও ডেকে তোমাকে,
নিখিলের যত ধারা, সবই তার মাঝে মেশে সুখে।




গড়ি মানস-প্রতিমা শারদোৎসবে, করি সুখে চেতনবোধন,
আয় তোরা সবে, জাগা মাতৃশক্তি—মনোগৃহে ফিরুক মন!