তৃপ্তির প্রতিশ্রুতি

আমার জীবনের কোনও মুহূর্তকে আমি ব্যর্থ মনে করি কেন? তোমার জগতে, যেখানে তুমি কাজ করছ, সেখানে তো কিছুই ব্যর্থ হতে পারে না। বিশেষত যেখানে তোমার অনুভূতি বর্তমান, সেখানে তো ব্যর্থতার কোনও কথাই হতে পারে না। সেখানে অল্পাধিক সার্থকতা আছেই আছে।





আমার নিদ্রা দেখে আমি ভয় পাই, নিরাশ হই। নিদ্রাতে যে কিছুই নষ্ট হয় না, তা তো তুমি সারাজীবনই দেখাচ্ছ। আমার জাগ্রতাবস্থার সমুদয় অনুভূতি, সমুদয় সম্ভোগ, আমার নিদ্রাকালে তোমার সামনেই জ্বলন্ত থাকে। আমি তা ভুলি, তুমি তা ভোলো না। তা স্মরণ রেখে, জীবন্তভাবে দেখে তুমি কি নিশ্চিন্ত থাকতে পারো?




আমার আপাতব্যর্থতা তুমি নিশ্চয়ই সার্থক করবে। আমার অসিদ্ধকে নিশ্চয়ই সিদ্ধ করবে। আমার অতৃপ্ত আকাঙ্ক্ষা তৃপ্ত করবে। তুমি আমার ভালোবাসা চাও। তেমন করে তো ভালোবাসতে পারিনি। ভালোবাসার আকাঙ্ক্ষা অতৃপ্তই রয়েছে। সে অতৃপ্ত আকাঙ্ক্ষা তুমিই দিয়েছ। তা কখনও অতৃপ্ত থাকতে পারে না। অতৃপ্ত বাসনার ভেতরেই তৃপ্তির বীজ রয়েছে। তোমার নিত্য স্বরূপে তা তৃপ্ত হয়েই আছে, কেবল তা আমাতে তৃপ্তিরূপে প্রকাশ হতে বাকি।




এই তো প্রকাশের প্রতিশ্রুতি পাচ্ছি। “প্রিয়োহসি মে।” তোমার এই বাণী সমুদয় উচ্চআকাঙ্ক্ষা তৃপ্তির প্রতিশ্রুতি। এই বাণী যতক্ষণ কানে বাজে, ততক্ষণ কোনও ভয় থাকে না, নিরাশা থাকে না। এই বাণী তো কখনও নীরব হয় না। আমার ভয়-নিরাশার ভেতরেও অস্ফুটভাবে এই বাণী শোনা যায়। যে এই বাণী শোনেনি, তার ভয়ও নেই, নিরাশাও নেই। আমি শুনেছি বলেই ভয়, নিরাশা। কী আশ্চর্য! কী আশ্বাস!




আমার মন থেকে সমস্ত ভয়, সমস্ত নিরাশা তুমি একেবারে তাড়িয়ে দাও। এ সমস্তই অসঙ্গত, আমার স্বরূপ-বিরুদ্ধ। এই তো মা-ছেলের নিত্য যোগ, নিত্য প্রেম, অবিচ্ছিন্ন, অবিচ্ছেদ্য প্রেম। প্রেম যে যায়, প্রেম যে যেতে পাবে, এ তো অসম্ভব। প্রেম ঢাকা থাকে বলে ভয় করি, এই বুঝি গেল! ভয়ের ভেতর যে দুর্বলতা লুকিয়ে থাকে, তা বুঝতে পারিনে।




তোমার প্রেম তো যায়ই না, আমার প্রেমও যায় না; আমার দৃষ্টির আড়ালে যায়, আমার কাছ থেকে লুকোয়, তোমার কাছ থেকে লুকোতে পারে না। তোমার নিত্যধামের সব জিনিসই, জ্ঞান, প্রেম, পুণ্য, সৌন্দর্য, মাধুৰ্য সবই ওই রকম; লুকোয়, কিন্তু নষ্ট হয় না। তবে আমার কল্পনা-জল্পনা, ভয়-ভাবনা তুমি একেবারে দূর করে দাও, তোমার নিত্য প্রেমের নিত্য আস্বাদন পেয়ে আমি সকল ভ্রম, সকল পাপ, সকল দুঃখ থেকে চিরমুক্ত হই।