তারপর সব অন্ধকার

কখনও কখনও নিজের লাশের পাশে এসে বসি; চুপচাপ। শহরের সবকটা ল্যাম্পপোস্ট এক এক করে জ্বলে উঠলে শুরু হয়ে যায় কথোপকথন।




: আমি তো মরিনি! তুমি কে? আমাকে এভাবে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছ কোথায়? কোন আস্পর্ধায়? ছেড়ে দাও বলছি... আমাকে ছেড়ে দাও! খরবদার, আমাকে ছোঁবে না! এই শরীর আমার!




(সে শুনল না আমার কথা। নির্বিকার ভঙ্গিতে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যেতে লাগল কোথায় যেন!)




: জীবিকা নির্বাহ করার জন্য আমি অনেক পরিশ্রম করি। আমি এখানেই থাকি। একদিন ওরা সবাই মিলে আমাকে ধরে অন্ধকারে ছুড়ে ফেলল। আমার সারাদেহ ছুরির আঘাতে আঘাতে ক্ষতবিক্ষত করে দিল। তারপর ওরা আমার হাত কাটল, পা কাটল। ওরা আমাকে চেনে না; আমিও ওদের চিনি না।




(হঠাৎ তার কী মনে হলো জানি না। তার কণ্ঠস্বর এবং মেজাজ, দুই-ই নেমে এল অনেক নিচে।)




: তোমার শরীরের অর্ধেকটা আমায় ধার দেবে? আমি কেবল আর একটি বার বাঁচতে চাই! কিংবা তোমার হাতদুটো... নিদেনপক্ষে পা...? আমি আমার স্ত্রী-সন্তানদের খোঁজে যেতে চাই।




: তাহলে তো এই চোখজোড়াও তোমার দরকার, তাই না?




: না না, লাগবে না! চোখ লাগবে না! রক্ত দেখতে আমি চাই না! আমার কেবল হাত-পা হলেই চলবে; চোখের কাজটা ওরাই করে দেবে!




ওর যা যা দরকার, তার সব‌ই আমি ওকে দিয়ে দিই একটা একটা করে... চিরদিনের জন্য।




পরক্ষণেই দেখি, সে ওখানে নেই। সে চলে গেছে কোথায় যেন! সে হারিয়ে গেছে এক অন্ধকারের হ্রদে, নিজের হাতে নিজেরই লাশ বহন করতে করতে।




আমি রয়ে যাই সেখানেই। আমার চোখের সামনে আমার মৃত চোখদুটো ঠায় জেগে থাকে। ওদের প্রচণ্ড ভারে খুব চেয়েও আমি মরতে পারি না।




সবাই এক! সবার রাস্তাই এক!
... এই দুইটি বাক্য তীব্র চিৎকারে বলতে বলতে কে যেন এসে দাঁড়ায় পথের ঠিক মাঝখানে।




তারপর সব অন্ধকার। আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখি, সেখানে আকাশ নেই, কেবলই ধোঁয়া।