জন্মদিনের কিছু আদিখ্যেতা

 প্রতিবছরই, তুমি ঘুম ভেঙে দেখো, তোমার ফোনটা নোটিফিকেশনে ভর্তি হয়ে আছে! অনেক অনেক মেসেজ, অনেক অনেক মিসডকল, এবং আরও অনেক অনেক কিছু। ঠিক পরের দিনই, সব আবার আগের মতন। তোমার ফোনে যথারীতি কবরস্থানের শুনশান নীরবতা। দু-একজন অবশ্য দেরিতেও উইশ পাঠাবে। এবং, সেই উইশগুলিতে 'সরি'ও থাকবে। আচ্ছা, ওদের ওই 'দুঃখ' দেখে তোমার মনেও কি দুঃখ হবে?
  
 সব ফোনকল ও মেসেজের কথা একটাই: 'আজকের প্ল্যান কী?' এমন নয় যে, ওরা সত্যিই তোমার প্ল্যান নিয়ে জানতে চায়। ওইদিনে ওটা বলতে হয় বলেই বলে, এরকম একটা ব্যাপার। ওটা জিজ্ঞেস না করলে যেন জেল-ফাঁসি কিছু একটা হয়ে যাবে!
  
 এরপর তুমি ভাবতে থাকো, কী কী করা যায়! কী করলে ফেইসবুকে সেইরকম কিছু একটা পোস্ট করা যাবে, এবং লাইক-কমেন্টের ছোটোখাটো একটা বন্যা বয়ে যাবে! মানুষ তো বেঁচেই থাকে তার নিজের জন্মদিনের পোস্টের লাইক-কমেন্ট গোনার জন্য! চিনে না, জানে না, এমন লোকজনও খুবই প্রেমময় ভাষায় ও পোস্টারে জন্মদিনের উইশ করে; দেখলেই মনে হবে, বুঝি জন্মজন্মান্তরের চেনা! 
  
 জন্মদিনে সবারই ফেইসবুক ওয়াল মিথ্যে সম্মান ও চৌদ্দ নম্বর ভালোবাসার ঠ্যালায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে! আর যদি তুমি আমার মতন কেউ হও, তবে তুমি অন্য দশটা দিনের মতোই একা একা দিনটা কাটিয়ে দেবে। খুবই ভালো হয়, যদি নিজের ফেইসবুক আইডি থেকে জন্মদিনটাই হাইড করে রাখো, আমি যেমন করেছি! মানুষের ফেইক আন্তরিকতার পেছনে সময় ও ব্রেইন খরচ করার কী মানে? ওরাও বাঁচবে এই বাড়তি পেইনটা থেকে।
  
 নিজেকে জিজ্ঞেস করবে আর করতেই থাকবে, কী লাভ এসব করে? এই যে সবাই আমাকে এই একটা দিন মনে রাখে, আর বাকি তিন-শো চৌষট্টি দিন কখনওই কোনও খোঁজ নেয় না, এর নামই কি জন্মদিন? একসময় তুমি আবিষ্কার করবে, তুমি লোকজনের উইশের রিপ্লাই দিতে শুরু করেছ! যাদের সঙ্গে কখনওই কথা হয় না, ওরাও লিখবে, তোমাকে ওরা মিস করে; উত্তরে তুমিও তা-ই লিখবে। এটা কোনও ভালোবাসা বা টান নয়, এটা একটা বিনিময় বা ভদ্রতা।
  
 তোমার জন্মদিন যে ওদের মনে আছে, তা কিন্তু নয়। ফেইসবুক বা অন্য কোনও রিমাইন্ডার থেকে ওরা তারিখটা জেনেছে। অথচ তুমি ওদের রিপ্লাই দাও, আমার জন্মদিনটা মনে রাখার জন্য ধন্যবাদ! কিংবা এরকমই কিছু একটা লিখে পাঠাও। এর নাম কি কপটতা নয়? মানুষ কপট না হয়ে বাঁচতে পারে না, বহু দিন হয়ে গেল।
  
 তুমি যত বড়ো হবে, ততই বুঝতে পারবে, জন্মদিনের মানে গিফট, পার্টি, ফ্রেন্ড এসব নয়। ওই দিনটার মানে, তোমার ঘাড়ে প্রতিবছরই নতুন নতুন বোঝা চেপে যাচ্ছে, তোমাকে আরও পরিপক্ব হতে হবে, তোমার দায়িত্বও ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে। একেকটা জন্মদিন আসে আর তোমাকে মনে করিয়ে দেয়, অনেক কিছুই করার বাকি, জীবনটাকে গোছানোর এখনও বাকি। যা যা করতে পারতে, কিন্তু করোনি, তোমার বন্ধুরা ওসব করে ফেলেছে, তাই সামনের জন্মদিনটা আসার আগেই যেন ভালো কিছু করতে পারো, তার জন্য প্রস্তুত হতে হবে।
 এই দিনে, তোমার মাথায় নানান চিন্তা আসে। নানান ভাবনায় জন্মদিনটা কাটে। অন্য দিকে, তোমার কাছের বন্ধুরা ও কিছু কাছের মানুষ তোমার জন্মদিনের কয়েক দিন আগে থেকে দিনটার জন্য অপেক্ষা করে। ওরা তোমার সঙ্গে কেক কাটে, তোমার সঙ্গে মজা করে, ফেইসবুকে ছবি আপলোড করে। এতে অবশ্য কিঞ্চিৎ জ্ঞানের চর্চাও হয়, ছবির ক্যাপশন খুঁজতে গিয়ে!
  
 ওদের দেখে তোমার মনে আসতে পারে, এত উদ্‌যাপন করার কী আছে? জীবনে ভালো কিছু করার এখনও বাকি। জীবনটাকে তোমার কাছে দিন দিন কঠিন মনে হয়।
  
 ওরা বলে, ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাও যে আরও এক বছর বেশি বাঁচতে পারলে!
 তুমি ভাবো, এই এক বছর বেশি বেঁচে, বয়স আর কষ্ট বাড়ানো বাদে, ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দেবার মতন এমন কী করতে পেরেছি?
  
 বেঁচে থাকাটাই যে দারুণ একটা বোনাস, এটা আর তোমার মাথায় আসে না! বেঁচে থাকলে কোনও সুযোগই যে নষ্ট হয়ে যায় না, এটা আর তোমার মাথায় আসে না!
  
 তুমি সত্যিই বড়ো হয়ে যাচ্ছ!