ছোটোর সুখ

আমরা যখন খুব ছোটো কিছু নিয়েও মন দিয়ে ভাবি, এই যেমন, চোখের সামনে থাকা ছোট্ট ঘাসটিকে ভাবনায় জায়গা দিই একধ্যানে, তখন তা ক্রমেই হয়ে ওঠে রহস্যময়, চমৎকার, এমনকি তা থেকে চাইলে জীবনের অনেক প্রশ্নের উত্তর খুঁজে নেওয়া যায়।

এই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যারা গেছে, তারা জানে, জীবনের এমন ছোটো ছোটো অনুষঙ্গ থেকে বড়ো বড়ো আনন্দের খোঁজ পাওয়া যায় খুব সহজেই। যত দেখি, তত দেখতে ইচ্ছে করে; যত সময় কাটাই, তত সময় কাটাতে ইচ্ছে করে। এই যে সময় দেওয়া, সৌন্দর্যের খোঁজ পাওয়া, নিজের হৃদয়ের অলিগলিতে বিচরণ করা, এসব মূলত নিজের সঙ্গে বাঁচা নিজেকে নিয়েই। তাই এই কাজটা সবসময়ই সুখের।

পেঁয়াজের খোসা ছাড়িয়ে একটা একটা করে স্তর খোলার সময় দেখা যায়, প্রতিটি স্তর যেন আগের স্তরের চাইতে সুন্দর। তবে এই সৌন্দর্যের খোঁজ পেতে চাইলে শুরুর স্তরটি সবার আগে খুলতে হবে। মনের বেলাতেও তা-ই। মনের দরজা খুলতে হয়। খোলার কাজটা নিজেকেই শুরু করতে হয়। শুরু করলে বাকিটা আপনাআপনিই হয়ে যায়।

পৃথিবীকে এভাবে নির্ভার হয়ে দেখতে ভালো লাগে। দেখার রাস্তা আরও আছে, তবে আমি এভাবেই দেখি। অনেক জিনিসকে একসাথে মাথায় না এনে খুব ছোটো ছোটো জিনিসের মাঝে ডুব দেওয়া সহজ ও স্বস্তিকর। একদমই সাদামাটা ঘটনা বা আচারঅনুষ্ঠান থেকে জীবনকে যতটা কাছ থেকে দেখা ও বোঝা যায়, খুব জটিল বা কঠিন বা জাঁকালো কিছু থেকে ওরকম করে দেখা ও বোঝা যায় কি? কেউ কেউ হয়তো পারে তা করতে, তবে আমি পারি না। জীবনের গূঢ়তম অর্থ, অন্তর্নিহিত রহস্য উদ্‌ঘাটন করতে চাইলে সহজ কথা, সহজ সৌন্দর্য, সহজ অনুষঙ্গ খুব সাহায্য করে।

আমি জানি, আমি চাইলেও সব কিছু জানতে ও বুঝতে পারব না। আমি এ-ও জানি, সুখী হবার জন্য এর কোনো দরকার‌ও নেই। আমার আশেপাশে যা-কিছু আছে, তার বেশিরভাগই আমার অপরিচিত। দেখলে মনে হয়, ওদের আমি চিনি; পরক্ষণেই ভাবি, সত্যিই কি চিনি, না কি চিনি বলে অনুমান করি? অত ভাবনায় না গিয়ে চিনি না ভাবতেই আমার ভালো লাগে। এই ভাবনা আমাকে সেই রাস্তায় হাঁটিয়ে নেয়, যেখানে আমি কখনও হাঁটিনি, যেখানে হাঁটলে অচেনাকে চিনতে ইচ্ছে করে, যেখানে ভ্রমণ করলে পৃথিবীর সাথে গল্প হবার ছদ্মবেশে নিজের আত্মার সাথে নিভৃতে বসবাস করা যায়।

আমি জানতে চাই, আমি কিছু জানি না।
আমি বুঝতে চাই, আমি কিছু বুঝি না।
আমি অনুমানে নয়, অনুধ্যানে বাঁচতে ভালোবাসি।