চুল

স্নানঘরে যখন‌ই যাই,
তোমাকে
যতটা অনুভব করি,
ততোধিক অনুভব করতে হয়।
কী এক চুলের বাধ্যতা!




আমার শরীরধোয়া সমস্ত জল
থ‌ইথ‌ই খেলতে থাকে
আমার পায়ের চারিদিকে।
ওদের যাবার কোনও জায়গা নেই।
চুলের শাসনে ওদের এই বন্দিত্ব।




জল জমে থাকে;
জলের সঙ্গে চলে
তোমার চুলের অবিরাম মিতালি।
জলে চুলে, চুলে জলে
চলে চুলের জলকেলি।
হয়তো মনের ভুলে...
তুমি আমায় প্রতিনিয়তই
বেঁধে ফেলো চুলে!




তোমার চুলের মিছিল গিয়ে
সগৌরবে আটকে দেয়
জল সরবার রাস্তা।
মিছিলে যারা, ওদের দাবি একটাই:
আজ ওরা কোথাও যাবে না।
প্রাণ যায় যাক, তবু রাস্তা ছাড়বে না।
চুলের দাবিতে খাবি খায় জলের প্রহার।




চুলের রাজনীতিতে
আটকে থাকে
তোমার আমার
চুলের সম্পর্ক,
চুলের দাম্পত্য।




সেই ব্যারিকেড স্পষ্টভাবে সাক্ষ্য দেয়,
চুল পড়ে তোমার মাথা ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে...
চুল-পড়া ঠেকানোর পয়সা তোমার বরের পকেটে নেই...
তোমার মাথাভর্তি চুল আজ ইতিহাস হবার পথে...
স্নানঘরের মেঝেতে পড়ে-থাকা চুল সরাবার সময় তোমার হাতে নেই...
আমাদের ঘরসংসার ঠেলতে ঠেলতে তুমি বড্ড ক্লান্ত...
কমদামের শ্যাম্পু পয়সার সঙ্গে সঙ্গে চুল‌ও খেয়ে নেয়...
এরকম আরও অনেক কিছু!
সেই সাক্ষ্যে ফাঁসি হয়ে যায় আমার স্বস্তির।
তোমার চুলে ঝুলতে থাকে আমার স্বস্তি।




তবু
তোমার ব্যস্ততা ও আমার দারিদ্র্য
ছাপিয়ে ওঠে
তোমার আলস্য ও আমার বিরক্তি।
তোমাকে পেয়ে...পেলাম কী এক চুলের জীবন!




সবিনয়ে ও সভয়ে বলছি,
মেঝেময় এভাবে চুল ফেলে না রেখেও
ভালোবাসা যায়, চুলের বড়াই করা যায়।
তোমার চুলের দোহাই লাগে,
এই চুলোচুলি অবিলম্বে চুলোয় ছুড়ে মারো!




তোমার ভালোবাসার
চুলচেরা বিশ্লেষণ করেও
এক চুল বাদে
পাই না আর কিছুই।
ভালো যদি বাসো,
তুমিই বরং এসো,
চুল পাঠিয়ো না।




ছোট্ট একটা জীবন!
একে চুলে চুলে ভরিয়ে রেখে কী লাভ, বলো?