খুন করে ফেলব!

 অনেক দিন পর আজ তুমি আমার দিকে তাকাচ্ছ, দয়া দেখাতে চাইছ, কেননা আমার হৃদয়টা ভেঙে গেছে। আগে তোমার এইটুকু সময়ও হয়নি।
  
 আচ্ছা, তুমি কি জানো, হৃদয়টা এমন ভেঙে গেলে মানুষ কখনও কখনও কতটা নিষ্ঠুর হয়ে উঠতে পারে? এই যে আজ আমাকে যেমন দেখছ, আমি এমন হয়ে গেছি হৃদয়ের তীব্র ভাঙন সহ্য করতে করতে।
  
 এ জীবনে শুধু দিয়েই গেছি, সবার জন্যই ভেবেছি, এর বিনিময়ে কখনও কিছুই প্রত্যাশা করিনি। সত্যি বলছি, প্রতিদিন যখন দিনশেষে তোমাকে খুশি দেখতাম, তখন আমার সব কষ্ট দূর হয়ে যেত। তোমার মনটা যত বেশি হাসিখুশি থাকত, তুমি তত বেশি সামনের দিকে এগিয়ে যাবার শক্তি পেতে। তোমাকে তোমার লক্ষ্যের দিকে এগোতে দেখলে আমার খুব ভালো লাগত। আমি তোমাকে আরও বেশি যত্নে রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতাম।
  
 একদিন তুমি সত্যি সত্যি গন্তব্যে পৌঁছে গেলে। সেদিন আমার চাইতে খুশি বোধ হয় আর কেউ হয়নি। সেদিনের পর থেকে আমি ক্রমেই বুঝতে শুরু করলাম, তুমি আমার জীবনে আর থাকতে চাইছ না। আমি তোমাকে যখনই জিজ্ঞেস করতাম, 'তুমি আমার পাশে থাকবে তো?', তখনই তুমি আমাকে নিয়ে মজা করতে, হাসাহাসি করতে। আমরা দু-জনই বুঝতে পারছিলাম, তোমার সাফল্য আমাদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করে দিচ্ছে।
  
 যে তুমি একসময় আমার সঙ্গে কথা না বলে থাকতেই পারতে না, সেই তোমারই কাছ থেকে আমাকে খুব কষ্ট করে দু-একটা কথা বের করতে হতো। ওই অল্প কথাগুলিই তুমি এমনভাবে বলতে, শুনলে মনে হতো, কেউ আমার মনে ও মস্তিষ্কে ভয়ংকর বিষ ঢেলে দিচ্ছে। আমি ক্রমেই ভেঙেচুরে শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম, অথচ এই আমিই একদিন তোমাকে শক্ত হতে শেখাতাম।
  
 আমি ভীষণ বদলে যাচ্ছিলাম; দ্রুত। তখন আমার তোমাকে পাশে দরকার ছিল; পাইনি। তুমি ব্যস্ত হয়ে পড়ছিলে, তুমি আমার জীবন থেকে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছিলে। মনে হচ্ছিল, যেন তুমি আমার জীবনে কখনও ছিলেই না!
  
 আমার প্রতি তোমার আচরণটা এমনই ছিল; দেখে মনে হতো, আমি কেবলই একটা খেলনা। আমার হৃদয়টা নিয়ে তুমি খুশিমনে খেলছিলে। আমি বুঝলাম অনেক দেরিতে; তুমি আমাকে কোনোদিনই ভালোবাসোনি, তোমার দুঃসময়ে তুমি শুধুই আমার ভালোবাসা ও যত্ন পেতে চেয়েছ। এর বেশি কিছুই আমাদের মধ্যে ছিল না।
  
 দিন যতই গড়াচ্ছিল, ততই আমি তোমাকে পাগলের মতো কাছে পেতে চাইছিলাম। তোমার সঙ্গে আমার অনেক অনেক কথা বলার ছিল। তুমি আমার সঙ্গে তখন দেখা করাই বন্ধ করে দিলে, একসময় আমার ফোনটাও আর ধরতে না। কাঁদতে কাঁদতে আমার কান্না করার মানসিক শক্তিটুকুও একদিন ফুরিয়ে গেল।
  
 এখন আমি কষ্টে বাঁচতে শিখে গেছি। এখন আমি কষ্ট করে হলেও নিঃশ্বাস নিতে জানি। যন্ত্রণাগুলি আমাকে ক্রমশ খুন করতে করতে আজ অনুভূতিশূন্য করে দিয়েছে। তাই আজ আমি চাই না, ভুল করেও তুমি আমার সঙ্গে কখনও যোগাযোগ করো। আমার একটাই আশঙ্কা, নিজেকে সামলাতে না পেরে হয়তো আমি তোমাকে সত্যিই খুন করে ফেলব, এবং তারপর নিজেকেও শেষ করে দেবো। তুমি আমার সামনে কখনও এসো না।