পয়লা জুলাই ২০১৪
উঃ, আজ আর সময়ের সঠিক ঠিকানাটা লিখব না। সময়…সময় বড্ড বেয়াড়া অসময়—মাছের মুড়ো কি ছাই, কুমড়োর ঘ্যাঁট! …সময়ের বন্দনা অকারণ যন্ত্রণা হয়ে উঠছে ক্রমশ। সময়ের ঠিকানা আজ অসময়ের গহ্বরে তলিয়ে গেছে।
দিনক্ষণ, তারিখ, ফোননম্বর…এককথায়, সংখ্যাজাতীয় কোনোকিছুই আমি মনে রাখতে পারিনে। এ বড্ড ক্লান্তিকর মানসিক শ্রম মনে হয় আমার কাছে! বন্ধুরা এ নিয়ে প্রায়শই হাসিঠাট্টায় মাতে। সহাস্যে ওরা বলতেও ছাড়ে না, তোর কখনও কারও সঙ্গে প্রেম হবে না রে…প্রেম করতে হলে, প্রিয়-তম বা তমার জন্মদিন, প্রথম দেখা হবার দিন, প্রেম নিবেদনের দিন, এসব মনের ফটকে সাইনবোর্ডের মতন যত্নে ঝুলিয়ে রাখতে হয়।
এ কী জ্বালা! অত দায় মাথায় নিয়ে বাঁচা যায়! জীবনে কখনও রুলস পড়ে গ্রামার শিখিনি, আর এবেলায় এসে রুলস মেনে প্রেম করব! উচ্ছে ভাজায় কেউ ঘি ছেটায় না রে, বাবা! আমি বরং পালাই...
প্রেম করা একটা অকাজ বই আর বিশেষ কিছু নয়।...হ্যাঁ, এটা একান্তই আমার নীতি। প্রেম, যার যার দর্শনে তার তার ব্যঞ্জন। এ নিয়ে আমার স্বাদ-বিস্বাদ গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়। অমন প্রেম তো আমি করব না; আমি বরং ভালোবাসব…আদর, স্নেহ মাখিয়ে গড়াগড়ি খেয়ে ভালোবাসব।
বরং দূর থেকে ভালোবাসব। ভালোবাসার মানুষের খুব কাছে যেতে হয় না, শুধু গোপনে তার গহিনে লুকিয়ে থাকতে হয়। দেখবে, আজন্মের প্রেমে কখনও দাঁড়ি পড়বে না। ভালোবাসি বলে ভালোবাসার মানুষটাকে চেপে ধরতে নেই, আঙুলে আঙুল ছুঁইয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, তাকে আনন্দে বাঁচতে দিতে হয়; দেখবে, ভালোবাসা কেমন আজন্ম অবিচ্ছিন্নতার গান শোনাবে, সুর জাগাবে। মানুষ হারায় না, কেবল মনটাই হারিয়ে যায়।
দিনক্ষণ মেপে ভালোবাসতে হবে কেন? ওটা তো শাস্ত্রপাঠের মতন কিছু নয়! শাস্ত্রপাঠে ভক্তি থাকে, ভয় থাকে, চাহিদা থাকে এবং বাধ্যতাও থাকে…ভালোবাসা থাকে কি? ভালোবাসা তো সরল, স্বচ্ছ। ওতে ফর্দের কোনো প্রয়োজন নেই। ওরা জানেই না, এক পাতে দই-লঙ্কা সবাই রাখে না। যদি কখনো ভালোবাসি, তবে আত্মজ কাউকেই বাসব।
যাকগে! আজ একটা বিশেষ দিন ছিল, যা চুপচাপ অজান্তেই চুপসে গেল। উঁহু, আমার জন্য এই দিনটা হয়তো এখনও সেভাবে বিশেষত্বের ছাপ রাখতে পারেনি; মাথার ভেতরে পোকাগুলো কেমন বেশ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে—বুদ্ধি এত খাটিয়েও এর কোনো যৌক্তিক ব্যাখ্যা দাঁড় করাতে পারিনি।
কোনো কিছু বিশেষ হয়ে ওঠা মূলত ব্যক্তির সঙ্গে তার সম্পর্কের ওপর নির্ভর করে। যেমন ধরুন, কাউকে ভালো লাগে, তার বিশেষ কোনো দিনে তার আনন্দ দেখতেও ভালো লাগে; কিন্তু সেটা আমার কাছে বিশেষত্বের ছাপ রাখে না। বা, অমুককে আমার ভালো লাগে না, তার বিশেষ দিন আমার গণনার ভেতরেই পড়ে না। আবার, অন্য একজন, যে আমার ভালো ও খারাপ লাগার কোনো ক্ষেত্রেই পড়ে না, তারও যে কোনো বিশেষ দিন থাকতে পারে, ওটুকুও আমার মাথায় আসে না। আর যাকে বিশেষ ভালো লাগে, নিজের জীবনের কোনো-না-কোনো ভাঁজে বা খাঁজে তার জায়গাটা বেশ গভীর; যে-কোনো কিছুর চাইতে যার গুরুত্বের পাল্লাটা ভারী, তার প্রত্যেকটা দিনই মনে হয় বিশেষ দিন, সে খুব সাধারণ কথা বললেও মনে হয়, এর মাঝেও বিশেষ কিছু আছে!
না না, যা ভাবছেন...মানে এমনটা হতেই হবে, তা অবশ্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়। বিশেষ মানুষ মাত্রেই প্রেমিক কিংবা প্রেমিকা নয়। বলি, এত সরষে-মাখা ঝাঁঝালো চিন্তা আসে কীভাবে! আবরণ সরিয়েও মাঝে মাঝে জীবনকে দেখতে হয় যে!
দেখবেন, অনেক প্রেমিক বা প্রেমিকা ওদের প্রেমিক বা প্রেমিকার কাছে বিশেষ কেউ নয়। তার যে পোষা বেড়ালটা, কোয়েলের সদ্য-জন্মানো ছানাটা, বাগানে নতুন অলকানন্দার কলিটা, খুব পছন্দের বইটা বরং প্রিয় মানুষের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ! এবং, এতে স্বাভাবিকত্বের সব ছোঁয়াই আছে, তাই এটা দেখতে বড়ো সুন্দর। ভালোবাসা বরং সহজ হোক, ভালোবাসায় বরং লুকোনোর কিছু না থাকুক। ভালোবাসার মানুষটা বরং ঘর হোক।
যা-ই হোক, এত সমীকরণ খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে এর আল ভেঙে হাঁটার দায়টাই-বা আমায় কে দিল! আমি কেন তা ভাবছি, যা ভাবার মানুষই আমি নই। আজকের বিশেষ দিনের ব্যক্তিটি, আমার বিশেষ ভালো লাগে, এমনই একজন। লোকটা আমার… উঁহু, লিখতে যখন বসেছি…সবচাইতে সুন্দর কিছু-একটা বা শুধুই…ঘর, তখন বড্ড স্নেহমাখা শব্দটাই তাঁর জন্য তুলে রেখেছি…কুঞ্জ!
Post Views: 181