কুকুরের নয়, মানুষের বাচ্চা!

 পা-ভাঙা একটা কুকুরকে আপনি যদি মাত্র এক দিন‌ও পায়ে ওষুধ লাগিয়ে দিয়ে চলেও যান দূরে, সেই কুকুরটা সুস্থ হবার পর আপনাকে কখনও কোথাও দেখলে একদৌড়ে ছুটে এসে আপনার পায়ে পায়ে ঘুরঘুর করবে আনন্দে, কৃতজ্ঞতায়।
  
 আর কখনও কোনও মানুষকে যদি তার ভাঙা পায়ে ওষুধ লাগিয়ে পা-টা সারাতে সাহায্য করেন, তবে দেখবেন, সেই পা সুস্থ হয়ে ওঠার পর লাথিটা সবার আগে সে আপনাকেই মারবে।
  
 কুকুর আর মানুষের মধ্যে পার্থক্যটা ঠিক এই জায়গায়।
  
 আমি বুঝি না, কী বুঝে মানুষ মানুষকে কুকুরের বাচ্চা বলে গালি দেয়। আমি কখনওই কুকুরের সাথে তুলনা করে মানুষকে গালি দিই না, কারণ বিশ্বস্ততায় কিংবা কৃতজ্ঞতায় কুকুরের ছিটেফোঁটাও ধারেকাছে নেই মনুষ্যশ্রেণি।
  
 মানুষ মানেই ভালো কিছু, তা কিন্তু নয়। মানুষ হচ্ছে স্রেফ একটা প্রাণীর নাম, যে নামটা সে নিজেই নিজেকে দিয়েছে। নামটা মানুষ না হয়ে ট্যাটান কিংবা অন্য যে-কোনও কিছুও হতে পারত। তাই মানুষ মানেই মহৎ কিছু হবেই হবে, এমন ভাবার কোনও কারণ নেই। অন্যান্য প্রাণীর ভালো কি খারাপ সকল বৈশিষ্ট্য‌ই মানুষের মধ্যেও আছে। মজার ব্যাপার, মানুষের সব মহত্ত্বই আরোপিত, যা সে নিজেই নিজের উপর আরোপ করেছে। সত্য হলো এ-ই, যে প্রাণী ইতর, সে প্রাণী ইতরই, সে মানুষই হোক, কিংবা অন্য যা-ই কিছু হোক।
  
 মানুষের উপর বিরক্ত হলে মানুষকে আমি মানুষের বাচ্চা বলেই গালি দিই, বড়োজোর অমানুষের বাচ্চা বলি। কুকুর ডেকে-টেকে অত সম্মান মানুষকে করে লাভ নেই।
  
 কখনও কোনও কুকুরের উপর বিরক্ত হলে রেগে গিয়ে কুকুরটাকে "শালা মানুষের বাচ্চা মানুষ" বলে গালি দিই। গালিটা নিজের গায়ে এসে পড়লেও একধরনের শান্তি পাই, সত্য বলার শান্তি।
  
 বিশ্বাস করুন, কুকুর যদি কখনও বুঝত, তাকে আমরা প্রতিনিয়তই মানুষের সাথে তুলনা করে যাচ্ছি, তাহলে এত বড়ো অপমান সহ্য করতে না পেরে লজ্জায় নির্ঘাত আত্মহত্যা করত।
  
 এ পৃথিবীতে যত ধরনের প্রাণী আছে, সবচেয়ে জঘন্য প্রাণীটির নাম মানুষ। একমাত্র মানুষই, যে পাতে খায়, সে পাতই ফুটো করে দিতে পারে; যে কাঁধে চড়ে, সে কাঁধেই কোপ বসাতে পারে; যে তাকে বিপদ থেকে বাঁচায়, তাকেই হাসতে হাসতে খুন করতে পারে। হ্যাঁ, এই মানুষই সেই নির্লজ্জ প্রাণীটি, যে নিজেই নিজেকে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব ঘোষণা করেছে!
  
 একমাত্র মানুষই পারে...বুকের ভেতর প্রচণ্ড ঘৃণা পুষে রেখেও অনায়াসে 'ভালোবাসি!' বলতে, আবার প্রচণ্ড ভালোবাসা জমিয়ে রেখেও 'তোকে ঘেন্না করি!' বলতে! ইতিহাস এমন‌ই সাক্ষ্য দেয়।
  
 রাগ, দুঃখ, ঘৃণা কিংবা যত যা-কিছুই থাকুক না কেন, পৃথিবীর আর কোনও প্রাণীই স্বজাতির ক্ষতি করে না। অথচ স্বার্থে বিন্দু পরিমাণও আঘাত এলেই মানুষ নিজের ভাইয়েরও গলা কাটতে দ্বিতীয় বার ভাবে না।
  
 মানুষ, ডলফিন, কিছু প্রজাতির বানর, শূকর এবং অন্য দু-একটা প্রাণী বাদে পৃথিবীর আর কোনও প্রাণীর ভেতরেই প্রজননের উদ্দেশ্যবিহীন যৌনপ্রবণতা নেই। সবচাইতে বড়ো কথা, এক মানুষ বাদে পৃথিবীর আর কোনও প্রাণীই জোর করে যৌনসঙ্গম ঘটায় না। হ্যাঁ, একমাত্র মানুষই যৌনসুখের জন্য ধর্ষণ করতে পারে, এমনকী প্রমাণ লোপাটের জন্য হত্যাও করতে পারে। যৌনতার এমন অসম্মত জান্তব চর্চা মানুষ বাদে আর কোনও প্রাণীর মধ্যে আমরা আজ‌ও দেখিনি।
  
 এত কিছুর পরও, মানুষ ঠিক কী কারণে এই সর্বনিকৃষ্ট প্রাণীটাকেই সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাণী বলে, তা আমার বুঝে আসে না। মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব কোনোভাবেই নয়, বরং সামান্য কিছু মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব হতে পারে।