রাস্তার শেষ নেই

 সে আপনার জীবন থেকে একটু একটু সরে যাচ্ছে, এর মানে তার জীবনে একটু একটু করে অন্য কেউ ঢুকে যাচ্ছে।
  
 আপনি একটু একটু করে তার হৃদয় থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন, এর মানে অন্য কেউ তার হৃদয়ে একটু একটু করে আসন গেড়ে বসছে।
  
 সে একটু একটু করে আপনাকে টেক্সট করতে, কলব্যাক করতে কিংবা আপনার খোঁজ নিতে ভুলে যাচ্ছে, এর মানে অন্য কারও প্রতি তার টেক্সট ও কলের গতি এবং যত্নের পরিমাণ একই হারে বাড়ছে।
  
 পৃথিবীর কেউই, কারুর‌ই খোঁজখবর নিতে না পারার মতন ব্যস্ত থাকে না। ব্যস্ততা একটা জনপ্রিয় অজুহাত মাত্র। আসল কথা হচ্ছে, কাউকে সময় দিতে কারণ ও ইচ্ছে, দুই-ই লাগে।
  
 যে মানুষটি আপনাকে 'ব্যস্ত আছি।' এইটুকুও বলার সময় পাচ্ছে না, সে একই মানুষটি হয়তো অন্য কাউকে সময় দিতে দিতে আপনাকে সময় দেবার সময়ই পাচ্ছে না। মানুষ ঠিকই সময় দেয়, তবে সবাইকে দেয় না।
  
 পৃথিবীর সব কিছুই নির্ভর করে প্রায়োরিটির উপর। 'ব্যস্ততা' শব্দটাও ওঠা-নামা করে প্রায়োরিটি লিস্টের র‍্যাংকিং অনুযায়ী। তার প্রায়োরিটি লিস্টে আপনি যত নিচে নামতে থাকবেন, তার ব্যস্ততার পরিমাণ‌ও তত বাড়তে থাকবে। এবং, তার প্রায়োরিটি লিস্টে আপনি যত উপরের দিকে থাকবেন, তার ব্যস্ততাও তত কম থাকবে। ব্যস্ততার মানেই বিশেষ কার‌ও জন্য অবসর।
  
 আপনার জন্য তার প্রায়োরিটি থাকলে সমুদ্রের তলার তীব্র চাপের মধ্যে থেকেও সে আপনাকে দেবার জন্য কোয়ালিটি টাইম ঠিকই বের করে ফেলবে কোনও-না-কোনও উপায়ে। আর প্রায়োরিটি না থাকলে তিনরাস্তার মোড়ে হাত-পা ছড়িয়ে চিৎ হয়ে সটান শুয়ে শুয়ে রৌদ্র পোহালেও আপনার জন্য তার হাতে একটুও সময় থাকবে না।
  
 কেউ ব্যস্ত, এর মানে সে আপনার জন্য ব্যস্ত।
  
 কেউ আপনার টেক্সট সিন করে না কিংবা সিন করেও রিপ্লাই দেয় না, এর মানে রিপ্লাই দেবার একটাও কারণ তার নেই কিংবা ফুরিয়ে গেছে।
  
 কেউ আপনার সমস্যাগুলিকে পাত্তাই দেয় না, এর মানে আপনার সমস্যায় তার কিছুই এসে যায় না।
  
 কেউ আপনার সঙ্গে দেখা করতে চায় না, এর মানে দেখা করার জন্য আপনার তীব্র ইচ্ছেটার ছিটেফোঁটাও দাম তার কাছে নেই।
  
 কেউ আপনার নম্বর, আপনার প্রোফাইল, আপনার হোয়াটসঅ্যাপ সব কিছুই ব্লকলিস্টে ফেলে রেখেছে, এর মানে সে আপনার উপস্থিতির জন্য একটা সেকেন্ডও খরচ করতে চায় না।
  
 হ্যাঁ, এ পৃথিবীর সবচাইতে ব্যস্ত মানুষটিও প্রিয় কিংবা প্রয়োজনীয় কারও জন্য কিছু সময় হাতে রেখে দেয়, তাকে সেই সময়টুকু দিতে চায় খুব করে। খোঁজ নিলে জানতে পারবেন, যে আপনাকে খুব ব্যস্ততা দেখায়, সে আদতে তখন চোখ খুলে ঘুমোচ্ছে।
  
 কারও ইচ্ছে থাকলে, তার হাতে অল্প সময় থাকলেও, ওইটুকুও সে খুব চমৎকারভাবে আপনাকে দেবে। আর ইচ্ছে না থাকলে, তার হাতে অঢেল সময় থাকলেও, সেই সময়ের সামান্যমাত্রও আপনি পাবেন না। এই সহজ সত্যটা বুঝতে শিখুন। আপনার সমস্ত আবেগ আপনার নিজের পকেটে ঢুকিয়ে রাখুন; তার পকেটে আজ আর জায়গা নেই।
  
 যে চলে যেতে চায়, তাকে চলে যেতে দিন। যে আপনার হাতে ধরা পড়তে চায় না, তাকে আপনি কোনোভাবেই ধরে রাখতে পারবেন না। যে মানুষটি স্বেচ্ছায় একটু একটু করে সরে দাঁড়াচ্ছে, আপনি নিজেই উপযাচক হয়ে তাকে হাত ধরে টেনে নিয়ে প্রস্থানের রাস্তাটা দেখিয়ে দিয়ে, আপনি নিজেও অন্য রাস্তায় হাঁটতে শুরু করুন।
  
 রাস্তা অনেক, যদি ঠিকমতো খুঁজতে শেখা যায়। মনে রাখবেন, সব রাস্তার নাম রাস্তাই, জীবন নয়।
  
 যার হৃদয় থেকে আপনি হারিয়েই গেছেন, সম্পর্কের, শপথের কিংবা স্মৃতির দোহাই দিয়ে তাকে আর বাঁধতে পারবেন না। গরু-ছাগলকে বেঁধে রাখা যায়, এমনকী হিংস্র বাঘকেও বেঁধে রাখা যায়, কিন্তু মানুষের মনকে কিছুতেই বেঁধে রাখা যায় না।
  
 কারও মনের ইচ্ছের বিরুদ্ধে তার কাছ থেকে ভালোবাসা কিংবা আনুগত্য পাওয়া যায় না, বড়োজোর দাসত্ব কিংবা অভিনয় আদায় করা যায়। মন একবার উঠে গেলে তাকে আর কোনও কিছু দিয়েই কখনও বাঁধা যায় না, কোনও শক্তি দিয়েই আর আটকে রাখা যায় না।