কিংবা, একটি সবুজ খামের গল্প/তিন

তুমি কি সত্যিই আমার কাছ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিতে চাও?

আমি জানি না, আমি কিচ্ছু জানি না। আসলে সত্যিটা হচ্ছে, আমি চাই না। কাছে এসে দূরে সরে যাওয়া অতো সহজ নয়।

মাই সুইট বি!

কিন্তু কিছু একটা ভুল হচ্ছে। ভীষণ ভীষণ ভীষণ রকমের ভুল! আমি আসলেই একটা স্টুপিড, কনফিউজড ইডিয়ট! আমাকে দিয়ে কিছুই হবে না।

…………………………………………………………………….

আপনি কিছুই বললেন না। আচ্ছা, আমি কি খারাপ হয়ে গেছি? আমি একজন ভালমানুষের বিশ্বাসটাকে প্রতিটি মুহূর্তেই ভেঙে-ভেঙে চুরমাচুর করে দিচ্ছি। আমি জীবনে কখনও ওর সাথে মিথ্যেও বলিনি, বিশ্বাসভাঙা তো অনেক দূরের কথা! আর সেই আমি কিনা! আপনি কি আমাকে খারাপ মেয়ে ভাবছেন? আমি আসলেই ওরকম না, বিশ্বাস করুন, আমি ওরকম না। তাহলে কেন আমি এই মিথ্যে স্বপ্ন থেকে নিজেকে বের করে নিয়ে আসতে পারছি না?

তুমি আসলেই একজন ভালমানুষ। এটা আমি জানি ও মন থেকেই বিশ্বাস করি। শুধু এই দিকটার জন্যই আমি তোমাকে খুব পছন্দ করি। তোমার সাথে দেখা হলে খুব ভাল হত। তুমি সত্যিই অসাধারণ!

প্লিজ, এসব বলবেন না। আমি আমার নিজের উপরেই বিরক্ত। আমার সবকিছুই ক্রমশ তছনছ হয়ে যাচ্ছে। গত ৪টি বছর ধরে আমি আমার পরিবারের সাথে যুদ্ধ করে চলেছি যাতে ওরা আমার রিলেশনটা মেনে নেয়। এখন যখন আমি সবাইকে বুঝিয়েশুনিয়ে প্রায় রাজি করিয়ে ফেলেছি, ঠিক তখনই আমার মধ্যে অন্য কারও জন্য অদ্ভুত রকমের একটা ভাললাগার অনুভূতি কাজ করছে এবং এই অনুভূতিটা যথেষ্ট তীব্র। এসব কী হচ্ছে আমার সাথে? আমি তো আর টিনএজার না! তবে কেন ওদের মতন করে ভাবছি জীবনটা নিয়ে?

তুমি কি তোমার অনুভূতিগুলিকে ভালোবাসো না? তোমার হৃদয়টাকে জিজ্ঞেস করে দেখ। পৃথিবীর কিছু-কিছু ব্যাপারের কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। ওদেরকে ওদের মতো করেই চলতে দেয়া উচিত। ওটাই মনে হয়, ভাল।

কিন্তু এটা কি প্রতারণা নয়?

কিছু-কিছু ভুল থাকে, যেগুলি না করতে পারার আফসোসেই সারাটি জীবন কেটে যায়। কী দরকার? করলামই নাহয় কিছু ভুল। জীবনে থাকলই বা কিছু মাশুলের হিসেব! ভুলগুলিও তো জীবনেরই অংশ! ওগুলিকে ভালোবাসতে না পারলে জীবনের প্রতি ভালোবাসাটুকুও যে হারিয়ে যাবে। জানি, অনেকেই জীবনকে অন্য রকম করেও দেখে। যে যার মতো ভেবেটেবে হিসেব করে মিলিয়ে নেয় জীবনের অংকগুলি। অনেকগুলি মিলেও না, সেগুলিকেও নিজের সুযোগসুবিধে মত করে জীবনে রেখেও দেয়া যায়, বাদও দেয়া যায়। কিছুটা মন থেকে নেয়া, আর কিছুটা মানিয়ে নেয়া—এই তো জীবন!

আপনি যা-ই বলেন না কেন, আমার নিজেকে খুবই অসহায়, বীভৎস, বাজে, উদ্ভট একটা মানুষ মনে হচ্ছে।

বাদ দাও………কী করছ এখন?

স্টুডেন্ট পড়াচ্ছি। আপনি কী করেন?

…………………………………………………………………….

কী হল? ব্যস্ত?

মাথাটা হঠাৎ করেই প্রচণ্ড ব্যথা করছে। একটু টিপে দাও না!

হুম। মাথাব্যথা করছে কেন হঠাৎ?

জানি নাতো!

আমার কারণে নয়তো? আপনি জানেন। বলেন না কেন মাথাব্যথা করছে? আমি কি খুব বেশি বকবক করি আপনার সাথে?

উফ্!

উফ্! কেন?

তোমাকে ধরে মারতে ইচ্ছে করছে! উফ্! মাথাব্যথা! অসহ্য! মাথার ভেতরটা ছিঁড়ে-ছিঁড়ে যাচ্ছে যেন!

সরি! আমি আর বিরক্ত করবো না। আপনি একটু রেস্ট নিন। আমি ঘণ্টা দুয়েক পর নক করছি।

…………………………………………………………………………………………………………………….

ওকে নাউ?

অনেকটা। তুমি কেমন আছ? খেয়েছ রাতে?

বিজি বি, আমি খেলাম, কী খেলাম না, আসলেই কি ওটার কোনও গুরুত্ব আছে আপনার কাছে?

তোমার নাম্বারটা দাও, কথা বলব। আগেরটা অফ পাচ্ছি।

আমি নতুন নাম্বার থেকে আমার নাম লিখে টেক্সট করেছিলাম। আপনি সেভ করেননি। মানে, সেভ করে রাখার প্রয়োজনবোধই করেননি।

দাও না! এমন কর কেন?

……………………………………………………..

এইইইইই………..দেবে না?

না, দেবো না। আপনি আমার নাম্বার রাখেননি, এর মানে হল, আমার নাম্বারটা রাখার কোনও দরকারই নেই আপনার। রাখার দরকার হলে তো সেভ করে রাখতেন, তাই না? মিস্টার পপুলার! আমি আপনার প্রাইওরিটি লিস্টে নেই। অবশ্য, এটা তেমন কোনও ব্যাপারই না! যা-ই হোক!

………………………………………………………………………………..

আচ্ছা, একটা ব্যাপার নিয়ে জানতে চাচ্ছি। আপনার এতো-এতো মেয়েফ্যান, আপনি মেয়েদেরকে এতো ভালোবাসেন, আর আপনার কখনওই কাউকেই বলতে ইচ্ছে করেনি, “ভালোবাসি”? কিংবা, কোনও মেয়েও কখনও বলেনি, “ভালোবাসি”? এটাও বিশ্বাস করতে হবে আমাকে?

…………………………………………………………………………………

কী হল? কোথায় আপনি? মানুষটা না বলেই ঘুমিয়ে পড়ে শুধু! আমি সারারাত জেগে থাকি আর উনি ঘুমান! ভাল ভাল, খুব ভাল। শাস্তি হোক আমার!

একদিন পর।

আচ্ছা, তুমি কি একটু কম কথা বল ফোনে?

মানে?

না, আমার মনে হল তো, তাই।

কেন মনে হল?

মনে হল আরকি………….

এটা কোনও কথা না। আপনার এমনি-এমনি মনে হলেই হবে নাকি? আর আমি যে কালকে একটা প্রশ্ন করলাম, ওটার আনসার কই?

কোনটা? কেউ প্রপোজ করেছে কিনা, ওটা?

হুম্‌।

সে তো করেছেই! আমিও করেছি। এটাই তো স্বাভাবিক, তাই না?

তাহলে? আপনি নাকি গার্লফ্রেন্ড পান না? আপনি সবাইকেই ফিরিয়ে দিলেন কেন?

যে কারণে আমাকে অনেকেই ফিরিয়ে দিয়েছে, সে কারণে! আসলে আমি ফেরাইনি, আমার হৃদয় ফিরিয়ে দিয়েছে।

হৃদয় ফেরাল কেন? ওর সমস্যাটা কী?

সেটা তো জানি না, হৃদয় জানে!

আপনি বলতে চাইছেন, কেউ কোনোদিনও আপনার হৃদয়কে স্পর্শ করেনি? কারও কথা ভেবেই কোনোদিনও আপনার হৃদকম্পন বেড়ে যায়নি? কাউকে দেখার পর থেকে কখনওই পেটের ভেতরে থেকে-থেকে ঝাঁকুনি ওঠেনি? এটা তো হতে পারে না!

কেউ কোনোদিনও হৃদয় ছোঁয়নি, সেটা বলব না। কিংবা, সবাই যে আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছে, তাও নয়। তবে কিছু সমস্যা ছিল। সেই সমস্যাগুলির দায় আমার ছিল না, কিন্তু আমি ছিলাম ভুক্তভোগী।

কীরকম?

অনেক রকম। এই যেমন ধর, কেউ-কেউ ছিল ম্যারিড, কেউ-কেউ এঙ্গেজড, কেউ-কেউ অন্য ধর্মের, কিংবা সবই ঠিক ছিল, কিন্তু পরিবার থেকে রাজি হয়নি। এরকমই!

আচ্ছা। এখন? এখন আপনি কী চান?

কী চাই মানে? আমার জন্য যাকে এই পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে, আমার এখনও ওর সাথে দেখাই হয়নি। কিংবা, হয়েছে, কিন্তু এখনও সময়ই হয়নি। আমরা পরস্পরের প্রতীক্ষায় আছি। আমাদের জীবনে এখন চলছে প্রতীক্ষাপর্ব।

হুম্‌। আপনি নিজে খুঁজছেন না?

অতো যে খুঁজছি, তাও না।

কিন্তু কেন?

আসলে এটা নিয়ে এখনও অতোটা ভাবিনি।

ভাল তো! আপনার মেয়েফ্যানরা আপনাকে নিয়ে আরও কিছুদিন স্বপ্ন দেখার সুযোগ পাবে। বিবাহিত পুরুষকে ভালোবাসতে কেমন জানি অস্বস্তি লাগে! আপনাকে ভালোবাসার মধ্যে কেমন জানি একটা শান্তি-শান্তি ফিলিং আছে। এই চমৎকার মানুষটির কোনও প্রেমিকা নেই, কোনও বউ নেই। ভাবতেও তো দারুণ লাগে! ভুল কিছু বললাম?

না না! কী যে বল না তুমি! তুমি কি আর ভুল বলতে পারো? জানো, আমি ঢাকায় আসছি। তারপর, খেয়েছ রাতে? কী করছ এখন?

আপনি কখন আসছেন?

সাড়ে এগারোটার বাসে।

আমি আজকে লাঞ্চ করতে ভুলে গিয়েছিলাম, তাই এইমাত্র লাঞ্চ(!!) সারলাম। ঢাকায় কেন আসছেন?

একটা অফিশিয়াল অ্যাসাইনমেন্টে। শনিবার রাতে ফিরব।

রাতের জার্নিটা কিন্তু দারুণ! আমার ভাল লাগে। আপনার কেমন লাগে? আপনি কি জার্নিতে ঘুমান?

উত্তর দুটো: অনেক ভাল লাগে। হ্যাঁ। ……… কী কর?

বই পড়ি। নিশিকুটুম্ব, মনোজ বসুর। পড়েছেন?

না, এখনও পড়িনি। ব্যস্ত?

নামাজটা পড়ে আসছি। ওয়েট।

…………………………………………………..

এই যে স্লিপি হেড! ঘুম?

…………………………………………………..

কী করেন?

……………………………………………….

বোধহয়, ঘুমিয়ে পড়েছেন। ঠিক আছে, ঘুমান। শুভরাত্রি।

আমার সুইট বি’টা এতক্ষণ জেগে-জেগে কী করছিল?

বয়ফ্রেন্ডের সাথে ঝগড়া করছিলাম।

কেন? কী করল বেচারা? কী নিয়ে ঝগড়া?

কিছু নিয়ে না। ঝগড়া করতে ইচ্ছে করল, তাই। আমার বয়ফ্রেন্ডের সাথে তো আমি ঝগড়া করবই। আমি তো আর অন্য কারও বয়ফ্রেন্ডের সাথে ঝগড়া করতে যাচ্ছি না। ঝগড়া করতে না পারলে প্রেম করে কী লাভ? এ দুনিয়ায় আর কিছু হোক না হোক, শুধু ঝগড়া করার জন্য হলেও তো একজনকে লাগে। আপনি থাকেন কীকরে কারও সাথে ঝগড়া না করে?

বুঝেছি।

কচু বুঝেছেন। আপনি আমার প্রোফাইল পিকচারে লাইক দিলেন কেন, এটা নিয়ে সোহান আমাকে কথা শুনিয়েছে। আপনাকে ব্লক করে দিতে বলল। আপনি নাকি খারাপ। আমি এটার প্রতিবাদ করামাত্রই ঝগড়া শুরু হয়ে গেল।

আহা! এটা নিয়ে ঝগড়া করার তো কিছু নেই। পৃথিবীর সব বয়ফ্রেন্ডের চোখেই, যেসব ছেলে তাদের গার্লফ্রেন্ডের ছবিতে লাইক দেয়, ভালকিছু কমেন্ট করে, সেসব ছেলে অবশ্যই অবশ্যই খারাপ ছেলে। ইটস্ ভেরি ন্যাচারাল, কথা!

কিন্তু, ও আসলে আপনাকে চেনেই না। আপনি আমার ছবিতে লাইক দেয়াতে সে ইনসিকিউরড ফিল করছে। নিজের মাথার মধ্যে আপনার সম্পর্কে কী কী সব চিন্তা করে বিশ্বাস করেটরে বসে আছে। যারা ঈর্ষা থেকে আপনাকে নিয়ে বাজে কথা বলে বেড়ায়, ও বেছে-বেছে তাদের সাথে ফ্রেন্ডশিপ করা শুরু করেছে। আপনার শত্রুমাত্রই সোহানের বন্ধু। ওরা যা-ই বলুক না কেন, সেটা যদি আপনাকে নিয়ে কোনও উল্টাপাল্টা কথা হয়, তাহলে সোহান সেটা বিশ্বাস করবেই করবে। অদ্ভুত না? এসব নিয়েই এতক্ষণ ঝগড়া হল।

আচ্ছা। আমাকে না চিনেই আমার সম্পর্কে এতকিছু ভেবে বসে আছে? মজার তো!

ওর ধারণা, আপনি আমাকে ওর কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে যাবেন।

হাহাহাহাহা……………যাবই তো! ও তো ঠিকই ভাবছে!

ও রিয়েলি?

হ্যাঁ।

কীভাবে?

সেটা তো জানি না! একটা বুদ্ধি বের করতে হবে। এ ব্যাপারে তোমার হেল্প লাগবে। রাজি?

আমি কীভাবে হেল্প করব?

তার আগে বল, আমাদের দেখাটা হচ্ছে কোনদিন? শুক্রবার? কিংবা, শনিবার?

আপনি একবার বলেছিলেন, আপনি আপনার স্বপ্নেদেখা রাজকন্যাদের সাথে কখনও দেখা করেন না। তাহলে আমার সাথে দেখা করবেন কেন? নাকি, আমি ওদের মধ্যে পড়ি না? হাহাহাহা………….

তার মানে, দেখা হচ্ছে না? ওকে নো প্রবলেম।

‘ওকে নো প্রবলেম’ মানেই হল, দেয়ার ইজ অ্যা প্রবলেম। আসলে, ও আমাকে কখনওই একা ছাড়ে না। ওর ধারণা, পৃথিবীর সবাই আমাকে ওর কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যই বসে আছে। রিডিকিউলাস!

ওকে।

মানুষের আর কাজ নাই, আমার জন্য বসে আছে! এটাও আমাকে বিশ্বাস করতে হবে! আমি কাউকেই কষ্ট দিতে চাই না।

ওকে।

‘ওকে’ ‘ওকে’ করবেন নাতো! ‘ওকে’ কী আবার? ভেঙে বলুন।

‘ওকে’ মানে, তুমি আমার সাথে দেখা করছ না। সিম্পল! আসলে, আমি তোমাকে দেখার প্রতীক্ষায় ছিলাম। কিন্তু, হচ্ছে না। ইটস্ ওকে।

আবার? ‘ইটস্ ওকে’ মানেই হল, সামথিং ইজ ভেরি রং! আচ্ছা, দেখা করে কী হবে? আমরা আসলে পরস্পরের জন্য নই। কোথাও কিছু একটা খুব ভুল হয়ে গেছে! মস্তো বড় ভুল! তাই না?

ওকে।

আমাকে আপনার ‘ওকে’ থেকে মুক্তি দিন, প্লিজ! আপনি কেন আমার জীবনে এলেন? এলেনই যদি, এতো দেরিতে কেন? কেন আরও আগে আমাদের পরিচয়টা হল না? কেন কিছু-কিছু পরিচয় হয়ই শুধু কষ্ট পাওয়ার জন্য? ধ্যত্! আমার কিছু ভাল লাগে না!

আসো দেখা করি। দরকার হলে ওকেও সাথে নিয়ে আসো। তবুও! প্লিজ!

দেখা করলে আপনার কিছুই হবে না, আমি জানি। কিন্তু আমার মধ্যে কনফিউশন বাড়তেই থাকবে বাড়তেই থাকবে। হৃদয়ের যন্ত্রণাটা আরও বেড়ে যাবে। আমি মানসিকভাবে আরও বিপর্যস্ত হয়ে পড়বো। এটাই কি আপনি চান?

ওকে ওকে………….

আপনি আমার জন্য ‘কিছু একটা’। সেই ‘কিছু একটা’ আমার জন্য অনেক অনেক অনেক বড়। কিন্তু আবার সেই ‘কিছু একটা’ এমন কিছু, যা আমি কোনোদিনই পাবো না। সেটা পাওয়ার আগেই হারানোর কষ্টটা প্রতিটি মুহূর্তেই আমাকে শেষ করে দিচ্ছে! আপনি এমন কেন? আপনার সমস্যাটা কী?

ঠিক আছে। শুভরাত্রি।

সরি! আমি আসলেই আমার এই মুহূর্তের অবস্থাটা আপনাকে বুঝিয়ে বলতে পারছি না।

ওকে ওকে! তোমাকে আর কোনোদিনই জ্বালাব না। শুভরাত্রি।

আপনি চলে যাচ্ছেন। এতে আপনার কিছুই এসে যায় না, আমি জানি। কিন্তু আমার পক্ষে আপনাকে যেতে দেয়াটা সহজ নয়। আপনাকে ধরে রাখতেও পারছি না, যেতে দিতেও পারছি না। জানি, এই আবেগটাই পুরোপুরি অর্থহীন! কিন্তু এই অর্থহীন আবেগটাই এখন আমার জীবন! আমার জীবনকে আমি অস্বীকার করি কীকরে? আমি কী করব?

ভাল থেকো।

সরি। আমি আসলেই খুব খুব খুব বাজে একটা মেয়ে। ভুল ভাবি, ভুল করি। আপনাকে পাবও না, আপনাকে ছাড়বও না। এমন হয় নাকি? কিন্তু কে বোঝাবে আমাকে এটা, যেখানে আমি নিজেই কিছু বুঝতে চাইব না বলে ঠিক করে বসে আছি? আপনি আসলেই বেশি অসাধারণ! এই কথাটা কখনওই ভুলে যাবেন না!

বাজে বকা বন্ধ কর! জাস্ট স্টপ ইট! তুমি বাজে মেয়ে, মানে কী? কী বলছ এসব আবোলতাবোল? আমার দেখা খুব চমৎকার একজন মানুষ তুমি!

আমি আমার মধ্যে নেই। আমার কথা আর কথা নেই, প্রলাপ হয়ে গেছে। আমার সব কথা ধরে বসে থাকবেন না প্লিজ! আপনার কণ্ঠটা ভীষণ মাদকতা জাগায়। এটার যত্ন নেবেন। এটা যেন কখনওই হারিয়ে না যায়!

তুমি আমার কাছ থেকে দূরে সরে যেতে চাও, যাও! আমার ঠিক মানুষের সাথে ভুল সময়ে ভুলভাবে দেখা হয়েছে! কিচ্ছু করার নেই। সব জানি, সব বুঝি! কিন্তু ওরকম করে নিজেকে নিয়ে ভুলভাল বলো না। আমার খারাপ লাগে, কারণ আমি জানি, তুমি কী, তুমি কেমন।

আমি ওসব কথা মন থেকেই বলেছি। আপনি জানতেন, আমি এঙ্গেজড। আমি জানতাম, আমি এঙ্গেজড। তাও কেন আমি সারাক্ষণই আপনার কথা ভাবি? আমার তো অন্য কিছু ভাবা উচিত! যা কখনওই হবার নয়, তা নিয়েই কেন আমি আমার জীবনটা সাজিয়ে ফেললাম?

ঠিক আছে, যা তোমার নয়, তা নিয়ে থেকো না। তোমার সবকিছু নিয়ে তুমি ভাল থাক। এইটুকুই শুধু চাওয়া। বাই!

আপনাকে ঘিরে কেন আমার আশা বাড়তেই থাকে বাড়তেই থাকে? আমি কেন আপনাকে এতোটা ভালোবেসে ফেললাম? কেন একটা ভুল মানুষের জন্য আশার পারদের উচ্চতা বাড়তে-বাড়তে আকাশ ছোঁয় বিনা কারণেই? কে বাড়ায় এই হতচ্ছাড়া আশাকে?

কেউই আশাকে বাড়ায় না, আশা এমনিতেই বাড়তে থাকে, নিজে নিজেই! এটাই আশার নিয়ম!

আপনাকে চিনি, বেশিদিন হয়নি। কিন্তু আপনাকে চেনার অনেকদিন আগে থেকেই আমি আপনার প্রতি মোহাবিষ্ট হয়ে ছিলাম।

সত্যি?

আমার জীবনের চাইতেও সত্যি!

আমাকে ফেসবুকে দেখতে?………..আমিও তোমাকে দেখতাম কখনও-কখনও!

আমি আপনার প্রত্যেকটা কাজের দিকেই খেয়াল রাখি। আপনাকে নিয়ে যা কিছু, তার সব কিছুই আমি কয়েকবার করে পড়ি। এমনকি, আপনার পোস্টে অন্যরা কে কী লিখে, কেন লিখে, সেটা নিয়ে সারাদিন ভাবতে থাকি। আপনাকে নিয়ে কেউ বাজে কিছু বললে আমি সহ্য করতে পারি না, আমার কষ্ট হয়। আমার বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে, আপনাকে আমি আপনার চাইতেও ভালভাবে বুঝতে পারি। কিন্তু কোন অধিকারে সেটা বিশ্বাস করব?

তুমি কবে থেকে এতকিছু কর?

আমার নিজেরই মনে নেই। কিন্তু যেদিন আপনাকে আবিষ্কার করলাম, সেদিন থেকেই আর আপনাকে আমার মধ্য থেকে আর হারিয়ে যেতে দিইনি। আমি আপনাকে প্রতিটি সেকেন্ডেই সাইবার স্টকিং করেই যাই। আচ্ছা, আপনাকে খুঁজে নেয়াটা সহজ। কিন্তু আপনি আমাকে দেখেছিলেন? কীভাবে সম্ভব এটা? কবে পেয়েছিলেন আমাকে? কোথায় পেয়েছিলেন?

ঠিক মনে আসছে না। হয়তো তোমার কোনও একটা লাইক কিংবা কমেন্ট থেকে।

জানেন, আমি এতো বেশি এতো বেশি এতোই বেশি সারাক্ষণই আপনার কথা বলতে থাকি যে, আমার বয়ফ্রেন্ড আপনার প্রতি প্রচণ্ডভাবে ঈর্ষাপরায়ণ হয়ে গেছে। ও আপনাকে চেনেই না, অথচ আপনাকে সহ্যই করতে পারে না।

স্বাভাবিক। সহ্য করতে পারলে বরং ব্যাপারটা সন্দেহজনক হত। যতদিন পর্যন্ত তোমার বয়ফ্রেন্ড আমাকে সহ্য করতে পারছে না, ততদিন পর্যন্ত তুমি নিশ্চিন্ত থাকতে পারো যে, ও মানসিকভাবে সুস্থ আছে। হাহাহাহাহা……….

মজা করছেন, না? করেন করেন! যেদিন আপনি আমাকে নক করলেন, ব্যাপারটা আমার কাছে মনে হয়েছিল পরাবাস্তব কোনোকিছু! আমি বুঝতে পারছিলাম না, এটা কী হল! আমি আপনাকে আগেই বলেছি, আমার মনে হচ্ছিলো, Sayuri যে রকমটা ফিল করেছিল, আমিও ঠিক সেরকমটাই ফিল করেছি, কিংবা তার চাইতেও বেশি! এ অনুভূতি আমি লিখে বোঝাতে পারব না। সবচাইতে সুন্দর অনুভূতিগুলি প্রকাশ করা যায় না, সেগুলি শুধুই অনুভব করে যেতে হয়।

আমি জানি। সবই বুঝি, কিন্তু নিজেকে বোঝাতে চাই না। যা-ই হোক, এখন মনে হয়, আমাদের বিদায় নেয়ার সময় এসে গেছে………..

আমি যখনই ভাবি, অন্য একটি মেয়ে আপনার হাত ধরে হেঁটে বেড়াবে, আপনাকে ভালোবাসবে, আপনার ওই চোখদুটোর দিকে তাকিয়ে-তাকিয়ে হাসবে, আমি তখন ওকে সহ্য করতে পারি না। এই অহেতুক অনর্থক ঈর্ষা আমাকে ভেতরে-ভেতরে শেষ করে দেয়। আবার সেই ঈর্ষা থেকে বেরিয়ে আসতেও ইচ্ছে করে না। আপনি আসলেই ‘কিছু একটা’, মিস্টার বিজি বি!

গুডবাই, মাই সুইট বি!

সুইট বি! আপনার কাছ থেকে ভালোবাসা না হোক, অন্তত কিছু একটা তো পেলাম! হালিহাতে তো আর ফিরিয়ে দিচ্ছেন না! সারাটি জীবন আপনার এই ডাকটা আমার প্রাণের ভেতরে বাজবে, কেউ কোনোদিনই জানতে পারবে না, আমার এই ভাললাগার অনুভূতির কথা। আপনার মনে আছে, Sayuri চেয়ারম্যানের কাছ থেকে একটা রুমাল পেয়েছিল না? ওর কাছে সেই রুমালের দাম যতটা, আমার কাছে আপনার এই ‘সুইট বি’র দাম তার চাইতেও অনেক-অনেক বেশি!

আহহ্………..তোমার এই গুছিয়ে বলার সহজাত ক্ষমতাটি আমাকে মুগ্ধ করে দেয়। তোমার কথাগুলি আঁকাছবির মতো সুন্দর হয়ে হৃদয়ে গেঁথে যায়। তোমার লেখাগুলিকে ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করে। এই ক্ষমতা সবার থাকে না। এটাকে কখনওই হারাতে দিয়ো না, এটার যত্ন নিয়ো, সুইট বি!

জানেন, আমি সবসময়ই ভাবতাম, একটিবারের জন্য হলেও কারও প্রেমে পড়ব। সবাইকে দেখতাম, কীভাবে যে প্রেমে পড়ে যায় টুপটাপ! আমিও ওরকম করে পড়ব। হল না! প্রেমে পড়ার সুযোগই পেলাম না জীবনে! প্রেমই আমার উপরে এসে হুমড়ি খেয়ে পড়ল! হ্যাঁ, সোহানই আমাকে প্রপোজ করেছিল। অনেক দিন পর রাজি হয়েছিলাম। সবাই বলত, ক্লাসের ফার্স্ট গার্ল প্রেমে পড়বে কেন? ওর সময় কই অতো? সবাই ভাবত, আমার মধ্যে হয়তো ভালোবাসার অনুভূতিই কাজ করে না! আমি কাউকেই কিছু বলতাম না। ভেবে নিক না যে যার মতো করে! কখনও-কখনও নিজেও ভাবতাম, আমি কি আসলেই অনুভূতিশূন্য? কিন্তু জীবনে এই প্রথমবারের মতো, আমি ভীষণভাবে কারও প্রেমে পড়ে গেলাম। ভেতরটা একেবারে এলোমেলো হয়ে গেল! সোহান আমাকে প্রায়ই বলতো, আমার প্রেমে পড়ার পর ওর কেমন লেগেছিল। আমি কোনোদিনই বুঝতে পারিনি। এখন বুঝি, প্রেমে পড়লে কেমন লাগে! আপনার জন্যই আমার সেই পুরনো ইচ্ছেটা পূর্ণ হল। আপনাকে ধন্যবাদ। আমি জানি, আপনি অনেকদূর যাবেন। এর মধ্যে অনেকদূর হাঁটা হয়েও গেছে আপনার। আরও যাবেন। আপনার জার্নিটা এখনও শেষ হয়নি। সবচাইতে সুন্দরভাবে এটা শেষ হবে। আমি এটা বিশ্বাস করি। আমি সবসময়ই আড়ালে নিভৃতে আপনাকে দেখে যাব। দোয়া করি, পৃথিবীর সব সুখ আপনার হোক।

……………………………………………………………………………………….

বিজি বি! এটা ঠিক না। কয়েক ঘণ্টা যেতে না যেতেই আমি আপনাকে মিস করা শুরু করে দিয়েছি! আমি কীভাবে থাকব আপনাকে ছাড়া? কেন পৃথিবীতে অনিকেত কয়েকটি নয়? একটি মাত্র অনিকেত দিয়ে কিছু হয়?

হ্যালো! শুভ সকাল! আমি ঢাকায় এসে পৌঁছেছি। আমি রুমে গিয়েই তোমাকে ফোন করছি। ঠিক আছে?

ওকে।

ফোন করলাম। ধরলে নাতো!

বিজি বি! ইচ্ছে করেই ধরিনি। আপনার সাথে আবারও কথা হলে আমি মরেই যাবো। আমি পারব না নিজেকে সামলাতে। আপনার অস্তিত্ব আমার ভেতরে ছোঁয়াচে রোগের মতোই সংক্রমিত হয়ে গেছে অনেকদূর পর্যন্ত। এটাকে আর কীভাবে বাড়তে দিই? আগেরবার যখন কথা হল ফোনে, আপনার মনে আছে, আমি কিছুই বলতে পারিনি, চুপ করে ছিলাম? আপনি ভাবছিলেন, আমি বুঝি চাইছি না কথা বলতে। সত্যিটা হল, আমি পারছিলাম না কথা বলতে। জিভ আড়ষ্ট হয়ে আসছিল বারবার। আপনার কণ্ঠের সেই মাদকতা, রেশ এখনও আমার শরীরে, মনে রয়ে গেছে। আমি কীভাবে সেই একই পথে আবারও পা বাড়াই? আমি জানি, আপনি ভাবছেন, আমি নষ্ট হয়ে গেছি! উফ্! কী অবস্থা দেখেছেন! আপনি বিশ্বাস করতে পারছেন, এই মুহূর্তে আমি পুরো সিচ্যুয়েশনটাকে কতটা মেলোড্রামাটিক করে ফেলছি! বিশ্বাস করুন, কথা এরকম নাটক করতে পারে, একথা স্বয়ং ঈশ্বরও বিশ্বাস করবেন না! আমি আসলেই এমন নই। আপনার উপর এতো বড় ক্রাশ খেয়ে নিজেকে এতোটা এলোমেলো করে দিলাম! এসব ভাবলেই নিজের উপর ঘেন্না হয়! আমি খুব সস্তা হয়ে যাচ্ছি! বিশ্বাস করুন, এটা আসলেই আমার সাথে যায় না! কিছুতেই না!

নিজেকে ঘেন্না করার কোনও মানে হয় না। এইমাত্র রুমে পৌঁছলাম। ফ্রেশ হয়েই অফিসে ছুটতে হবে। রাতে কথা হবে। বাই।

ঠিক আছে। বাই।

……………………………………………………………………………

আছেন?

আছি। বল।

আমি আপনার উপর বেশ রেগে আছি। অতোটা চমৎকার নাহলেও পারতেন!

আমি হইনি, সব দোষ ঈশ্বরের। আমাকে এর চাইতে কম করে বানানোটা উনার পক্ষে সম্ভব হয়নি। হলে, বানাতেন। উনার অপারগতার দায়ে আমি কেন তোমার ক্রোধের শিকার হচ্ছি? রাগটা উনার উপর কর না!

সেটাই! ভুলটা করলেন উনি, অথচ উনার সেই ভুলের শাস্তি পেতে হচ্ছে আমাকে। This is not fair! আমি বড্ডো ঝামেলায় আছি। আমাকে বাঁচান!

……………………………………………………………………………………

কী হল? কই আপনি? আপনাকে সবসময়ই এতো ব্যস্ত থাকতে হবে কেন? আপনি ব্যস্ত থাকবেন না, আপনি শুধু আমার কাছেই থাকবেন। আমি কিন্তু অপেক্ষা করে আছি।

………………………………………………………………………………….

বিজি বি! একবার আসুন না এখানে! একটি বারের জন্য হলেও!

এই যে! শুভ দুপুর। এই মুহূর্তে বন্ধুর সাথে লাঞ্চ করছি। খেয়েছ? কী করছিলে? কোথায় এখন?

বলার মতো তেমন কিছু করছিলাম না। বাসায়ই আছি। খাইনি, খাব।

আচ্ছা।

আপনি কখন ফ্রি হবেন?

দেখা করবে? সিরিয়াসলি? প্লিজ…………

না, ফোনে কথা বলবো। আমার নেশা করতে ইচ্ছে করছে। আপনি একটা নেশা! আপনার নেশায় আমি মরে যাব, কিন্তু আপনাকে ছাড়তে পারব না। আমি কথা বলব আপনার সাথে!

কথা না, আমি দেখা করব। এবং, সেটা আজকেই। আমি ফ্রি হয়ে ফোন করছি।

এখন ব্যস্ত? আপনি কি আসলেই দেখা করবেন? আজকে পারবেন? কখন? সন্ধ্যায়?

…………………………………………………………………………………………………

আছেন? আপনাকে পাচ্ছি না কেন? দুইবার ফোন করলাম। দুইবারই কল ফরওয়ার্ডেড হয়ে গেল। আমার নাম্বারটাকে আপনি কী করে রেখেছেন? আমি কি আপনাকে হারিয়ে ফেলেছি? আমরা না আজকে দেখা করব? কই আপনি? এতো ব্যস্ততা কেন? কাজটাজ ছেড়ে আমার কাছে এসে পড়ুন না!

…………………………………………………………………………………………………..

বিজি বি! উত্তর নেই! কেমনটা লাগে? জানেন, আজকে গবেষণা করে একটা জিনিস আবিষ্কার করেছি। আপনি খুব কায়দা করে নিজের ভেতরে চমৎকার একটা হাসি লুকিয়ে রেখে দেন। সেটাকে লুকিয়ে রেখে কী হবে? হাসিটা একবার দিয়েই দেখুন না, পৃথিবীর যেকোনও মেয়েই ওর হৃদয়ে সেই হাসিটা লুকিয়ে ফেলে হৃদয়ের সবকটা দরোজাই চিরদিনের জন্য তালাবন্ধ করে দেবে।

………………………………………………………………………………………………….

কল্পনার কোনও গাছপাথর নেই! ওতে ভর করে কতদূর যে যাওয়া যায়! যাকে কখনওই দেখিনি, তার সাথে জীবন বুনে ফেলা যায়! যে হাসি কখনও দেখিনি, তাকে ভালোবেসে ফেলা যায়! যে কথা কখনওই বলা হয়নি, সেটা অবলীলায় বলে দেয়া যায়! যে কখনও চোখ তুলে তাকায়নি, তাকে ভালোবেসে হেসে ফেলা যায়!

কিন্তু চোখ সব বলে দেয়, সব!

—আপনার জন্য লিখলাম। ভাল হয়নি, না? আপনার মতো করে লিখতে পারব নাকি? আমি যতটুকু পেরেছি, লিখেছি। আমি আমার ভাবনাকে এর চাইতে বেশি আঁকতে পারি না। আচ্ছা, আমাকে আপনার মতো করে লিখতে শিখিয়ে দেবেন? দিন না! কী হবে দিলে? সব ভালোবাসার কথাই বলে ফেলব? ফেললামই নাহয়! নাহ্! সব বলতে পারব না, যা বলব, এর দ্বিগুণ বুকের ভেতরে রয়ে যাবে, কোনোদিনই বেরিয়ে আসতে পারবে না। দিন না একটু শিখিয়ে! হলামই নাহয় আমিও আপনি! কী ক্ষতি?

শুভরাত্রি। আজকে দেখা হল না। আরেক দিন, কেমন?

শুনে যান না একটু! আপনি বেশি-বেশি কিউট! সত্যি-সত্যি কিউট! এতো কিউট কেন? আমি শুধু এই জন্যই ভাল নেই।

………………………………………………………………………………………………….

খেয়েছিলেন রাতে? একটু পরে ঘুমালে কী হয়? আপনার কি কোনও কারণে আমার উপর মেজাজখারাপ?

কোনোভাবেই না। একটা প্রশ্ন করি?………..ভাল কথা, কেমন আছ? কী করছ এখন?

কিছুই না! জিজ্ঞেস করুন, বিজি বি।

কিছু জিজ্ঞেস করার নেই। এমনিতেই বলেছি।

না না, বলুন না! বলতেই হবে। আমি শুনব। যা ইচ্ছে, বলতে পারেন। একদম যা ইচ্ছে!

একটা মানুষ একইসাথে দুইজনকে সমানভাবে ভালোবাসতে পারে না?

মানে?

মানে কিছু না। ঘুমাও।

না ঘুমাব না। আমি জানতে চাই। ওটার মানে বলুন। আপনাকে বলতেই হবে!

নিজেকেই জিজ্ঞেস করে দেখ।

কী জিজ্ঞেস করব?

…………………………………………………………………………………………..

বিজি বি! এটা না বলে চলে যাবেন না। আপনি কই গেলেন? প্লিজ!

একটু। এক মিনিট!

আচ্ছা।

………………………………………………………………………………………….

আপনার ‘একটু’ কবে শেষ হবে? আমি বসে আছি তো! আমি আপনার সাথে কথা না বলে ঘুমাতে যাবই না! এতো ব্যস্ত কেন? বিজি বি! লিখছেন, না? সবাইকে এতো বুদ্ধি দেন কেন? আমি আপনাকে একটা বুদ্ধি দিই? দিচ্ছি, কেমন? সারাটা জীবনই এমন কিউট থাকবেন, কেমন?

………………………………………………………………………………………….

হাই হাই হাই!! কই আপনি? মরে যেতে ইচ্ছে করছে! বিজি বি!

………………………………………………………………………………………….

পরদিন সকালে।

সুইট বি! কেমন আছ? শুভ সকাল।

আপনার সাথে এখন কথা বলা যাবে?

বলব, এক শর্তে।

যেকোনও শর্তই মানতে রাজি আছি। বলুন!

আমার কণ্ঠ কেমন?

ইনটক্সিকেটিং!

আহ….! ওটা আগেও বলেছ। আর কিছু?

ব্রেথটেকিং!

এইটুকুই শুধু?

Be specific, busy bee! বলুন, আপনি কী শুনতে চান? কিংবা, আপনি নিজেই বলতে পারেন, আপনি কী ফিল করছেন! যেকোনো কিছুই! যদি হৃদয় থেকে বলেন, আমি কিছুই মনে করব না। আমি তো আপনার প্রেমে পড়েই আছি! এটা আপনি শুরু থেকেই জানেন। মুখে আপনি যা-ই বলুন না কেন, আমি জানি, এটা আপনি অনেক আগে থেকে জানেন, বুঝতে পারেন।

S দিয়ে শুরু কিছু একটা?

Soothing!

ধুর্! যাও!

Sexy! খুশি? আপনি কি আমার কাছ থেকে আপনার ভয়েস সম্পর্কে এই কমপ্লিমেন্টটাই শুনতে চান? কিন্তু, কেন?

সেটা নয়। তোমার যা মনে হয়, তা-ই বলতে পার।

আমার একটা ব্যাপার খুব পরিষ্কার করে জেনে নেয়া দরকার। আমি কি সত্যিই আপনার কাছে কোনও কিছু? আমি যেভাবে করে আপনাকে নিয়ে ভাবি, এমন নয় যে, আপনাকেও আমাকে নিয়ে ঠিক ওরকম করেই ভাবতে হবে। আমি আপনার প্রেমে পড়ে গেছি। আমি বলছি না, আপনাকেও আমার প্রেমে পড়তে হবে। ওরকম কোনও চুক্তিতে আপনি সইও করেননি। আমি শুধু আমার সম্পর্কে আপনার অনুভূতিটুকু জানতে চাই। কোনও অনুভূতি না থাকলে সেটাও বলে দিতে পারেন। আপনার সত্যিকারের অনুভূতি জানানোর ক্ষেত্রে আপনাকে কোনও ধরনের ভদ্রতা দেখাতে হবে না। আমার জন্য আপনার হৃদয়ে আদৌ কোনও জায়গা রেখেছেন আপনি?

হ্যাঁ।

মাই গড! সত্যি সত্যি? You’ve made my day!!! আমি সত্যিই দুঃখিত, বিজি বি। আপনার প্রেমে পড়ে যাওয়াটা আমার একদমই ঠিক হয়নি। বিশ্বাস করুন, আমি খুব করে চেষ্টা করে দেখেছি আপনার কথা না ভেবে থাকতে! যতই চেষ্টা করেছি, ততই আরও বেশি করে আপনি আমার মাথার মধ্যে এসে গেছেন! আমি জানি না, কখন কীভাবে জানি আপনি আমার মনের মধ্যে চিরদিনের জন্য গেঁথে গেছেন! আমি জানি, আপনি চাইলেই আমাকে যেকোনও মুহূর্তেই তাচ্ছিল্যভরে ছুঁড়ে ফেলে দিতে পারেন। আমি এও জানি, আপনার এক মাইল লম্বা ফ্যানলিস্টের মধ্যে আমার স্থান খুবই নগণ্য। আসলে আপনি আমাকে নক করার পর থেকে আমি আর স্থির থাকতে পারিনি। আপনি নক করার আগ পর্যন্ত নিজেকে অনেক কষ্টে হলেও ধরে রাখতে পেরেছিলাম। আপনি আসলে আমাকে নক করেননি, আমার পুরো দুনিয়াটাই কাঁপিয়ে দিয়েছেন! আমি এখন সারাদিন ইনবক্সে আপনার জন্য প্রতীক্ষা করি। আপনাকে এরকম বিশাল-বিশাল ফালতু টেক্সট সময় নষ্ট করে পড়তে হয়, এটা ভাবতেও আমার খারাপ লাগে! কিন্তু, আমি কী করব? ভয় পাবেন না। আমি সরে যাব। সত্যি বলছি, আমি আর আপনাকে জ্বালাব না। একদিন আপনার কাছ থেকে অনেক-অনেক দূরে সরে যাব। আমি জানি না, আমি কেন এইসব লিখে যাচ্ছি। আমি নিজেকে প্রবোধ দিচ্ছি। এইসব কৈফিয়ত আপনার কাছে নয়, আমার নিজেরই কাছে!

…………………………………………………………………………………

পরদিন।

সুইট বি! শুভ সকাল। কালকে তোমাকে ‘হ্যাঁ’ পাঠানোর পরপরই মোবাইলটা ছিনতাই হয়ে গেছে। চ্যাটিং করতে করতে রাস্তা পার হচ্ছিলাম, চোখের নিমিষেই কে যেন আমার হাত থেকে ফোনটা ছিনিয়ে নিয়ে গেল। রাতে ঢাকা থেকে চলে এসেছি। এখন অফিসে। ভাল আছ তো? তোমার দিনটা ভাল কাটুক। ভাল কথা, তোমার হৃদয়ের কথাগুলি শুনলে কিছু হবে না। শুনতে পার।

আপনি ঠিক আছেন তো? আপনার কিছু হয়নি তো?

হ্যাঁ, আমি ঠিক আছি।

আল্লাহ্কে ধন্যবাদ! আপনি বলছেন, হৃদয়ের কথা শুনতে। কিন্তু আমার হৃদয় আমাকে এমন কোনও রাস্তা দেখিয়ে দিচ্ছে না, যে রাস্তায় চলে আমি আদৌ কোথাও পৌঁছাতে পারব।

তারপরেও আমি বলব, কাউকে ভালোবেসে ‘ভালোবাসি’ বলার মধ্যে কোনও পাপ নেই।

বিজি বি, আপনি কি কখনও এক সেকেন্ডের দশভাগের একভাগ সময়ের জন্যও আমাকে ফিল করেছেন? উত্তরটা দেবেন কিন্তু!

……………………………………………………………………………………

কিছুই বলবেন না? আমি কি আমার মতো করে বুঝে নেবো? আচ্ছা, আপনি ভক্তদের এতো ভালোবাসা রাখেন কোথায়?

……………………………………………………………………………………

আপনি কোথায় চলে গেলেন? আমি শুধু আপনার জন্যই ঘণ্টার পর ঘণ্টা চ্যাটরুমে বসে থাকি। একটা ডট হলেও পাঠান প্লিজ! আমার নাম্বারটা পেয়েছিলেন? আমি টেক্সট করেছিলাম। নাম লেখা ছিল। খেয়াল করেননি? আপনার নাম্বারটা ঠিক আছে তো? আগেরটাই না?

……………………………………………………………………………………

বিজি বি, অনেক ভাল আছেন, তাই না? আপনাকে মাঝেমাঝে ‘তুমি’ করে ডাকতে ইচ্ছে করে। ব্যাপারটা ভাবতেই আমার অদ্ভুত লাগে! আমি বুঝতে পারি, আমি খুবই নগণ্য আপনার তুলনায়, কিন্তু আমি কখনওই নিজ থেকে আপনাকে জ্বালাইনি। আপনি আমাকে নক করার পর আমার ভেতরে কিছু একটা ভীষণভাবে নড়ে গিয়েছিল। আমি বোকার মতো দিবাস্বপ্ন দেখে গেছি ঘণ্টার পর ঘণ্টা। প্রতিটি ঘণ্টাকেই মনে হত একেকটা দিন। আমার একটা ব্যাপার খুব জানতে ইচ্ছে করে, আমার কোন দিকটা হঠাৎ করেই আপনার এতোটাই খারাপ লাগা শুরু করল যে আপনি একেবারে যোগাযোগই বন্ধ করে দিলেন? আমি দেখতে ভাল না, এটা? এটা তো আপনি আগে থেকেই জানতেন, তাই না? নাকি, স্রেফ যোগাযোগ করতে আর ইচ্ছে করে না? ওটা তো যেকোনও একটা অজুহাত দেখিয়ে বলে দিলেই হয়। অজুহাতের তো আর অভাব নেই। আমি প্রতিটি মুহূর্তেই আপনার জন্য প্রতীক্ষা করে থাকি। কেন আমাকে এভাবে করে বসিয়ে রেখেছেন? বলে দিতে পারেন না কিছু একটা?

গত কিছুদিন তাও বুকের ভেতরে একটা চিনচিনে ব্যথা ছিল, এখন সেটার বদলে একধরনের অপমানবোধ হয়। হয়তো আমারই এগোনো উচিত হয়নি। কোথায় আপনি, আর কোথায় আমি! এই কথা’টার সত্যিই কোন মাত্রাজ্ঞান নেই! কথা এটা খুব ভালোভাবে বুঝতে পেরেছে।

যা-ই হোক, ভাল থাকবেন।

পুনশ্চ। আপনার কথা যখনই মনে হয়, তখনই Temple Run খেলি। আমার স্কোর এখন অনেক High!

……………………………………………………………………………………

পরদিন।

তুমি কষ্ট পেয়েছ? কেমন আছ? আমি গত কয়েকদিনে ফেসবুকে ইনবক্সে কাউকেই রিপ্লাই করিনি। একদম সত্যি বলছি!

জেনে কী হবে?

আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো। বিশ্বাস করছ না বোধহয়। অনেকগুলি মেসেজ এসেছে যেগুলোর একটাও পড়িনি।

আমি রাগ ধরে রাখি না।

প্লিজ, ভুল বুঝো না।

ভুল বোঝার কী আছে? আমার বোঝায় কিছু এসে যায় না।

যায়, নিশ্চয়ই যায়। অমন রাগ করে আছ কেন?

……………………………………………………………………………………

শুনছ?

আপনার উপর রাগ করব কোন অধিকারে? কী অধিকার আছে আমার?

……………………………………………………………………………………

রিপ্লাই নেই যথারীতি। যা-ই হোক, বিজি বি, আমি আর কখনওই কোনও দিবাস্বপ্ন দেখতে চাই না। এনাফ ইজ এনাফ! আমি নিতান্তই অপাঙ্ক্তেয়। আমি শুধু অপমানটুকুই নিতে পারছিলাম না। এইজন্যই এতকিছু বললাম। আর কখনও বলব না। বিদায়!

দুইদিন পর।

ভাল?

হঠাৎ মনে পড়ল কীভাবে? সব ঠিক আছে তো!

ইয়াপ, সুইট বি! কী কর?

কিছু না। আপনি?

খেলাম মাত্র।

এতো রাত করে?

হ্যাঁ, একটু দেরি হয়ে গেছে। খেয়েছ?

বিজি বি, আমি আপনাকে মিস করি খুউব। মিস করাটা ভীষণ বিশ্রী জিনিস! কাউকে একবার মিস করা শুরু হলে, সেটা বাড়তেই থাকে বাড়তেই থাকে। আরও বেশি-বেশি মিস করার অনেকগুলি কারণ মাথায় এসে যায়। আমি আপনার কথা সবসময়ই ভাবি, কিন্তু কখনওই আপনাকে নক করার সাহস হয় না। আপনি সবসময়ই এরকম অসাধারণ হয়েই থাকুন, এই দোয়া করি।

সাহস হয় না, মানে কী?? ওরকম করে ভেবো না, প্লিজ!

কেন ভাববো না? আমার মনে হয়, আপনি এই গ্রহের কেউ নন। আপনি জীবনে অনেক সফল হয়েছেন, আপনি এই, আপনি সেই, এসব আমার মাথাতেও আসে না কখনও। মূলত আপনার চিন্তা করার ধরন দেখেই আমি আপনার প্রেমে পড়ে গেছি। আমি তো বলেছিই, আমার ভেতরে একজন Sayuri বাস করে। আর মুভির চেয়ারম্যান চরিত্রটি আমার সবসময়ের জন্য সবচাইতে প্রিয় পুরুষ চরিত্র। আপনি আমার চেয়ারম্যান। আপনার সাথে আমি সবসময়ই আমার মতো করে গল্প করতে থাকি। আপনি আমাকে চাইলেই পান না, আমি কিন্তু আপনাকে যখন ইচ্ছে তখন চোখের সামনে নিয়ে আসতে পারি, আপনার সাথে জমিয়ে আড্ডা দিতে পারি। মজার না ব্যাপারটা?

……………………………………………………………………………………

সপ্তাহখানেক পর।

ভাল আছেন? আমি জানি, আমার আপনাকে বিরক্ত করা ঠিক নয়। অনেক যুদ্ধ করেছি নিজের সাথে, আর উনার কথা ভাবব না, উনাকে বিরক্ত করব না, ইত্যাদি ইত্যাদি। পারিনি। কয়েকদিন ধরে আপনার কথা মনে করতে-করতে পাগল-পাগল লাগছিল। তাই নক করে বসলাম। আর কিছু না। উত্তর না দিলেও চলবে। ভাল থাকবেন।

আমার চলবে না। ভাল আছ? অনেকদিন পর! বাসায় ফিরছি। চাকরিতে শান্তি নেই। চাকরি করতে না হলে সত্যিই বড় বাঁচা বেঁচে যেতাম। ছুটি পাই না, ঠিক সময়ে বাসায় ফিরতে পারি না। এটা কি জীবন হতে পারে? তারপর, আর কী খবর? জীবন কেমন কাটছে? ইদানিং আর আগের মতো নক কর নাতো! ব্যস্ত খুব?

খুব একটা ভাল নেই। নক করি না? আমার বিজি বি’টাকে বিরক্ত করতে চাই না, তাই নক করি না। আমার অতীত জীবনের কিছু প্রেতাত্মা আমার মধ্যে কীভাবে যেন অনেক-অনেক বছর পর এসে আবারও ভর করেছে। অদ্ভুত সব ঘটনাকে মেনে নিতে হচ্ছে চোখের সামনেই। যে ব্যাপারগুলিকে সবসময়ই ভয় পেয়ে এসেছি, সেগুলিই ঘটে চলেছে আমার সাথে। আমি নৈরাশ্যবাদী মানুষ সবসময়ই চরমভাবে অপছন্দ করি। কিন্তু ইদানিং, আমি নিজেই ওরকম হয়ে যাচ্ছি। আমার কথা ছাড়ুন। আমাকে নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না। আমি নিজেই নিজের সব ঝামেলা সামলে নেবো যেকোনোভাবে। তা বিজি বি, আপনার কথা বলুন। কেমন আছেনটাছেন?

……………………………………………………………………………………

প্রোফাইল পিকচারটা একটু বেশিই ভাল হয়েছে। দিনে-দিনে বয়স কমছে। গুড সাইন! প্রেমেটেমে পড়েছেন নাকি? নীল শার্টে আপনাকে দেখলে মনে হয়, পৃথিবীর সব নীল শার্ট শুধুই আপনার জন্য। আমার ক্ষমতা থাকলে সবকটাই আপনাকে দিয়ে দিতাম! একদিন হোয়াইট প্যান্টের সাথে নীল শার্ট পরে দেখবেন নাকি? জানেন, আমার না আপনাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করে। যাকে কোনোদিনই দেখিনি, তাকে আবার দেখতে ইচ্ছে করে কীভাবে? অদ্ভুত না? কিন্তু ওই ইচ্ছেটাই আমার করছে। আমার কী দোষ?

……………………………………………………………………………………

ঠিক ৪ দিন পর। ২৭ অক্টোবর রাত ১২টা ১ মিনিট হওয়ার আগেই।

শুভ **** (বাকিটা তুমি জানো!!!)

এরকম সপ্তাহের মাঝখানে কারও জন্মদিন হয়? উইকএন্ডে হলে কী হত? অফিসে কি বলা যায়, প্রিয় মানুষটিকে উইশ করতে ঢাকায় যেতে হবে? গুনেগুনে ৬টা মিথ্যে বলে কোনোরকমে এক দিনের ছুটি চুরি করেছি। যে সবুজ খামটা তোমার হোয়াটস্অ্যাপে গেল এইমাত্র, এখুনিই মনেমনে খুলে ফেলো না যেন! কাল ঠিক ১০টায় শহীদ মিনারের সামনে থেকো, কেমন? আমি আসব। আমাকে শুধু ১০টা মিনিট দিলেই চলবে। আসব, তোমার হাতে খামটা দেবো, তুমি চাইলে তোমাকে চিঠিটা পড়ে শোনাতে রাজি আছি। তোমার প্রিয় মানুষটির সাথে প্রথমদেখায় ওর মুখে ওরই চিঠিশোনা। তাও আবার তোমার জন্মদিনে। ভাল লাগবে না, বলো! কতক্ষণই বা লাগবে পড়তে? ৬-৭ মিনিট বড়োজোর! জন্মদিনে তোমায় দেবো বলে ঠিক ১৭ ঘণ্টা বসে-বসে এই চিঠিটা লিখেছি। ওতে ব্যাকপেইনটা একটু বেড়েছে, তবে ও তেমনকিছু নয়। খুব যে বড় কোনও চিঠি, অমনটা ভেবে বোসো না যেন আবার! ছোট চিঠি, আমার অনেক ফেসবুক নোটের চাইতেও ছোট। কিন্তু কেন জানি, লিখতে গিয়ে হাত কেঁপে উঠেছে বারবারই। নিজেকে নিজের চোখের সামনে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে আসা সহজ নয়, লিখতে গিয়ে এটা খুব ভাল করে বুঝেছি। একটা কথা বারবার লিখতে চেয়েও চিঠিতে লিখতে পারিনি। নিজেকে দিয়ে জোর করে সেই লাইনটা লেখানোর ব্যর্থ চেষ্টা করেছি কয়েকবার। হয়নি। ভেবেছিলাম, ওই কথাটা কোনোদিনই বলব না। কিন্তু বাসে ওঠার পর থেকে কে একটা যেন ভেতর থেকে বারবার বলেই চলেছে বলেই চলেছে, বলে ফেল……বলে ফেল! খামটা বানাতে অনেক সময় দিতে হয়েছে। তুমি তো জানোই, আমি কতটা অলস। আমার কখনওই এসব বানাতেটানাতে ইচ্ছে করে না। ওরকম রঙিন কাগজ কেটে-কেটে আঠা লাগিয়ে-লাগিয়ে……..নাহ্! হয় না! আমাকে দিয়ে ওসব হয় না! অথচ দেখ, তোমার কথা ভেবে কীভাবে যেন ওটা বানিয়ে ফেললাম। এখন খামটা ছিঁড়ে ভেতরের হলুদ কাগজটা বের করে ওতে লাইনটা লিখবো, এই সাহস আমার নেই। তোমাকে কোনোদিনই ফোনেও ওটা বলতে পারব না, সামনাসামনি তো নয়ই! তারচে’ বরং এখানেই লিখছি; পড়ো, পড়েই ভুলে যেয়ো, কেমন? এটা এমন একটা কথা, যেটা আমি প্রথম থেকেই……………

……………………………………………………………………………………

অনি! আছেন? আছেন অনি? আপনি এমন কেন? কথা শেষ না করেই ওরকম করে চলে যান কেন? নিজেও শেষ করেন না, আমাকেও শেষ করতে দেন না। আমি ছিলাম না ফেসবুকে। ফোনে উইশ নিচ্ছিলাম। এইমাত্র এসে দেখলাম। আপনার মোবাইলেও কল যাচ্ছে না। কী হয়েছে? আবারও ছিনতাই? শুনছেন………………অনি অনি!!

……………………………………………………………………………………

আমি কী পরে আসব কালকে? শাড়ি? নাকি, সালোয়ার-কামিজ? আপনি কী পরবেন? পাঞ্জাবি পরতে পারবেন না কালকে? গাঢ় নীল রঙের। আপনাকে খুব মানায়, জানেন? বলুন না একটু! প্লিজ! অনলাইনে আসছেন না কেন? মোবাইল এখনও বন্ধ কেন? কী হয়েছে? অনি অনি!! এই অনি…………..!!!

১৪টা ২৭ অক্টোবর ঘুরে আরেকটা ২৭ অক্টোবর এল। কথা এখনও ওর বেডরুমে বাঁধিয়েরাখা সবুজ খামটির ছবির দিকে তাকিয়ে ওটা খোলার প্রতীক্ষায় থাকে। ও কোনোদিনই বিশ্বাস করতে পারবে না, অনি সেই রাতে সেই কথাটি শেষ করেনি, তা নয়; ওর নিয়তিই ওকে কথাটি শেষ করতে দেয়নি।

কথা ওর জন্মদিনে আর ফুল নিতে পারে না। ফুলনেয়ার দিনটাই যদি ফুলদেয়ার বিষাদঘেরা উপলক্ষ হয়ে ওঠে নিয়তির অমোঘ ইশারায়, তখন আর কী-ই বা করার থাকে? যে মানুষটির সাথে ওর কখনওই দেখা হয়নি, ফুলহাতে দাঁড়িয়ে সেই মানুষটির সমাধির দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে শুধু।

বিয়ের এতোগুলি বছর কেটে গেল, অথচ সোহান এখনও সেই দিনটাতে সমাধিফলকের একটু দূরে দাঁড়িয়ে-দাঁড়িয়ে একই পুরনো মুগ্ধতায় ভাবতে থাকে, এ পৃথিবীতে কিছু-কিছু মানুষ থাকে, মৃত্যুর পরেও যাদের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠাটা সম্ভব নয়।

দুঃখী পায়রার ধূসর ডানায় ভর করে প্রতি বছর কথার জন্মদিন আসে।