কাতর সম্ভাষণ


ভালোবাসতে বাসতে ঘৃণা করতেই ভুলে গেছি। আজ তাই একবুক ক্ষত নিয়ে বলছি, এবার তুমি ফিরে এসো।
এলোচুলে আর লেপটানো কাজলে, এবড়োখেবড়ো নীল শাড়িটা পরেই হিজলতলায় ঠায় দাঁড়িয়ে আছি; তুমি ফিরে এসো।
আমার দু-হাত ছুঁয়ে কথা-দেওয়া তোমার ওই দু-হাতের শপথের কথাটা মনে করিয়ে দিলাম। তুমি ফিরে এসো।


যাবার বেলায় তোমার জন্য কেঁদে কেঁদে যেই অশ্রুসমুদ্র বইয়ে দিয়েছিলাম, আজও সেই অশ্রুই হাতে নিয়ে বলছি, তুমি ফিরে এসো।
আমার পুড়তে-থাকা মনের ছাই হাতে রেখে বলছি, তুমি ফিরে এসো।
দখিনের জানালা দিয়ে ঢোকা বাতাসের শরীর হয়েই নাহয় তুমি ফিরে এসো।
মজাপুকুরের সদ্যপ্রস্ফুটিত পানাফুল হয়ে তুমি ফিরে এসো।
প্রতীক্ষায় প্রতীক্ষায় চোখের তলায় কালি-পড়ে-যাওয়া প্রেমিকার চোখের দিকে তাকাতে তুমি ফিরে এসো।
আমাকে নতুন করে ফিরিয়ে দিতেই নাহয় আবার তুমি ফিরে এসো।
রাজ্যের তীব্রতম অবহেলা করতেই নাহয় তুমি ফিরে এসো।
আমার নিস্তব্ধ শরীরের ছোঁয়া পেতে তুমি ফিরে এসো।
আমায় এই জন্মের জন্য মুছে ফেলার আগে একবার তুমি ফিরে এসো।
এই মহামারিতে আমি মরে যাবার আগেই তুমি ফিরে এসো।
আমার কিছু কথা আছে, শোনার জন্য হলেও তুমি ফিরে এসো।
ভুলে একটা খুন করে ফেলেছি, তার সবটা খুলে বলব; তুমি ফিরে এসো।
আমি আবারও রূপোপজীবিনী হয়েছি, ওরা এখানে প্রায়ই আসে; তুমি ফিরে এসো।
আমার শরীরটাকে ওরা রোজই অসংখ্য বার মেরে ফেলছে, তুমি ফিরে এসো।
যন্ত্রণায় যন্ত্রণায় আমাকে কাতরাতে দেখতে হলেও তুমি ফিরে এসো।
আমার জানাজায় এসো না, এলে তোমায় আমি দেখতে পাবো না; জানাজা হবার আগেই তুমি ফিরে এসো।
আমি মূক-বধির হয়ে যাবার আগে তুমি ফিরে এসো।
আমি পালিয়ে যাবার আগে তুমি ফিরে এসো।
উন্মাদ আমার পায়ে শেকল পরানোর আগে তুমি ফিরে এসো।
বেলা ফুরিয়ে যাবার আগে তুমি ফিরে এসো।
আমি ঘুমিয়ে পড়ার আগে তুমি ফিরে এসো।
আমার ফাঁসির আদেশ হবার আগে তুমি ফিরে এসো।
বাবা আমাকে ত্যাজ্য করার আগে তুমি ফিরে এসো।
আমার মায়ের মৃত্যুর আগে তুমি ফিরে এসো।


তুমি ফিরবেই না হয়তো আর, জানি!
আমি তবু মিনতি করে বলছি বার বার…ফিরে এসো…ফিরে এসো…ফিরে এসো!
তোমার সমস্ত ব্যক্ত ক্ষত লুকোতে, প্রচ্ছন্ন ক্ষত শুকোতে নাহয় ফিরে এসো।


কথা দিচ্ছি, তুমি ফিরে এলে,
তোমায় আমি রাখব, আর ফিরিয়ে দেবো না!
তখন জীবনও আমায় না নেয় যদি,
তবুও তোমায় আমি নেবই নেব!