শাহরুখ খানের একটা কথা আছে এরকম: ইউ ক্যান লাভ মি অর হেইট মি, বাট ইউ কান্ট ইগনোর মি! আমি আবারও বলছি, ইউ ক্যান লাভ মি অর হেইট মি, বাট ইউ কান্ট ইগনোর মি! এর মানে হলো, তুমি আমাকে ভালোও বাসতে পারো কিংবা তুমি আমাকে ঘৃণাও করতে পারো, কিন্তু তুমি আমাকে এড়িয়ে যেতে পারবে না, মানে তুমি আমার সিনেমা দেখবেই! হ্যাঁ, তুমি আমার কাজটা দেখবেই!
আমি যখন কোনও একটা লেখা লিখি, তখন লেখাটা এমনভাবে লেখার চেষ্টা করি, যারা আমাকে ঘৃণা করে, যারা আমার হেইটার, তারা হয়তোবা আমার সেই লেখায় লাভ রিঅ্যাক্ট দেবে না…লাভ রিঅ্যাক্ট দূরে থাক, লাইকও দেবে না, একটাও কমেন্ট করবে না, নাহ্…কিছুই করবে না! কিন্তু তারা লুকিয়ে লুকিয়ে আমার লেখাটা পড়বে, আমার ওয়ালে এসে আমার লেখাটা পড়বে। আমি আমার লেখাটাকে সেই মানের রাখার চেষ্টা করি। যখন আমার লেখা আমার হেইটাররাও ভালোবাসে, তখন সেখানে আমি একজন সফল রাইটার---এরকমটা আমার কাছে মনে হয়। যখন কারও কাজ তার হেইটাররাও ভালোবাসে, হয়তো মুখে বলতে পারে না, আত্মসম্মানের মেকি বোধ কিংবা ইগোর কারণে বলতে পারে না, কিন্তু লুকিয়ে লুকিয়ে তার কাজটাকে ওরা এনজয় করে, তখন সে একজন ভালো কর্মী।
একটা সময় আমি প্রথম আলো’তে, কালের কণ্ঠ-এ লিখতাম বিসিএস পরীক্ষার প্রিপারেশন নিয়ে এবং এমন কোনও বিসিএস পরীক্ষা ছিল না, যে বিসিএস পরীক্ষার জন্য আমি লিখতাম না! পরে আমি নিজেই লেখা বন্ধ করে দিয়েছিলাম কিছু ব্যক্তিগত অভিমানে। তো প্রথম আলো’তে আমি যখন একটা লেখা লিখতাম, তখন আমি এমনভাবে লেখার চেষ্টা করতাম, যাতে সেদিন পেপারটার সব কপিই দ্রুত ফুরিয়ে যায়। হ্যাঁ, তা-ই হতো! অনেক পরিশ্রম করে লিখতাম একেকটা লেখা। সিরিয়াসলি! হয়তোবা মাত্র এক হাজার শব্দের একটা লেখা লিখছি, সেটুকু লিখতেও আমি সময় ব্যয় করছি নয়-দশ ঘণ্টা! অনেক স্টাডি করে লিখতাম। এমনভাবে লিখতাম, যাতে যারা আমার হেইটার, তারাও যেন সেইদিনের প্রথম আলো’টা কিনে নিয়ে হলে গিয়ে, রুমের দরজা বন্ধ করে কেউ না দেখার মতো করে হলেও পড়ে…পড়তেই হয়! যে ক্যান্ডিডেটটা আমাকে সহ্যই করতে পারে না, সে-ও সেদিনের লেখাটা পড়ত। হ্যাঁ, পড়তেই হতো! ওখানে যা পাওয়া যেত, তা অন্য কোথাও পাওয়া যেত না। ওভাবে করে নিজের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে লিখতাম। নিজেকেই চ্যালেঞ্জ করতাম যে, আমাকে লেখাটা ওই মানের লিখতে হবে। কেবল বোকারাই অন্যদের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছোড়ে। নিজের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়লে কাজ হয়। যারা আমাকে সহ্যই করতে পারে না, ওদের গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দিলেও আমার কাছে আবার ছুটে চলে আসে। ওদের এই প্রেমের উৎস আমি নই, আমার কাজ।
তো নিন্দুকদের আমি এভাবেই দেখি! ওরকম কেউ যেটাই বলুক না কেন, সেটা আমি গ্রহণ করি তখনই, যখন দেখি, আমি যেটা নিয়ে লিখছি বা যেটা নিয়ে কাজ করছি, ওটা নিয়ে বলার মতো যোগ্যতা তার আছে। যে মানুষটা জীবনে কখনও দু-লাইন লিখতে পারেনি, যে মানুষটা জীবনে কখনও ভালো কিছু পড়েনি, ভালো একটা লেখা পড়েনি---সে মানুষটা আমার লেখা নিয়ে দুটো বাজে কথা বললেও-বা কী হবে? সে তো বাজে কথা বলার ক্ষমতাই রাখে না। উইলিয়াম শেক্সপিয়রের সবচাইতে কট্টর সমালোচক ছিলেন জর্জ বার্নাড শ। বার্নাড শ তো অনেক বড়ো নাট্যকার। তিনি উইলিয়াম শেক্সপিয়রের সমালোচনা করেছেন, এটা উইলিয়াম শেক্সপিয়রের জন্য একটা সৌভাগ্য। কিন্তু আমার মতো রহিমউদ্দিন সলিমউদ্দিন যদি উইলিয়াম শেক্সপিয়রের সমালোচনা করে, সেটা উইলিয়াম শেক্সপিয়রের পাত্তা না দেওয়াই উচিত। অগ্রাহ্য করা উচিত।
তাই আপনার যারা সমালোচনা করছে, আপনি প্রথমেই দেখুন, উনি ওই ব্যাপারে জানেন কি না, তিনি সে ব্যাপারে সমালোচনা করার যোগ্য ব্যক্তি কি না। যদি যোগ্য ব্যক্তি না হন, তবে সেটাকে আপনার গ্রাহ্য করার দরকার নেই। দ্বিতীয় কথা, যদি কখনও আপনার কোনও বিষয়ে পরামর্শের দরকার হতো, তবে আপনি যে ব্যক্তির কাছে পরামর্শ চাইতেন না, সে ব্যক্তিই যদি আপনার সমালোচনা করে কিংবা গায়ে পড়ে পরামর্শ দেবার চেষ্টা করে, তবে সেটা আমলে নেবেন না কখনও! সেটা আপনার তেমন কোনও কাজে লাগবে না। অনেকেই আছে, যারা পরামর্শ দিতে পছন্দ করে, ওদের আত্মসম্মানবোধ কম বিধায় গায়ে পড়ে আজেবাজে কথা বলে, ওয়ালে এসে এসে অনেক ফালতু কথা বলে, ন্যূনতম আত্মসম্মানবোধটুকুও ওদের নেই। আপনার পেছনে পড়ে থাকার মতো অঢেল সময় ওদের হাতে।
এদের আগে ব্লক করতাম। এখন ব্লকও করি না। ভালো লাগে না! কারণ ইতর প্রাণী সংখ্যায় সবসময় বেশি হয়। ইতর প্রাণীর প্রসবক্ষমতাও অসীম! তাদের পেছনে লাগতে গেলে পেরে ওঠাটা সম্ভব নয়। বাসায় কখনও তেলাপোকা মেরেছেন? দেখবেন, তেলাপোকা মেরে শেষ করতে পারবেন না! ওরে বাবা, কত কত তেলাপোকা রে! কিন্তু আপনার বাসায় যদি হাতি ঢুকত, তবে একটা মারলেই হতো। হাতি বেশি ঢুকবে না, ঢুকলে একটাই ঢুকবে। তেলাপোকা প্রচুর ঢুকবে, ইঁদুর প্রচুর ঢুকবে, মেরে শেষ করতে পারবেন না। এ কারণেই, ইতর প্রাণী সংখ্যায় বেশি হয়। এরা আসবে ওয়ালে, এসে ভ্যা ভ্যা করবে! আর মনে রাখবেন, যারা অন্যের পেছনে লেগে থাকে, তারা কখনও ওই মানুষটার সামনে যেতে পারে না। যারা সামনে যায়, তারা কখনও পেছনে লাগে না, তারা চুপচাপ সামনে চলে যায়।
এইজন্যই, নিন্দুকই বলুন, আর সমালোচকই বলুন, তাদের গ্রহণ করতে হবে বা বর্জন করতে হবে খুব কেয়ারফুলি। যদি দেখেন এমন কোনও সমালোচনা, যে সমালোচনাটা আপনার ভালোর জন্য করা হয়েছে, সত্যিই তিনি আপনার ভালো চান, তবে তার সমালোচনাটা আপনি মাথা নত করে গ্রহণ করুন এবং নিজেকে ইমপ্রুভ করুন। কিছু মানুষকে দেখবেন, আপনি ভালো কাজগুলো যখন করছেন, সেখানে ওরা দুটো ভালো কথা বলবে না, আপনাকে দুটো প্রশংসাবাণী শোনাবে না, আপনার সম্পর্কে দুটো ভালো কথা বলবে না। যখন আপনার কোনও একটা কাজ বা কথা ওদের ভালো লাগেনি, ওদের চোখে একটা খারাপ কাজ আপনি করলেন, একটা ভুল কাজ করলেন, তখনই ওরা আপনার চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করার জন্য চলে এল! ওই ধরনের মানুষ কখনও আপনার শুভাকাঙ্ক্ষী নয়। তাদের আপনি আপনার লাইফ থেকে ডিলিট করে দিন। নিজেকে তাদের থেকে দূরে সরিয়ে নিন এবং তাদের বলুন, ভাইরে, ভিক্ষা লাগবে না, কুত্তা সামলাও! তোমার এই পরামর্শ আমার দরকার নাই। বিন্দুমাত্রও লজ্জা থাকলে তুমি আমার কাছে আর এসো না, আমি খুব খুশি হব। আমাকে ভালো না লাগলে আমার দিকে তাকিয়ো না। এ দুনিয়ায় তাকানোর জিনিসের এতই কি অভাব পড়ল যে জোর করে হলেও আমার দিকে বার বার তাকাতেই হবে?!
যে মানুষটা আপনাকে লো ফিল করায়, যার কথা শুনলে আপনার লো ফিল হয়, মনে রাখবেন, সে মানুষটা যত পণ্ডিতই হোক না কেন, যত যা-ই কিছু হোক না কেন, সে আপনার জন্য পুরোপুরিই একজন অপ্রয়োজনীয় মানুষ। যে মানুষটার কথা শুনলে আপনি হাই ফিল করেন, গুড ফিল করেন, ভালো কিছু করার মতো উৎসাহ জাগে মনে, নিজেকে সুন্দরভাবে দেখেন, সে মানুষটা আপনার জন্য খুব মূল্যবান একটা আয়না। যখন আয়নার সামনে দাঁড়ায়, তখন কিন্তু সবাই নিজেকে শাহরুখ খান মনে করে। নিজের চেহারাটা অনেক সুন্দর মনে করে, নিজেকে হৃতিক রোশন মনে করে, যখন কেউ আয়নার সামনে দাঁড়ায়। যার মাথায় চুলই নাই, সে-ও আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বলে, আল্লাহ্! আমার মাথায় গুনে গুনে পাঁচটা চুল আছে! মাথাভর্তি পাঁচ-পাঁচটা চুল…ভাবা যায়! এরকমও কিন্তু বলে!
যে মানুষটা আপনার সঙ্গে কথা বলার সময়, যিনি আপনার সামনে এলে আপনি নিজেকে সুন্দর দেখেন এবং সুন্দর ভাবেন, সেই মানুষের সঙ্গে বেশি বেশি মেশার চেষ্টা করুন; কেননা যখন আমরা নিজেকে সুন্দর দেখি আয়নায়, তখন নিজেকে সুন্দর করে রাখার একধরনের আন্তরিক চেষ্টা জাগে। আমরা কিন্তু কারও সামনে গেলে নাক খোঁচাই না, তাই না? কেন খোঁচাই না? কারণ নাক খোঁচালে দেখতে বিশ্রী লাগবে, এটা আমরা জানি। অর্থাৎ, নিজেকে যাতে ভালোভাবে উপস্থাপন করা যায়, সেই কাজটাই করি। নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে, নিজেকে ভালো ও সুন্দর ভাবতে সবাই-ই চায়। যে মানুষের সঙ্গে মিশলে আমার নিজেকে ভালো ফিল হয়, সেই মানুষের সঙ্গে মিশলে আমি নিজেকে ভালোভাবে তুলে ধরি, নিজেকে ডেভেলাপ করার চেষ্টা করি, দিনকে-দিন আরও ভালো কিছু করার উৎসাহ জাগে মনে। হ্যাঁ, আপনার জীবনে এমন মানুষ নিশ্চয়ই আছে! সেই মানুষটার সামনেই দাঁড়ান। অন্যদের সামনে দাঁড়ানো মানেই স্রেফ সময় নষ্ট করা।
কিছু মানুষ থাকে, যারা কখনও কারও প্রশংসা করতে পারে না। তারা হচ্ছে ভাইরাসের মতো। এক লোকের এক কুকুর ছিল…একটা গল্প বলি আপনাদের, শিব খেরার বই থেকে নেওয়া। শিব খেরার একটা বই আছে: ইউ ক্যান উইন, পড়তে পারেন, ভালো বই, সেখান থেকে গল্পটা নেওয়া। এক লোকের এক কুকুর ছিল। ওই কুকুরটার একটা অদ্ভুত ক্ষমতা ছিল। কুকুরটা পানির উপরে হাঁটতে পারত! পানির উপরে দৌড়াতে পারত! তো ওই লোকটা বিভিন্ন বন্ধুবান্ধবকে ডেকে তার কুকুরের ক্ষমতা দেখাত। সবাই প্রশংসা করত এবং তা শুনে লোকটার খুব ভালো লাগত। লোকটার এক বন্ধু ছিল, যে বন্ধুটা কখনোই কারও প্রশংসা করত না। তখন সে ভাবল, আমি আমার কুকুরের ক্ষমতা তাকে দেখালে সে প্রশংসা না করে কোথায় যাবে! তাকে ডাকি। তাকে ডাকা হলো। যথেষ্ট খাওয়া-দাওয়া হলো দুপুরবেলা। বিকেলবেলায় পুকুরপাড়ে দু-জন বসে বসে গল্প করছে, সঙ্গে কুকুরটা আছে। তখন যে লোকটা হোস্ট, যে দাওয়াত করেছে, সে তার বন্দুক দিয়ে একটা পাখি শিকার করল। পাখিটা পুকুরের মাঝখানে গিয়ে ঝুপ করে পড়ল। তখন কুকুরটা পানির উপর দিয়ে একদৌড়ে গিয়ে পাখিটা মুখে নিয়ে তীরে চলে এল। কুকুরটা পুকুরপাড়ে চলে আসার পর এসব দেখেও ওই বন্ধুটা কিছুই বলে না! একেবারেই চুপচাপ! কোনও কথাই বলে না। তখন সে একটু আমতা আমতা করে বলল, ‘দোস্ত, একটা কথা ছিল!’ ‘কী কথা?’ ‘তুই যে আমার কুকুরটা দেখলি, এই কুকুরটার মধ্যে কোনও অদ্ভুত ব্যাপার খেয়াল করছিস?’ ‘মানে?’ ‘মানে কোনও ব্যতিক্রমী কিছু, যেটা অন্য কুকুরের মধ্যে নেই, আমার কুকুরের মধ্যে আছে! এরকম কিছু দেখছিস তুই?’ তখন বন্ধুটি বলে, ‘হ্যাঁ, দেখলাম!’ উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে হোস্ট জিজ্ঞেস করল, ‘দোস্ত, কী দেখছিস?!’ ‘তোর কুকুর তো সাঁতারই পারে না!’
বুঝুন অবস্থা! যারা কখনোই ভালো কিছু বলে না লোকের সম্পর্কে, তারা ভালো বলতে জানে না, তারা ভালো বলেই না! বলতে হলে ওরা খারাপ কিছুই বলে, নইলে কিছুই বলে না। ওরা মানুষ নয়, ওরা ভাইরাস! এ ভাইরাস করোনার চেয়েও ভয়ংকর! এইসব মানুষকে লাইফ থেকে একদম শিফট-ডিলিট করে দিন। তাদেরকে লাইফ থেকে দূরে রাখুন যে-কোনও মূল্যে। দূরে রাখতে না পারলে, আপনি নিজেই দূরে সরে আসুন। ছোট্ট একটা জীবন! এই ছোট্ট জীবনে, এই ধরনের ভাইরাসকে স্থান দেবার কোনও মানেই হয় না। ওরা সত্যিই করোনার চেয়েও ডেঞ্জারাস! করোনাতে মাস্ক পরেন তো! ওদের সামনে মাস্ক না, একটা গামলা নিয়ে আসবেন! মাথার সামনে গামলা নিয়ে হাঁটবেন, যাতে তারা আপনার সামনে আসতেই না পারে! ওরা নির্লজ্জ টাইপের তো, তাই বেহায়ার মতো এসেও পড়তে পারে। মুখের সামনে ঢাউস সাইজের গামলা থাকলে ওরা আপনাকে খেয়াল করলেও আপনি ওদের আর খেয়াল করতে পারবেন না। এটাই আমি মনে করি। এটা যদি করতে পারেন, তবে আপনি ভালো থাকবেন এবং নিজেকে ভালো রাখতে পারবেন।