ওয়াইল্ড স্ট্রবেরিজ (১৯৫৭)

ওয়াইল্ড স্ট্রবেরিজ: এক বৃদ্ধের অন্তর্যাত্রা (স্পয়লার অ্যালার্ট)

……………………………………………………………………………………

ইংমার বার্গম্যানের ‘ওয়াইল্ড স্ট্রবেরিজ’ মুক্তির ঠিক ৯ বছর পর ১৯৬৬ সালে সত্যজিৎ রায়ের ‘নায়ক’ মুক্তি পায়। তখন অনেক সমালোচকই ভেবেছিলেন, অরিন্দম মুখোপাধ্যায় মূলত ইসাক বরির ছায়া। তবে, সিনেমায় দেখানো প্রথম স্বপ্নের কনসেপ্টটা বাদে ‘বুনো স্ট্রবেরি’ থেকে সত্যজিৎ আর কিছু নিয়েছেন বলে আমার কাছে মনে হয়নি। বিশ্বের সেরা ১০টি ফিল্মের অনেক তালিকায়ই ‘ওয়াইল্ড স্ট্রবেরিজ’ আছে। আন্দ্রেই তারকোভস্কি এবং উডি অ্যালেনের মতো পরিচালকরা বার্গম্যানের এ কাজটিকে সিনেমা তৈরির আদর্শ মানতেন। এ ছবির সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছবির শুরুতে দেখানো স্বপ্নদৃশ্য। এই একটি দৃশ্যই পুরো সিনেমার ভারটা বয়ে সামনের দিকে নিয়ে গেছে। সেখান থেকে ঘুরে আসা যাক।

দর্শক জানেন, বার্গম্যানের সিনেমার সবচাইতে পরিচিত উপাদান হল মৃত্যু। মৃত্যুর অনিবার্যতা ও মৃত্যুকে ঘিরে ভয়, এই দুইকে মাথায় রেখেই জীবনের আবর্তন, বিকাশ ও যাপন। প্রফেসর ইসাক বরি অসুস্থ। তিনি শুলেন, ঘুমিয়ে পড়লেন। আমরা দেখলাম। তাঁর মুখে একটা আবছা আলো এসে পড়েছে। তিনি ঘুমাচ্ছেন, সে ঘুম প্রাচীন—ক্লান্তির আর বিষাদের। আর দশজন উদ্বিগ্ন মানুষের মতোই বরি দুঃস্বপ্ন দেখছেন। উদ্ভট আর খুব বাজে একটা স্বপ্ন। স্বপ্নের সিকোয়েন্স দেখলে ইয়োরোপের সাইলেন্ট মুভির কথা মাথায় আসে। সেখানে স্তব্ধতা আছে, শূন্যতা আছে। বোধের পর্যায়বৃত্তিক রূপান্তর আছে। এ স্বপ্ন জীবনের নয়, মৃত্যুর। পৃথিবীতে এই মৃত্যুই একমাত্র ধ্রুব সত্তা। দৃশ্যটি খুব স্পষ্ট নয়, ঝাপসা, স্বপ্নে যেমন হয়; তবে সে দৃশ্যের বক্তব্য বেশ তীক্ষ্ণ। পথ হারিয়ে শহরের কোনো ফাঁকা রাস্তা দিয়ে বরি একা হেঁটে যাচ্ছেন। ওইসময়ে মানুষ একাই হাঁটে। আশেপাশের দালানগুলি যেন ধ্বংসের পর কোনওমতে টিকে আছে। সেগুলির দরোজা আর জানালা জীর্ণ। মৃত্যুর চিহ্ন ঝলমলে নয়, বিবর্ণ। পাশাপাশি গা-ঘেঁষে দাঁড়িয়েথাকা ভূতুড়ে দালানগুলির সামনের ফুটপাথ ধরে বরি হাঁটছেন, জায়গাটা একেবারেই নির্জন ও অপরিচিত—মৃত্যুর মতোই অচেনা। শহর এখানে উষ্ণ নয়, শীতল। জীবিত নয়, মৃত। আশেপাশে যে ছড়ানো আলো, তা যেন রাতের চেয়েও কালো! বরি কাউকেই দেখছেন না, বরিকেও কেউ দেখছে না। এ এক নিভৃত নিশ্চুপ নির্জন যাত্রা। ফুটপাথের পাশের এক দালানের দেয়াল থেকে একটা ঘড়ি ঝুলছে। সে ঘড়ির কোনো কাঁটা নেই, একজোড়া চোখ আছে। ডান চোখে রক্ত ঝরছে। চোখ দুটো বরির দিকে তাকিয়ে আছে, সে দৃষ্টি অনুভূতিহীন, শীতল, অবিচলিত। বরি তাঁর পকেটঘড়িটা বের করে দেখলেন, সেখানেও কাঁটা নেই; আবার পকেটে ঢুকিয়ে রাখলেন। মৃত্যুর ঘড়ি কোনো সময়ের তোয়াক্কা করে না।

একজোড়া চোখ তাঁর দিকে নিশ্চল তাকিয়ে আছে, বরির দৃষ্টিও সেদিকে। তিনি একটু ছায়ায় সরলেন, চোখজোড়ার দৃষ্টি সরল না। সেই একজোড়া চোখকে পেছনে ফেলে বরি সামনের দিকে হাঁটছেন। কী যেন মনে করে উনি আবার পেছনে হাঁটলেন। এ ফেরা মৃত্যুর দিকে অনুগমন। একটু ফিরে থেমে সামনের রাস্তা খেয়াল করে বরি দেখলেন, তিনি এখন আর একা নন। হ্যাট-স্যুটপরা এক লোক দাঁড়িয়ে আছে। বরি লোকটার দিকে এগিয়ে গেলেন, পেছন থেকে কাছে এসে তাঁর বাঁ-কাঁধে হাত রাখলেন। লোকটা ধীরেধীরে বরির দিকে ফিরলেন। তাঁর মুখমণ্ডল অস্বাভাবিক, চোখদুটো খুব শক্ত করে ভেতরের দিকে বোজা। পুরো মুখ যেন থেবড়ে আছে, মুখের মাংস ও চামড়া নিংড়ানো, বিকৃত, হরর সিনেমায় যেমন অবয়ব দেখায়, অনেকটা ওরকম। লোকটা মাটিতে পড়ে গেলেন। ব্যাকগ্রাউন্ডে ঘণ্টার শব্দ। ডং ডং ডং………লোকটার দেহ অদৃশ্য হয়ে গেল, জ্যাকেটের কলার থেকে কালির মতো কোনো তরল পদার্থের স্রোত রাস্তার গড়িয়ে যাচ্ছে। শেষযাত্রা এক একাকী যাত্রা, সে রহস্যময় যাত্রায় জীবনের যতো অর্জন, তার সবই অলীক, অনর্থক, অথর্ব। বরি সামনের দিকে হাঁটলেন। তিনি এখন একটা দালানসারির বাঁকের মাথায় দাঁড়িয়ে। ডানদিকের গলিসদৃশ রাস্তা ধরে একটা ঘোড়ার গাড়ি আসছে। দুটো কালো ঘোড়া খুব ধীরপায়ে গাড়িটিকে টেনে আনছে। টগবগ টগবগ। সেখানে কোনো ঘোড়সওয়ারি নেই। গাড়িটা বাঁকের সে মাথায় এসে বাঁয়ে ফিরল।

ঘোড়া দুটো হাঁটছে, গাড়ি চলছে। সেই চোখওয়ালা ঘড়ির মুখোমুখি একটা ল্যাম্পপোস্ট আছে। গাড়ির পেছনের বাঁয়ের চাকা খুঁটির নিচের অংশে আটকে গেল। ঘোড়া দুটো চেষ্টা করে যাচ্ছে সামনের দিকে যাওয়ার। ধাক্কা খেতেখেতে চাকাটা ছুটে গেল। বরি পেছন থেকে ব্যাপারটা দেখছেন। চাকাটা গড়িয়ে তাঁর পাশে এসেই চাকার একটা অংশ ভেঙে দেয়ালে হেলান দিয়ে নিচে পড়ে রইল। ওদিকে ঘোড়ার গাড়িটা ল্যাম্পপোস্টে আটকে আছে। ঘোড়া দুটো চেষ্টা করছে গাড়িটা টেনে নিতে। পুরনো গাড়িটা দুলছে আর দুলছে। ব্যাকগ্রাউন্ডে ঘণ্টা বাজছে। ডং ডং ডং………এক পর্যায়ে গাড়িতে থাকা কফিনটা গাড়ির পেছন দিকে গড়িয়ে রাস্তায় পড়ে গেল। তিনচাকার ভারমুক্ত গাড়িটা নিয়ে ঘোড়াদুটো সামনের দিকে দ্রুতপায়ে এগিয়ে চলল। ক্যামেরার ফ্রেম থেকে গাড়িটি অদৃশ্য হয়ে গেছে, রাস্তায় পড়ে আছে কফিনটা। জীবন থেকে সবকিছুই হারিয়ে যায়, সবাইই ফেলে রেখে দূরে চলে যায়, এক মৃত্যুই পাশে থেকে যায়। কফিনের ভেতর থেকে একটা হাত বেরিয়ে এসেছে। হাতটা কফিনের ডালার উপর কাত হয়ে আছে। একটু দূরে দাঁড়িয়ে বরি সেদিকে তাকিয়ে আছেন একদৃষ্টিতে। একসময় তিনি ধীরপায়ে কফিনের দিকে হেঁটে গেলেন। অনিবার্য সে যাত্রা। হাতটা তাঁর জন্য অপেক্ষা করে আছে। ডানহাত। হাতের আঙুলগুলি অর্ধেক ভাঁজকরা, শার্টের হাতায় কাফলিং দেখা যাচ্ছে। বরি কফিনের কাছে ঝুঁকতেই হাতটা নড়ে উঠল। বরির ডানহাত কফিনের গায়ে আটকে গেছে যেন, তিনি হাত নাড়াতে পারছেন না। সেই ভূতুড়ে হাতটা এসে বরির হাত ধরল। খুব শক্ত করে। বরি কাঁপছেন, হাত সরাতে পারছেন না। কফিনের ভেতর থেকে একটা মুখ বেরিয়ে এলো। সে মুখ বরির। বরিকে বরিই টানছেন কফিনের দিকে। আমরাই আমাদের মৃত্যুর দিকে টানি! বরি নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন। হচ্ছে না। হয়ও না! বরির ঠোঁট কাঁপছে, শরীর দুলছে। কফিনের বাইরের বরির মুখ কফিনের ভেতরের বরির মুখের সাথে মিশে যাচ্ছে! বরি এক অনির্দেশ্য অজানা গন্তব্যের দিকে চলেছেন। সে যাত্রা আলো থেকে অন্ধকারের দিকে যাত্রা। বরির ঘুম ভেঙে গেল। বেডরুমের ঘড়িটা সময় জানাচ্ছে। টিক টিক টিক………

এ ছবিতে বরির ভূমিকায় অভিনয় করেছেন ‘দ্য ফাদার অব সুইডিশ সিনেমা’ খ্যাত ভিক্টর ডেভিড সজস্ট্রোম। তিনি ছিলেন সুইডেনের একজন চলচ্চিত্র পরিচালক, চিত্রনাট্যকার এবং অভিনেতা। তাঁর বিখ্যাত চলচ্চিত্র ‘দ্য ফ্যান্টম ক্যারেজ’ বার্গম্যান দেখেছিলেন ১৫ বছর বয়সে। বার্গম্যান বাকি জীবনে প্রতি বছর একবার করে সে সিনেমা দেখতেন। বরির স্বপ্নের ঘোড়ার গাড়িটার কনসেপ্ট মূলত ‘দ্য ফ্যান্টম ক্যারেজ’ থেকেই নেয়া। গাড়িটা যখন ভেঙে যায়, তখন কফিনটা মাটিতে খুলে পড়ে, সেখানে একজন জ্যান্ত মানুষের মৃতদেহ, এইসব কিছু বরিকে ভয় পাইয়ে দেয়। বৃদ্ধদের মৃত্যুভয় সবসময়ই বেশি থাকে। আমাদের অতীত স্মৃতি আর বর্তমান চিন্তা, এই দুইয়ের সম্মিলনই হল স্বপ্ন কিংবা দুঃস্বপ্ন। বরির ভেতরের মানুষটা স্পষ্ট হয়ে আমাদের সামনের চলে আসে দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে।

খিটখিটে, জেদি, অহংকারী ৭৮ বছরের বিপত্নীক প্রফেসর বরি দুঃস্বপ্নের ঘোর থেকে বেরিয়ে এসে যাচ্ছেন লুন্ডতে। তাঁর চিকিৎসক জীবনের ৫০ বছর পূর্তিতে লুন্ড বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সম্মানসূচক ডিগ্রি দেবে। সাথে আছে তাঁর পুত্রবধূ ম্যারিয়েন। ম্যারিয়েনের চোখে বরি এক স্বার্থপর বুড়ো, নিজের ছাড়া আর কারো ব্যাপারেই যার কোনো মাথাব্যথা নেই। মুখে যতই বিনয় দেখাক না কেন, যারা বরিকে কাছ থেকে দেখেছে, কেবল তারাই জানে, বরি আদতে কী! ম্যারিয়েন আরো বলে, বরির ছেলেও ঠিক তাঁর মতোই হয়েছে। এ অভিযোগ শুনে বরি বিস্মিত হন। একসময় সে জার্নিটা নিছকই সম্মাননা-গ্রহণযাত্রা থাকে না, তা হয়ে ওঠে আত্ম-অনুসন্ধানের এক যাত্রা। বরি এক বাড়ির সামনে তাঁদের গাড়িটা থামান। ম্যারিয়েনকে বলেন, “আমার জীবনের প্রথম ২০ বছর এ বাড়িতে আমরা প্রতি গ্রীষ্মে থাকতাম। আমরা ১০ জন শিশু মিলে খেলতাম। তুমি বোধহয় এটা জানো।” নিজের মনেই বলতে থাকেন, এখানে বুনো স্ট্রবেরি জন্মাত। আমি হয়তো একটু আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছি। কিংবা এখন আমি ক্লান্ত। মনটাও একটু খারাপ। এমনও হতে পারে, যে জায়গাটা ঘিরে আমার শৈশব, যেখানে আমি খেলতে খেলতে বেড়ে উঠেছি, তা নিয়ে আমি এটাওটা ভাবতে শুরু করেছি। আমার সবকিছু মনে পড়ে যাচ্ছে, সবই যেন চোখের সামনে স্পষ্ট হয়ে ভেসে উঠছে। বরি তাঁর ছোটবেলা দেখতে পেলেন। নানান ঘটনা, সুখ, ব্যর্থতা, প্রিয় মানুষেরা সব একএক করে স্মৃতিতে এসে ভিড় করছে।

জার্নিতে বরির সাথে যাদের দেখা হয়েছে, তারা কোনো না কোনোভাবে বরির অতীতজীবনের স্মৃতির সাথে জড়িত। প্রথমে দেখা হল দুই ছেলে ও এক মেয়ের সাথে। সে মেয়ের নাম সারা, বরির প্রথম জীবনের প্রেমিকার নামও সারা, জীবনে যাকে তিনি পাননি, সারা বিয়ে করেছিল বরির কাজিনকে। ওদের সাথে নিয়ে গাড়ি যখন ছুটে চলেছে, তখন এক গাড়ির সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হতে গিয়েও ভাগ্যক্রমে হল না, সে গাড়ির দম্পতিও ওদের সঙ্গী হয়ে গেল। সে দম্পতি গাড়িতে উঠে এতটাই ঝগড়া শুরু করে দিল যে ম্যারিয়েন অনেকটা বাধ্য হয়েই ওদের মাঝপথে নামিয়ে দিল। বরি স্ত্রী মারা গেছেন অনেক বছর আগে। ওদের দেখে তিনি তাঁর অসুখী দাম্পত্যজীবনের কথা মনে করলেন। স্বপ্নের ধারাবাহিকতায় বরি দেখলেন, স্টেন আলমার বরির পরীক্ষা নিচ্ছেন। বরিকে ব্ল্যাকবোর্ডের লেখা পড়তে বলা হল। বরি পারলেন না। আলমান পড়ে শোনালেন: “একজন চিকিৎসকের প্রথম দায়িত্ব হল ক্ষমা চাওয়া।” বরি অনেকটা চিৎকার করে উঠলেন, এটা তো তিনি জানেন। উত্তর এলো, এমন একটা সহজ জিনিস না পারার অপরাধ ক্ষমার অযোগ্য। বরিকে এটার শাস্তিভোগ করতে হবে। আবার এক পেট্রোলপাম্পের মালিক যখন চিকিৎসক বরির প্রতি তাঁর এবং তাঁর স্ত্রীর কৃতজ্ঞতাস্বরূপ পেট্রোলের দাম নিতে রাজি হল না, তখন বরি মানুষের ভালোবাসায় আপ্লুত হয়ে পড়েন, চিকিৎসক হিসেবে কাজ করার সার্থকতা খুঁজে পান।

বরির মায়ের বয়স ৯৬। মায়ের সাথে যখন তাঁর দেখা হল, তখন তিনি মায়ের কাছে একটা পকেটঘড়ি দেখতে পান, যেটি ছিল অবিকল তাঁর দুঃস্বপ্নের ঘড়িটার মতো দেখতে। তাঁর একাকীত্ব এবং নিভৃতচারিতা তাঁকে আবারো মৃত্যুর কথা মনে করিয়ে দেয়। মৃত্যুর ভাবনা কিছুতেই বরির পিছু ছাড়ে না। অবশেষে বরি ডক্টর জুবিলারিজ উপাধিতে ভূষিত হন, গণসংবর্ধনা লাভ করেন, সবাই তাঁকে ধন্যধন্য করতে থাকে। কিন্তু এর সবকিছুই তাঁর কাছে স্রেফ আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া আর কিছুই নয়। মৃত্যুই তাঁর জীবনে একমাত্র ধ্রুব সত্য হিসেবে বারবার সামনে এসে যায়। সে রাতে, জার্নিতে যাদের সাথে দেখা হয়েছিল, সেই তিনটি ছেলেমেয়ে বরিকে অভিনন্দন জানাতে আসে। বরির তাদের ভালোবাসায় মুগ্ধ হয়ে বলেন, আমার মনে থাকবে। পরম শান্তি নিয়ে তিনি তাঁর ছেলে ইভাল্ডের বাসায় বিছানায় ঘুমিয়ে পড়েন। স্বপ্নে দেখলেন, তাঁরা পরিবারের সবাই মিলে হ্রদের ধারে পিকনিকে গেছেন, সারা বরির হাত ধরে দেখাচ্ছে, হ্রদের ওদিকটায় বরির বাবা-মা বড়শি দিয়ে মাছ ধরছেন। মানুষ জীবনে যা পায় না, তা স্বপ্নে পেয়ে যায়।

সিনেমায় বর্তমানের সাথে অতীতের দেখা হয়ে যায় স্বপ্নের মধ্য দিয়ে। সিনেমাটি মূলত বরির আত্ম-আবিষ্কারের প্রক্রিয়া তুলে ধরেছে। একজন সুপ্রতিষ্ঠিত মানুষ, যিনি সকল পার্থিব প্রাপ্তি ও সাফল্যের সকল ধাপ পেরিয়ে জীবনের শেষ প্রান্তে পৌঁছে গেছেন, জীবনের সাথে তাঁর যে বোঝাপড়া, সিনেমায় সেটিই দেখানো হয়েছে। বার্গম্যানের কাছে শৈশব ছিল সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ। ফলে তাঁর সিনেমায় স্বপ্ন ও নস্টালজিয়ার সূক্ষ্ম কাজ থাকেই। তিনি মৃত্যুর অনুধ্যান এবং জীবনের অনুসন্ধান করতে শিখেছেন ছোটবেলার নানান অভিজ্ঞতা থেকেই। ‘ওয়াইল্ড স্ট্রবেরিজ’ মুভিতে বার্গম্যানের নিপুণ হাতে এক বৃদ্ধ চিকিৎসকের স্বপ্ন, স্মৃতি ও ফিল্ম, এই তিন সত্তা মিলে বোধের জায়গায় এসে মিশেছে। আমরা যেন প্রফেসরের চোখে চট করে নিজের জীবনের সকল প্রাপ্তি ও আফসোস, সুখ ও দুঃখ, সম্ভাবনা ও সংকট, স্বপ্ন ও স্বপ্নভঙ্গ, কমেডি ও ট্র্যাজেডি, সম্পর্ক ও বিচ্ছেদ, পূর্ণতা ও শূন্যতা স্পষ্ট দেখতে পাই এবং মৃত্যুর দিকে এগুতেথাকা পায়ের শব্দ শুনে বিস্ময়ে আর ভয়ে ভাবি: এই পায়ের চিহ্ন আমি চিনি!