অসম্পর্কের অব্যাকরণ/ প্রথম পর্ব

 
- হ্যালো! হ্যাঁ বল, কী হইসে?
- তুই কি এখনই একটু আমার বাসায় আসতে পারবি?
- এখন! এত রাতে! ৮টা বেজে গেছে তো! তা ছাড়া বাসা তো খালি। এত রাতে বাসা খালি রেখে আসি কী করে। কালকে সকালে আসি?
- না, যেভাবেই হোক, এখনই একটু আয়। আমি আর বাঁচতে পারতেসি না। আমার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
- কেন? কী হইসে? আর কাঁদতেসিস কেন? আচ্ছা, তুই ফোন রাখ। আমি আসতেসি।
- আচ্ছা, একটু জলদি আয়!
- কী রে, কী হইসে তোর? ঘরের সব লাইট-টাইট অফ করে শুয়ে আসিস। আবার কাঁদতেসিস কেন? কী হইসে, বল!
- আমি আর থাকতে পারতেসি না। আজকে সারাদিন আমি শাহরিয়ারের সাথে কথা বলি নাই। সব ফোন বন্ধ করে সারাদিন শুয়ে ছিলাম। আমি খুব চেষ্টা করতেসি, কিন্তু আমি ওকে ছাড়া থাকতেই পারতেসি না।
- ওকে ছাড়া থাকতে না পারার কী আছে? ওকে ছাড়া থাকতে হলে তো ওকে ছাড়তেই হবে। চেষ্টা করবি, তা হলেই হয়ে যাবে। এটা এত সিরিয়াসলি নেওয়ার কী আছে? কেন, কী হইসে? বাসায় আবার কিছু বলসে? প্যান্দানো থামা, আগে বল, তার পর প্যান্দাইস।
- তোরা তো সবাই বলিস ওকে ছেড়ে দিতে। আমিও তো চাই, কিন্তু আমি পারতেসি না, আমি ওকে ছাড়া থাকতেই পারব না। তোরা সবাই একটু বোঝার চেষ্টা কর। আমি মরে যাইতেসি। আমার আবার সেই সমস্যাগুলা হইতেসে। মা সবার কাছে বলে বেড়ায়, আমি শাহরিয়ারকে ছাড়তে না পারলে মা আমাকে ত্যাজ্য করে দিবে। সবার কাছে বলে, আমিই নাকি খারাপ। আমি বাসার কারও কোনও কথা শুনি না। আমার জন্য সবার জীবন হুমকির মুখে। আমি এই বাসার সবাইকে আত্নীয়স্বজনের কাছে ছোট করসি। আমি কোনও দিন মা’র কোনও কথা নাকি শুনি নাই। আমি সব সময় নাকি মা’র সাথে তর্ক করি। এখনও আমি সবার মাথা খাচ্ছি। আমি অন্যের সংসার ভেঙে তার পর নিজের কথা ভাবতেসি। আমার উপর নাকি সবার অভিশাপ লাগবে। আমি কোনও দিন সুখে থাকতে পারব না, সবার কাছে মা এসব বলে বেড়ায়। শাহরিয়ার নাকি ভালো ছেলে না। ওর নামেও বাজে বাজে কথা বলতেসে। এখন আমি কী করব? আমি তো আজকে ১ মাস হলো চেষ্টা করতেসি ওকে ছাড়তে, কিন্তু আমি কিছুতেই পারতেসি না। বাসার কেউ একবারও আমার কথাগুলা বুঝে না, আমার সাথে বাসার কেউ কথা বলে না। আমি তা হলে এখন কী করব?
- যা করতে হবে তা-ই করবি। কেন, শাহরিয়ার কী বলসে?
- ও আরও একটু সময় চাইসে। ও বলতেসে, আরও একটু সময় দাও, তার পর আমি দেখি কী করা যায়।
- হুম! তো? সময় চাইলে সময় দিবি। সমস্যা কী?
- সমস্যা হলো, বাসা থেকে বারবার চাপাচাপি করতেসে, আর পাঁচ বছরের কথা বলতেসে। পাঁচ বছর হতে তো মাত্র আর ৭/৮ মাস সময় বাকি আছে। আমি এর ভেতর কীভাবে কী করব?
- এই পাঁচ বছর সংক্রান্ত কথা তো আগে জানতাম না। কেন, তোকে যখন রিমনের সাথে ডিভোর্স দিয়ে নিয়ে আসছিল, তখন কি তোর বাসার মানুষ তোকে পাঁচ বছরের সময় দিসিল?
- হুম! বাসা থেকে বলসিল পাঁচ বছরের ভেতর নিজে একটা কিছু করে আলাদা হয়ে যেতে। এখন পাঁচ বছর হতে তো মাত্র ৭/৮ মাস সময় বাকি আছে। আমি এত অল্প সময়ের মধ্যে কী করব? আর শাহরিয়ারও তো কিছু করতে পারতেসে না। আমার বাসা থেকে সরাসরি বলে দিসে, শাহরিয়ারকে কোনও দিনও ওরা মেনে নিবে না। আর যদি আমি ওকে বিয়ে করি, তা হলে মা আমাকে ত্যাজ্য করে দিবে। এখন আমি তো চেষ্টা করসি অনেক ওকে ছাড়ার, কিন্তু আমি পারতেসি না। আমি অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি। তুই কি একটু বাসায় বুঝাবি? আমি কী করব? কোন দিকে যাব, তুইই বল!
- শোন নীলু, আমি এখন তোকে কিছু কথা বলি। আগেই বলে রাখি, তুই কিন্তু ভেবে নিস না যে আমি তোর বাসার মানুষের পক্ষ নিয়ে অথবা তোর মায়ের স্পাই হয়ে তোকে কথাগুলা বলতেসি। আমি সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে তুই বর্তমানে কোন অবস্থানে আসিস, সেটা দেখানোর জন্যই বলতেসি। আর তোর সাথে আমি যখন তখন কথা বলতেসি, আমি তোর খোঁজ রাখতেসি কিন্তু তোর ভালোর জন্যই, যেন তুই হুট করে একটা কিছু করে না ফেলিস। তুই এখন যেকোনও সময় হুটহাট কিছু একটা করে ফেলার পরিস্থিতিতে আসিস। তুই একেবারে চোখ বন্ধ করে আরও একটা ভুল যেন করে না বসিস, এজন্যই আমি তোকে সময় দিচ্ছি। আমি কিন্তু সারাদিন অনেক ব্যস্ত থাকি। আমার সারাদিন অনেক ধরনের কাজ থাকে, তা ছাড়া আমি নিজেকে নিয়েও একটু ব্যস্ত আছি। তোকে নিয়ে, তোর ওসব ফালতু বিষয় নিয়ে বসে থাকার মতো সময় কিন্তু আমার একেবারেই নাই, কারণ আমি তোকে অনেক বুঝাচ্ছি, কিন্তু তুই তোর জায়গায় এখনও অনড়। তোর এসব সমস্যা আমার বোন অনেক আগেই বুঝসে, আর বুঝেই আপু কিন্তু আমাকে আগেই বলে দিসে, নীলু যা খুশি করুক, তুই ওর কোনও ব্যাপারে আগাবি না, কারণ এর আগেও ও একটা ভুল করসে। নীলুর বাসার মানুষ পরে ওর দোষ তোর ঘাড়ে চাপায়ে দিবে। ও একটা ভুল কিছু করে বসলে ওর বাসার মানুষ লোকের কাছে বলে বেড়াবে, তোর সাহায্যে ও এসব করতে পারসে। ওর বাসার মানুষ নিজেরা ওকে শাসন করতে পারে না, বুঝাতে পারে না, কী করে ওকে ওই পথ থেকে সরাতে হবে তাও জানে না, আবার সেই দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপায়ে দেয়। নীলু যা খুশি করুক, তুই ভুলেও মরে গেলেও ওকে কিচ্ছু বলবি না।
আবার আমার বোন এটাও কিন্তু বলসে, এটা ওদের ফ্যামেলি প্রবলেম, ওর বাসার মানুষ যখন ঘটনা ঘটতে থাকে, তখন প্রশ্রয় দেয়, কিছুই বলে না, কিছুই বোঝায় না, লাগাম ছেড়ে দিয়ে বসে থাকে। তার পর যখন একটা দুর্ঘটনা ঘটে যায়, তখন অন্যদের দোষারোপ করতে থাকে। তার পরও আমি তোর খোঁজ রাখতেসি যেন তুই অন্তত এইসব থেকে বেঁচে যাস। কারণ তুই কিন্তু নিজেকে অনেক অহেতুক সমস্যার মধ্যে প্যাঁচায়ে ফেলতেসিস। আর তোর এই পাঁচ বছর, তার পর আবার কারও কারও কাছে শুনি ছয় মাস, এই সংক্রান্ত ব্যাপারটা এই দিয়ে দুইবার শুনলাম, আগে তো কখনও শুনি নাই। আগে বলিস নাই কেন? সত্যিই কি তোর বাসার মানুষ তোকে ডিভোর্স দিয়ে নিয়ে আসার সময় এসব বলে নিয়ে আসছিল নাকি? কই, আমি তো তাদের কাছে এমন কিছু শুনি নাই। আমার সাথে যখন ওদের কথা হয়, তখন তো বলে না এসব।
- হ্যাঁ, বলসিল। ওরা বলসিল, পাঁচ বছর আমাকে সময় দিবে, আমাকে চালাবে। তার পর আমার নিজেরটা নিজের দেখে নিতে হবে।
- ওহ্‌ আচ্ছা। যদি এটা তখন বলেও থাকে, ওটা কথার কথা বলসে। আর এখন তুই ভুল কাজ করতেসিস, তোকে কিছু বুঝালেও তুই বুঝতেসিস না, এজন্য ওটা বলে তোকে চাপে রাখতেসে যাতে তুই চাপে পড়ে হলেও জলদি একটা সিদ্ধান্ত নিস, অথবা যে ভুলটা করতেসিস ওটা থেকে যেন সরে আসিস। ওটা ওরা তোকে ঘর থেকে বের করে দেওয়ার জন্য বলতেসে না। ওটা নিয়ে অন্য কিছু ভাবার দরকার নাই। তুই বরং এখন যে সমস্যা সৃষ্টি করসিস, সেটার সমাধান কর।
- আমি সেটা করার চেষ্টা করতেসি, কিন্তু আমি কিছুতেই সরে আসতে পারতেসি না।
- সরে আসার প্রয়োজন হলে তো সরে আসতে হবে। এত চেষ্টার কী আছে? সিদ্ধান্ত নিবি, তার পর করে ফেলবি। এ-ই তো জানি!
- আমি তো সিদ্ধান্তই নিতে পারতেসি না।
- তোর সিদ্ধান্ত তোকেই নিতে হবে। কেন, শাহরিয়ার কী বলসে তোকে?
- ও আর একটু সময় চায়।
- তোর কী ইচ্ছা? তুই কী চাস?
- যখন তোরা বুঝাইসিস, তখন আমি বুঝতে পারসি। আমি আসলে ওর কাছ থেকে সরে আসার চেষ্টা করসি অনেক, এখনও করতেসি, কিন্তু আমি ওকে ছাড়া বাঁচতে পারব না।
- ও আচ্ছা, ঠিক আছে। তো ও কী চায়?
- ও চায় আমাকে বিয়ে করতে, কিন্তু ও ওর বউকে কিছুতেই সরাতে পারতেসে না। ওর বউ ওকে ছাড়তে চাইতেসে না। এত দিন ওর বউ ওকে ভয় দেখাইসে, ওর গায়ে হাত তুলসে, ওকে ওর বাবা-মায়ের সামনে মারসে, ওর টাকাপয়সা সব আটকে ফেলসে, ব্যাংকে ওর সব টাকা ওর বউয়ের সাথে মিউচুয়াল করে রাখা, আর ও হচ্ছে সেকেন্ড নমিনি, এজন্যই ও চাইলেই ওর বউয়ের পারমিশন ছাড়া ব্যাংক থেকে কোনও টাকা তুলতে পারতেসে না। সেদিন ও রেগে ল্যাপটপ ভেঙে ফেলসিল, এখন আইইএলটিএস-এর জন্য ওর ল্যাপটপটা ঠিক করতে হবে, কিন্তু ওর বউ এইজন্যও ওকে কোনও টাকা দিচ্ছে না। এমনকি ওর বাসা থেকে ওর সামান্য হাত খরচটাও দেওয়া বন্ধ করে দিসে। আর ওর বউ এখন দেখতেসে, এত কিছু করেও ও শাহরিয়ারকে আমার কাছ থেকে ছাড়াতে পারতেসে না, তো এখন এসব কারণে কিছু না পেরে উল্টা ওকে ইমোশনালি ব্ল্যাকমেইল করতেসে। ওর বউ এখন ওকে বলতেসে, আমি এখন এই দুইটা ছেলেমেয়ে নিয়ে কই যাব, আমাকে তুমি ছেড়ো না। ওর তো আবার বড় মন, এজন্য ও ছাড়তে পারতেসে না। ও বলে, এভাবে কেউ বললে কি তাকে ছাড়া যায়? তার পর ওর মেয়েটার বয়স মাত্র চার মাস পড়ল। তার পরও ও আমার কাছে কিছু দিন সময় চাইসে। কিন্তু আমি তো আমার বাসা থেকে কোনও সাপোর্ট পাচ্ছি না।
- ওহ্‌ তুই কী বলতে চাস? তুই যা খুশি করবি, পুরা দুনিয়া উল্টাপাল্টা করে নিজেরটা শুধু বুঝবি, আর তোর বাসার মানুষ তোকে এসবে আবার সাপোর্টও করবে! তোর মাথা ঠিক আছে? আর তুই যেটা করতেসিস, এটা কি আদৌ তোর ভালোর জন্য করতেসিস? এতে আসলেই তোর কোনও ভালো হবে কি না ভেবে করতেসিস? সাপোর্ট করার মতো কোনও কাজ কি তুই করতেসিস? আজকে কেন তোর বাসার মানুষ তোকে সাপোর্ট করতেসে না? তুই তাদেরটা চিন্তা করবি না, অথচ তারা তোরটা মেনে নেবে, এটা হয়? আর মেনে নেওয়ার মত কিছু কি করসিস তুই? তুই কোন মুখে তাদের দোষ ধরিস? তারা তো তাদের জায়গায় ঠিক আছে। তুই কী করসিস তাদের জন্য? তুই কি বুঝিস না যে তুই আসলেই তাদের সবাইকে একটা হুমকির মুখে রাখসিস? রিমনকে তুই জানিস না ও কেমন? ও তোর এসব জানার পর তোর বাসার মানুষের উপর কীভাবে ঝাঁপায়ে পড়বে, জানিস না এসব? আর তখন এসব কে সামলাবে? তোর একটা মাত্র ভাই, তাও অন্য দেশে, তো? কী করবি তখন তুই? ও কিন্তু এত বছর ধরে এই দিনটার জন্যই বসে আছে। আজকে তুই বিয়ে করবি, ঠিক আছে কর, অন্য জায়গায় কর, অন্য কোনও অন্য ছেলেকে কর, কিন্তু এই ছেলেকেই কেন? যখনই রিমন দেখবে, তুই শাহরিয়ারকে বিয়ে করসিস, তখনই ও সবার কাছে বলে বেড়াবে, এই দেখো সবাই, বলসিলাম না, নীলু অন্য জায়গায় রিলেশনে আছে? একসাথে থাকসি একখাটে ঘুমাইসি, আর আমি কি পারি না বুঝতে আমার বউয়ের মন আমার উপর নাই, অন্য কোথাও পড়ে আছে?
তোমরা তো আমার কোনও কথাই বিশ্বাস কর নাই, আমি নাকি সাইকো, আমার নাকি মানসিক সমস্যা আছে, আমি কী কী সব খাই, উল্টাপাল্টা খেয়ে এসে মাতলামি করি, নিজের বউকে অযথা পিটাই, শারীরিক নির্যাতন করি, তা হলে এইবার কী বলবা?...এসব বুঝিস না তুই? ও কি শাহরিয়ারকে ভুলে গেছে ভাবসিস? ওর স্কুললাইফের সব কথা ও ভুলে গেছে? এত সোজা? স্কুললাইফের ঘটনা, স্কুললাইফের প্রতিটা স্মৃতি মানুষের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মনে থাকেই থাকে, তা সে ভালো অথবা মন্দ যেমনই হোক না কেন? আর তোদের এসব হৃদয়ঘটিত ব্যাপার তো আরও বেশি মনে থাকবে, কারণ তোরা কেউ বর্তমানে মানসিকভাবে শান্তিতে নাই। আর যখনই রিমন আর ওর বাসার মানুষ এসব দেখবে, তখন তোর পরিবারের উপর হাসবে আর মজা নিবে। শেষগুটিটা তো ওরা চালার জন্যই বসে আছে, তাই না? আর তুই সুযোগটা করে দিচ্ছিস। তুই শাহরিয়ারকে বিয়ে করে এই শহরে থাকলে রিমন শাহরিয়ারকে আস্ত রাখবে ভাবসিস? ও তো যখন তখন একটা ক্ষতি করে দিবে, বাইরে কার কখন কী জন্য কী হলো, কে অত খেয়াল রাখে, বল তো? তুই তখন কার দোষ দিবি? কাকে ঠেকাবি? কোথায় এর জন্য বিচার নিয়ে যাবি? তোর বাসায়? তোর বাসার মানুষ তো আগেই তোকে বিদায় দিয়ে দিসে। আর? রিমনের বাবা-মায়ের কাছে নালিশ নিয়ে যাবি? ওরা তো তোকে ঘরেই উঠতে দেবে না, সেখানে নালিশ করা তো দূরের কথা! আর এই দুই বাসা ছাড়া অন্য সবাই কী করবে, জানিস? মজা করে বসে বসে নাটক দেখবে, আর গালগপ্পো জুড়বে। তা হলে আখেরে ক্ষতিটা কার হবে, বল তো?
- আচ্ছা, আমি বুঝলাম, আমি ভুল, কিন্তু আর কেউ পাশে না থাকলেও অন্তত আমার মা তো আমার পাশে থাকবে, তাই না? কারও মা কি সন্তানকে ছেড়ে দেয়? মা আজকে কত দিন আমার সাথে কথা বলে না। মা নাকি সবাইকে বলে, আমি এখানে বিয়ে করলে মা আমাকে ত্যাজ্য করে দিবে! বাসার কেউ কথা বলে না আমার সাথে। আমিই নাকি খারাপ। আমি যে পারতেসি না ওকে ছাড়তে, সেটা কেউ বুঝতেসে না। আমার জায়গা থেকে কেউ দেখতেসে না বিষয়টা।
- ও আচ্ছা, তুই একজনের সংসার ভাঙবি, তিনটা বাচ্চার জীবন নষ্ট করবি, তোর বয়সী আর একটা মেয়ের জীবন নষ্ট করবি, তোর বাবা-মা, তোর ফ্যামিলি সবার মুখে থুথু ছিটায়ে নিজে ভালো থাকতে চাস, তার জন্য আবার তোর আশীর্বাদও প্রয়োজন! মাথা ঠিক আছে তোর? আবার তুই এজন্য ঘুমের ওষুধ খেয়ে পড়ে পড়ে ঘুমাস বাসার সবাইকে জব্দ করার জন্য! তুই কী মনে করিস? আজকে তোর মেয়ে এমন করলে তুই কী করতি? সাপোর্ট করতি? আশীর্বাদ করতি? তুই বলতি তোর মেয়েরে, না মা, তুমি যা করতেসো করো, আর কেউ না থাকুক, আমি তোমার সাথে আছি? তোর মেয়ের বিয়ে দিতে হবে না তোকে? মেয়েকে ভদ্রঘরে বিয়ে দিবি, তুই-ই বল, কোন ছেলে চাইবে এমন মেয়ে ঘরে তুলতে যার নিজের মা-ই ঠিক নাই? যার মা চৌদ্দটা বিয়ে করে নিজেই দেউলিয়া হয়ে গেছে, তার মেয়েকে কে নিবে? আর তোর এসব কাজের জন্য তো তোর মেয়েকেও শ্বশুরবাড়ি গিয়ে উঠতে বসতে হাজারটা কথা শুনতে হবে। আর তোর মেয়ে কেন তোর কথা মানতে যাবে তখন? তোর মেয়ে তো দাদাবাড়ি চলে যাবে, তোর খোঁজও করবে না। তুই একবার এটা চিন্তা করে দেখসিস যে, শুধু একজন মানুষকে পাবার জন্য তুই কয়েকটা পরিবার এলোমেলো করতেসিস? তুই বুঝতে পারতেসিস কিছু? আর শাহরিয়ার এত বছর সংসার করল, এত বছর ওর বউ নিয়ে কোনও সমস্যা হলো না, দিব্যি সংসার করল, দুই বাচ্চার বাপ হলো, এখন তুই আসার পর হঠাৎ করে ওর পুরান প্রেম জেগে উঠল, ওর মনে হলো যে আসলে ও এত দিন সুখে ছিল না। ওর বউয়ের সাথে শুতে গেলে নাকি সেই ফিলিংসটা আসে নাই কখনও! অথচ দুই বাচ্চার বাপও হয়ে গেছে! তুই-ই ওর সব। বাল্যপ্রেম ভোলা যায় না...ব্লা ব্লা। তোর কাছে আসলেই ওর সব ফিলিংস হু হু করে উপচে পড়তেসে, আর ও এত কাল পর সেটা বুঝতে পারল যে ফিলিংস ছাড়া সংসার করা যায় না! ওর যদি ওর বউকে নিয়ে সমস্যা থাকেই, তা হলে এত দিন কেন বউকে ছাড়ল না? এত বছর সহ্য করে ওকে নিয়ে পড়ে ছিল কেন? না কি ও একটা চাকরি ছাড়ার আগে আর একটা ধরতে হবে, সংসারটাও এই নিয়মে চালায়…কোনটা? আচ্ছা, ওর ছোট সন্তানের বয়স কত যেন?
- চার মাস হইসে।
- আচ্ছা, তোদের রিলেশনশিপ কত দিন চলে?
- প্রায় তিন বছর।
- হুম। তো, ও তোর সাথে রিলেশন চলাকালীন দ্বিতীয় বাচ্চা নিসে? ও যদি তোর ব্যাপারে সিরিয়াসই হয়, তা হলে দ্বিতীয় বাচ্চাটা কি বায়ুপরাগায়নের মাধ্যমে হইসে? ও যদি তোর ব্যাপারে সিরিয়াসই হয়, তোকে যদি ও বিয়েই করার সিদ্ধান্ত নেয়, তা হলে দ্বিতীয় বাচ্চা নিয়ে নিজেকে আটকানোর চেষ্টা করল কেন? নিশ্চিতভাবেই ওর ভয় ছিল যে সংসারটা ভেঙে যেতে পারে। এটা কনফার্ম, ও তখনই বুঝতে পারতেসিল যে ওর বউ যখন জানতে পারবে, তার জামাই তার বাল্যকালের প্রেমিকার খোঁজ পাইসে, জীবনে তাকে আবার ফিরে পাইসে, তার সাথে সম্পর্কে জড়াইসে, তখন তার বউয়ের তাদের সন্তানকে নিয়ে কোথাও চলে যেতে কোনও সমস্যাই হবে না, বিশেষ করে যেখানে ছেলে সন্তান…তাই না? ওর বড় সন্তান তো ছেলে, না? আর আমি এর আগে তোর কাছে যতদূর জানসি, ওর বউয়ের বাবার বাড়ির আর্থিক অবস্থা ভালো। মেয়েকে সন্তানসহ চালাতে তার শ্বশুরের কোনও সমস্যাই হবে না, আর এজন্যই হয়তো শাহরিয়ারেরও ওকে হারানোর ভয় ছিল বলেই ও আগেভাগেই ওকে আটকায়ে ফেলার কাজ করসে। আবার ও একদিকে তোকেও চায়, তোকেও ছাড়ে না, তোর কাছে সময় চায়, আবার ওইদিকে মানবিকতার দোহাই দেয়, বিষয়টা কেমন যেন হাস্যকর হয়ে গেল না? না কি তুই মনে করতেসিস, আমি চোখ বন্ধ করে রাখব, যা হয় হোক, কিচ্ছু বিশ্বাস করব না? আর এতই যদি তোর প্রতি প্রেম, তা হলে ও ওর রিয়েল ফেসবুক আইডি থেকে তোকে ব্লক করে রাখসে কেন? এমনকি ওর বউয়ের আইডি থেকেও তোকে ব্লক করে রাখসে…গাধী, বুঝিস না কিছু তুই? ওর বউয়ের তো তোর দিকে উল্টা নজর রাখার কথা, ব্লক করে তো রাখার কথাই তো না, বরং পারলে ওর বউ তোকে ওর ফ্রেন্ডলিস্টে নিয়ে নিবে, কারণ ওর বউ তো এখন তোর ব্যাপারে পুরাপুরি জানে। তা হলে এখন তোকে ওর আইডিতে অ্যাড করতে সমস্যা কী? ও আচ্ছা, তখন তো ও ওর বউয়ের সাথে সদ্যতোলা ছবি, বউয়ের প্রতি ভালোবাসার বিশুদ্ধ অনুভূতিগুলা আর ফ্রেন্ডদের সাথে শেয়ার করতে পারবে না তুই দেখে ফেলবি বলে, তাই না? ওগুলা তুই জেনে ফেললে, ওগুলা তুই বুঝে ফেললে তো তোকে আর হাতে রাখা যাবে না, আবেগী কথা দিয়ে ভুলায়েভালায়ে রাখা যাবে না, তাই তো? ওদিকে বউকেও খুশি রাখতে হবে, তাই ফেসবুকে বউ-বাচ্চার সাথে তোলা ছবি পোস্ট করতে হবে। এই ভালোবাসা দিবসেও ওর বউ-বাচ্চা নিয়ে বাইরে গেল, সেটাও তো ও আমার সামনাসামনি না পড়লে, আমি না জানলে তুই জানতিই না, তোকে তো আগে কিছু বলেই নাই, আমি জানানোর পরেই না তুই ওকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলি, তা হলে ওটা কী ছিল? আমি ঘর ঠিক রাখব, আবার বাইরেরটাও ঠিক থাকবে, তাই না? ও কি তোকে গাঁজাটাজা খাওয়াইসে, না কি ডাইল খাওয়াইসে? আর শোন তুই, এরকম আজাইরা প্যান্দানো বন্ধ কর, আমার কিন্তু মেজাজ গরম হইতেসে খুব, যখন তখন কষে একটা চড় লাগায়ে দিব।
- না, ও আসলে আমাকে খুব ভালোবাসে, কিন্তু ও কিছু করতে পারতেসে না। আর বাচ্চাটাও ইচ্ছা করে নেয় নাই, ভুলে হয়ে গেছে। ও আমাকে জিজ্ঞেস করসে কীভাবে কী করা যায়। এখন আমিও তো বুঝতে পারতেসি না কী করব, ওকে কী করতে বলব। ওর কাছে তো টাকাও নাই। ওর বউ ওর টাকাপয়সা সব নিজের নামে ব্যাংকে ডিপোজিট করে রাখসে। বললাম না তোকে যে ওর বউ অনেক ডেঞ্জারাস? ওর বউ এসব জানার পর ওর গায়ে পর্যন্ত হাত তুলসে, ওকে মারসে পর্যন্ত, এমনকি ওর বাবা-মায়ের সামনে ওকে চড় মারসে। আর ও তো এখনও চাকরিতে জয়েনই করে নাই। মনে হয়, আরও ৩/৪ মাস সময় লাগবে জয়েন করতে। তো তার আগে ওর বউ যদি তার বাবার বাড়ি গিয়ে কোনও কেস করে দেয় ওর নামে, তা হলে ও কেস চালাবে কীভাবে, ওর তো কোনও টাকা নাই। তা ছাড়া ওর তো সরকারি চাকরি হইসে, ওর বউ যদি কেস করে দেয়, তা হলে সেটাও চলে যেতে পারে। আর ওর বাবা-মা ওকে বলে দিসে, তারা ওকে এই ব্যাপারে কোনও সাহায্য করবে না, এমনকি ঘর থেকে বের করে দিবে। কারণ ওর বউ যদি কেস করে তা হলে তো ওর বাবা-মায়ের নাম দিয়েও কেস করবে, আর ওর বাবাও তো সরকারি চাকরি করে।
যদি ওরা নারী নির্যাতনের কেস করে দেয়, তা হলে তো ওর বাবার চাকরিও চলে যাবে। আর ওর বাবার চাকরিতেই ওদের সংসার চলে। ওর দাদাবাড়ির কারও সাথে ওদের কোনও সম্পর্ক নাই। এজন্যই ও এত বড় রিস্ক নিবে না। আর এই অবস্থায় আবার ওকে যদি ঘর থেকে বের করে দেয়, তা হলে ও যাবেটা কই? ওর কাছে তো টাকাও নাই, এজন্য ও কিছু করতেও পারতেসে না। এজন্যই ও আমার কাছে সময় চাইতেসে। ও আমাকে বলসে, আমি যদি ওর সাথে নাও থাকি, তবুও ও এই বউ রাখবে না। কারণ ওর বউ ওর গায়ে হাত তুলসে। এর আগেও এমন করসে, ওকে অপমান করসে। আর আমার কথা হলো, ও যেহেতু এই বউ সে রাখবেই না, তা হলে তার আমার থাকতে সমস্যা কী? আমি তো ওকে ভালোবাসি, ও আমাকে ভালো রাখবে। আর ওর বউ ওকে বলসে, তো তুমি নীলুকে যেহেতু ভালোবাসছ, ওকে ছাড়া থাকতে পারবা না, তা হলে তুমি ওকে বিয়ে করো, বিয়ে করে আলাদা রাখো, কিন্তু আমাকে ছেড়ে দিয়ো না, আমার ছেলে-মেয়ে দুইটা এতিম হয়ে যাবে। তুমি ওকে নিয়ে আলাদা থাকো, আর আমি তোমার বাবা-মায়ের সাথেই থাকি। আর ওর বাবা-মা ওর বউকে নিয়েই থাকতে চায়, তাদের ছেলে গেলে যাক, তাতে তাদের কোনও অসুবিধা নাই। আমি কিন্তু ওকে বিয়ে করলে ওর বউকে ডিভোর্স দিলে তার পরই করব। তা না হলে দুই দিন পর পর ওর ছেলে-মেয়ের উছিলায় ওরা ওকে বারবার ডাকবে, আর আমার কাছ থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই থাকবে। আমি তো ওটা হতে দিব না। ও ডিভোর্সের পর ওর সন্তানের ভরণপোষণ দিলে দিক, তাতে আমার অসুবিধা নাই, কিন্তু ওর বউয়ের সাথে সম্পর্ক থাকলেই আমার সমস্যা। তা হলে তো ও ওর সন্তানের উছিলায় ওরা ওকে টানতেই থাকবে, এদিকে আমার সব সহ্য করতে হবে, আমার সংসারে সারাজীবন অশান্তি লেগেই থাকবে। দেখা যাবে, আরও অনেক সমস্যা আসবে।
- হুম। আচ্ছা, তোর কি মনে হচ্ছে না যে তোর মাথাটা পুরাপুরি নষ্ট হয়ে গেছে? তুই যা যা বললি এতক্ষণ, এসব কোনও মানসিকভাবে সুস্থ মানুষের কথা হতেই পারে না। এত বছরের সংসার করে আসলি, এর পরও কোনটা প্রেম আর কোনটা সংসার, এই দুইটার পার্থক্য বুঝতে পারলি না। প্রেম যার তার সাথে করা যায়, সংসার কিন্তু যার তার সাথে করা যায় না। আর তুই সারাজীবন একটার পর একটা এইসব করতেই থাকবি, আর তোর বাসার মানুষ তোকে মাথায় তুলে রাখবে, তোর বদমায়েশি সহ্য করে বেড়াবে, তোকে সারাজীবন টেনে বেড়াবে, তোর জন্য সবার সামনে মাথানত করে চলবে, মানুষের কথা শুনবে, তাই না? আর তোর কথাগুলা শুনে আমি খুবই অভিভূত হয়ে গেলাম। ওর বউ ডেঞ্জারাস, না কি তুই বলদ? কোনও পুরুষমানুষ, তাও আবার শিক্ষিত পুরুষমানুষ নিজে টাকা কামাই করে বউয়ের নামে সব টাকা রাখে, এটা তোকে কোন গাধায় বলসে? ও তোকে যা যা বোঝাবে, তুই অন্ধের মতো তা তা-ই বুঝবি, তাই না? শোন, আমি বলতেসি, শাহরিয়ারের হয় নিজের টাকাপয়সা কিছুই নাই, নয়তো ও তোকে একটা অজুহাতে এটা বোঝাতে চাইতেসে যে ও অনেক চেষ্টা করতেসে, কিন্তু ও পারতেসে না। আর নয়তো ও এত দিন ধরে ওর বাবা আর ওর শ্বশুরের দেওয়া টাকায় চলসে, কিন্তু এটা তোকে বলতে পারতেসে না।
আর আমার যতদূর মনে পড়ে, ওর যখন বাচ্চা হবে তুই আমাকে বললি, তখন কিন্তু তুই বলসিলি যে ওর কোমরের হাড় ক্ষয় হয়ে গেছে, তো ডাক্তার ওকে বাচ্চা নিলে জলদি নিয়ে নিতে বলসে, এজন্যই নিসে। আর তখন কিন্তু তোরা ‘জাস্ট ফ্রেন্ড’ ছিলি। আমি কিন্তু তখনই তোকে বলসি, ওর সাথে কথা বলতেসিস ঠিক আছে, কিন্তু এত বেশি জড়ায়ে পড়িস না। তুই আমাকে বলদ বানাচ্ছিস, না কি নিজে বলদ হচ্ছিস…এটা একবার চিন্তা করে দেখ। আর তুই যদি মনে করিস, তুই আমাদের কাছ থেকে এসব লুকায়ে রেখে ভালো থাকবি, তা হলে বলে দিই, তুই কিন্তু সব কূলই হারাবি। বেশি চালাকি করলে ক্ষতি কিন্তু তোরই হবে। তুই কাদের কাছে লুকাচ্ছিস? আমরা কারা? তোর ঘরের মানুষ সব। আর ও কীভাবে ওর পারিবারিক সমস্যার সমাধান করবে, সেটা ও তোর কাছে জানতে চাইবে কেন? তোর কাছে পরামর্শ চাওয়ার কী আছে? ওর সমস্যা ও নিজেই সমাধান করবে। আচ্ছা ঠিক আছে, ও তোকে ভালোবাসে বুঝলাম, কিন্তু ও কীভাবে কী করবে, কীভাবে বাসার সমস্যার সমাধান করে তোকে বিয়ে করবে, সেই চিন্তা তুই কেন করবি? ও যখন ভালোই বাসে, তা হলে যা করার ও নিজেই করুক, ওর সমস্যা তো আর তুই সমাধান করতে পারবি না, তাই না? আর ওর বউয়ের তো ওকে ইমোশনালি ব্ল্যাকমেইল করার কিছু নাই, এটা তার অধিকার। আর ওই মেয়ে তো ঠিকই বলসে, সে তার নিজের জীবনের আগে তার সন্তান দুইটার কথা ভাবতেসে, সেটাই তো স্বাভাবিক, কেননা আসলেই তো সন্তান দুইটা এতিম হয়ে যাবে। ওই মেয়ে এখন ওর সংসার বাঁচানোর জন্য যা না, তা-ই করবে, এটা খুবই স্বাভাবিক। সে কি এখন স্বেচ্ছায় তার জায়গা তোকে ছেড়ে দিবে না কি যে, নাও, এত দিন আমি সামলাইসি, এখন তুমি হাল ধরো? বরং ওই মেয়ের ওদের রিলেশনটা এখন আগায়ে নিয়ে যাওয়া কষ্ট হলেও শুধুমাত্র ওই সন্তান দুইটার দিকে তাকায়ে ও এমন একটা স্টুপিড ছেলের সাথে সংসার চালায়ে যাচ্ছে। দুই বাচ্চা হয়ে যাওয়ার পরও যে ছেলে অন্য জায়গায় বিয়ে করার চিন্তা করে, সেই ছেলেকে নিয়ে সংসার চালায়ে যাওয়া কত কষ্টের, তুই বুঝিস? সে অলরেডি জানে যে তার স্বামী অন্য আর একজনের সাথে জড়াইসে, অথচ সন্তানের দিকে তাকায়ে এটা তাকে মেনে নিতে হচ্ছে, সব কিছু জানা সত্ত্বেও চুপচাপ সহ্য করে যাচ্ছে। তুই ওই মেয়ের জায়গায় থাকলে তুই কি নিজে পারতি অমন একটা ছেলের সাথে সংসার চালায়ে যেতে? তুই একবার সংসার করে আসছিস, তুই বুঝিস না যে মানুষ কতটা অসহায় হলে সন্তান থাকা সত্ত্বেও ডিভোর্স দেয়? তোকে কি পেছনের কথা আবারও মনে করায়ে দিতে হবে?
- না, ওই মেয়েকে ও বিয়ে করতে চাইসিল না। ওই মেয়েই জোর করে ওর ভার্সিটিতে গিয়ে ওকে বিয়ে করসে। ওই মেয়ে ইডেনে পড়ত, ঢাকার মেয়ে, খুব ডেঞ্জারাস। ও বিয়ে করতে চায়ই নাই। দুই বছর ওই মেয়ে ওর পিছে পিছে বিয়ের জন্য ঘুরঘুর করে তার পর ওর ভার্সিটিতে গিয়ে ওকে বিয়ে করসে। ওর বাসার কেউ তখন রাজি ছিল না।
- ওহ্‌, তা হলে তুই এখন ওর অতীত ইতিহাস টেনে বের করার দায়িত্ব নিয়ে নিসিস! আর হ্যাঁ, প্রেম করলে প্রেমের ব্যাপারটা বাসার মানুষের পছন্দসই না হলে প্রথম প্রথম মেনে নিতে চায় না, এটা তো স্বাভাবিক। এখন তো শাহরিয়ারের চেয়ে ওই মেয়েকে ওর বাসার মানুষ বেশি প্রাধান্য দেয়, তা না হলে নিশ্চয়ই ওর বাবা-মা নিজের ছেলেকে ফেলে ছেলের বউ নিয়ে থাকতে চাইত না! আর নিশ্চয়ই ওই ছেলে ওকে ঘুরাচ্ছিল, এজন্যই ও জোর করসে বিয়ে করার জন্য। দশ বছর আগে কী হইসে, সেই ইতিহাস তো তোর এখন জানার বিষয় না। কত বছরের রিলেশনের পর ওরা বিয়ে করসে?
- পাঁচ বছরের।
- হুম। পাঁচ বছর একটা রিলেশনে তারা ছিল, তাদের মধ্যে এর ভেতর অনেক কিছুই হইসে, আর তা ছাড়া বাসা থেকে বিয়ের বিষয়ে জোরাজুরি সব মেয়ের বাসাতেই কমবেশি থাকে, এজন্যই হয়তো ওই মেয়ে ওকে বিয়ের জন্য তাড়া দিসে। নইলে হয়তো ওই মেয়ের বাসা থেকে ওকে অন্য বাসায় বিয়ে দিয়ে দিত, এজন্যই তাড়াটা দিসে।
- না, ওই মেয়ে আসলেই খুব খারাপ মেয়ে। আর ওই মেয়ের চেহারাও বাজে। ওর অন্য কোনও ভালো জায়গায় বিয়ে হতো না। ও খুব ভালো করেই জানে, শাহরিয়ারের চেয়ে ভালো ছেলে ও কোনও দিনই পাবে না, এজন্যই ওর পিছে ঘুরঘুর করে ওকে জোর করে বিয়ে করসে।
- ও আচ্ছা, চেহারা খারাপ, এজন্য মেয়েও খারাপ! আর তুই যদি সিদ্ধান্ত নিয়েই নিসিস যে তুই কারও কথাই গ্রাহ্য করবি না, তুই যা বুঝিস বা তুই যা বুঝতে চাস, সেটাই শুধু বুঝবি, তা হলে আর আমি এত বকবক করতেসি কেন? তুই মর গা না! আর শাহরিয়ার কী এমন রাজপুত্র ছেলে যে সারা বাংলাদেশে অমন ছেলে আর পাওয়া যাবে না বলেই ওই মেয়ে ওকে জোর করে বিয়ে করার জন্য পাগল হয়ে যাবে? তোকে নিশ্চয়ই এসব শাহরিয়ার বুঝাইসে? তুই এসব করার আগে একবারও কি ভেবে দেখসিস যে তুই আসলে কোন অবস্থানে আছিস?
- আমি তা হলে কী করব? বাসার কেউ কি আমার সাথে ভালো ব্যবহার করে যে আমি ওদের কথা শুনব? ওরা সারাদিন আমার সাথে ক্যাটক্যাট করে। কথায় কথায় খালি খাওয়ার খোঁটা দেয় যে আমি আর আমার মেয়ে তাদের ঘাড়ে বসে বসে খাচ্ছি। আমি কিছু করি না। সব আমারই দোষ। আমার হাতে মোবাইল দেখলেই বলে, আমি সারাদিন নাকি মোবাইল নিয়ে পড়ে থাকি। আমি যে কী পরিমাণ দুশ্চিন্তায় আছি আজকে কয়টা বছর, বিশেষ করে ডিভোর্সের পর থেকে, সেটা তো কেউ একবারও চিন্তা করে না। মেয়েটা বড় হয়ে যাচ্ছে, ওর কী হবে, ওর বাবা আজ হোক কাল হোক, আবার তো বিয়ে করবে। এখন না হয় আমি বিয়ে করতেসি না বলে ওর বাবাও বসে আছে, হয়তো ওরা ভাবতেসে যে আমি আবার ওর দাদাবাড়ি যাব, ওর বাবার সাথে আবার সংসার করব, কিন্তু আমার তো ওইখানে আর যাওয়া সম্ভব না। এখন না হয় মেয়ের দাদাবাড়ির থেকে মেয়ের সব খরচ চালাচ্ছে, কিন্তু ওর বাবা যদি আর একটা বিয়ে করে, তখন কি ওকে এত দেখবে? তখন তো আস্তে আস্তে মেয়ের সব খরচ দেওয়া বন্ধ করে দিবে, তখন আমি ওকে কীভাবে চালাব? আমি কী করব, কীভাবে সামনে চলব, সে জন্য যে আমি দুশ্চিন্তায় থাকি, সেটা কেউ একবারও ভাবে না। সবাই খালি আমার দোষ দেয়। একমাত্র শাহরিয়ার আমাকে বুঝে। আমার কষ্টগুলা ও বুঝে বলেই ও কখনও আমাকে দুশ্চিন্তায় রাখে না। আর ওর কাছে আমি মানসিকভাবে শান্তি পাই বলেই তো যাই, তাই না? আমি যদি বুঝতাম ও আমার ক্ষতি চায়, তা হলে কিন্তু আমি তখনই ওর কাছে থেকে সরে আসতাম। আমি তো আর বেকুব না, তাই না? তোরা যা বলতেসিস, তোরা ওকে যা মনে করিস, ও কিন্তু একদমই সেরকম না, আমি ওকে এত দিন ধরে চিনি, ভুল তো আর চিনি না! আর আমার দিকটাও তো কেউ বুঝবে, তাই না? কে বুঝে এটা? শাহরিয়ার আমার দিকটা বুঝে আর আমাকে ও সত্যিই ভালোবাসে, এজন্যই আমি ওর কাছে যাই। তা না হলে আমি কী করব, বল? তা ছাড়া আমি তো ছাড়তে পারতেসিনা ওকে, তা হলে আমি কী করব? নিজের মনের উপর দুনিয়ার কেউ জোর খাটাতে পারে, বান্ধবী, তুই-ই বল!