অশ্রু আর কাজল

মন খারাপ, সে কল্যাণে শরীরটাও।




গতকালের নতুন কিনে-আনা গাউনদুটো আলমারি থেকে নামিয়ে আনলাম। তুলে রাখতে পারব না। আবার কবে এত তীব্র মন খারাপ হবে কে জানে?




বয়স বাড়তে থাকলে আসলে মনখারাপ বলে তো কিছু থাকেই না। মনটা তখন আর আলাদা করে ভালো-মন্দের ফারাক করতে পারে না। যা ঘটে, তা-ই ভালো, কিংবা যা ভালো, তা-ই ঘটছে বলে ধরে নেয়।




আমি খুব স্পষ্ট করেই টের পাচ্ছি, বড়ো হতে হতে আমার মনখারাপ হবার দিনতারিখও কমে আসছে। মনকে পাত্তা দেবার, আলাদা করে যত্ন দেবার সময়ই পাই না। তাই আজ আমি আমার মনখারাপ হওয়া সেলিব্রেট করব। আজই মখমলের গাউনটা পরে, ঠোঁট রাঙিয়ে, চুলগুলোকে সামনে হালকা টুইস্ট করে নিয়ে আমি বেরিয়ে পড়ব। রিকশায় করে সারাশহর চষে বেড়াব, আমার কোলে থাকবে নতুন-কেনা হলুদ মলাটের গীতবিতান আর হাতে থাকবে রজনীগন্ধা। আজ আমি ঘ্রাণ নিতে নিতে মাতাল হব, গীতবিতান ছুঁয়ে ছুঁয়ে পাগল হব।




সারাশহরই আজ আমার। আজ আমি এই শহরের রাজা। কাউকে কর দেবো না, খাজনাও না। কাউকে সাথে নেব না রিকশায়, কাউকে ফোন করব না, কারুর ফোন আমি ধরব না। গাউন পরলে হাঁটতে একটু অসুবিধে হয় ঠিকই, কিন্তু রাজার আবার কীসের ভয়?




আমি বেরুচ্ছি... হে শহর, তুমি প্রস্তুত হও! আমার মনখারাপের গল্পে আজ তোমার রাস্তাগুলো রাঙিয়ে দেবো। হাতে নয়, কাজল দিয়ে লিখব। অশ্রু আর কাজল, এই দুয়ে মিলে কেমন চমৎকার দোয়াত-কলম হয়, দেখবে এসো।