অণুতে ব্যাপ্তি/দুই

১. মানুষ বাঁচে অল্প, এবং আয়ুষ্কালে তাকে অসংখ্য বাধার মুখে পড়তে হয়। সেগুলি কাটিয়ে উঠতেও বেশ সময় লাগে। এই অল্প সময়ে আজেবাজে জিনিস পড়ে কী লাভ?




২. অর্থে হয় না, এমন কিছু নেই। অর্থশালী মানুষ সুপুরুষ, সুপণ্ডিত, এবং সু- আছে যত কিছুতে, তার সব‌ই। দেখবেন, ধনীদের বন্ধু ও আত্মীয়ের কোনো অভাব নেই। অথচ গরিবেরা আত্মীয়ের কাছেও খারাপ আচরণ পায়। ধনের প্রভাবে ছাগল‌ও সিংহের মতন গর্জন করে, অপদার্থও সব জায়গায় আদর পায়, পঙ্গুও দৌড় প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়। যার অর্থ আছে, সে বার্ধক্যেও তরুণ; যার অর্থ নেই, সে যৌবনেও বৃদ্ধ। অর্থ নিজগুণে লড়াই ছাড়াই জয়ী।




৩. ভাগ্য যার অনুকূলে, সে আত্মরক্ষার চেষ্টা না করলেও নিরাপদ থাকে; আর ভাগ্য প্রতিকূলে থাকলে নিরাপদ থাকার শত চেষ্টা করলেও মানুষ বিপদে পড়ে। কপালে মৃত্যু থাকলে মানুষ ঘরের মধ্যে থাকলেও মরে, আর কপালে আয়ু থাকলে মানুষ বাঘের মুখে পড়লেও মরে না।




৪. বিশাল অথচ অকেজো মহীরুহ হয়ে না জন্মে বরং নদীর তীরে ঘাস হয়ে জন্মালেও ভালো; ওতে অন্তত ডুবন্ত মানুষের শেষ ভরসাস্থল হ‌বার সৌভাগ্যটুকু হয়।




৫. যে কথার দাম যেখানে নেই, সেখানে সেই কথা বলা অনুচিত—কথাটা মহামূল্যবান হলেও তা না বলে তা-ই বলা উচিত, যার দাম সেখানে আছে—কথাটা যেমন‌ই হোক।




৬. যে ব্যক্তি সন্তান জন্ম দেয়, কিন্তু সন্তানের প্রতি দায়িত্বশীল নয়, তাকেই লম্পট বলে।




৭. রাজার সেবা করার সুযোগ পেলে যে কেউই বিশিষ্ট ব্যক্তিতে রূপান্তরিত হতে পারে; আর তা না পেলে বিশিষ্ট ব্যক্তিও মূল্যহীন হয়ে বাঁচে।




৮. যে সবসময়‌ই কাছে থাকে, সে মূর্খ অপদার্থ হলেও লোকে তাকেই বুকে টেনে নেয়। বিশ্বাস অর্জন করতে বিদ্যাবুদ্ধি লাগে না, আনুগত্য লাগে।




৯. রাজার কাছে পাণ্ডিত্যের নয়, কেবল আনুগত্যেরই কদর।




১০. কদর করার মানুষ না থাকলে সৌন্দর্যের নাম সৌন্দর্য নয়, বৈশিষ্ট্য।




১১. প্রবল বাতাস‌ও ঘাস উপড়ে ফেলতে পারে না, কেবলই গাছ উপড়ে ফেলে। নিরুদ্‌বেগ হয়ে বাঁচতে চাইলে বাহ্যিক অবয়ব ছোটো করে রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ।




১২. গরিবের বিনয় আর ধনীর বিনয়ের কখনোই সমান মূল্যায়ন হয় না।




১৩. যে অর্থ প্রয়োজনের সময় খরচ করা যায় না, সেটি নিতান্তই বোঝা।




১৪. স্বপ্ন বা ইচ্ছা দিয়ে কিছু হয় না, যদি সেখানে চেষ্টা না থাকে। ঘুমন্ত বাঘের মুখে ভুল করে পিঁপড়া ঢুকতে পারে; জেনেবুঝে হরিণ কখনও ওখানে ঢোকে না।




১৫. যা হবার, তা হবে। কথা সত্য। তবে যা হবার নয়, তা হবে না, যদি না তা হ‌ওয়ানোর জন্য চেষ্টা করা হয়।




১৬. সাপের ফণা সাপের বিষের চাইতেও বেশি কাজের।




১৭. ভালোবাসাহীনতায়‌ও বাঁচা যায়, কিন্তু অশান্তিতে বাঁচা খুব কষ্টের।




১৮. বিদেশে যে ব্যক্তি কদর‌ই পাবে না, তার দেশে থেকে যাবার সিদ্ধান্তকে দেশপ্রেম বলে না।




১৯. সকল প্রকারের দানের মধ্যে সাহস-দান‌ই শ্রেষ্ঠ।




২০. কোনো কারণ ছাড়াই যে লোক প্রশংসা করে, কোনো কারণ ছাড়াই সেই লোক নিন্দাও করতে পারে।




২১. দুধ খেলে সাপের বিষ‌ই বাড়ে, তাই দুধপান করিয়ে সাপের মন পাবার চেষ্টা করাটা মূর্খামি ছাড়া আর কিছু নয়।




২২. মেঘের ছায়া দেখে খুশিতে ছাতা ছুড়ে ফেলে দিলে নির্ঘাত জ্বরে ভুগতে হয়।




২৩. যে ব্যক্তি ঘর ফেলে পরের দিকে ছোটে, সে একসময় ঘরও হারায়, পরও হারায়।




২৪. মৌমাছি মধু জমায়, অথচ নিজে ভোগ করতে পারে না। প্রায় মানুষই পয়সা জমায়, কিন্তু নিজে ভোগ করতে পারে না। তাই পয়সা না জমিয়ে বরং দান করা কিংবা ভোগ করা ভালো।




২৫. অর্থ তিন জায়গায় খরচ হয়: দানে, ভোগে, নাশে। তৃতীয়টি হয় ব্যক্তির মৃত্যুর পর।




২৬. শয়তানের কথা মধুর, অকুমারীর লজ্জা প্রচুর।




২৭. সূর্য ওঠার সময়ও লাল, ডোবার সময়ও লাল।




২৮. অধার্মিক মানুষ চিনবেন কীভাবে? যার নিজের আমলনামার ঠিক নাই, অথচ অন্যের আমলনামায় ভুল পায়, সে-ই অধার্মিক।




২৯. যা পাবার নয়, মানুষ তা পেলেও হারিয়ে ফেলে।




৩০. বন্ধুর প্রতি বিশ্বাস পরিবারের প্রতি ভালোবাসার চাইতেও শক্ত।




৩১. যে কাজ করতেই হবে, সেটি অপমান সহ্য করে হলেও করা উচিত। যে কাজ করার দরকার নেই, সম্মান পাবার লোভ সামলে হলেও সেটি করা থেকে নিজেকে বিরত রাখা উচিত।




৩২. যে তোমার কাছে নিজের গোপনীয়তা প্রকাশ করতে চায় না, সে তোমার বন্ধু নয়। যার গোপনীয়তা তুমি রক্ষা করতে পারো না, তুমি তার বন্ধু নও।




৩৩. নলকূপের প্রতাপ ও গৌরব সমুদ্রের চেয়েও অনেক বেশি।




৩৪. মূর্খ ও অপদার্থ লোকজন সবসময়ই দল ভারী করতে চায়। তাই তাদের ব্যাপারে সতর্ক থেকো, যারা তোমাকে দলে ভেড়াতে চায়।




৩৫. যা করলে যা ঘটার কথা, তা না ঘটিয়ে তা করার নামই কৌশল।




৩৬. তুষের মায়া ছাড়তে না পারলে চাল পাওয়া যায় না।




৩৭. একই হাওয়া আগুন ছড়ায়‌ও, আবার নেভায়‌ও।




৩৮. মূর্খরা চোখে দেখে ও কানে শোনে; জ্ঞানীরা দুটোই করেন মস্তিষ্ক দিয়ে।




৩৯. ধর্মের নামে গুন্ডামি গুন্ডাদের যতটা চেনায়, তার চাইতে বেশি চেনায় তাদের ধর্মকে।




৪০. হতদরিদ্রদের স্বর্গের চাইতে অর্থের প্রয়োজন বেশি।