ফাঁদ

 ধূধূ রুক্ষ প্রান্তরমাঝে বালির সাগর হাওয়ায় সাজে,
রাখতে বেঁধে নেয় না সেধে বালির কায়া যাদুর মায়া।
কপট হেসে নরোম বেশে, রাখতে টেনে আদর এনে,
দেখতে এক, দেখায় আরেক--চোরাবালির এইতো নিয়ম!
বালির কণা আলতো ভীষণ, দেখতে যেমন দেখায় তেমন,
ধরা দেয় না, ধরা নেয় না--এমন জেদি, দারুণ রাগী।
 
আকর্ষণে বেজায় টানে, যত্ন দিয়ে মরণ আনে,
ভিন্ন রূপে ডাকে কাছে, বলয় বাড়ায় দৃষ্টি ছাড়ায় গভীর কূপে,
ভালোবেসে নেয় জড়িয়ে বুকের মাঝে, টানতে থাকে প্রবল মায়ায়।
অন্ধচোখে অমন মোহন দারুণ লাগে, যাদুর জালে হৃদয় ভোলে,
হয় যে দেরি যখন বুঝি, মৃত্যু আমায় টানছে কেমন,
যে ভুল আমায় ঠিক ভোলালো, সে ভুলেতে সাঙ্গ জীবন।
 
চোরাবালির গোলকধাঁধায় যে বেঁচে যায়,
সে কখনো দেয় না ধরা কপট মায়ায়।
মৃত্যু এলেই মৃত্যু চেনে, এর আগে নয়--অবোধ এমন!
এর আগেতে, চোরাবালির জন্মচুরি জাগায় নেশা, জীবন টানে।
শুকনো বালির সাথী জোটে না--মুখোশ তো নেই; ওই একাকী হাতটা বাড়ায়,
আসে নাকো কেউ একটু হেসে, বালি পড়ে রয় পথের হেলায়। এমন বিধি!
সরব ছলে কাছে না ডেকে,
নীরব কষ্ট জমায় বুকে--
শান্ত বালির সহজ বাঁচা এমনি করেই।
বালির রাশির কণার গড়ন আলাদা ধাঁচে,
ধরবে বলেই টানে না কাছে, ছেড়ে বাঁচে।
 
মারবে বলে দারুণ টানে কাছে আনে
রূপটা নিজের আড়াল রেখে। চোরাবালির ধরন এমন।
বালির শরীর চিহ্ন রাখে পায়ের ছাপে, যত্নে বুকে।
চিহ্ন সবার যে রেখে দেয়, চিহ্নটি তার কেউ রাখে না,
অবহেলায় দেয় ঝরিয়ে কী সহজেই চিহ্ন বালির--এ কী খেলা নিয়তিদেবীর!
চোরাবালির নির্দয়তার চিহ্ন না রয়, কপট চোখে মরণ সাধে, রূপে বাঁধে।
বালির কদর কেউ বোঝে না, তুচ্ছ বালি ভীষণ রাগে সরায় দূরে,
চোরাবালির চতুর ফাঁদে আটকে মায়ায় জীবন কাঁদে মরণসুরে।
Content Protection by DMCA.com