প্রদোষে বিধেয়/ ২

 পাঁচ।
এই যে শুনুন! কিছুই বোঝার চেষ্টা করবেন না।
আপনাকে কেবল একটি কাজই করতে জানতে হবে---
আলো, আঁধার ও ছায়া, এই তিনটিকে কীকরে আলাদা করতে হয়।
আপনার আশেপাশে যখন এই সমস্ত সত্তা ঘোরাফেরা করে,
তখন যদি আপনাকে জিজ্ঞেস করা হয়, “আপনি কী অনুভব করছেন?”
অনুগ্রহ করে বলবেন না যেন, “আমি জানি না।”
লজ্জা পাবেন না, তবে ভয় পাবেন কি না, সেটা আপনার ব্যাপার।


জানেনই তো, কল্পনার জঘন্যতা কোনও সীমাবদ্ধতা এবং সংযম জানে না।
সম্ভবত সেখানে কোনও বৈপরীত্যের মাঝেই দেয়াল নেই, যেখানে
তেলাপোকাই জীবনের রাজা……কেননা, সে একশো বিশ বছর বেঁচে আছে।
আপনার আমার মতো নয়---সংখ্যায় কয়েক ডজন ওরা!
ওরা পৃথিবীকে বহুদিন ধরেই ভেতর থেকে জানে।
যদিও এ পৃথিবীর যেখানে ওরা আছে, সেখানকার প্রায় সমস্তটাই পচে গেছে,
তবুও ওরা সবচেয়ে খারাপ দুর্গন্ধে থেকেও,
অশ্লীলভাবে হলেও, এখনও বেঁচে আছে।


আপনি যদি ওদের অনুসরণ করতেন, তবে আপনিও সেখানে গিয়ে
লোকের কাছে ধ্বংসস্তূপ বিক্রি করে ভাল লাভে জীবন কাটিয়ে দিতে পারতেন।
আপনি সম্ভবত আমাকে বোঝাতে চাইবেন, এর নাম তো জীবন নয়!
বলি কী, রায় দেবার আগে পায়ের জুতো নয়, মোজাজোড়া
একবার পরিবর্তন করে হেঁটে দেখুন, হাঁটতে কেমন লাগে।
এরপর আবারও ভাবুন। ‘জাহান্নাম’ শব্দটার ভয়াবহতা অনুভব করেছেন কখনও?
সেখানে কোনও ভাষণ চলে না, কেবলই সম্মত পরোয়া চলে।
“আমাকে দিন!” এবং “আমাকে……আমাকে দেবেন না!” এইসব বলে কিছু হয় না সেখানে।


ছয়।
শিশুরাও কীকরে রাষ্ট্রীয় দল, কর্পোরেশন, ইন্সটিটিউট, গ্যাং এবং ডেমোক্রেসিতে,
একই সাথে রাজ্যের কর্পোরেট মডেলগুলিতে এবং প্রশংসাপত্রের বিভাজনে দুর্বৃত্তদের অংশীদারিত্ব গ্রহণ করে,
এবং তাদের মধ্যে কেউকেউ পূর্ণকালীন দামি পদেও স্থান করে নেয়, তা নিয়ে বুঝতে
আমাদের এই মুহূর্তেই একজন অনাচার বিশেষজ্ঞ দরকার।


সাত।
তারা এখনও পর্যন্ত আমাদের কিছু নীলরঙের তারা দেখিয়েই যাচ্ছে।
তারা আমাদের জীবনকে পুরোপুরি বদলে দিয়েছে বলে আমরা খুশি।
তারা আমাদের শিখিয়েছে কীকরে জীবন উপভোগ করতে হয়।
তাদের যা দাবি, সবই ভণ্ডামি ও সংশয়-পূর্ণ, তবু গ্রহণযোগ্য।
অধ্যাদেশ আসে, অধ্যাদেশ যায়। কারও বাঁধন শক্ত হয়, কারও শেকল আলগা হয়।


এসবের বিরুদ্ধে কথা বলার উপায় নেই এইজন্যই যে,
আমরা নিজেরাই এটি চেয়েছিলাম এবং আমরা যা চাই, আমাদের তা আছে!
সংসদে গণতন্ত্রের চর্চা চলে, টাকশালের ভোক্তাদের অধিকার সংরক্ষণ নিয়ে আলাপ হয়।
আইন হাঁটে স্কুলের ‘যেমন খুশি তেমন সাজো’ প্রতিযোগিতার রাস্তা ধরে।
পরিবর্তনে অবিশ্বাসীরা বস্তুত অলস মনের এবং সুখী।


আট।
সংহতি বিদ্রোহীদের সাথে গোলচত্বরে দাঁড়িয়ে আছে।
কিছু আহার ও ধূমপানের পরে সভা চলতে থাকে।
সবাই বলছে, আমি দুঃখিত, তবে দুঃখটা কেউ পাচ্ছে না!
কেউকেউ বলেছেন, আমাদেরই ভাল হয় ওদের দাবি মেনে নিলে!
অন্যরা চিৎকার ছুঁড়ে দিচ্ছে……এইটুকুই যথেষ্ট নয়!
দুইএকটি লাশ পড়ছে, দরকার পড়লে গণ্ডগোলের মধ্যে খুঁজে নিয়ো।
সভার সকলে যে যার মতো করে মতামত প্রকাশ করেছে---
কোনোভাবেই চুক্তিটি কেউ বদলাবে না, এটাকে মাথায় রেখেই।


ক্ষুব্ধ ওরা বেতারে কান পেতে রেখেছে, টিভিতে চোখ আটকে রেখেছে।
সংসদের দিকে তাকাচ্ছে কেউকেউ। কাদের কোথায় পাঠালাম আমরা? এতদিন পর ওরা ভাবছে।
স্বাধীনতার রাস্তা কোনও ‘ওড টু জয়’ নয়, ফলে তা
আরামে ও স্বাচ্ছন্দ্যে পাওয়া যায়, এমন কিছুও নয়।
সভায় বসে মাননীয়রা ডিসেম্বরের শীতে কাঁপছেন,
রাস্তায় দাঁড়িয়ে ওরা এপ্রিলের গরমে ভিজছে।


সিদ্ধান্ত এল, যেহেতু যা বলার, তা ইতোমধ্যেই বলা হয়ে গেছে, তদন্তও শেষ হয়েছে,
নতুন কোনও হাহাকার কাজে লাগবে না, এবং আর কোনও আবেদনও গৃহীত হবে না।
গণতন্ত্রের চর্চায় আস্থারাখা বিদ্রোহীরা ভাবতে বসে, সরকার ওদের, দায়ও ওদের।
অবশেষে ওরা ভাবল, যার কেউ নেই, তার ঈশ্বর আছেন,
এবং আবারও ওরা একসাথে রাস্তায় নেমে এল প্রার্থনা করতে।


নয়।
আবারও ট্যাক্স বাড়ানো দরকার
যাতে জীবন আরও সুন্দর হয়!
এখনও রাতে যে কিছু মুখে দিয়ে শুতে পারেন, তার জন্য রাষ্ট্রের প্রশংসা করুন!
জীবন উন্নত আরও হোক, জাতি ওতে দারিদ্র্যে মরলে মরুক!
আমাদের চাওয়া, যাতে জীবন ভূগর্ভস্থ প্রকোষ্ঠে সরে যায়, অবশেষে নির্মূল হয়!


বছরের পর বছর সবাইকে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ধোঁকা দেওয়ার জন্য যে পাপ হচ্ছে,
তা থেকে আপনি খুব সহজেই মুক্ত হয়ে যাবেন, দরকার হলে
এটা নিয়ে কোনও ধর্মগুরুর সাথে বিশদ আলোচনায় বসুন।
ভয় নেই, আমাদের স্বর্গ এখনও হাতছাড়া হয়ে যায়নি।
সংস্কার করুন, স্বাস্থ্যসেবা বাড়ান, লোক মরুক।
চিকিৎসক এবং তাঁদের অভিভাবকগণ দীর্ঘজীবী হউন,
সমাজ সুখী হউক। অন্তত চাকরি থেকে অবসর নেয়ার আগেই
কেউ জীবন থেকে অবসর পেয়ে না যাক। দরিদ্র লোকগুলির টাকায়
প্রভুদের আয়ু বৃদ্ধি পাক। আরও কিছু অলৌকিক প্রতিশ্রুতি ন্যায়সঙ্গত
হিসেবে স্বীকৃত হোক। কালো চামড়ার লোকগুলি ফর্সা হয়ে যাক,
কালো বুদ্ধির লোকগুলি কালোর ঘনত্ব বাড়িয়ে নিক। যারা গর্তের বাইরে,
ওরাও গর্তে পড়ে যাক, সমতা আসুক এ পথেই। কেউ যদি
প্রভুদের অপছন্দ করে, তবে তাকে হত্যা করা হোক। বাকিদের
মুগ্ধতা প্রভুদের বারবার জিতিয়ে দিক, যারা মুগ্ধ নয়, তাদের
মুগ্ধতার দায়িত্ব প্রভুদের ঘাড়ে সমর্পিত হোক।


আসুন, ক্ষুধা ও যৌনতা বাদে অন্য সকল অনুভূতিকে কবর দিয়ে শান্ত হয়ে বাঁচি।
Content Protection by DMCA.com