২ নভেম্বর ২০১১। দিনটা এসেছিল বলেই আপনারা সুশান্ত পালকে চেনেন। হ্যাঁ, এই দিনেই চাকরিটা পেয়েছিলাম। এই দিনটিই আমাকে রাস্তা থেকে তুলে চাকরের চেয়ারে বসিয়েছে। চাকরিটা না পেলে অনেক কিছুই হতো না। আমি যা, তা হতাম না। আমি যা লিখেছি, তা লিখতাম না। আমি যা বলেছি, তা বলতাম না। আমি যা হয়েছি, তা হতাম না। আমি যা পেরেছি, তা পারতাম না। আমি যতটা বেঁচেছি, ততটা বাঁচতাম না। সবচাইতে বড়ো কথা, দিনটি না এলে বেঁচে থাকার সমস্ত অর্থই হয়তো হারিয়ে ফেলতাম। আমার জীবনডায়েরিতে এই দিন অমরত্বের দিন নয়, এই দিন আয়ুর দিন। অমর হবার চাইতে বেঁচে থাকা অনেক বেশিই জরুরি। এই দিন আমার দ্বিতীয় জন্মের দিন। প্রথম জন্মের দায় আমার মায়ের। দ্বিতীয় জন্মের দায় আমার নিজের। দুই জন্মেরই দায় স্রষ্টার। এই দিনটি না এলে অনেক কিছুই হতে পারত। বেঁচে থাকা অর্থহীন হয়ে যেতে পারত, মৃত্যুর সঙ্গে নিবিড় বন্ধুত্ব তৈরি হতে পারত। হয়তোবা জীবনখাতায় চির-অনস্তিত্বের ঘরে আমার নামটি লেখা হয়ে যেত পাকাপাকিভাবেই! এই দিনটি না এলে সত্যিই অনেক কিছুই হতো না। আমার মায়ের কান্না থামত না, বাবার বুক ভরত না, ভাইয়ের মুখে আলো জ্বলত না। যারা আমাকে ভালোবাসে, তাদের স্বস্তি বাড়ত না। আমার প্রিয় গুরুর পায়ের ধুলোর শক্তি পৃথিবী দেখত না। হ্যাঁ, এই দিনটি আমার প্রথম জন্মেরও দিন। এ এক বিরল সৌভাগ্য। যে দিনে জন্মেছি, সেই একই দিনেই চাকরি পেয়েছি। চাকরিটা না পেলে হয়তো হেরে যেতাম, হারিয়ে যেতাম…বেঁচেই-বা থাকতাম কি আদৌ! ২ নভেম্বর তারিখটি যত বার আসে, তত বারই বুঝতে পারি, ঈশ্বর আমাকে ভালোবাসেন। দিনটি ব্যর্থতারও। যা যা হতে চেয়েছিলাম, তার কিছুই হতে পারিনি…দিনটি এসেছিল বলেই। আমি জানি, ব্যর্থতার সুখ কত বেশি হতে পারে! জীবন আমাকে দেখিয়েছে, ব্যর্থ হয় বলেই কিছু মানুষ সাফল্যের দেখা পায়। ঠিকঠাক পথে হারতে জানলেই শেষমেশ জেতা যায়! ব্যর্থতাই আমাদের বাঁচিয়ে দেয়! আমার কাছে ২ নভেম্বরের দীক্ষামন্ত্র হলো এ-ই: আমরা যা চাই, তা পাই না। আমরা শুধু তা-ই পাই, যা আমাদের দরকার। আর কিছু নয়, খুব কষ্ট করে হলেও দাঁতে দাঁত চেপে মাটি কামড়ে কোনোমতে বেঁচে থাকলেও একদিন ঠিকই আকাশ ছোঁয়া যায়। আকাশ ছুঁতে অমরত্ব লাগে না, শুধুই আয়ু লাগে। আয়ু চুরি করে চলার নামই যে জীবন! আমরা যারা চাকরি করি, তাদের জীবনের অধিকাংশ সময়ই কাটে সহকর্মীদের সঙ্গে। চাকরিজীবীদের জীবনগাথায় সবচাইতে বড়ো স্থানটি সহকর্মীদের। এই বছরের জন্মদিনটি আমার প্রিয় সহকর্মীদের সঙ্গে বেশ তৃপ্তি নিয়ে কাটল। আমি তাঁদের প্রতি ভীষণ কৃতজ্ঞ। ৩০তম বিসিএস ব্যাচের শ্রদ্ধেয় সহকর্মীদের জানাই পেশাজীবনের সূচনালগ্নের শুভেচ্ছা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ নিবেদন করছি শুরু থেকে শেষ অবধি আমাদের পুরো নিয়োগপ্রক্রিয়াটিকে শতভাগ স্বচ্ছ রাখার জন্য। সৃষ্টিকর্তা আমাদের সবাইকে সুস্থ ও ঝামেলামুক্ত জীবন উপহার দিন। ভালোবাসা নিরন্তর...