শূন্যস্থান

এক। যে যতই বলুক, শূন্যস্থান পূরণ হয়ে যায়, আদতে একজনের শূন্যস্থান অন্যজন এসে কখনোই পূরণ করতে পারে না।

মানুষের জীবনে এমন কিছু মানুষ থাকে, যাদের শূন্যস্থান শূন্য-সিন্দুকের মতন সারাজীবন শূন্যই থেকে যায়।

যে প্রেমিক পুরুষটি ঠোঁটে চুমু খাওয়ার বদলে হুটহাট কপালে চুমু বসিয়ে দিত, তার শূন্যস্থানটি অন্য পুরুষ দিয়ে পূরণ হয় না।

যে প্রেমিকার চাহনিতে প্রেমিকের প্রতি মমত্ব ছিল, আচরণে মায়ের মতো স্নেহ ছিল, সেই নারীর জায়গাটা সারাটা জীবনেও নিতে পারে না অন্য কোনও নারী।

সম্পর্কে ভাঙনের শব্দ শুনে আপনার দুই পা জড়িয়ে ধরে হু হু করে কেঁদে-ফেলা প্রাক্তনের জায়গাটা কখনোই নতুন মানুষটি নিতে পারে না। আপনার খিলখিল হাসি শুনেও প্রবল কান্নার ঢেউ ঠিক‌ই টের পেয়ে যেত যে মানুষটি, তার শূন্যস্থান পূরণ হয় না পৃথিবীর অন্য কাউকে দিয়েই।

জীবনের প্রয়োজনে পুরোনো সম্পর্ক ভাঙে, নতুন সম্পর্ক গড়ে। তবুও কিছু পুরাতন নতুনের চেয়েও বেশি চকচক করে।

চোখ বন্ধ করলেই একটা পুরোনো মুখ ভেসে ওঠে, কান পাতলেই মাঝে মাঝে কার কণ্ঠস্বর যেন তীরের মতন এসে বুকে বিঁধে, পা বাড়িয়ে নির্জনে হাঁটলেই পায়ে পায়ে পা মিলিয়ে অদৃশ্য অবয়বে কে যেন পাশে হাঁটে, হাত বাড়ালেই কে যেন হৃদয়ে এসে ঠেকে। কার যেন স্মৃতি মধ্যরাতে আধঘুমে শক্ত করে গলা টিপে ধরে বলে আর বলতেই থাকে…শক্তি থাকে তো আমায় ভুলেই দ্যাখো!



দুই। লোকে বলে, সময় সব কিছু ঠিক করে দেয়। আমি বলি, নাহ্‌! সময় সব কিছু ঠিক করে দিতে পারে না।

নিজের সবটা দিয়ে যাকে বিশ্বাস করেছিলেন, সে এক বার বিশ্বাস ভাঙার পর দ্বিতীয় বার আর কাউকেই বিশ্বাস করতে পারবেন না। যুগের পর যুগ চলে গেলেও বিশ্বাস জিনিসটা আর কখনও ফিরবে না। সময় আপনার বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে পারবে না।

মানুষটি আপনার কলিজায় যে গভীর ক্ষত দিয়ে গেছে, শত বছর গেলেও সে ক্ষতটি আর শুকোয় না। কিংবা শুকোয় হয়তো, কিন্তু দাগটা থেকেই যায়। না, সময় আপনার ক্ষতটাকে পুরোপুরি সারাতে পারে না।

যে মানুষটি দুঃসময়ে একবার ছেড়ে গিয়েছিল, তার প্রতি ভরসাটা কখনোই আর ফিরবে না…শত বছর সময় দিলেও...না।

কিছু ক্ষত শত বছরেও শুকায় না, কিছু কথার বাণ হাজার বছরেও ভুলে থাকা যায় না, কিছু স্মৃতি গোটা জীবনেও মুছে যায় না।

সময়কে সময় দিলেই সব ক্ষত নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় না, কিছু ক্ষত মাঝরাতে, ভরদুপুরে কিংবা ঘোর অমাবস্যার রাতেও হুটহাট ছ্যাঁৎ ছ্যাঁৎ করে ওঠে বিজলির মতো।
Content Protection by DMCA.com