আমাদের এখন "কিছুই ভাল্লাগে না!"-র সময় চলছে, শুভ্র। আমরা খুব খুব খারাপ সময় পার করছি। ছোটোবেলার মতন আইসক্রিম খেলেই এখন আর মন ভালো হয়ে যায় না, দশ টাকায় এখন আর সেই ঝাঁঝওয়ালা কাচের বোতলের স্প্রাইট নিয়ে কাড়াকাড়ি হয় না। এখন ব্যাগে, ওয়ালেটে, বইয়ের ভাঁজে অনেক টাকা, কিন্তু মুদি দোকানে গিয়ে দাঁড়িয়ে 'কী খেলে ভালো লাগবে' এটাই বুঝতে পারি না। দোকানি ইচ্ছেমতো একটা ধরিয়ে দেয়। এখন সেই 'জামা লুকিয়ে রাখা' ইদগুলোও আর নেই। আমরা এখন আর জামা লুকিয়ে রাখি না, ফেইসবুকে আগেভাগে ছবি দিতে জামা কিনি। অনেক অনেক জামা কিনি... এতই যে, কোনোটার প্রতিই আর আলাদা আবেগ কাজ করে না। আমাদের কাছে এখন ছুটি কাটানো মানেই ফেইসবুকিং কিংবা দিনের বেলার লম্বা লম্বা ঘুম। অথচ আমি এমন ছিলাম না। খুব সচেতনভাবে নিজেকে ডালভাতের সাথে মাখিয়ে স্টিলের প্লেটে করে আলাদা করে রেখেছিলাম। কিন্তু কখন যে কাচের প্লেটের ফ্রাইড রাইস হয়ে গেছি, আমি বুঝতেই পারিনি, কেউ বুঝতেই দেয়নি আসলে। আমার এত অসুখ, অশান্তি, মন-শরীর ব্যথার মাঝে একটা মাত্রই আনন্দ ছিল, সেটা হচ্ছ তুমি। তোমাকে নিয়ে দিনরাত ফেইসবুকে ছবি দিতে দিতে আর ভালোবাসার কথা লিখতে লিখতে কখন যে আমাদের ভালোবাসা লাইক-কমেন্টের তলে চাপা পড়েছে, আমি টেরই পাইনি। আচ্ছা, তুমিও কি টের পাওনি, শুভ্র? আমাকে জানালে না কেন? আমার এই বত্রিশ বছরের জীবনে তোমাকে ভালোবাসতে পারা ছাড়া আমার তেমন আর বড়ো কোনও অর্জন নেই। আমি অনুভব করতে শিখেছি, আমিই তুমি আর তুমিই আমি। এত্ত বড়ো উপলব্ধিটা আমি কার কাছে জমা দিতাম, বলো? ফেইসবুকের কাছে? উঁহু... অসম্ভব। এটা একটা ফেইসলেস বুক। এটা আবেগ, ভালোবাসা, ছোঁয়া বোঝে না, শুধুই বোঝে বোকা বোকা এডিট করে পারফেক্ট বানানো কিছু ছবি। অথচ তুমি আমার কাছে ছিলে বেলিফুলের ঘ্রাণে তৈরি আতরের মতন; ছোট্ট একটা শিশি কিন্তু বড্ড যত্নের। তুমি ছিলে বিভূতিভূষণের 'আরণ্যক'-এর মতন; অদ্ভুত কিন্তু দারুণ। তুমি ছিলে আমার চোখের জলের মতন; লুকোনো কিন্তু পবিত্র। আমি তোমাকে প্রচণ্ড ভালোবাসি। আগে যতটা বাসতাম, তার চেয়েও কয়েকগুণ বেশি এখন বাসি। এই জন্মে, পরের জন্মে, সব জন্মেই তুমি আমার; আর আমিও তোমার। কেননা এত জাঁকজমক, এত শাড়ি, গয়না, নূপুর, টিকলি, আলতা পরে এই যে প্রস্তুতি নিচ্ছি; সে কার জন্য? তোমার জন্যই, তোমার সাথে পরের জন্ম কাটাব, সেইজন্য। আমি যে তোমায় ভালোবাসি, এই দামি কথাটা এই কমদামি ফেইসবুকে বলতে আর আসব না। আমি আমাদের গ্রামের বাড়ির বাঁশঝাড়ে গিয়ে চিৎকার করে বলব, "শুভ্র, তোমায় ভালোবাসি!", যাতে করে সেখানে প্রতিধ্বনিত হয়ে বার বার একটা কথাই ফিরে আসে "শুভ্র, তোমায় ভালোবাসি!"..."শুভ্র, তোমায় ভালোবাসি!"'... "শুভ্র, তোমায়..."