বেঁচে থাকতে গেলে কখনো কখনো একটু হিসেবি, একটু স্বার্থপর হতে হয়। আপনি যার জন্য মাথাটাই কেটে দিয়ে দিতে প্রস্তুত, সে আপনার জন্য তার মাথার একটা চুলও ছিঁড়তে রাজি কি না, তা পরখ করে নিন। যে আপনার জন্য একআঙুল ডোবায়, তার জন্য একহাঁটু নামুন। যার জন্য আপনি একহাঁটু নামেন, অথচ সে একআঙুলও ডোবায় না আপনার জন্য, তার জন্য আঙুল ভেজানোও বন্ধ করে দিন। সারল্য আর বোকামি ভিন্ন জিনিস। আপনার পৃথিবীটা তাদের জন্যই হোক, যাদের কাছে আপনিই একটা পৃথিবী। আপনার পৃথিবীতে তারাই থাকুক, যাদের গোটা পৃথিবীজুড়ে আপনিই বিরাজ করেন। এর বাইরে যারা, ওদের সাথে তেমন-একটা না মিশলেও কিছু এসে যায় না। একটু হিসাবনিকাশ, জীবনের অঙ্ক কে না কষে, আপনিই বলুন! রক্তের সম্পর্কের বাইরে যে-মানুষটি আপনার জন্য একফোঁটাও গায়ের ঘাম ঝরায়, সে মানুষ আপনার কাছের চেয়েও কাছের, প্রিয়র থেকেও অধিক প্রিয়। এমন মানুষগুলোর জন্য আপনার একটা দুয়ার আজীবনের জন্য খোলা থাকুক, কারণ পৃথিবীতে যেখানে রক্তের মানুষগুলোও পর হয়ে যায়, সেখানে ‘পর কেউ’ যদি আপনার কাছে রক্তের মানুষের মতন হয়, তবে সে শুধু আপন নয়, আপন থেকেও বেশি কিছু। উত্তরাধিকার কিংবা অধিকার বলে যাদের আপনি আপনজন ভাবেন, স্বার্থে আঘাত এলেই তাদের ভয়ানক চেহারা দেখে আপনি চমকে যাবেন। কিন্তু যে-মানুষটা আপনার রক্তের কেউই হয় না, সে মানুষটার তো আপনার কাছে তেমন কোনো স্বার্থ নেই। তার নিঃস্বার্থ কাজগুলি মাথায় তুলে রাখুন। রক্তের সবাই যেমন আপন হয় না, তেমনি রক্তের বাইরে পর কেউও কখনো কখনো আপন হয়। আমাদের শুধু চিনতে হয়, কে আপন আর কে আপন নয়; জানতে হয়, একই গাছে জন্মানো সব ফুল-ফল একই জাতের নয়, কিছু কিছু গাছে ধরা ফুল-ফল আবার বেজাতও হয়। জীবনে দীর্ঘ একটা পথ তো কাছের জনেদের জন্য বেঁচেছেন, এই ক্লান্তিকর জীবনের ফাঁকফোকর ভেদ করে দু-চারটা দিন তাদের জন্যও বাঁচুন, যারা আপনার আপন নয়, কিন্তু আপনের চেয়েও বেশি কিছু হয়। যেভাবেই হোক, ভালো থাকতে হবে। যে ভালো রাখে, সে পর হলেও ঘর; যে ভালো রাখে না, সে ঘর হলেও পর।