পিএটিসি ডায়েরি: ২৮ জানুয়ারি


ডেটলাইন ২৮ জানুয়ারি ২০১৫

একেকটা ভোর একেক রকমের—গতকাল পর্যন্ত ব্যাপারটা এরকমই ছিল, কিন্তু আজ এসে ওটা বদলে গেল। আজকের ভোরটা ছিল আগের ৩ দিনের ভোরকে মিশিয়ে দিলে যা হবে, ওরকম কিছু-একটা। ভোরের শরীরটা কেমন ছিল? আমাকে কেউ জিজ্ঞেস করলে কোন ২টা বাংলা মুভি দেখে সবচাইতে বেশি কষ্ট পেয়েছি, আমি ‘মেঘে ঢাকা তারা’কে সেকেন্ডে রাখব। সেই মুভিতে নীতা একটা ভোর দেখেছিল, সাথে ওর চোখ দিয়ে দেখে আমরাও বিষণ্ণ চোখে সেই ভোরটাকেই অন্যরকম করে দেখেছি। আজকের ভোরটাতে ওরকম কিছু-একটা ছিল। কষ্টের এমন আশ্চর্য মন্তাজে শুরু-হওয়া ভোরের কথা লিখতে গেলে অনেক সাহসের দরকার হয়। ওটা এই মুহূর্তে পাচ্ছি না। আমি তাই আজকের ভোরের কথা বলব না। ওটা থাকুক। কিছু কিছু বেদনাবিধুর সুন্দর অব্যক্তই থেকে যাক।

সোয়া ৮টার অডিটোরিয়াম। পেছনের সারির চেয়ারগুলো থেকে সামনের দিকে ভরে যাচ্ছে। আমি তাকিয়ে তাকিয়ে চারদিক দেখছি। যেখানটায় বসেছিলাম, সেখান থেকে অডিটোরিয়ামের দরোজা খোলা থাকলে গোলাপবাগানের যে-পাশটায় টকটকে লাল গোলাপগুলো ফুটে থাকে, ওপাশটা চোখে পড়ে। দরোজায় গিয়ে দাঁড়ালাম। সামনের সারাটা বাগান গোলাপে গোলাপে লাল হয়ে আছে। ওদিকটায় সাদা গোলাপের বাগানও দেখা যাচ্ছে। ওখানে হারিয়ে যেতে না পারলে জীবনটাই বৃথা, এরকম ভাবতে অদ্ভুত রকমের ভালো লাগছে। মাথায় অনিন্দ্যসুন্দর রেখা ডাক দিয়েই যাচ্ছে, দেখা এক খোয়াব তো ইয়ে সিলসিলে হুয়ে...কল্পনায় আনছি, কোনো মানসীর হাত ধরে ওই বাগানের মাঝখান ধরে হেঁটে চলেছি। হঠাৎ শ্রীকান্ত বাজছে…ভালো লাগছে, ভালো লাগছে, কেন তা বলতে পারি না...ভোরের ঠান্ডা হাওয়া শিহরন হয়ে শরীরমন জাগিয়ে তুলছে। স্যার এলেন। ২ মিনিট দেরিতে। মনে পড়ে গেল, আমি যখন আমার অফিসারদের নিয়ে মিটিং করতাম, মিটিংয়ের আগের দিন সবাইকে বলে দিতাম, “আগামীকাল আপনারা ঠিক ৯টায় আসবেন। মিটিং শুরু হবে ৯টায়। আমি যখন রুমে ঢুকব, তখন ৯টা বাজবে। আমি কথা দিচ্ছি, আমি ৯টার আগে রুমে ঢুকব না।” ওঁরা যা বোঝার বুঝে নিতেন। আজ স্যারকে দেখে ৩টা ব্যাপার ঘটল। এক। ২ মিনিট দেরি করে আসার জন্য স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞতা অনুভব করলাম। দুই। স্যারকে দেখে ‘সিলসিলা’ মুভির গানটা আরও বেশি বেশি করে মাথায় বাজতে শুরু করল। এ থেকে বুঝলাম, কাকে দেখে কী গান মাথায় বাজবে, এর কোনো ঠিকঠিকানা নেই। গান এমনিতেই বাজে। তিন। বুঝলাম, একটা নির্বোধ সুন্দরী মেয়ের সাহচর্য অপেক্ষা একজন প্রাজ্ঞ বৃদ্ধের সাহচর্য কখনো কখনো অধিক আনন্দ দেয়। শেষ কথাটি কেন বললাম, সেটা বলা যাবে, কিন্তু বলব না।

এর পরের ক্লাসের অর্জন একটা KISS; মানে, Keep It Short & Simple. স্যার আমাদের অনেকক্ষণ ধরে কিস দিলেন (আই মিন, বোঝালেন)। ‘ফরেস্ট গাম্প’-এ টম হ্যাঙ্কস অনেক কথা বলে যায়, মনে আছে? আমাদের ব্যাচের ফরেস্ট গাম্পদের আন্তরিকভাবে কিস দিচ্ছি।

হ্যারি পটারে লর্ড ভলডিমর্টকে নিয়ে দুইটা মজার অ্যাপোফ্যাসিস আছে: "You-Know-Who" আর "He-Who-Must-Not-Be-Named" সেখানে তাঁকে বলা হয়েছে, দ্য ডার্ক লর্ড। না, আমি সেই অর্থে যাচ্ছি না। যদি আইরনিটুকুকে বাদ দিয়ে সাদামাটা You-Know-Who-কে নিই, আর বর্তমান সময়ের বাংলাদেশের ৫ জন প্রথিতযশা ডাক্তারের নাম মাথায় আনতে বলি, তবে প্রাণগোপাল দত্তের নাম আসবেই। আজ উনি এসেছিলেন। দুটো ক্লাস নিলেন। শব্দদূষণ আর মাদকাসক্তি নিয়ে বললেন। ওঁর মতন বড়ো মাপের মানুষের ক্লাস করাটাও একটা অভিজ্ঞতা। ওঁর কিছু কথা/ রেফারেন্স/ ভাবনা আমার নিজের মতো করে শেয়ার করছি:
# একটা স্লাইডে ছিল বিভিন্ন ধরনের নয়েজের সাউন্ড ক্লিপ। একটা মজার ফিলিং হলো। বিচিত্র ধরনের নয়েজ একের পর এক শুনতে খুব একটা খারাপ লাগে না। সবগুলো মিলেমিশে ব্রেইনে একটা মিশ্র অনুভূতি সৃষ্টি করে। শুনে দেখতে পারেন।
# স্বামী যখন ঘুমের সময় নাক ডাকেন, স্ত্রী সেটাতে খুব বিরক্ত হন। মজার ব্যাপার হলো, যদি কোনোদিন রাতে স্বামী নাক ডাকা বন্ধ করে দেন, তখন স্ত্রী ধাক্কা দিয়ে দেখেন ওঁর পতিদেবতা বেঁচে আছেন কি না। এরপর ওঁকে পাশ ফিরিয়ে দেন। স্বামী আবারও নাক ডাকতে শুরু করেন। এটা শুনে খুব মজা পেলাম। আসলে প্রত্যেক মেয়েই চায়, ওর স্বামীটা বদলে যাক। যখনই স্বামী বদলাতে শুরু করে, তখনই স্ত্রী সন্দেহ করতে থাকে। পুরোপুরি বদলে গেলে স্ত্রী তাকে আর পছন্দ করে না।
# ওঁর সেশন ছিল ২টা। এর মাঝখানে ব্রেক ছিল। ব্রেকের সময় বাজছিলেন রবি ঠাকুর...আমি কান পেতে রই...ওঁর সেন্স, কমনসেন্স, হিউমার সেন্স—এই ৩টার সাথে প্রফেশনালিজমের ফিউশন খেয়াল করার মতো। (প্রফেশনাল হলেই যে হিউমার বাদ দিয়ে দিয়ে রামগরুড়ের ছানা হয়ে যেতে হবে, এমন তো নয়!)
# আপনারা লক্ষ করে দেখেছেন, গত ১০ বছরে পুরুষ ও মহিলাদের ধূমপানের হার প্রায় সমান হয়ে গেছে? এটা কিন্তু আমাদের দোষ নয়, এটা আমাদের মহিলাদেরও দোষ নয়। জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা জেন্ডার ইক্যুইটি আনতে চাইছে। সব কিছুতে সমতা এলে স্মোকিংয়ে কেন নয়?
# ইয়েল ইউনিভার্সিটি প্রেস তাদের একটা বইয়ের নতুন এডিশনে স্ট্যালিনের মুখ থেকে পাইপ সরিয়ে ফেলে ছেপেছে। লন্ডনে একটা জাদুঘরে চার্চিলের ছবি থেকে চুরুট সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে ইতিহাস বিকৃত হয়েছে বটে, তবুও অন্তত কিছু লোককে তো সিগারেট থেকে দূরে রাখা গেছে। লোকে যে বড়ো মানুষদের সব কিছুকেই ফলো করে। তাই ওই বিকৃতির দরকার ছিল। ওয়াল্ট ডিজনির শর্ত ছিল এই, কোনো মুভিতে ধূমপানের দৃশ্য থাকলে সেটিতে ডিজনির নাম ব্যবহার করা যাবে না।
# ২টা মজার তথ্য পেলাম। রাজা সপ্তম এডওয়ার্ডকে ওঁর স্ত্রী বলেছিলেন, “হয় সিগারেট ছাড়ো, নতুবা আমায় ছাড়ো।” উত্তরে এডওয়ার্ড বলেছিলেন, “সে কী করে হয়? তুমি আর সিগারেট—দুই-ই যে আমার কাছে সমান নেশার। ছাড়লে তো দুটোকেই ছাড়তে হয়!” রোমান হলিডে’র কথা মনে আছে তো? হার্টথ্রব নায়িকা অড্রে হেপবার্ন পাইপ খেতেন। সে পাইপটা ছিল অনেক লম্বা, যাতে তামাক খুব কাছ থেকে ওঁর ঠোঁটে এসে ঠোঁট কালো করে দিতে না পারে। শেষেরটা শুনে আমার মনে হলো, মেয়েরা বড়ো অদ্ভুত প্রাণী। সুন্দর হয়ে বাঁচতে চায়, সুন্দর হয়ে মরতে চায়। বিষ প্রাণ নেয় নিক, তবুও রূপটা যেন না নেয়।
(একটা মজার তথ্য দিই। হেপবার্নের প্রিয় কবিতা ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘অনন্ত প্রেম’-এর ইংরেজি ভার্সন ‘Unending Love’। ওঁর মৃত্যুর পর গ্রেগরি পেক এই কবিতাটি আবৃত্তি করে ওঁকে চোখের জলে চিরবিদায় জানিয়েছিলেন।)

আমি জেনেশুনে বিষ করেছি পান...এই গানের মধ্য দিয়ে ক্লাস শেষ হলো। শুরু হলো প্রশ্নোত্তর পর্ব। এই পর্ব ছিল অনেকটাই ফ্রি প্রেসক্রিপশন পর্ব। উনি অনেক ব্যস্ত একজন ইএনটি স্পেশালিষ্ট। ওঁর অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাওয়াই তো দুষ্কর। তাই আজ সুযোগ পেয়ে অনেকেই তাঁদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ নিয়ে নিলেন। কেউ কেউ তো পারলে দু-একটা ছোটোখাটো সার্জারি করিয়ে নেন আর কি! হা হা হা . . .

আজ একটা ব্যাপার খেয়াল করলাম। উনি ওঁর কিছু তামাকসেবী পেশেন্টের দীর্ঘকাল ধরে তামাকগ্রহণের ফলে সৃষ্ট শারীরিক বিকৃতি দেখাচ্ছিলেন। আমাদের অনেক ধূমপায়ী কলিগই সেইসময় ভয়ে মুখ লুকিয়ে ছিলেন। টিভি’তে তীর আটা-ময়দা-সুজি’র একটা অ্যাড দেখাত। ওখানে একটা বাচ্চা ছেলে হাসতে হাসতে বলে, ‘তীর’ ছাড়া আমার চলে না...যাঁরা ভয়ে মুখ গুঁজে ছিলেন, ওঁদের অনেকে এত স্মোক করেন এত স্মোক করেন, মনে হয় যেন, বাচ্চাটির মতো করেই বলেন, সিগারেট ছাড়া আমার চলে না...আমার কথা হলো, যে শারীরিক বিকৃতি দেখে আপনি ভয়ে মুখ লুকালেন, ঈশ্বর না করুন, সেই বিকৃতির শিকার আপনিও হতে পারেন। এটা নিয়ে সত্যিই আমার কোনো মাথাব্যথা নেই। আপনি এই সুন্দর পৃথিবীতে এসেছেন আপনার বাবা-মা’র দায়িত্বে, পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে চাইছেন নিজের দায়িত্বেই। খুব ভালো। কিন্তু আপনি কেন আমার দায়িত্বও নিয়ে নিচ্ছেন? যে আমি জীবনে একটাও সিগারেট খাইনি, সেই আমাকে কেন অসংখ্য সিগারেট খাওয়ালেন এবং খাওয়াচ্ছেন? আপনি আমাকে কেন প্যাসিভ স্মোকিং করতে বাধ্য করেন? আমাকে কেন একই হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছেন? Do I deserve it, Sir?

জেমস জয়েসের প্রথম নভেল ‘অ্যা পোর্ট্রেইট অব দি আর্টিস্ট অ্যাজ অ্যা ইয়াংম্যান’। আজ আমরা দেখলাম, অ্যা পোর্ট্রেইট অব দ্য ডক্টর অ্যাজ অ্যা জেন্টলম্যান। প্রাণগোপাল দত্ত স্যারের মতন স্মার্ট মানুষ আমি খুব কমই দেখেছি, তা-ও আবার এই বয়সে!

ক্লাসশেষে অডিটোরিয়ামের ২টা দরোজা দিয়ে বের হয়ে রিভার্স ওয়াই জাংশনে একটা লাইনে মিলিত হয়ে করিডোরে পিঁপড়ের দলের মতো করে বেরিয়ে এলাম। দুপুরে খেলাম। বিকেলে স্পোর্টসে গেলাম। গিয়ে দেখি, খেলার মাঠে কী-একটা যেন কাজ চলছে, তাই স্পোর্টস হবে না। আজ আমাদের ছুটি। আহা! পৃথিবীর সবচাইতে সুন্দর বাক্য: আজ আমাদের ছুটি। ঘোরাঘুরি করলাম, রুমে এসে লিখলাম কিছুক্ষণ, সন্ধেয় টিফিন করলাম, এরপর মাল্টিপারপাজ শপে গেলাম, কিছু কেনাকাটা করলাম। পিএটিসি’র ভেতরে এরকম দুটো শপ আছে। সেগুলোতে মোবাইল রিচার্জ করা থেকে শুরু করে গার্লফ্রেন্ড ছাড়া ব্যাচেলর জীবনের যাবতীয় প্রয়োজনীয় জিনিস পাওয়া যায়। ওরা বিশাল আকৃতির মিষ্টিও বিক্রি করে। পাশেই ডাকঘর, সোনালি ব্যাংক। ওই জায়গাতে যাবার পথে একটা অ্যাকুরিয়াম আছে। সেটাতে বিচিত্র প্রজাতির মাছ। রুই-কাতলা নেই, তবে অনেক মাছ আছে, যেগুলোর একটাও আমি কোনোদিনও খাইনি। ওরা ছোটাছুটি করতে থাকে এদিক থেকে ওদিক। আপনমনে খেলতে থাকে। ওদের জগতে ওদের বিচরণ স্বচ্ছন্দ ও নির্বিঘ্ন। একটা ছোট্ট সাগর যেন। সাগরতলের বায়োডাইভারসিটির মিনিয়েচার! শ্যাওলা আছে, গাছ আছে, অক্সিজেনের সরবরাহ আছে, খাবারেরও অভাব নেই। অ্যাকুরিয়ামে আলো জ্বলে, কাছে এলে ওদের কেউ কেউ গ্লাসের গা ঘেঁষে কাছে এসে চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে থাকে। ওদের রাজ্যে আমি এলিয়েন। নিজের অজান্তেই মাথায় এল, আচ্ছা, বিট লবণ আর পুদিনা পাতা দিয়ে গোল্ডফিশ ফ্রাই খেতে কেমন হতে পারে?

এখানে আর থাকা ঠিক হবে না। এখানে আর কিছুক্ষণ থাকলে আরও কিছু মাছ টেস্ট করার ইচ্ছে জাগতে পারে। রুমে ফেরার পথে পেয়ারা, বেল, চালতা, আমলকির বনে গেলাম। কিছুক্ষণ একাকী হাঁটলাম। গাছগুলো একেকটা মাঘের সন্ন্যাসীর বেশে দাঁড়িয়ে আছে। ওই বন যেন ঝরাপাতার বন! শুকনো পাতার নূপুর সরিয়ে সরিয়ে হাঁটা পৃথিবীর সবচাইতে আনন্দের কাজগুলোর একটি। একটু পর বনের অতন্দ্র প্রহরী মশকদল আমাকে তাড়িয়ে তাড়িয়ে রুমে নিয়ে এল।

একটা গল্প দিয়ে লেখাটি শেষ করছি। লর্ড টেনিসনের একটা কবিতা আছে, Idylls of the King. সেখানে একটা স্ট্যানজা আছে এরকম:
I found Him in the shining of the stars,
I marked Him in the flowering of His fields,
But in His ways with men I find Him not.
I waged His wars, and now I pass and die.
O me! for why is all around us here
As if some lesser god had made the world,
But had not force to shape it as he would,
Till the High God behold it from beyond,
And enter it, and make it beautiful?
Or else as if the world were wholly fair,
But that these eyes of men are dense and dim,
And have not power to see it as it is:
Perchance, because we see not to the close;—
For I, being simple, thought to work His will,
And have but stricken with the sword in vain;
And all whereon I leaned in wife and friend
Is traitor to my peace, and all my realm
Reels back into the beast, and is no more.
My God, thou hast forgotten me in my death;
Nay—God my Christ—I pass but shall not die.

কবিতাটির ষষ্ঠ লাইন থেকে কিছু শব্দ ধার করে ’৮৬তে একটা মুভির নাম দেওয়া হয়েছিল Children of a Lesser God. মুভির কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন অস্কার জিতে-নেওয়া অভিনেত্রী মারলি ম্যাটলিন, যিনি ছিলেন বোবা ও বধির। এই মুভিতে অসাধারণ অভিনয়ের জন্য মাত্র ২১ বছর বয়সে উনি অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডের ইতিহাসে সবচাইতে কম বয়সে অ্যাওয়ার্ড জিতে নিয়ে রেকর্ড করেন। উনি সাইন ল্যাংগুয়েজের সাহায্যে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে স্পিচ দেন, মানুষকে ভালো কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করেন। আজ বিশ্বজুড়ে মারলি ম্যাটলিন জীবন যুদ্ধে হেরে-না-যাওয়া মানুষের দৃপ্ত কণ্ঠস্বর।

প্রফেসর প্রাণ গোপাল দত্ত অনেক পণ্ডিত লোককে জিজ্ঞেস করেছিলেন Children of a Lesser God কথাটির মানে কী? কেউ সদুত্তর দিতে পারেননি। একবার খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়ে প্রফেসর কবীর চৌধুরীর সাথে উনি যাচ্ছিলেন। উনি কথাপ্রসঙ্গে কবীর চৌধুরীকে ওই কথাটির মানে জিজ্ঞেস করলে কবীর চৌধুরী কথাটির বাংলা করেন, ‘বৈমাত্রেয় ঈশ্বরের সন্তানেরা’। একথা শুনে উনি জিজ্ঞেস করলেন, “এটা আপনি কী বললেন? ঈশ্বর আবার বৈমাত্রেয় কী করে হয়?” কবীর চৌধুরী হেসে বললেন, “এই যে দেখুন, আমি এই আশি বছর বয়সে ভার্সিটির সমাবর্তনে প্রধান বক্তা হিসেবে আমন্ত্রিত হয়ে হেলিকপ্টারে চড়ে যাচ্ছি। আমার সন্তান বলবে, ঈশ্বর মহান, উনি আমার বাবাকে দীর্ঘজীবন আর এই বিরল সম্মান দান করেছেন। আর আমার ছোটো ভাই মুনীর চৌধুরী মারা গেছে অল্প বয়সেই। ও আজ বেঁচে থাকলে লোকে কত সম্মান করত, দেশকে ও আরও কত কিছু দিতে পারত। আপনিই বলুন, ওর সন্তান কী বলবে? ওর সন্তান কি ঈশ্বরকে ন্যায়বিচারক বলবে? ঈশ্বরের প্রতি ওর কৃতজ্ঞতা কতটুকুই-বা থাকবে? তাই কারও কারও কাছে কখনো কখনো ঈশ্বর বৈমাত্রেয়ও হন।”

আমার নিজের জীবনের দিকে তাকিয়ে রজনীকান্তের ভাষায় ঈশ্বরকে আরেক বার ধন্যবাদ জানাই—(আমি) অকৃতী অধম ব’লেও তো, কিছু/কম ক'রে মোরে দাওনি!/ যা' দিয়েছ তারি অযোগ্য ভাবিয়া,/কেড়েও তা কিছু নাওনি! (করুণাময়, রজনীকান্ত সেন)
Content Protection by DMCA.com