দর্পী মহিষাসুর— শত বৎসরের মহা-মহারণে জিনিল স্বর্গপুর। ইন্দ্ৰ-চন্দ্ৰ আদি দেবগণ, স্বাধিকারহীন বৃথা বিচরণ করিয়া ফিরেন মর্ত্যের সম, বক্ষ বেদনাতুর!
পদ্মযোনির সাথে— দাঁড়াইলেন আসি দুর্গত সবে হরিহর-সাক্ষাতে। নিদারুণ ব্যথা-নিপীড়িত স্বরে, শুনায়ে কাহিনি দোঁহার গোচরে, "উপায় কী আছে পরিত্রাণের?"—শুধাইলেন নত মাথে।
অমরগণের বাণী— শুনিয়া ক্রুদ্ধ হইলেন শম্ভু, বিষ্ণু চক্রপাণি৷ ব্রহ্মা বিষ্ণু শিবের আনন, ভ্রূকুটি-কুটিল রক্ত-বরণ, প্রচণ্ড রোষ স্ফুরে ধ্বক্ ধ্বক্ দুর্বার তেজ হানি।
সে মহাদীপ্তি সনে— যুক্ত হইল যাহা ছিল তেজ ইন্দ্ৰাদি দেবগণে। ঘোর জ্বলন্ত পর্বতসম, তেজপুঞ্জ সেই ক্রমে নিরুপম মুরতি লইল নারীর, ছায় কান্তি তাহার তিন ভুবনে।
শম্ভুর তেজোরাশি— নিরমিল দেবীর মুখমণ্ডল অপরূপ উদ্ভাসি। কৃতান্ত-তেজে কালো কুন্তল, ঢাকিল ঊর্দ্ধ নীল নভোতল বিষ্ণু-বীর্যে উপজিল বাহু, মহাবল অবিনাশী।
চন্দ্রমা-চারুকর— গঠিত করিল স্নেহ-বিনম্র উভয় পয়োধর! অগ্নির তেজে লভিল জনম, ভালে ত্রিনয়ন শোভা অনুপম, ইন্দ্রের বলে হইল উদ্ভূত কটিদেশ মনোহর!
দেবীর রাতুল পদ— ব্রহ্মার তেজে উঠিল জাগিয়া, স্ফুট যেন কোকনদ! অন্য-দেবতা-জীবন-দীপিকা, রচিল জঙ্ঘা, ঊরু ও নাসিকা, রচিল কৰ্ণ, দন্ত-পঙ্ক্তি সর্ব শোভাস্পদ।
রুদ্র পিনাকপাণি— দিলেন নিজ-শূলাস্ত্র হইতে আকর্ষি ত্রিশূলখানি। দিলেন চক্র দেব নারায়ণ, শক্তি—অগ্নি, দণ্ড—শমন, কমণ্ডলু ও অক্ষ-মালিকা ব্রহ্মা দিলেন আনি।
ইন্দ্ৰ অশনি-ধর— দেবীর হস্তে দিলেন ঘণ্টা বজ্র ভয়ংকর! দিব্যশঙ্খ দিলেন বরুণ, দিবাকর দেন তেজ নিদারণ, সিন্ধু সঁপেন পঙ্কজ-মালা, পবন—ধনু ও শর!
নগরাজ হিমালয়— দিলেন সিংহ দেবীর বাহন অমিত বীর্যময়। ধরণী-ধারণ নাগ-অধিপতি, দেবীর চরণে জানায়ে প্রণতি অর্পেন মহামণি-মণ্ডিত নাগ-হার অক্ষয়।
দেবতা-সম্মানিতা— সে মহাশক্তি হিমাদ্রি-বুকে হইলেন উত্থিতা! অট্টহাস্যে কাঁপে চরাচর, নভ-সমুদ্র-গিরি-প্রান্তর, সিংহবাহিনী নানা-প্রহরিণী অতি-ভীম-রূপ-যুতা!
উঠে ধ্বনি জয় জয়— জাগিয়াছে মহিষাসুরমর্দিনী মাতা নাশিতে সকল ভয়! দেবতাবৃন্দ হরিষান্তর, দেবীর স্তোত্রে বিশ্ব মুখর, ভক্তি-মানত মুনীন্দ্ৰ যত মাগে পদে আশ্রয়।