দোকানে ঢুকে আলপনাকে দেখে মুখ লুকোলাম। বড়ো দোকান, লুকিয়ে থাকতে অসুবিধে হয়নি।
কতদিন পর, সামনে কী করে পড়ি? সেই যে চলে গেল কিছু না বলে, তারপর আর তো কখনও দেখিনি। এতগুলি বছর পর কথা বলা যায়?
ঝকঝকে দোকান। ইচ্ছে হলেই কেনা যায় যা খুশি পকেটে পয়সা থাকলে। পড়ন্ত বিকেলের আলো আলপনার চোখে-মুখে এসে পড়ছে। আলোতে ওকে আগেও সুন্দর লাগত।
আমি দেখলাম, ওর মায়াবী হাতদুটো আলো সরিয়ে সরিয়ে জিনিসগুলো নাড়াচাড়া করছে। চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছিলাম ওকে। এক-একটি আলোর বৃত্ত এসে ছককাটা জিনিসগুলোর উপর উজ্জ্বল এবং বড় আয়েসি হয়ে বসছিল। আলপনার দৃষ্টি সেইসব বৃত্তের দিকে নিবদ্ধ।
দোকানদার শুধোল, কী দরকার আপনার?
"ছোট্ট একটা ননস্টিকি ফ্রাইপ্যান দিন।" সে ফ্রাইপ্যান পেল। আলোর বৃত্তের স্রোত ক্রমশ সরছে।
"সিলিকনের স্কয়ার-শেইপড চামচ হবে?" চামচও মিলল। আলোর বৃত্তগুলির পরিধি ছোটো হতে লাগল।
"উমম্ একটা খুন্তি, প্লাস্টিকের মগ আর অ্যালুমিনিয়ামের কড়াই। আর হ্যাঁ, এক প্যাকেট করে আগরবাতি, ক্যান্ডেল... আর কী যেন ছিল... মনে পড়ছে না। মনে পড়লে ফোন করব, বাবলুকে দিয়ে পাঠিয়ে দেবেন, হ্যাঁ?"
আমি স্পষ্ট দেখতে পেলাম, আলোর বৃত্তগুলি এক এক করে নিভে গেল। আলপনার ঘরে সন্ধেপ্রদীপ জ্বলবে।
আমার মনে হতে লাগল, আমারও আজ চাল-ডাল-তেল-নুন কেনার কথা ছিল।
হরি কাকা এগিয়ে এসে আমায় জিজ্ঞেস করলেন, আপনাকে কী দেবো?
চোখ বন্ধ করে আলপনার সিঁথির সিঁদুরে আলোর বৃত্তগুলি ছুড়ে দিয়ে হেসে উত্তর দিলাম, আমার কিছু অন্ধকার লাগবে।