ডিম্বাণু আর শুক্রাণুর মিলনের পর থেকে নতুন একটা প্রাণ সৃষ্টির আয়োজন চলে নারীর জরায়ুর অন্ধকার গৃহে। একটা আত্মা অবয়ব পেতে শুরু করে। সে স্থান চায় তার অবস্থান গড়ার। তখন সে হাত, পা, মস্তকহীন—লড়াই করার শক্তি তার নেই। সেই রিক্ত, শক্তিহীন, দুর্বল এক প্রাণকে জরায়ুর ভেতরে—যেখানে তার সর্বশেষ আশ্রয়, সেখান থেকে উৎখাত করা, টুকরো টুকরো করে হত্যা করা—এর চেয়ে বড়ো নিষ্ঠুরতা আর কী হয়! মাতৃত্ব কী অদ্ভুত এক মায়ায় ঘেরা। মাতৃজঠর পৃথিবীর সবচেয়ে নিঃস্বার্থ স্থান। পুরুষ সবসময় দাতা শুনেছি, কারণ সে বীর্য দেয়। আর নারী দেয় স্থান। এই একটু স্থান পাবার জন্য আত্মারা ঘুরতে থাকে বিভিন্ন রূপে। এখানে পুরুষ আসলে দাতা না, সে এক মাধ্যম—যেমন মাধ্যম নারীও। আমি এক মাধ্যম ছাড়া আর কিছুই নই। আমি জানি, পৃথিবীতে কেউ আপন হয় না। আমি কারও আপন নই, আমারও আপন বলে কেউ আসলে নেই। আমার সন্তান আমার একান্ত নিজের নয়, সে-ও অন্যকারুরই অংশ। তাই পৃথিবীতে নিজস্ব বলে একদমই কিছু হয় না। সব আপন জিনিসই অন্যের। আবার পর বলেও কেউ হয় না। রাসায়নিকভাবে আমরা একই উপাদানে তৈরি, আত্মিকভাবে আমরা এক পরমাত্মা থেকে সৃষ্ট। সমস্ত সৃষ্টিই আসলে সেই পরমাত্মারই অংশ। না আমরা কিছু সৃষ্টি করতে পারি, না ধ্বংস। আমরা কেবল কাজ করতে পারি এবং কর্মফল ভোগ করি। পৃথিবী কর্মময়। নিষ্কাম কর্মেরও ফল থাকে। আমরা কীভাবে ভোগ করি, সেটাই মুখ্য।