সবচেয়ে কঠিন যুদ্ধটা

পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন ও ভয়ানক যুদ্ধ কোনটা, জানেন? নিজের সাথে নিজের যুদ্ধটা।

সব যুদ্ধই একসময় থেমে যায়—বাঘা বাঘা রাষ্ট্র, শক্তিশালী সংস্থা কিংবা ক্ষমতাসীন ব্যক্তির মধ্যস্থতায় বা হস্তক্ষেপে বড়ো বড়ো যুদ্ধেরও সমঝোতা হয়ে যায়।

কিন্তু সেই যুদ্ধ কী করে থামবে, যে-যুদ্ধে পক্ষ ও প্রতিপক্ষ, দুই-ই আপনি নিজে?

বন্ধুবান্ধব, পাড়াপড়শি সবাই “ভালো আছ?” জিজ্ঞেস করলে একগাল হেসে জবাব দিচ্ছেন…”খুউব ভালো আছি।”, অথচ সবার আড়ালে আপনি কতটা ক্ষতবিক্ষত-বিধ্বস্ত হৃদয় নিয়ে যুদ্ধ করে চলেছেন দিনরাত—কখনো বেঁচে থাকার, কখনো বাঁচিয়ে রাখার—সে খবর কেউ কখনও জানতে পারে না।

আপনি কাউকে বোঝাতে চাইছেন—আপনি ক্রমশ চুরমার হয়ে যাচ্ছেন, আপনার সাহায্যের প্রয়োজন—আবার পরক্ষণেই সবার কাছ থেকে লুকোতে নিজেকে আড়াল করে নিচ্ছেন। ধরা পড়ে গেছেন, অথচ কিছুতেই ধরা দিচ্ছেন না!

একই শরীরে দুই বসত, একই মগজে দুই চিন্তা।

মধ্যরাতে সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে, আপনার ভেতরে বসত-করা আপনারই দু-সত্তা তুমুল দ্বন্দ্বে জেগে ওঠে। মগজের ভেতরে হইহুল্লোড় শব্দে চারপাশ চুরমার হয়ে যায়; দুশ্চিন্তারা, অনিশ্চয়তারা আপনার মগজ ছিঁড়ে-খুঁড়ে খেয়ে ফেলতে চায়, বিষণ্ণতারা আপনার মগজের ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে ঘোর তোলপাড় শুরু করে দেয়। আপনি ওদের কাছ থেকে মুক্তি চাইতে মৃত্যুর কাছে হাত পাতছেন, আবার মৃত্যুর কাছ থেকে বাঁচতে জীবনের কাছে মিনতি করছেন। আপনি বাঁচতে চান, না কি বেঁচে আছেন কি না টের পেতে চান, তা আপনি নিজেই জানেন না।

এমন জটিল একটা লড়াইয়ে আপনি দিন দিন নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছেন; অথচ কেউ কিছু দেখছে না, কেউ কিছু বুঝছে না।

তারপর একদিন সকল বিশ্বযুদ্ধ থেমে যায়, চারিদিকে সীমান্ত ঘেঁষে যুদ্ধবন্ধে কাঁটাতার ওঠে, চুক্তি সই হয়, রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে যুদ্ধবন্ধের নোটিশ জারি হয়...আরও কত কী!

সবই হয়, তবু আপনার নিজের সাথে নিজের সমঝোতাটা করে ওঠা আর হয় না, আপনার মগজে বাস-করা দু-সত্তার মাঝখানে কোনো কাঁটাতার বা গ্রেটওয়াল তৈরি হয় না।

কেউ আপনার মধ্যে চলা এই যুদ্ধ থামাতে মধ্যস্থতা করছে না, কেউ প্রেস কনফারেন্স করে বলছে না…যুদ্ধ নয়, শান্তি…শুধু শান্তি চাই!

আপনার যুদ্ধটা আর থামে না।

তবুও…কাছের কিংবা প্রিয় কেউ হঠাৎ দেখেই যখন জিজ্ঞেস করে, “আরে, কেমন আছ বলো তো?”, তখন আপনি…নিজের ভেতর থেকে ক্রমাগত চিৎকার করে…”আমি একদমই ভালো নেই, আমাকে বাঁচাও, প্লিজ!”...বলতে-থাকা নিজেরই সত্তার গলাটা শক্ত করে চেপে ধরে একগাল মিষ্টি হেসে উত্তর দেন…"খুবই ভালো আছি! (এত ভালো আগে কখনোই থাকা হয়নি!)”