বন্ধুত্ব যখন বিপদ

বিপদে না পড়লে বন্ধু চেনা যায় না। এমনও হতে পারে, যাকে কখনোই বন্ধু ভাবেননি, সে আপনাকে আপনার অনেক প্রিয় বন্ধুর চাইতে বেশি ভালোবাসে। বিপদ যতটা বন্ধুত্বের পরিমাপক-যন্ত্র, অতটা আর কিছুই নয়। স্বর্ণের খাঁটিত্ব যেমনি অগ্নি-পরীক্ষায় প্রকাশ পায়, বন্ধুর খাঁটিত্ব তেমনি বিপদ-পরীক্ষায় জানা যায়। বিপদে যে-বন্ধু অটল-অচল, তিনিই ভালোবাসার স্বর্গীয় প্রভায় প্রদীপ্ত—তিনি স্বার্থের অতীত ধামে, পরার্থপরতার বৈকুণ্ঠে অধিষ্ঠিত। তিনি পূজা পাবার, প্রশংসা পাবার যথার্থ যোগ্য। কিন্তু তেমন বন্ধু এ পৃথিবীতে বড়োই বিরল।




হিতোপদেশ বলেন, "রাজদ্বারে, শ্মশানে, দুর্ভিক্ষে যে-ব্যক্তি বন্ধু, সে-ই প্রকৃত বন্ধু।" রাজদ্বারে যখন মানুষ গুরুতর অপরাধে অভিযুক্ত হয়, সকলেই একে একে তখন পরিত্যাগ করে। শ্মশানে, অর্থাৎ মৃত্যুর দিনে, যখন সকলেই মায়া পরিত্যাগ করে, কেবল প্রকৃত বন্ধুই তখন কাছে থাকে। আর দুঃখে-দারিদ্র্যে? এ পৃথিবীর প্রায় কোনো লোকই কষ্টের অংশীদার হতে চায় না। যে-ব্যক্তি এমন অবস্থাতেও কাছে থাকে, কষ্টের অংশ নেয়, তাকে পরম আত্মীয় বলেই জানি।




বসন্তে কোকিল মধুর স্বরে ডাকে, শীতের দুর্দিনে কোকিল নীরব। সম্পদ-বসন্তের মধুর বায়ু যখন প্রবাহিত হয়, তোমার চারদিকে সদানন্দে বিভোর তোষামোদপ্রিয় কত শত আত্মীয়কে ও বন্ধুকে কাছে পাবে; কিন্তু দুঃখ-দারিদ্র্যপূর্ণ বিষম বিপদ যখন তোমার দরোজায় এসে উপস্থিত, সেদিন দেখবে, এই পৃথিবীতে তুমি একা! কেউই কাছে নেই, কেউ আর তোমাকে দেখার নেই। সংসার পরীক্ষায় পড়ে সকলেই এটা প্রত্যক্ষ করেছেন। নিমন্ত্রণসভার সম্মান রক্ষা করতে পৃথিবীতে অনেক বন্ধু পাওয়া যায়, অনাহার-ক্লেশের ভাগী হবার অতি অল্পই সুহৃদ মেলে। কেবল স্বার্থ, কেবল স্বার্থ, কেবল স্বার্থ দিয়ে মানুষের আগাগোড়া গঠিত! তুমি কাকে বলো বন্ধুত্ব, আর কাকে বলো ভালোবাসা!




কেবল এটাই নয়। সম্পদের দিনে, ঐশ্বর্যের দিনে যে তোমার তোষামোদ করার সুযোগ পেলে কৃতার্থ হতো, আজ তুমি বিপদে পড়লে সে-ই তোমাকে আঘাত করে ক্ষতবিক্ষত করবে। প্রাণ দিয়ে যার উপকার করেছ, তোমার বিপদের দিনে সে-ই তোমাকে আঘাত করে উল্লাসে প্রত্যুপকার সাধন করবে! দুধ-কলা দিয়ে পুষলেও, সুযোগ পেলেই, বিষধর সাপ তোমাকে দংশন করবে! কৃতজ্ঞতা এ জগতে যেন স্বার্থ-সমুদ্রে বিসর্জিত; পৃথিবীর মানুষ, সুযোগ পেলেই তোমার বুকের রক্ত শোষণ করবে।




মানুষ! তুমি কাকে বলো আত্মীয়, কাকে বলো বন্ধু? শত্রুর তীক্ষ্ণ ছুরি এড়ালেও এড়াতে পারো, কিন্তু তুমি যতই বুদ্ধিমান হও না কেন, বন্ধুর গুপ্ত শাণিত অস্ত্রের হাত এড়ানো কখনোই তোমার সাধ্যায়ত্ত নয়। খ্রিষ্ট যাদের জন্য অশেষ ক্লেশ সহ্য করেছিলেন, তাদের মধ্যেই জুডাস ইস্কারিওট ছিল। সিজার যাদেরকে নিয়ে গৌরব করতেন, তাদের মধ্যেই ব্রুটাস ছিল। পৃথিবী কলঙ্কের পণ্যবীথিকা, তুমি কাকে বলো ভালোবাসা, কাকে বলো বন্ধুত্ব! ইতিহাসে বর্ণিত কথা ছেড়ে সংসারের চারটা প্রত্যক্ষ ঘটনার দৃষ্টান্ত দিই। মানুষ কেমন কপট ও প্রতারক, বুঝতে পারবেন। বন্ধুত্বের ভান করে মানুষ কীভাবে সর্বনাশ করে, বোঝা যাবে।




একজন প্রবীণ ব্যক্তি একসময় সরকারের কোনো উঁচু পদে কাজ করতেন। ভালোই বেতন পেতেন। সেই সময়ে শহরের উকিল, ব্যারিস্টার, হাকিম, ডাক্তার প্রভৃতি প্রতিষ্ঠিত লোকজন তাঁকে বন্ধু বলে মানতেন; আদর করতেন, সম্মান দেখাতেন, তাঁকে নিয়ে আনন্দে নাচতেন। বড়ো আন্তরিক সম্পর্ক ছিল ওঁদের মধ্যে। বড়ো বড়ো লোকের মুখে তাঁর সদাশয়তা, প্রশংসা আর ধরত না যেন! ঘটনাক্রমে তিনি, সকলের উসকানিতে, চাকরি ছেড়ে দিলেন। সকলে তাঁকে বড়ো মানুষ করে দেবে, এভাবেই তিনি প্রতিশ্রুত হলেন। কিন্তু চাকরি ছেড়ে দেবার পর ধীরে ধীরে, একে একে বন্ধুদের প্রফুল্ল বদনশোভা বিরল হতে লাগল।




সময়ের ফেরে যখন ঘোর দারিদ্র্য উপস্থিত হলো, আর কাউকেই সে ঘরে দেখা যায় না। একদিন তাঁর একটা ছেলের মৃত্যু হলো, আর-একটা ছেলে কঠিন রোগে আক্রান্ত হলো। ধীরে ধীরে তাঁরও জীবনের আশা নিভে গেল। তিনি এই ঘোর বিপদে এক ব্যক্তিকে একদিন আক্ষেপ করে বলছিলেন—"এই শহরে বড়ো বড়ো বন্ধু আমার কতই-না ছিল, আমার সম্পদের দিনে তাঁদের গাড়ির বহর আমার দরজায় ধরত না; আর আজ এই দুর্দিনে, ভাই, তুমি ছাড়া আর কাউকেও দেখি না; সুযোগ পেলে তাঁরা এখন আমার ক্ষতি করতে ছাড়েন না। কী আর বলব, তোমাকে তখনও দেখেছি, আজ এই দুর্দিনেও দেখছি। তুমি আমার বাবা, ভাই, বন্ধু, সবই!" এই কথা বলার সময় প্রবীণ ব্যক্তির দুই চোখ বেয়ে টপটপ করে জল পড়ছিল। যিনি এই হৃদয়বিদারক দুঃখপূর্ণ বিলাপ শুনছিলেন, তাঁরও দু-চোখ জলে ভরে উঠেছিল।




দ্বিতীয় গল্পটা বলি। এক ব্যক্তির একজন বন্ধু ছিল। নিজের অধীনে কাজ দিয়ে তাঁকে মানুষ করেছিলেন। একসময় তিনি ভীষণ অসুখে পড়েন। উপকারপ্রাপ্ত বন্ধুটি তাঁর মৃত্যুশয্যায় দিনরাত সেবা করতে লাগলেন। খাওয়া নেই, ঘুম নেই—ক্রমাগত রোগীর জন্য খাটছেন, রোগীর মলমূত্র পর্যন্ত পরিষ্কার করছেন! সেই দৃষ্টান্ত দেখে সকলে বিমোহিত হলো। রোগী যথাসময়ে স্বর্গারোহণ করলেন। রোগীর অর্থসঙ্গতি প্রচুর ছিল। সুযোগ পেয়ে, শুশ্রূষাকারী বন্ধু মৃতব্যক্তির ধনঐশ্বর্য আত্মসাৎ করার জন্য, মৃতব্যক্তির বিধবা পত্নীকে নিজের করে নিলেন। সকল আত্মীয়ের কথা তুচ্ছ করে অবশেষে তাঁকে বিয়ে করলেন। বুড়ো-বুড়ির মিলনে জগতে অক্ষয় কীর্তি স্থাপিত হলো, লজ্জাশরম ভয়ে মাথা নোয়াল! এ জগতে বিশ্বাসী বন্ধু কোথায় মেলে, তা ভেবে মানুষ আকুল হলো!




তৃতীয় গল্পে আসি। এক সদাশয় ব্যক্তি একজন মহাজনের কাছ হতে ১০ হাজার টাকা ঋণ করেছিলেন। এই ব্যক্তি একটা সময়ে ওই মহাজনের অনেক উপকার করেছিলেন—টাকাকড়ি দিয়ে তাঁকে মানুষ করেছিলেন বললেও হয়। এই ব্যক্তি যখন মৃত্যুশয্যায়, তখন মহাজন, ১০ হাজার টাকা চলে যায় দেখে, অমন ঘোর দুর্দিনেও, উপকারী বন্ধুর মৃত্যুশয্যার পাশে উপস্থিত হয়ে ওই টাকা চাইলেন। বৃদ্ধ খাতক আসন্ন বিপদে আর উপায় নেই দেখে কপালে হাত দিয়ে বললেন, "অদৃষ্ট! তাই ঋণের বোঝা নিয়ে মরলাম।" এই বিষাদের কাহিনি শুনে কোনো গৃহস্থ ব্যক্তি ১০ হাজার টাকা ওই মৃত্যুপথযাত্রী ব্যক্তির ছেলেকে দিয়ে বৃদ্ধকে ঋণমুক্ত করে দিলেন।




আর-একটা গল্প। এক ব্যক্তি সুযোগ পেলেই পরের উপকার করতেন। অনেক লোককে অর্থসাহায্য করে তিনি মানুষ করেছেন। তাঁদের মধ্যে এখন কেউ কেউ খুব পসারশালী মানুষ হয়েছেন। এক ব্যক্তিকে তিনি ১০ হতে আরম্ভ করে ৩০, ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত দিয়ে উপকার করেছিলেন। এই টাকার জোরে সেই ব্যক্তি বড়ো ব্যবসা চালাচ্ছিলেন। এই উপকারী ব্যক্তি একসময় কঠিন রোগে আক্রান্ত হন। আরোগ্য না হওয়াতে শেষে হাওয়া বদলাতে যান। এই সময়ে, হঠাৎ ওই পসারশালী বন্ধু, নিজের কোনো কাজ উদ্ধারের জন্য, একটি উকিল নোটিশের সাহায্যে অসুস্থ ব্যক্তিকে সম্ভাষণ করলেন! উপকারী বন্ধুটি সংসারের এমন গতি দেখে অবাক। এই সময়ে বাকি বন্ধুদের কেউ এই দারুণ বিপদের সময় হাসিউল্লাস করতে লাগলেন, কেউ সুযোগ পেয়ে অযথা নিন্দা করতে লাগলেন। যে-সকল বন্ধুদের আজীবন উপকার করেছেন, ভুল করেও ওদের কেউই তাঁকে দেখতে এলেন না; বরং কেউ সুযোগ বুঝে ছলে-কৌশলে টাকা আদায় করতে উদ্যোগী হলো; কেউ কোথায় কী কাজে ভুল হয়েছে, তা নিয়ে বানিয়ে বানিয়ে ওই ব্যক্তির কাছে বলতে লাগল! কিছু টাকা তাঁর যা-ও গচ্ছিত ছিল, কেউবা সেই টাকা আত্মসাৎ করার চেষ্টায় নেমে গেল! কেউবা, নিজের প্রকৃত চেহারা দেখিয়ে দিয়ে ওই অসুস্থ ব্যক্তির রক্তশোষণে প্রবৃত্ত হলো! উপকার করার ভান করে বিষপান করানোর চেষ্টা করল! রোগী এসব দেখে-শুনে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলেন!




মানুষ ঠেকলে শেখে। একদিন এক লোক বিদ্যাসাগরকে বললেন, "অমুক লোক আপনার নিন্দা করেছে।" বিদ্যাসাগর কিছুক্ষণ চিন্তা করে উত্তর দিলেন, "কই, আমি তার কোনো উপকার করেছি বলে তো মনে পড়ছে না, তাহলে সে কেন আমার নিন্দা করল!" কারও উপকার করলেই সে অপকার করবে বা নিন্দা করবে—বিদ্যাসাগর মহাশয়ের এই কথার শেষসিদ্ধান্ত এটা।




এ অতি কঠোর এক সিদ্ধান্ত। অবিশ্বাস ও ঘৃণা থেকেই এমন সিদ্ধান্ত আসে। কিন্তু সংসারের অবস্থা-পীড়নে প্রপীড়িত ব্যক্তি মাত্রেই এ-কথা স্বীকার করেন যে, 'কৃতজ্ঞতা' নামক স্বর্গীয় গুণটা স্বার্থের মহাসমুদ্রে বিসর্জিত হয়েছে। বিশ্বাস করবে কাকে, মানুষ যে স্বার্থপরতার কদর্য কালিমার চিরআঁধারে মগ্ন!




যদি কাউকেও বিশ্বাস না করা যায়, তবে এই পৃথিবী কীভাবে বাসের যোগ্য হবে? মানুষকে অবিশ্বাস করে বাঁচা খুব কঠিন। বিশ্বাস ছাড়া এক দিন, এক মুহূর্তও চলে না, অথচ বহুদর্শী লোকেরা বলেন, কাউকে বিশ্বাস করবে না, যে তোমাকে আজ সুখশয্যায় রেখে সেবা করছে, কাল সে-ও তোমার বুকে ছুরি মারতে পারে। অভিজ্ঞতা থেকেও প্রতিনিয়ত, এ-কথা প্রমাণিত হচ্ছে। যার প্রশংসায় জগৎ প্লাবিত, তার প্রতি কিছু মানুষের অযৌক্তিক ব্যবহার, চারদিকের ঘটনারাশি পর্যালোচনা করলে, আর কাউকে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে না। স্বার্থপরতার মায়ায় মানুষ করতে না পারে, এমন কাজ নেই। অথচ এই স্বার্থদাস মানুষের সাথেই প্রতিনিয়ত ঘরকন্না করতে হচ্ছে। বিশ্বাস না করলে চলে কীভাবে?




তুমি বিজ্ঞ, তাই আমাকে লোক বেছে বেছে চলতে বলছ। এদিকে আমি দেখছি, বাছতে বাছতেই যদি সব সময় গেল, তবে কাজ করব কখন? তুমি বলো, স্ত্রীকে বিশ্বাস করতে নেই, স্বামীকে করতে নেই, ভাইকে করতে নেই, বন্ধুকে করতে নেই, পুত্রকে করতে নেই, কন্যাকে করতে নেই; নেই, নেই, কাউকেই বিশ্বাস করতে নেই। তুমি বলো, যাকে দান করবে, তাকেও বিশ্বাস করতে নেই; যার উপকার করার জন্য বুকের রক্ত ঢালছ, তাকেও বিশ্বাস করতে নেই। বিশ্বাস না থাকলে একমুহূর্তও সংসার চলে না, চুপ করে বসে থাকতে হয়। আমি লোক চিনি না, তুমি বিজ্ঞ, তুমি প্রতিনিয়ত এমন কথা বলছ; তুমি চিনে-বুঝে তো এখন কার্যজগত হতে একপ্রকার অবসর নিয়ে, কাউকেই বিশ্বাস করা যায় না—এই মানব-ঘৃণা মন্ত্রকে জীবনের সার করে বৃদ্ধ মন্ত্রীর সিদ্ধ-আসনে বসে রয়েছ। তোমার কথা শুনে চললে, এই সংসার-কার্যালয়ের পাট তুলে গহন অরণ্যে চলে যেতে হয়।




ঠকছি, ভাই, তবুও সংসারের মায়া ছাড়তে পারছি না। দশবার প্রতারিত হয়ে, শতবার প্রতারিত হবার জন্যই প্রস্তুত হচ্ছি। নিজের সৃষ্ট চক্রান্ত-কৌশলে নিজেই পড়ে মজছি। আগুনে পড়ে পতঙ্গ পুড়ে মরে—অন্যে শত চেষ্টা করলেও তাকে বাঁচাতে পারে না। তুমিও তেমনি শত চেষ্টা করেও, আমাকে বাঁচাতে পারছ না। শত উপদেশ, শত হিতকথা পণ্ড হয়ে যাচ্ছে; বহুদর্শিতাও বহুদর্শীর মতো বোঝাচ্ছে—কাউকেও বিশ্বাস করতে নেই; কিন্তু মায়া ছেড়ে, পরোপকার-ব্রত কিছুতেই ভুলতে পারলাম না। আমি তো পারলাম না, বাকিদের মধ্যে…সংসারমায়া ছাড়তে পারল কয়জন ব্যক্তি? মহামায়ার মহালীলা, মহাচক্রীর মহাচক্র। এর হাত থেকে রক্ষা পাবার উপায় কারও নেই।




ভালোবাসাই মানুষের স্বাভাবিক প্রকৃতি। ভালো না বেসে মানুষ থাকতে পারে না। কী এক স্বর্গীয় জ্যোতি মানুষের মুখে প্রতিভাত; মানুষ, অগ্নিপ্রলুব্ধ পতঙ্গের মতো ওই জ্যোতিতে প্রলুব্ধ। তার সংস্পর্শে না গিয়ে মানুষ থাকতে পারে না। মানুষের সেবা করা, মানুষকে ভালোবাসা মানুষের যেন স্বভাব। ভালোবাসার মূলে আছে বিশ্বাস। বিশ্বাস না করে থাকতে মানুষ পারে না। মানুষের ভালোবাসা যেন পতঙ্গের আগুন। ভালোবাসার সৌন্দর্যে জগৎ আত্মহারা। মানুষ অন্য কোনো জায়গায় সংযমের অভ্যাস করলেও করতে পারে, কিন্তু ভালোবাসার কুহকে যখন মানুষ পড়ে ও মজে, তখন সকল সংযম‌ই বৃথা; ব্রত, নিষ্ঠা সবই পরাস্ত।




যে-বন্ধু বুকে চালাবার জন্য ছুরি শাণিত করছে, মানুষ তাকেই ভালোবেসে কোল দেবে; যে-রমণী মানুষকে পুণ্যহারা করে, কুপথের ঘোর মায়াজালে জড়িত করে পাপে মজাতে চায়, তাকেই মানুষ প্রাণ সঁপে দেবে! মানুষ নিজ কর্তব্যকর্ম বিস্মৃত হয়; পুণ্য-মমতা ভুলে যায়; ধর্মকর্ম, সাধনভজন, উপদেশ সবই ভালোবাসার কুহকে ভুলে যায়। ভালোবাসার কুহকে মজেনি, পৃথিবীতে এমন লোক বড়ো একটা দেখা যায় না। মজবার সময়, সকলের কথা, সকলের উপদেশকে মানুষ তুচ্ছ করে। সৎ কি অসৎ, সকল লোকই ভালোবাসায় মজে। ভালোবাসার কুহকে প্রতারিত খ্রিষ্ট, শ্রীচৈতন্য, হজরত মোহাম্মদ, মহাবীর, বুদ্ধ। যারা আত্মীয়, তারাই সময় এলে মহাঅনিষ্টকারী শয়তান। ভালোবাসার কারণে এই শয়তানরূপী লোকের মাধ্যমে প্রতারিত কে নয়, জানি না! ভালোবাসায় প্রতারিত জগতের সকল মহাত্মাই।




ভালো যে, মহৎ যে, জ্ঞানী যে, মানবদেবতা যে, সে-ও প্রতারিত; মূর্খ যে, মন্দ যে, অসৎ যে, সে-ও প্রতারিত। প্রতারণার কোনো সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদ নেই—প্রতারণা এক অসাম্প্রদায়িক সত্তা। মানুষকে ডোবাতে এমন জিনিস পৃথিবীতে আর নেই! অন্যদিকে মানুষকে স্বর্গে আরোহিত করতেও এমন আর কিছুই নেই। ভালোবেসে লোকে স্বর্গে যায়—ভালোবেসে লোকে নরকেও যায়! ভালোবাসা, বলিহারি তোর মোহিনী-শক্তি! তোর কুহকে জগৎ মুগ্ধ, স্তম্ভিত, আত্মহারা!




বিধাতার লীলা কেন এমন বিরোধী চক্রান্তে পূর্ণ, এ কথার মীমাংসা কেউই করতে পারে না। কেন পাপ-পুণ্যের অধিষ্ঠান, কেন পৃথিবীতে দেবাসুর-সংগ্রাম, কেউই বলতে পারে না। বৈচিত্র্যের জটিল কথায় সকল সমস্যার মীমাংসা হয় না। আলোর কাছে অন্ধকার, পুণ্যের কাছে পাপ, সত্ত্বঃর কাছে রজঃ, সুবুদ্ধির কাছে কুবুদ্ধি, শ্রেয়ঃর কাছে প্রেয়ঃ, কুসুমের কাছে কণ্টক, ঝরনার কাছে পাষাণ, সাগরের স্নিগ্ধ জলে লবণ, চাঁদে কলঙ্ক, সম্পদের কাছে বিপদ, স্বাস্থ্যের কাছে রোগ, সংসারের কোলে শ্মশান, জীবনের কোলে মৃত্যু, সুদিনের কাছে দুর্দিন—প্রকৃতি এমন বিরোধী ও বৈচিত্র্যময় কেন হয়, তা কোনো দার্শনিক, কোনো বৈজ্ঞানিক আজ পর্যন্ত পুরোপুরি বলতে পারেননি। কোনো তত্ত্বজিজ্ঞাসু মীমাংসা করতে পারেননি—আধিব্যাধি, জরামরণ, পাপ-প্রলোভন কেন মানুষকে অস্থির করে। নিরঞ্জন-তটে বহু বছরের সাধনায়ও বুদ্ধ এ প্রশ্নের মীমাংসা করতে পারেননি; শৌর্যবীর্য ও সাহসের অপ্রতিদ্বন্দ্বী সম্রাট মোহম্মদও ভালোবাসা এবং তরবারির সাহায্যেও এর মীমাংসা করতে পারেননি। জ্ঞানীর জ্ঞান, দার্শনিকের দর্শন, ধার্মিকের তপস্যা, কর্মীর কৃতিত্ব—এই গভীর ও জটিল প্রশ্নের মীমাংসায় বরাবরই অকৃতকার্য!




কেন জগৎ এমন হলো, কেন প্রকৃতি কাঠিন্য-কোমলতায়, পাপ-পুণ্যে, ধর্ম-অধর্মে পূর্ণ হলো—কোথাও এর মীমাংসা নেই। আত্মার স্বাধীনতার প্রশ্নের মীমাংসায় এর মীমাংসা নেই, আত্মার পরাধীনতার কথাতেও এর মীমাংসা নেই। আত্মা স্বাধীন হোক আর পরাধীন হোক, কী এসে যায়? বিধাতার রাজ্যে প্রতারণা কেন, পাপ কেন, অত্যাচার কেন, অন্ধকার কেন, অবিশ্বাস কেন? কেন, কে তা বলতে পারে? অন্যদিকে, লোকে সব বুঝেও ভোলে কেন, মজে কেন, পড়ে কেন, ডোবে কেন? কেন, কে তা বলতে পারে? সকল শাস্ত্র এখানে নীরব। সকল শাস্ত্র‌ই—”এ মহামায়ার মহাখেলা!”—এটুক বলেই নিরস্ত্র। তুমিও জানো না, আমিও জানি না—প্রকৃতি এমন কেন, মানুষই-বা এমন কেন!




মায়াবাদী না হতে পারলে বুঝি-বা জগতে সুখ-শান্তি কোথাও নেই! মায়াবাদীরা বলেন, সকলই খেলা। জড়, জড় নয়; মানুষ, মানুষ নয়—সকলই নয়নের বিভ্রম অথবা মহাবিশ্বের অন্তরালে যে-শক্তি বিদ্যমান, তারই বুদ্‌বুদ, তারই প্রকাশ। শঙ্করই হোন, আর বার্কলিই হোন; হাক্সলিই হোন, আর হিউমই হোন—যত তর্কবিতর্ক করুন, জড়কে ফুঁ মেরে ওড়াতে কেউই সক্ষম নন; মায়াকে, অবিদ্যাকেও কেউ জগৎ হতে অদৃশ্য করতে সমর্থ নন। জড় ও মায়া—একেরই কায়া, একেরই ছায়া। এই দুই ভিন্ন প্ৰকৃতির সামঞ্জস্যেই এক চিন্ময় শক্তির প্রকাশ। সেই এক চিন্ময় শক্তি কোথায় কীরূপে আছেন, মানুষ তা জানে না। এইখানেই অজ্ঞেয়তাবাদের উদয়।




মানুষের শক্তি নগণ্য, অতি সামান্য; মানুষ কিছুই জানে না, কিছুই বোঝে না। মানুষ একটা পরমাণুও বোঝে না, একটা অণুও ধারণা করতে পারে না। এতই সামান্য জীব মানুষ! বোঝে না বলেই কি অণু-পরমাণু নেই? না, এমন হয় না। জগৎ আছে যখন, তখন স্রষ্টাও আছে। আমি তুমি জানি না বলেই যে তিনি নেই, এ-কথা প্রতিপন্ন হয় না। সৃষ্টি আছে, সৃষ্ট মানুষের কেউই এটা অস্বীকার করেন না; সৃষ্টির পেছনে যতদূর সম্ভব ছোটো; আদি কারণে, কারণের কারণে যেতে যেতে…হ্যাঁ, আদি কারণে তোমাকে যেতেই হবে। তুমি যত মহাজ্ঞানী যা-ই হও না কেন, আদি কারণে তোমাকে পৌঁছতেই হবে।




অন্যদিকে, জানো না যাঁকে বলছ, তাঁর জন্য জগৎ ব্যতিব্যস্ত কেন, বলতে পারো কি? সৃষ্টির আদি হতে সকল সভ্য এবং অসভ্য জাতি স্রষ্টার জন্য এত অশ্রু কেন ফেলছে, উত্তর দিতে পারো কি? আদি কারণকে মানুষ জানে না, তবুও মানুষ তাঁর জন্য যেন সর্বত্যাগী। মানুষ ধর্মের জন্য না করেছে, এমন কাজ নেই। মন্দিরের পর মন্দির, গির্জার পর গির্জা, মসজিদের পর মসজিদ তুলে মানুষ ধর্মের জন্য কত অর্থই ঢেলেছে! আবার ধর্মের জন্য সংসার ছেড়েছে, আত্মীয়পরিজন ছেড়েছে, সুখবিলাস ভুলেছে, শেষে জীবন পর্যন্ত বিসর্জন দিয়েছে। এই যে এত কীর্তি, এসব তবে কেন? এই যে এত আত্মত্যাগ—এটা কেন?




কোনো অ-দৃষ্ট বস্তুর জন্য, কেবল মিথ্যা বা নিরেট শূন্যের জন্য, মানুষ এতটা করতে পারে না। মানুষ কিছু দেখেছে এবং অনুভব করেছে, তাই এমন মজেছে। মানুষ কোনো এক মহাসত্যের উপকূলে পৌঁছেছে, তাই এমন করে থাকে। দুঃখকষ্ট মানুষ তাই সহ্য করছে। কোনো সত্যবস্তুর আস্বাদন না পেলে, মানুষ এমন করে কেবল গরলপান করার জন্য সংসারে থাকত না। এই লেখার প্রথমাংশে দেখিয়েছি, সংসারে কোনো সুখ, কোনো শান্তি নেই। চারিদিকে যখন কেবল স্বার্থ, কেবল অবিশ্বাস, তখন আর সুখ কোথায়?




স্বার্থসাধনে সুখ নেই, কেবল একের পর আরেক পিপাসার বৃদ্ধি আছে; অবিশ্বাসে শান্তি নেই, কেবল মানব-ঘৃণার অসংযত অন্তর্দাহ আছে। এই মহাস্বার্থ-পূর্ণ, অবিশ্বাসপূর্ণ, অশান্তিপূর্ণ, অসুখপূর্ণ সংসাররাজ্যে কীসের মায়ায় মানুষ জীবনধারণ করছে? যে-ব্যক্তি ভালোবাসার কুহকে বারবার প্রতারিত হচ্ছে, সেই ভালোবাসাতেই আবার সে ব্যক্তি জড়িয়ে পড়তে ছুটছে। এক বন্ধু প্রতারণা করে পালাতে না পালাতেই, আর-একজনকে মানুষ বুকে জড়িয়ে নাচছে! এক পুত্ৰকে শ্মশানে পুড়িয়ে আর-একটি পুত্রের মুখ-দর্শনের জন্য উৎফুল্ল হচ্ছে!




কোনো আশা, কোনো পরিণাম-চিন্তা না থাকলে মানুষ ভীষণ বিপদ-তরঙ্গসঙ্কুল সংসারের কূলে এমন ঘর বাঁধত না। জন্মে, জ্ঞানলাভের পরপরই মরত; মৃত্যু আপনাআপনি না এলে আত্মহনন করে মরত। কী যেন একটা মহাজ্ঞান, মহাচিন্তা, মহালক্ষ্য মানুষের প্রাণে চিরমুদ্রিত, চিরজাগ্রত, চিরসহায় হয়ে আছে, যার জন্য মানুষ প্রতারিত হয়েও এই সংসারে থাকতেই ভালোবাসে—কিংবা বলা যায়, যার প্রতিকূলে চলার সাধ্য মানুষের নেই। সেই জ্ঞান, সেই চিন্তা, সেই লক্ষ্য—ঈশ্বর—তিনি অজ্ঞেয়, দুর্জ্ঞেয়, অমীমাংসিত, জটিল, অশেষ, অলিখিত সেই এক আদি শক্তি। মানুষ বিজ্ঞানে এবং কিছু দর্শনে ঈশ্বরকে পায় না, সত্য; কিন্তু প্রাণের মূলে, তাঁর স্পষ্ট আদেশে তাঁর বাণীতে তাঁকে খুব আপন করে পায়।




তুমি যদি আমাকে বলো, আছ কেন? এতবার প্রতারিত হয়েও…আছ কেন? আমি বলি, তাঁরই ইচ্ছেতে আছি, দেখেও যাঁকে দেখি না, পেয়েও যাঁকে পাই না, বুঝেও যাঁকে বুঝি না। তাঁর জন্যই আছি, যিনি দেখা না দিয়েও আমাকে মাতাচ্ছেন, যিনি অনন্ত অশেষ স্বরূপের বিন্দু-আভাস দিয়েই আমাকে বাঁচাচ্ছেন; যিনি প্রতি মুহূর্তে এই প্রাণে কথা বলে আমাকে আশ্বস্ত করছেন। তিনি সুদিনেও বন্ধু, দুর্দিনেও বন্ধু। তিনি স্বাস্থ্যেও বন্ধু, রোগেও বন্ধু। তিনি জীবনেও বন্ধু, মরণেও বন্ধু। প্রতারিত হই, নিন্দিত হই, নির্যাতিত হই, পাপী হই, পরিত্যক্ত হই—সব হয়েও যে থাকি, তা কেবল তাঁরই কথায়, তাঁরই মায়ায়।




অদেখা-দর্শন, অচেনা-মিলন, অকথিত-রূপ ও সেই অলিখিত-সৌন্দর্যের জন্য আমার প্রাণ সবসময়ই বিভোর। আমি সংসার করি—তাঁরই জন্য। তুমি যাঁকে ইচ্ছে জিজ্ঞেস করো, সকল বিশ্বাসীই তোমাকে এমন উত্তর দেবে। দুর্দিন-সুদিন, রোগ-শোক, জীবন-মরণ, আলো-আঁধার—সব অবস্থাতেই তিনি। তিনি, তিনি, তিনি—নিত্যই তিনি। রাখেন তিনি, মারেনও তিনি—আমরা কেবল কলের পুতুল মাত্র। এই তন্ময় জ্ঞান প্রাপ্ত না হলে, এই বিপদপূর্ণ, এই বৈচিত্র্যপূর্ণ এবং এই প্রতারণাময় সংসার-উপকূলে কেউই সুখে, কেউই আরামে, কেউই শান্তিতে টিকতে পারত না। ঈশ্বর এখানেই—এই অন্তরের গভীরে, কেবল আত্মজ্ঞান জন্মালেই তাঁকে ব্রহ্মরূপে জানা যায়। তাঁকে পেতে তাই নিজেকেই পেতে হয়।




শেষকথা তবে এ-ই: মানুষের প্রতারণা—মানুষকে সতর্ক করার জন্যই; বন্ধুর কৃতঘ্নতা—দুর্দিনের প্রকৃত বন্ধুকে চেনার জন্যই; মানুষের রোগ—মানুষকে স্বাস্থ্যের পথে চিরপ্রতিষ্ঠিত করার জন্যই; পাপ-প্রলোভন—মানুষকে ধর্মে অটল করার জন্যই; মৃত্যু—অনন্ত (আত্মিক) জীবনলাভের জন্যই; অন্ধকার—মহাজ্যোতি দর্শনের জন্যই। এই বৈচিত্র্য- এবং বৈষম্যপূর্ণ প্রকৃতি মানুষকে উন্নতি হতে আরও উন্নতিতে, ভালো হতে আরও ভালোতে, সৎ হতে আরও সৎ-য়ে নিয়ে যাবার জন্যই। এ সকল অবস্থা, ঘটনা, বৈচিত্র্য—উন্নতির সিঁড়ি মাত্র—যাত্রীদেরকে অগ্রসর করাবার জন্যই।




যাঁরা এমন অর্থ না বুঝে চলেন এবং প্রতিকূল-অনুকূল ঘটনা-নিরপেক্ষ হয়ে, সারকে চিনে, সারধনকে অবলম্বন ও লক্ষ্য করে—না চলেন; বৃথা তর্কজালে তাঁরা জড়িত হন; শেষে হয় অবিশ্বাসী, না হয় মহানারকী হয়ে, বিষম দুঃখে-কষ্টে সংসারলীলা শেষ করেন; সংসার-বাদী, অবিশ্বাস-বাদী মানুষকে হতেই হবে—প্রকৃতির গূঢ় রহস্যের যদি এমন মীমাংসা করেন। মানব-ঘৃণা—এ ধরনের লোকের পরিণতি; মানব-বিদ্বেষ—এ ধরনের লোকের অস্থিমাংস; মানব-নিন্দা—এ ধরনের লোকের পানাহার। মানুষ যতই কৃতঘ্ন হোক, সে-দিকে লক্ষ না করে, মানুষের প্রত্যুপকারের প্রত্যাশা না রেখে, কেবল বিধাতার মঙ্গল-অভিপ্রায় বুঝে চলতে হবে, খাটতে হবে, নরসেবা করতে হবে।




মানুষের অস্থির প্রকৃতির ভেতরে, বিভিন্ন অবস্থার ভেতরে, নানা বিচিত্র ঘটনার ভেতরে এক ও অদ্বিতীয় চিন্ময়শক্তি হাসছেন, এক অপরূপ জ্যোতি ফুটছেন। যারা তা না দেখল—সংশয়, অবিশ্বাস, অপ্রেম, কুজ্ঞান, পরনিন্দা প্রভৃতি গরলে তারা যে মজবে, তা-ই তো স্বাভাবিক। মানুষের দুর্দিনে একমাত্র বন্ধু তিনিই—চির-অবিচলিত, চির-অপরিবর্তিত তিনি। চিরদিন উপেক্ষিত হয়েও তিনি মানুষের কাছে প্রতিনিয়ত সত্যে, ন্যায়ে, জ্ঞানে, প্রেমে, পুণ্যে প্রতিভাত। তিনি মানুষকে অসারের সার এবং প্রকৃত বন্ধুত্ব বুঝিয়ে, দুর্দিনের মধ্যে সুদিনের অভ্যুদয়ের মর্ম প্রতিটি অন্তরে প্রতিষ্ঠিত করে, জগৎকে ও তার সাথে আমাদেরকে মানব-ঘৃণা, অবিশ্বাস ও সন্দেহবাদ হতে চিরকালের জন্য রক্ষা করুন, তাঁর ইচ্ছে তাঁর মতে তাঁর পথে পূর্ণ হোক।