সত্তা

: আমি তোমার সঙ্গে বহুদিন ধরে, বহুকাল ধরে কথা বলতে চাই। কেন এভাবে এড়িয়ে চলো আমাকে?
: এড়িয়ে চলি না। আমার মধ্যে অনেকগুলো সত্তার বাস। তুমি ঠিক কোন সত্তাটার সঙ্গে কথা বলতে চাও? প্লিজ, বি স্পেসিফিক!




আমার একটা সত্তা খুব নিয়ম-মেনে-চলা মানুষ…যে কিনা ঘড়ির কাঁটায় রাত এগারোটা বাজার পর আর একসেকেন্ডও জেগে থাকে না, ঘুমিয়ে পড়ে। আবার ঠিক সকাল ছ-টায় ঘুম থেকে ওঠে। আধঘণ্টা হেঁটে এসে স্নান সেরে নাস্তা করে চিনিছাড়া কফিটা খেয়েই অফিসে চলে যায়। সন্ধ্যা সাতটায় বাড়ি পৌঁছে ডিনার, গ্রিন-টি, ঘরদোর গোছানো, টিভিতে খবরদেখা, আবার পরের দিনের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে ঘুমোতে চলে যায়।




ঠিক এই আমারই আরেকটা সত্তা হচ্ছে এর সম্পূর্ণ বিপরীত। সে ভোরবেলায় ঘুমুতে যায়। ঘুম থেকে ওঠে বেলা বারোটায়। বারোটা থেকে শুরু করে দেড়-দু’ঘণ্টা চা-কফি খায় আর ঝিমুতে থাকে। উষ্কখুষ্ক চুলে হাত বোলায় আর ভাবতে থাকে, ‘স্নান করলে ভালো লাগত!’ আবার পরক্ষণেই এই ভাবনাটাকে একপাশে সরিয়ে রেখে সে দু-চার পাতা কবিতা পড়ে, তিন সাড়ে তিন লাইন কবিতার মতন কিছু-একটা লেখার ভান করে। কাঁথামুড়ি দিয়ে সিগ্রেট খায়, আর অনেক কিছু নিয়ে ভাবতে থাকে। এর পরে বাধ্য হয়েই স্নানে চলে যায়। স্নানের জল দেখলে এক-একদিন তার সমুদ্রের কথা মনে হয়…কিংবা মনে আসে ঝরনার কথা…




স্নান সেরে বেরিয়ে কোনরকমে জামাকাপড় পরে টিউশনিতে চলে যায়। টিউশনির পর বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত দশটা। কোনরকমে ভাত গিলে একটা বিরাট কাজ শেষ করে! তার পরে আবার সেই ভোর হওয়া অবধি কাগজ-কলম-কবিতা-কবিতার বই-সিগ্রেট-চা…এই তো, ব্যস্‌! এই চক্রেই সে চলতে থাকে।




আরেকটা সত্তা হচ্ছে সে, যে শুধুই মায়ের বাধ্য সন্তান হতে চায়। সে এতই কাজ করতে চায় যেন মায়ের আর কাজ করতে না হয়। শুধু মা’কে একপৃথিবী সুখ দেবার জন্যই যেন তার মা তাকে পেটে ধরে দুনিয়াতে এনেছিল। মা ছাড়া কিছুকে কিংবা কাউকে নিয়ে ভাববার সময় তার হাতে থাকে না।




এবার বলো, আমার কোন সত্তাটার সঙ্গে কথা বলতে চাও তুমি?