প্রেমিকার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে বলে মন খারাপ? দাওয়াত কার্ডও পেয়েছিস? আরিব্বাস! বুকে আয়, ভাই! এত মন খারাপ করিস না। আমি তোর ইমোশনটা বুঝি, আমিও যে একই পথের পথিক ছিলাম রে! আমার প্রেমিকাও আমার আগেই বিয়ে করে ফেলেছিল। এখন বুঝি, এটা আসলে কোনও বিষয়ই না। তার বিয়েতে অবশ্য আমি যাইনি।
যাইনি মানে যেতে পারিনি। তোর প্রেমিকা অনেক ভালো, তোকে দাওয়াত করেছে। আমারটা তো আমাকে দাওয়াতও করেনি। দাওয়াত করলে কিন্তু আমি গিয়ে খেয়ে আসতাম। প্রেমিকার বিয়ের দাওয়াত খাওয়ার চাইতে সৌভাগ্য আর হয় না। প্রেমিকার বিয়ের দাওয়াতের খাবার হচ্ছে এ পৃথিবীর সবচাইতে সুস্বাদু খাদ্য।
তাই আমি তোমাকে বলছি, তুমি বিয়েতে যাবে এবং অবশ্যই অবশ্যই তার আগের দুইদিন অভুক্ত থাকবে। কোনও খাওয়া-দাওয়া করবে না, পেট খালি রাখবে, সেখানে গিয়ে ইচ্ছেমতো খাবে। এবং সম্ভব হলে বিনা দাওয়াতে কয়েক জনকে সঙ্গে করে নিয়ে যাবে; এই ধরো, জনা বিশেক। বিশ জনকে সঙ্গে নিয়ে যাবে যেন ওখানে খাবার শর্ট পরে। এটা তোমার দায়িত্ব! এর বাইরে তো আমি আর কিছু দেখি না।
আমার প্রেমিকার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে, আমাকে দাওয়াত করেছে, আমি এখন কী করব?! এ-ই তো ভাবছ? এত বোকা কেন তুমি? তুমি এখন দাওয়াত খাবে, আর কী-ইবা করবে দাওয়াত খাওয়া ছাড়া? পারলে আমাকেও দাওয়াত করো, সঙ্গে নিয়ে যাও। আমিও দাওয়াতে যাব; দেখি, কেমন ভালোমন্দ খাওয়া যায়…অসুবিধে কী?
আরেক জনের প্রেমিকার বিয়ে খাওয়ার অনেক মজা আছে, বুঝেছ? অবশ্য আমরা যারা দাওয়াত-টাওয়াত খাই, তারা সবাই কিন্তু কারও-না-কারও প্রাক্তনের বিয়ের দাওয়াত খাই! কারণ এ পৃথিবীতে যারা বিয়ে করে, তারা বেশিরভাগই কারও-না-কারও প্রাক্তন। এর মানে হলো, আমি একজনের প্রাক্তন; আমার যে ওয়াইফ, সে-ও কারও প্রাক্তন; আবার আমার যে প্রেমিকা ছিল, সে যাকে বিয়ে করেছে, সে-ও আরেক জনের প্রাক্তন; আবার তার প্রেমিকা যাকে বিয়ে করেছে, সে-ও কারও প্রাক্তনকেই বিয়ে করেছে।
বিয়ে মানেই প্রাক্তনদের হাটবাজার। অতএব, আমরা কিন্তু কারও-না-কারও প্রাক্তনের বিয়ের দাওয়াত খাই, তাই এসব কোনও ব্যাপারই না। প্রাক্তনের বিবাহ খেতে খেতে আমাদের বড়ো হতে হবে, প্রাক্তনের বিবাহ খেতে খেতে আমাদের মরতে হবে…তাই এটা নিয়ে এত প্যারা নেবার কিছু নাই।
তোমাকে তার বিয়েতে নিমন্ত্রণ করেছে, তোমার প্রেমিকা অনেক ভালো…অনেক ভালো! সে তোমাকে দাওয়াত করেছে, তুমি দাওয়াতটা খেয়ে আসো। মানুষের দাওয়াত রক্ষা করা উচিত। সে তোমাকে ভালোবাসতে পারেনি, ঠিক আছে, কিন্তু সে তোমাকে সম্মান তো করেছে। তোমাকে এমন আদর করে দাওয়াত করেছে, আর তুমি এ সম্মানটা রাখবে না?! আর গিয়ে দেখোই না, সত্যিই ভালো লাগবে! কীরকম, বলি! প্রেমিকার পাশে তার হাজব্যান্ডকে দেখলে মনে হবে, তার চাইতে তো আমি অনেক ভালো ছিলাম, তার চাইতে দেখতে তো আমিই অনেক শাহরুখ খান-মার্কা ছিলাম, আমাকে বিয়ে না করে সে কিনা তাকে বিয়ে করেছে! আমাকে দেখতে লাগে ঋত্বিক রোশনের মতো, আর তাকে লাগে ডিপজলের মতো…ইত্যাদি ইত্যাদি।
তোমার এসব মনে হতে থাকবে। এর মধ্যে কিন্তু একটা শান্তি আছে, ভাই। তুমি যখন ছবি তুলবে, আর বাসায় এসে যখন দেখবে, তখন মনে হবে, আরে, এর পাশে তো তাকে মানায়ই না! আমার প্রেমিকার পাশে তো তাকে মানায় না, আমি থাকলে বেশি মানাত। তুমি ওই বিশেষ কাপল ছবিটা দেখবে, এরপর তার যে ছবিটা তোমার সাথে আছে, পুরোনো ছবি…সেটা দেখবে! যেটা মনে করো, গাঁদা ফুলের পাশে বা বাগানে বসে তুলেছিলে। ওটাও দেখবে, এটাও দেখবে। তখন তোমার মনে হবে কী, আরে বাবা! আমাকেই তো বেশি মানায়, তাকে তো কম মানায়। তখন তোমার বেশ ফুরফুরে একটা মেজাজ থাকবে।
ভেবে দেখো, তোমার পেটও শান্তি, তোমার মনও শান্তি। শান্তি আর শান্তি! দুনিয়াতে এর থেকে শান্তি আর কী আছে, বলো? তুমি অবশ্যই যাবে, পারলে আমাকেও দাওয়াতটা দেবে, আমিও যাব। তুমিও খাবে, আমিও খাব! অনেক ভালো হবে। চমৎকার হবে।