চিত্তের ঢিবি

প্রিন্সেস ডায়ানা একবার আক্ষেপ করে বলেছিলেন, আমি যাকে ভালোবেসেছি, এক সে বাদে পৃথিবীর সবাই আমাকে ভালোবেসেছে।




যে সালমান শাহর মৃত্যুতে আত্মহত্যা করেছিল দেশের অনেক তরুণী, সেই সালমান শাহ নির্দিষ্ট একজনের ভালোবাসার অভাবে জীবিত থাকতেই মরে গেছেন হাজার বার।




মানুষ সব‌ই পায়; শুধু যা চায়, তা-ই পায় না। চিত্তের ঢিবির সামনে বিত্তের পর্বতও খুব ছোটো।




আপনার জীবনে সবচেয়ে বড়ো পরাজয়টা কখন ঘটে, জানেন? যখন নির্দিষ্ট কারুর মায়ায় আপনি তীব্রভাবে আটকে যান। যত আহাজারিই করুন, তার কাছে আপনার শব্দগুলি পৌঁছোয় না; যত দূরেই পালাতে চান, কোনোভাবেই তার বলয় থেকে বেরোতে পারেন না। সমুদ্রের ঘূর্ণির মতন একই জায়গায় পাক খেতে খেতে তলিয়ে যান, তবুও কিছুতেই তল খুঁজে পান না।




আপনার গোটা পৃথিবীটা দখল করে রাখে যে মানুষটা, তার ত্রিসীমানার কোথাও থাকেন না আপনি। এই পরাজয়ের চেয়ে বড়ো কোনও পরাজয় মানুষের জীবনে বুঝি আর হয় না! ক্রমাগত পরাজিত হচ্ছে জেনেও মানুষ যে কীসের নেশায় জয়ের পথে ভুল করেও পা বাড়ায় না, তা সে নিজেই জানে না।




ঝুমবৃষ্টিরাতে বৃষ্টির ফোঁটাকে তার অশ্রু মনে হবে, ভরাপূর্ণিমায় ঝরা জোছনাকে তার উচ্ছল হাসি মনে হবে, অদূর কোথাও থেকে ভেসে-আসা কোনও উদাসী সুরকেও তার কণ্ঠস্বর মনে হবে। যেদিকে তাকাবেন, চারিদিকে শুধু তাকেই দেখতে পাবেন। যাকেই দেখবেন, তাকেই তার প্রতিচ্ছবি মনে হবে; যা-ই ছোঁবেন, সব কিছুকেই তার স্পর্শ মনে হবে। খুব সহজেই, বিনা মূল্যেই আপনি সেই একজনের কাছে বিক্রি হয়ে যাবেন অনায়াসেই।




আপনি যত‌ শক্তিধরই হোন না কেন, যত হাজার লোক‌ই আপনার কাছে মাথা নোয়াক না কেন, খুব গোপনে কোথাও কেউ একজন আছে, যার কাছে আপনি মাথাটা বিনা কুণ্ঠায় নুয়ে রাখেন, যার কাছে হেরে যেতে আপনার একটুও খারাপ লাগে না।




এভাবেই মানুষ হেরে যায়। অনেক কিছু থাকার পরও ওই একটা মানুষের অভাবেই যেন সব কিছু ফিকে হয়ে যায়। আবার কিছুই না থাকার পরও, কেউ কেউ ওই একটা মানুষের প্রাপ্তিতে যেন সব কিছুই পেয়ে যায়। বাইরে থেকে দেখে কার কীসে সুখ বা কীসে দুঃখ, এর কোনোটাই কখনও টের পাওয়া যায় না।




জিতে-যাওয়া মানুষগুলো কতটা যে হারতে থাকে আর কাঁদতে থাকে প্রতিটি মুহূর্তে, তা যদি কেউ দেখতে পেত!