নির্যাস: এক

১। সুন্দরের মোহে হয়েছি যতই অন্ধ, আসক্ত;
হায়, সুন্দরীর সামনে ততই মেনেছি দাসত্ব!


২। রাখলে মাথায় ক্ষুদ্র লোকের নীচ বুদ্ধি,
মেলে না ভুলেও মহত্ত্বের উচ্চ শুদ্ধি।


৩। যে বৃষ্টি মেটায় দেবতার পূজা, জঠরের ক্ষুধা,
সে বৃষ্টিতে বন্যা এলেও ঢালতেই হয় সহ্যসুধা!


৪। নিজের মনের বাইরে যার দেবতার ঘর,
সময় থাকতেই তাকে করে দিয়ো পর।


৫। যে কখনওই পড়ে না বাঁধা চাওয়া না-চাওয়ায়,
পরম সৌভাগ্য, অমন একটা মানুষ পাওয়ায়।


৬। তোমায় ভেবে ভুলতে বসি পুণ্যফলের মাপ,
তুমি আমার এ জীবনের সবচে' প্রিয় পাপ।


৭। বাতি কিনলে যদি নিজেরই পয়সায়, তবু জ্বালালে কেন অন্যের হাতে?
তুমি ধর্মের পথে অতটা হাঁটলে বৃথাই, হায়, পুণ্যফলে উঠলে না জাতে!


৮। ধর্ম যার মন ছেড়ে যায় ইটের ঘরে,
সে শুধু নরকে বাঁচে, নরকেই মরে।


৯। যে মানুষ বুঝে, স্বার্থ খুঁজে, হিসেবে মিললেই করে সেবা,
সে নয় ধার্মিক; কপট সেও, অমন মানুষ মানছে যে-বা।


১০। কারও উপকার করতে গেলেই তার চড়টা খেতে প্রস্তুত থেকো।
যাকে বাঁচাতে নামলে জলে, শেষে ডোবাবে সে-ই, মাথায় রেখো।


১১। সারাদিনই আমায় দেখিস, আর বলতেই থাকিস, আমি এই করি, সেই করি।
আজাইরা বলদ গাধা, কোনও কাজ নাই তোর? আমি তোর খাই, না পরি?


১২। অ্যাই শোন না, আমি না ডাইরেক্ট স্বর্গ থেকেই এসেছি!
তোর কী মনে হয়? আমি কি তবে নরক থেকে উঠেছি?
আহা মরি, ফেইসবুকের মজা এটাই,
সব শালাই মুখে মুখে স্বর্গ মারায়!


১৩। প্রথম নকেই, 'ভাই, সাহায্য চাই!'
প্রথম দেখায়, 'চলো, শুতে যাই!'
এই দুইয়ে পার্থক্যটা কী?
পান্তাভাতে আর কত ঘি?


১৪। যার নাই দুইকলমও মাথায়, সেও চারকলম শোনায়,
ফেইসবুকের বাইরে ব্যাটারে কুত্তাও ধরে না গোনায়!


১৫। লোকের পেছনে লাগার অভ্যাসটা,
তোমায় পিছিয়েই রাখবে জীবনটা।


১৬। যেখানে কারও চেহারা দেখে বিচার হয়,
সেখানে নগ্নসত্য? না, আর একটিও নয়!


১৭। কারও ফ্রেন্ডলিস্টে থাকার মানে এ নয় তো, সে তোমায় বন্ধুই মানে।
কাউকে ফলো করার মানে এ নয় তো, সে তোমারচে’ বেশিই জানে।


১৮। ফ্রেন্ডলিকে যারা ফ্রেন্ডই ভাবে,
তাদের কাছে ভুলেও না যাবে!


১৯। মিথ্যে বোলো সরাসরি আর সত্য বোলো ঘুরিয়ে,
খোঁড়ার দেশে হাঁটতে গেলে হাঁটতেই হয় খুঁড়িয়ে!


২০। আলোতে সবাই-ই চরিত্রে জ্বলে,
আঁধার নামলেই আসলটি বলে!


২১। ভালোবাসি, ভাই! সহমত, ভাই!
আসুক বিপদ, আর পাশে নাই!
মানুষ এমনই---মুখেই সচল,
তার নিন্দা স্তুতি, দুই-ই নকল!


২২। তুমি বিপদে পড়েও, যার বুদ্ধি ভুলেও চাইতে না নিতে,
তাকে কোরোই না গ্রহণ, সে এলেও কখনো বুদ্ধি দিতে।


২৩। হাসিমুখেই সে বলে কথা,
মনের মধ্যে হাজার ব্যথা।
আমরা ওকে সুখী বলি,
নিজের ব্যথা বলে চলি!


২৪। যে দুটি হাত প্রার্থনা করে নিভৃতে বসে, কারও বিপদ এলে,
তারচে ভালো---যে দুটি হাত এগিয়ে আসে, পাশেই মেলে।


২৫। বোলো না সত্য, যখন নির্বোধ শ্রোতা,
বাঁচাই আসল, খোঁজো অমরত্ব কোথা?


২৬। যে তোমার দশ ভালোতেও নীরব থাকে,
আর তেড়ে আসে তীব্র বেগে, একটাও খারাপ পেলে,
অমন লোক বন্ধু নয় গো, নিন্দুকই সে,
তুমি বড্ড থাকবে ভালো, সে জীবন থেকেই গেলে!


২৭। ভাববে যত ভালোবাসা নিয়ে,
অসুস্থ হবে তুমিই শেষে গিয়ে।
যদি চাও পরাতেই কারও গলায় শিকল,
তবে কুকুর পোষো, সেখানে মানুষ বিকল।


২৮। টাকা যা আছে, ব্যাংকে জমায়,
ঘরে চাল নেই, ধার করে খায়!


২৯। কৃপণের ধন, সুন্দরীর মন,
যায় অপাত্রে, শূন্য-যতন।


৩০। অতিথি ফেরায়, জমায় টাকা,
মাস ফুরোতেই পকেট ফাঁকা!
অতিথি আসে, থালার সারি,
যশে-বিত্তে সেই গৃহস্থ ভারী!


৩১। ঘরে অতিথি এলে যে হাসেই না,
দারিদ্র্য তার আমৃত্যু ঘোচেই না।


৩২। অতিথিকে করতে সেবা, লাগেই যা-কিছু ধন,
তা মুহূর্ততে হাতে এসে যায়, থাকে যদি মন।


৩৩। যার বাড়িতে গেলে খুশি মেহমান,
তার চিত্তকে লোকে করে সম্মান।


৩৪। যদি মানুষ হও, সেই ধর্ম ধরো,
যেই ধর্মের চেয়ে মানুষ বড়ো।


৩৫। ঈশ্বর থেকে যে দূরে যত,
পৃথিবীকে সে শাসায় তত!
ঈশ্বরের সে-ই কাছে যায়,
নিজেকেই যে শাসায় ঠায়!


৩৬। এ জীবনে পেলাম না যাকে, কখনও কিছু পাবো না জেনেও, তাকে আজও ভালোবাসি।
কী আর করব, বলুন, সে যে আমার একটাই মানুষ, যার জন্যই আমি এখনও হাসি!


৩৭। যাকে সবাই ভালোবাসে, বড়োই একাকীও সে-ই,
যখন, সে ভালোবাসে, এমন মানুষ একটাও নেই।


৩৮। যাকে কেউ ভালোবাসে, সে কখনওই কুৎসিত নয় বাকি সবার থেকে,
আর কেউ দেখুক না দেখুক, ওই একটা মানুষ তো তাকে সুন্দর দেখে!


৩৯। ভালোবাসি যাকে, ভালোবাসিই; তাকে পাই বা না পাই,
আমৃত্যু বাসব ভালো; সে ভালো থাকুক, এইটুকই চাই!


৪০। ভালোবেসে যে প্রত্যাশাতে শুধুই পেতে চায়,
স্বার্থপরতার সবটুকুই তো তারই সাথে যায়!


৪১। অজ্ঞ সে-ই, যে ভালোবাসাকে করে ধর্মের পাথরে যাচাই।
অথচ অধর্ম থেকেও, ঠিকই এই ভালোবাসা এসেই বাঁচায়!


৪২। সত্যিকারের ভালোবাসা যা, তা কখনওই যায় কি মুছে বিস্মৃতিতে?
দূরত্ব এলেও, ঠিকই বেঁচে থাকে তা, ভালোবাসে যে, তার অশ্রুতে।


৪৩। সন্তানের কীর্তিতে তৃপ্তিতে হাসে বাবা-মায়ের মুখ,
আর সারাজীবনের কষ্ট সরে নিমিষেই আসে সুখ!


৪৪। যে বাবার সন্তানটি হয় বাবার চেয়ে বড়ো,
সে বাবার পিতৃত্বের খুঁটি সবার চেয়ে দড়।


৪৫। সন্তান যখন হয় সমাজে নিজগুণে মান্যগণ্য,
বাবা-মায়ের সব দুঃখই হয় বিস্মৃত, সামান্য!


৪৬। সন্তানের মুখের কাকলি কিংবা আধো বোল,
তার কাছে বীণার সুরও কর্কশ, যেন ঢোল!


৪৭। বাবার খেয়ে, বাবার পরে বাবাকেই ডাকে গাধা,
সেই ছেলে যখন বাবা হবে, পিতৃত্ব পাবে আধা।


৪৮। ভুলেও আমায় দেবতা মেনো না, তুচ্ছ মানুষই জেনো।
নয় প্রেম, নয় বিশ্বস্ততা; শুধু কয়েক মুঠো স্বস্তি এনো।


৪৯। ভালোবাসো যদি, শান্তি দিয়ো।
যদি না পারো, বিতৃষ্ণা নিয়ো।


৫০। আমি ভালো আছি,
চাই, তুমি ভালো থাকো।
চলো তোমার পথেই,
শুধু, মন খোলা রাখো।


৫১। আমি যতই ঘরে ঢুকি, তুমি ততই বাইরে ছোটো।
ছুটতে গিয়ে দেখবে হঠাৎ, তুমি এ ঘরেরও খাটো!


৫২। ঘরে ভৃত্য, বাইরে রাজা,
মনে বিত্ত, গরিব সাজা।


৫৩। তবে, কোন পথটি সবচে ভালো, কোন পথটি মন্দ?
প্রথমটি বাঁচায় সবকটি পথ, দ্বিতীয়টি বাধায় দ্বন্দ্ব।


৫৪। সামনে যে নদী, তা তুমি পার হতে চাও?
মাঝিকে খোঁজো, মাথাটা নত করে দাও।


৫৫। হাতটা ধুয়ে কিতাব ছুঁলে,
মন না ধুয়ে সব হারালে।
মাথায় বোঝাই রাখলে যত,
বোধে বিবেকে সরলে তত।
পড়লে বেশি, বুঝলে কম,
গিললে শুধু, ফুরলো দম।